রবিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০১৫

Barodol Mela,krishnanagar,Nadia



বারোদোল  মেলা,  কৃষ্ণনগর  রাজবাড়ি  প্রাঙ্গণ,  নদিয়া 

শ্যামল  কুমার  ঘোষ 

            দোল  পূর্ণিমার  পর  দ্বিতীয়  একাদশী  ( শুক্লা  একাদশী )  তিথিতে  নদিয়া  জেলার  কৃষ্ণনগর  রাজবাড়ি  প্রাঙ্গণে  এক  বিরাট  মেলা  বসে।  মেলাটি  বারোদোলের  মেলা  নামে  পরিচিত।  অনেকের  ধারণা  দোলের  ১২  দিন  পরে  এই  মেলা  বসে।  কিন্তু  ধারণাটি  সম্পূর্ণ  ভুল।  তৎকালীন  নদিয়ারাজ  প্রতিষ্ঠিত  বিভিন্ন  স্থানের  ১২  টি  কৃষ্ণের  বিগ্রহ  এনে  রাজবাড়ির  দুর্গা  দালানের  পাশে  মণ্ডপ  করে  পৃথক  পৃথক  কাঠের  সিংহাসনে  সাজিয়ে  রাখা  হয়  এবং  তিন  দিনের  জন্য  সাধারণকে  দর্শন  করতে  দেওয়া  হয়।  মেলাটি  ২০০  বছরেরও  অধিক  পুরানো। 

             যদিও  বারোটি  বিগ্রহের  জন্যই  নাম  বারোদোল,  আসলে  কিন্তু  বিগ্রহের  সংখ্যা  বারো  নয়,  তের।  বারোদোলে  রাজবাড়ির  বড়  নারায়ণের  সঙ্গে  আরও  ১২  টি  কৃষ্ণ  বিগ্রহ  থাকেন।  এই  ১২  টি  বিগ্রহ  নদিয়ারাজ  কর্তৃক  বিভিন্ন  স্থানের  মন্দিরে  প্রতিষ্ঠিত  ও  নিত্য  পূজিত।  বিগ্রহগুলি  বিরহী,  শান্তিপুর,  সূত্রাগড়,  নবদ্বীপ,  অগ্রদ্বীপ,  তেহট্ট,  বহিরগাছি  প্রভৃতি  স্থানের।  অবশ্য  এখন  আর  সব  বিগ্রহ  রাজবাড়িতে  পাঠানো  হয়  না।  তেহট্টের  কৃষ্ণরায়  বিগ্রহ  আসা  বহুদিন  আগে  বন্ধ  হয়ে  গেছে।  অগ্রদ্বীপের  গোপীনাথ  বিগ্রহও  দুবছর  ধরে  পাঠানো  হচ্ছে  না।  তাই  বিগ্রহের  বদলে  গোপীনাথ  বিগ্রহের  ফটো  রাখা  হচ্ছে। 

   কবিতায়  বারোদোলের  বিগ্রহের  বিবরণ :

    বিরহীর  বলরাম,  শ্রী  গোপীমোহন। 
    লক্ষীকান্ত  বহিরগাছি,  গুরুর  ভবন।। 
    নারায়ণচন্দ্র  ছোট  ব্রহ্মন্য়দেব  সহ।            
    আর  বড়  নারায়ণ  রাজার  বিগ্রহ ।।
    গড়ের  গোপাল  পেয়ে  স্থান  শান্তিপুর। 
    অগ্রদ্বীপের  গোপীনাথ  স্থানে  ঘোষঠাকুর।। 
    নদীয়ার  গোপাল  তবে  নবদ্বীপ  স্থান। 
    ত্রিহট্টের  কৃষ্ণরায় -  অগ্রে  ফল  পান।।
    অতঃপর  কৃষ্ণচন্দ্র ;  গোবিন্দদেব  আর। 
    উভয়  বিগ্রহ  স্থান  -  আবাস  রাজার।।
    মদনগোপাল  শেষে  বিরহীতে  স্থিতি। 
    বারদোল  তের  দেব  -  আবিৰ্ভাব  ইতি।।
    হেরিলে  দেবেরে  হরে  আধি-ব্যাধি-ক্লেশ। 
    রাজবেশ  ফুলবেশ  রাখালের  বেশ।। 
    ভক্তিভরে  দেবনাম  করিলে  কীর্তন। 
    সকল  পাতক  নাশে  শান্তি  লভে  মন।। 
    ইতি  চৈত্র  শুক্ল  পক্ষে  শ্রীমন্  নদিয়াধীপস্য। 
    প্রাসাদোদ্যানে  বারদোলবিভূর্তনাং  দেববিগ্রহানাং।।
         ( লেখক : কৃষ্ণনগর  কলেজের  প্রাক্তন  অধ্যাপক  স্বর্গত  বিধুভূষণ  সেনগুপ্ত )

            বারদোলের  তিনদিন  নাটমন্দির  থেকে  এই  ১২  টি  বিগ্রহ   পূজা  পান।  পরে  রাজবাড়ির  দক্ষিণদিকের  ঠাকুরবাড়িতে  বড়  নারায়ণের  সঙ্গে  বিগ্রহগুলি  থাকেন  এবং  পূজা  পান।  একমাস  পর  বিগ্রহগুলি  পুনরায়  নিজ  নিজ  স্থানে  নিয়ে  যাওয়া  হয়।  বারদোলের  তিন  দিন  বিগ্রহগুলিকে  তিন  রকম  পোশাক  পরানো  হয়।  প্রথম  দিন  পরানো  হয়  রাজবেশ,  দ্বিতীয়  দিন  ফুলবেশ  এবং  তৃতীয়  তথা  শেষ  দিন  রাখালবেশ।  এই  তিন  দিন  রাজবাড়ির  একটা  অংশ  সাধারণের  জন্য  খুলে  দেওয়া  হয়।  প্রসঙ্গত  উল্লেখ্য,  হিমাচল  প্রদেশের  কুলুতে  দশেরা  উৎসবের  সময়  দূর-দুরান্তের  গ্রাম  থেকে  রঘুনাথজির  মূর্তিও  অনুরূপভাবে  আনা  হয়।  

            তৎকালীন  রাজনৈতিক-সামাজিক  অবস্থায় রাজমহিষীর  পক্ষে  কোন  মেলা  দেখা  সম্ভব  ছিল  না।  তাই  নাকি  মহারাজ  কৃষ্ণচন্দ্র  কৃষ্ণনগর  রাজবাড়িতে  এই  মেলার  প্রবর্তন  করেন  যাতে  রাজমহিষী  ও  অন্যান্য  অন্তপুরবাসিনীরা  কৃষ্ণনগর  রাজপ্রাসাদ  থেকেই  মেলা  দেখতে  পারেন।  অন্যমতে,  নদিয়ারাজ  গিরীশচন্দ্র  রাজমহিষীর  অনুরোধে  এই  মেলার  প্রবর্তন  করেন।  ১৯১০  খ্রিষ্টাব্দে  প্রকাশিত  Bengal  District Gazetteer,  Nadia  অনুযায়ী  জানা  যায়  যে  তখন  বারোদোলের  মেলায়  কুড়ি  হাজার মেলাযাত্রীর  সমাগম  হত। 

            রাজবাড়ির  মেলাটি  একমাস  ধরে  চলে।  নদিয়া  ও  পার্শবর্তী  অঞ্চলের  মানুষের  সমাগমে  একমাস  ধরে  মেলা  প্রাঙ্গণ  মুখরিত  হয়।  আগে  মেলা  উপলক্ষ্যে  যাত্রা,  পুতুল  নাচ  ও  সার্কাসের  আসর  বসতো।  এখন  সব  গ্রাম্য  মেলার  মত  এ  মেলারও  আকর্ষণ  কিছুটা  কমেছে।  তবুও  এখনো  যা  আছে  তাও  কম  নয়।  নিচের  ফটো  গুলো  ২০১৫  সালের  ফুলবেশের  দিন  তোলা।                         

শ্রীশ্রী  বলরাম

শ্রীশ্রী  বড়  নারায়ণ  চন্দ্র  ও  শ্রীশ্রী  ছোট  নারায়ণ  চন্দ্র 

শ্রীশ্রী  গোবিন্দ দেব - ১

শ্রীশ্রী  গোবিন্দ দেব - ২

শ্রীশ্রী  গোপীমোহন 

শ্রীশ্রী  নদের  গোপাল 

শ্রীশ্রী  গোপীনাথ  ( ফটো )

শ্রীশ্রী  গড়ের  গোপাল 

শ্রীশ্রী  গোষ্টবিহারী 

শ্রীশ্রী  নাড়ু  গোপাল 

শ্রীশ্রী লক্ষ্মীকান্ত  ও  শ্রীশ্রী  কৃষ্ণকান্ত 

শ্রীশ্রী  মদনগোপাল 
                           
                                        
         কৃষ্ণনগর  রাজবাড়ি  যেতে  হলে  শিয়ালদহ  স্টেশন  থেকে  সকালের  লালগোলা  প্যাসেঞ্জার  বা  কৃষ্ণনগর  লোকাল  ধরুন।  নামুন  কৃষ্ণনগরে।  স্টেশন  টোটোতে  বা  রিকশায়  পৌঁছে  যান   রাজবাড়ি।  ৩৪  নং  জাতীয়  সড়ক  ধরেও  যেতে  পারেন। 

 সহায়ক  গ্রন্থ :
            ১)  নদীয়া  কাহিনী : কুমুদনাথ  মল্লিক  (  মোহিত  রায়  সম্পাদিত )  

       শ্রীশ্রী  বলরাম  ও  শ্রীশ্রী  মদনগোপাল  মন্দির  সম্বন্ধে  জানতে  নিচের  লিঙ্কে  ক্লিক  করুন :  

                   শ্রীশ্রী মদনগোপাল  মন্দির,  বিরহী,  নদিয়া

       অগ্রদ্বীপের  শ্রীশ্রী গোপীনাথ  বিগ্রহের  কথা  জানতে  নিচের  লিঙ্কে  ক্লিক  করুন  : 

             শ্রীগোপীনাথ  জিউ  মন্দির, অগ্রদ্বীপ, পূর্ব  বর্ধমান

----------------------------------------------------------

রামায়ণের ৭টি খণ্ডের ৬৪ টি উপাখ্যান ও ১৮৫ টি টেরাকোটা ফলকের আলোকচিত্র সংবলিত আমার লেখা এবং 'রা প্রকাশন' কর্তৃক প্রকাশিত বই 'বাংলার টেরাকোটা মন্দিরে রামায়ণ' প্রকাশিত হয়েছে।


 বইটি ডাক যোগে সংগ্রহ করতে হলে যোগাযোগ করুন :  9038130757 এই নম্বরে। 

কলকাতার কলেজস্ট্রিটের মোড়ে দুই মোহিনীমোহন কাঞ্জিলালের কাপড়ের দোকানের মাঝের রাস্তা ১৫, শ্যামাচরণ দে স্ট্রিটের উপর অবস্থিত বিদ্যাসাগর টাওয়ারের দু'তলায় 'রা প্রকাশনে'র দোকান। ওখান থেকে বইটি সংগ্রহ করতে পারেন। কোনও অসুবিধা হলে উপরোক্ত নম্বরে ফোন করতে পারেন।

--------------------------------------------------------                                                                         

রবিবার, ৫ এপ্রিল, ২০১৫

Anandamayi Kali Temple,Krishnanagar,Nadia


আনন্দময়ী  কালীমন্দির,  কৃষ্ণনগর,  নদিয়া 

শ্যামল  কুমার  ঘোষ 


            মহারাজা  কৃষ্ণচন্দ্রের  প্রপৌত্র  মহারাজা  গিরীশচন্দ্র  রাজ্যলাভের  ( রাজত্বকাল  ১৮০২ - ১৮৪১ )  দু  বছর  পর  কৃষ্ণনগরে,  বর্তমান  আনন্দময়ীতলায়  একটি  মন্দির  নির্মাণ  করে  আনন্দময়ী  কালীমূর্তি  প্রতিষ্ঠা  করেন।  প্রতিষ্ঠাকাল  ১৭২৬  শকাব্দ  অর্থাৎ  ১৮০৪  খ্রিষ্টাব্দ।  মন্দিরটি  অল্প  উঁচু  ভিত্তিবেদির  উপর  স্থাপিত।  একটি  সমতল  ছাদ  বিশিষ্ট  দালানের  উপর  একটি  উচ্চ  শিখর  স্থাপিত  যা  বর্গাকার  চারচালা  শৈলীর।  মন্দিরটি  ইঁট  নির্মিত।  কোন  'টেরাকোটা'র  কাজ  নেই।  তবে  পঙ্খের  কিছু  কাজ  আছে।  লতাপাতার  কাজই  বেশি।  মন্দিরের  ভিতর  শায়িত  মহাকালের  উপর  আসীনা  দেবী  আনন্দময়ী  কালীমাতা।  মন্দিরটি  দক্ষিণমুখী।  মন্দির  প্রাঙ্গনে  আনন্দময়ী  কালী  ছাড়াও  আনন্দময়  শিব,  অন্যান্য  দেবদেবীর  মূর্তি  ও  প্রতিষ্ঠাতা  গিরীশচন্দ্রের  মূর্তি  আছে।  মন্দিরটির  পাদপীঠ  সংলগ্ন  প্রস্তরফলকের  সংস্কৃত  লিপি  এখন  খুবিই  অস্পষ্ট।  লিপিটি  এইরকম - 

  বেদাঙ্গেক্ষণগোত্রকৈরবকুলাধীপে  শকে  শ্রীযুতে 
  কৈলাশপ্রতিরূপকৃষ্ণনগরে  শ্রীমদ্  গিরীশোৎসবে। 
  নাম্নানন্দময়ী  শুভ্যেহনি  মহামায়া  মহাকালভৃৎ                
  রাজ্ঞা  শ্রীলগিরীশচন্দ্রধরণীপালেন  সংস্থাপিতা।

            শ্লোকটির  অর্থ,  কৈলাশতুল্য  কৃষ্ণনগরে  শ্রীমান  গিরীশচন্দ্রের  শুভ  উৎসব  দিনে  ১৭২৬  শকাব্দে  মহাকালধারিনী  আনন্দময়ী  নামে  দেবী  মহামায়াকে  রাজা  গিরীশচন্দ্র  স্থাপন  করলেন। 

                মন্দিরটির  পরিদর্শনের  তারিখ : ০১.০৪.২০১৫

শ্রীশ্রী  আনন্দময়ী  কালীমন্দির 

প্রবেশদ্বারের  খিলানের  উপরের  কাজ 

মন্দিরের  শিখরদেশ 

আনন্দময়  শিবলিঙ্গ 

বালগোপালের  মূর্তি 

মহারাজ  গিরীশচন্দ্রের  মূর্তি 

শ্রীশ্রী  আনন্দময়ী  কালীমাতা - ১

শ্রীশ্রী  আনন্দময়ী  কালীমাতা - ২

মন্দিরের  প্রতিষ্ঠাফলক 
     

            আনন্দময়ী  কালীমন্দিরে  যেতে  হলে  শিয়ালদহ  থেকে  সকালের  লালগোলা  প্যাসেঞ্জার  বা  কৃষ্ণনগর  লোকালে  উঠুন।  নামুন  কৃষ্ণনগরে।  স্টেশন  থেকে  টোটো  বা  অটোতে  পৌঁছে  যান  আনন্দময়ী  কালীতলার  মন্দিরে। 

সহায়ক  গ্রন্থ : 
               ১)  বাংলার  মন্দির  স্থাপত্য  ও  ভাস্কর্য :  প্রণব  রায় 

                                     *******
              
            পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য কালী মন্দির সম্বন্ধে জানতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন / লিংকের উপর আঙুল দিয়ে টোকা দিন :  


 ------------------------------------

রামায়ণের ৭টি খণ্ডের ৬৪ টি উপাখ্যান ও ১৮৫ টি টেরাকোটা ফলকের আলোকচিত্র সংবলিত আমার লেখা এবং 'রা প্রকাশন' কর্তৃক প্রকাশিত বই 'বাংলার টেরাকোটা মন্দিরে রামায়ণ' প্রকাশিত হয়েছে।


 বইটি ডাক যোগে সংগ্রহ করতে হলে যোগাযোগ করুন :  9038130757 এই নম্বরে। 

কলকাতার কলেজস্ট্রিটের মোড়ে দুই মোহিনীমোহন কাঞ্জিলালের কাপড়ের দোকানের মাঝের রাস্তা ১৫, শ্যামাচরণ দে স্ট্রিটের উপর অবস্থিত বিদ্যাসাগর টাওয়ারের দু'তলায় 'রা প্রকাশনে'র দোকান। ওখান থেকে বইটি সংগ্রহ করতে পারেন। কোনও অসুবিধা হলে উপরোক্ত নম্বরে ফোন করতে পারেন।

--------------------------------------------------------