বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১৯

LakshmiJanardan and other Temples, Surul, Bolpur, Birbhum


লক্ষ্মী-জনার্দন  ও  অন্যান্য  মন্দির,  সুরুল,  বোলপুর,  বীরভূম 

                     শ্যামল  কুমার  ঘোষ 

            বীরভূম  জেলার  বোলপুর  ( শান্তিনিকেতন ) থেকে  ৩  কিমি  দূরের  একটি  গ্রাম  সুরুল।  সুরুলের  অন্যতম  আকর্ষণ  এই  গ্রামের  জমিদার  সরকার  বাড়ির  ( ছোট  তরফের )  মধ্যে  ইঁটের  তৈরি  তিনটি  মন্দির। 

            আনুমানিক  অষ্টাদশ  শতাব্দীতে  সরকার  বাড়ির  ( ছোট  তরফের )  লক্ষ্মী-জনার্দন  ( শালগ্রাম )  মন্দিরটি  এই  গ্রামের  মন্দিরগুলির  মধ্যে  সর্বশ্রেষ্ঠ  বিবেচিত  হতে  পারে।  যদিও  মন্দিরের  টেরাকোটা  ফলকগুলির  এখন  ভগ্নাবস্থা।  

            প্রায়  ভূমি  সমতলে  অবস্থিত  ভিত্তিভূমির  উপর  স্থাপিত,  ত্রিখিলান  প্রবেশপথবিশিষ্ট,  পশ্চিমমুখী  মন্দিরটি  পঞ্চরত্ন  শৈলীর।  গর্ভগৃহে  প্রবেশের  একটিই  দরজা,  সামনে।  মন্দিরের  সামনের  দেওয়াল  'টেরাকোটা'  অলংকরণে  অলংকৃত।  ত্রিখিলান  প্রবেশপথের  মাঝের  খিলানের  উপর  রামরাবণের  যুদ্ধের  দৃশ্য।  বামপার্শের  খিলানের  উপর  মধ্য  সারিতে  রামের  রাজ্যাভিষেকের  ঘটনাবলী  ক্ষোদিত  আছে।  সিংহাসনে  উপবিষ্ট  রামসীতার  প্রতি  জাম্বুবান  অন্যান্য  বানরাধিপতিদিগকে  রামসীতার  প্রতি  আনুগত্য  প্রদর্শন  করতে  দেখা  যায়।  এই  দৃশ্যের  উপরে  মহর্ষি  বাল্মীকির  উপস্থিতিতে  মুনিঋষিগণ  কর্তৃক  এক  যজ্ঞ  অনুষ্ঠান  পরিচালনা  করতে  দেখা  যায়।  নিচে,  প্রসাধনরতা  অন্তঃপুরিকাগণের  উপস্থিতি।  দক্ষিণের  খিলানের  উপর  নিচের  সারিতে  রাবণরাজাকে  দেখা  যাচ্ছে।  এর  উপরে  যুদ্ধক্ষেত্রে  অসীম  বীর্যবর্তার  সহিত  হনুমানকে  রাক্ষসবাহিনীকে  আক্রমণ  করতে  দেখা  যায়।  W  B  Heritage  Commission - এর  তথ্য অনুযায়ী,  এই  মন্দির  নির্মাণ  করতে  সরকার  পরিবার  রানাঘাট  থেকে  নির্মাণ-শিল্পী  এনেছিলেন। 


প্রসাধনরতা  অন্তঃপুরিকাগণ

লক্ষ্মী-জনার্দন ( শালগ্রাম ) মন্দির

মন্দিরের সামনের বিন্যাস 

মন্দিরের ত্রিখিলান বিন্যাস 

বাঁ দিকের খিলানের উপরের কাজ
( উপরে,মহর্ষি বাল্মীকির উপস্থিতিতে মুনিঋষিগণ কর্তৃক যজ্ঞ ) 
 

রামরাজা
 

প্রসাধনরতা  অন্তঃপুরিকাগণ

মাঝের খিলানের উপরের কাজ
( রামরাবণের  যুদ্ধের  দৃশ্য )

ডান দিকের খিলানের উপরের কাজ
(
উপরেরাক্ষসদের সঙ্গে হনুমানের যুদ্ধ, নিচে, রাজ দরবারে রাবণ )
কৌণিক ভাস্কর্য ( Yali )- ১

কৌণিক ভাস্কর্য ( Yali ) - ২

পরশুরাম, ভক্ত হনুমান ও  অন্যান্য চিত্র 

পরশুরাম ও ভক্ত হনুমান

            এই  পঞ্চরত্ন  মন্দিরের  উত্তর  দিকে  দক্ষিণমুখী  দুটি  ইঁটের  তৈরি  দেউল  বর্তমান।  মন্দির  দুটি  ১৭৫৩  শকব্দে ( ১৮৩১  খ্রীষ্টাব্দে )  বা  ১৩৩৮  বঙ্গাব্দে  প্রতিষ্ঠিত।  দুটি  মন্দিরে  দুটি  আলাদা  প্রতিষ্ঠাফলক  আছে।  মন্দির  দুটির  সামনের  দেওয়াল  টেরাকোটা  অলংকারে  অলংকৃত।  যদিও  চড়া  রঙের  প্রলেপে  টেরাকোটা  অনেকটাই  ম্লান।  পশ্চিম  দিকের  মন্দিরটির  খিলানের  উপর  'সিংহাসনে  উপবিষ্ট  রামসীতা'  দেখা  যায়।  হনুমান-জাম্বুবান  এবং  এবং  ঢালতলোয়ার  হাতে  অন্যান্য  সৈন্য-সামন্তগণকেও  দেখা  যায়।  উপরে  ও  দরজার  দু  দিকে  অনেকগুলি  নারীমূর্তির  মুখাবয়ব  ক্ষোদিত।  এছাড়া  অন্যান্য  মূর্তিও  লক্ষ্য  করা যায়। পূর্বদিকের  মন্দিরটির  খিলানের  উপর  সপরিবারে  দুর্গা  মূর্তি  আছে।  এ  মন্দিরেও  অপর  মন্দিরের  মত  অন্যান্য  প্রতিকৃতি  উৎকীর্ণ।  মন্দির  দুটির  মধ্যে  দুটি  শিবলিঙ্গ  নিত্য  পূজিত। 

দুটি দেউল, ছোট সরকার বাড়ি, সুরুল 

সিংহাসনে  উপবিষ্ট  রামসীতা - ১

সিংহাসনে  উপবিষ্ট  রামসীতা ( একটু বড় করে ) - ২

পশ্চিম দিকের মন্দিরের প্রতিষ্ঠাফলক 

সপরিবারে দুর্গা
পূর্ব দিকের মন্দিরের প্রতিষ্ঠাফলক 

কালী ও  অন্যান্য চিত্র 

জগন্নাথ ও অন্য দুটি চিত্র 

কালী ও গণেশ 

জগন্নাথ 

নারীর মুখমণ্ডল - ১

নারীর মুখমণ্ডল - ২

            সরকার  বাড়ির  কাছেই,  শিবতলায়  পূর্বমুখী  একটি  দেউল  আছে।  ১৭৮৩  শকাব্দে  বা  ১২৬৮  বঙ্গাব্দে  ( ১৮৬১  খ্রীষ্টাব্দে )  এই  মন্দির  প্রতিষ্ঠিত।  প্রবেশপথের  উপর  খিলানে  রামসীতা  সিংহাসনে  উপবিষ্ট  দেখা  যায়।  এটির  উপর  আড়াআড়িভাবে  বীণাহস্তে  শিব  এবং  তাঁর  পাশে  সপারিষদ  পার্বতীকে  তাঁর  সন্তান  গণেশকে  আদর  করতে  দেখা  যায়।  পাশেই  একটি  আটচালা  মন্দির  আছে।  মন্দিরের  'টেরাকোটা'  সম্পূর্ণ  বিনষ্ট।

দেউল

দেউলের সামনের বিন্যাস

পার্বতীকে গান শোনাচ্ছিলেন শিব। শিবের গানে ছিল ছয় রাগ - ছত্রিশ রাগিনী। মহাদেবের গান শুনে বিষ্ণু আংশিক দ্রবীভূত হলেব্রহ্মা তা তাঁর কমণ্ডলুতে ধারণ করেন। বিষ্ণুর এই দ্রবীভূত অংশ থেকেই গঙ্গার জন্ম হয়

সিংহাসনে উপবিষ্ট রামসীতা

নকশা ও মৃত্যুলতা - ১

নকশা ও মৃত্যুলতা - ২

প্রতিষ্ঠাফলক


মন্দিরটি  পরিদর্শনের  তারিখ :  ০১.১১.২০১৯


  সহায়ক  গ্রন্থ :   
১)  বীরভূম  জেলার  পুরাকীর্তি : দেবকুমার  চক্রবর্তী
 
--------------------------------
                     
            আমার  ইমেল :  shyamalfpb@gmail.com   প্রয়োজনে  যোগাযোগ  করতে  পারেন।                            

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন