মঙ্গলবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১

Adi Chitteshwari Durga Temple, Khagendra Chatterjee Road, Cossipore, Kolkata

 আদি চিত্তেশ্বরী দুর্গা মন্দির, খগেন্দ্র চ্যাটার্জী  রোড, কাশীপুর, কলকাতা 

                   শ্যামল কুমার ঘোষ

             আদি চিত্তেশ্বরী দুর্গা মন্দির কলকাতার কাশীপুর অঞ্চলে  খগেন্দ্র চ্যাটার্জী রোডে 'গান-অ্যান্ড-শেল' কারখানার গেটের পাশে  অবস্থিত। দেবীমূর্তিটি প্রাচীন হলেও মন্দিরটি অপেক্ষাকৃত নবীন।প্রাচীন চিত্রপুর বা চিৎপুর অঞ্চলে চিত্রেশ্বর বা চিত্তেশ্বর নামে এক  দুর্ধর্ষ ডাকাত বাস করত। লোকের কাছে সে 'চিতে ডাকাত' নামে  পরিচিত ছিল। বহু বছর আগে চিতে ডাকাত নিম কাঠের এক  দেবীমূর্তি তৈরি করে তান্ত্রিক মতে পূজা করতে থাকে। চিত্রেশ্বর  বা চিত্তেশ্বর ডাকাতের পূজিত দেবী বলে লোকমুখে দেবীর নাম হয়  'চিত্রেশ্বরী' বা 'চিত্তেশ্বরী'। কিংবদন্তি এই যে, কলকাতা চিৎপুর  রোডের নাম এই দেবীর নাম থেকেই হয়েছে।  

             চিতে ডাকাতের মৃত্যুর পর এই দেবী মূর্তির আর কোনো  খোঁজ পাওয়া যায় না। পরে, নৃসিংহ ব্রহ্মাচারী নামে এক তান্ত্রিক  সন্ন্যাসি দেবী মূর্তিটি উদ্ধার করে একটি কুঁড়েঘরে রেখে দেবীর পূজা  শুরু করেন। শ্রীচৈতন্যদেবের অন্তরঙ্গ পার্ষদ বাসুদেব ঘোষের  বংশধর বর্ধমান জেলার কুলাহ গ্রামের জমিদার মনোহর ঘোষ ও  তাঁর পত্নী শেওড়াফুলি রাজবংশের কন্যা এই চিত্তেশ্বরীর মন্দির স্থাপন  করে দেন এবং দেবীর নামে ভূসম্পত্তি দান করেন। নৃসিংহ ব্রম্ভচারী  সেবায়েত হিসাবে দেবীর সেবা করতে থাকেন। পরে নামজাদা  জমিদার গোবিন্দরাম মিত্র নতুন মন্দির করে দেন। এই ভাবে চলতে  থাকে। কয়েক প্রজন্ম পর সেবায়েত শ্যামসুন্দর ব্রহ্মচারী বিবাহ  করেন। তাঁর ছিল দুই কন্যা, যাদুমণি ও ক্ষেত্রমণি। যাদুমণির কোনো  সন্তান ছিল না। ক্ষেত্রমণির বিবাহ হয় হালিশহরের সাবর্ণ রায়চৌধুরী  পরিবারে। সেই বংশের বংশধর কাশীশ্বর রায়চৌধুরী বর্তমান সেবায়েত।        

            চিত্তেশ্বরী দেবীমূর্তি হল একক দশভুজা মহিষাসুরমর্দিনী  দুর্গামূর্তি। এখানে দুর্গার সঙ্গে তাঁর পুত্রকন্যারা অনুপস্থিত।  দেবীমূর্তির সঙ্গে একটি বাঘের মূর্তি আছে, যা সুন্দরবনের  ব্যাঘ্রদেবতা দক্ষিণরায়ের প্রতিভূ। এই ব্যাঘ্র মূর্তি মনে করিয়ে দেয় যে  এক সময় এই স্থান জঙ্গলাকীর্ণ ছিল এবং বাঘেরও উপদ্রব ছিল।  

            সামান্য উঁচু ভিত্তিবেদির উপর স্থাপিত, দক্ষিণমুখী মন্দিরটি  সমতল ছাদবিশিষ্ট একটি দালান। মন্দিরের মাঝের একটি ঘরে দেবী  চিত্তেশ্বরী প্রতিষ্ঠিত ও নিত্য পূজিত। বাঁ দিকের একটি ঘরে শিবলিঙ্গ  প্রতিষ্ঠিত ও নিত্য পূজিত। মন্দিরে কিছু পঙ্খের কাজ আছে। দুর্গা  পূজার সময় খুব ধুমধাম করে দেবীর পূজা অনুষ্ঠিত হয়। লোকশ্রুতি, চিতে ডাকাতের সময়ে দেবীর সামনে নরবলি দেওয়া হত। পরে  ছাগবলি চালু ছিল। তবে বর্তমান  মন্দিরে কোনো পশুবলি হয় না।  মন্দিরের সামনে চাঁদনি আকৃতির একটি নাটমন্দির আছে।  নাটমন্দিরের দক্ষিণের দেওয়ালে ও প্রবেশপথের উপরে দুটি  শ্বেতপাথরের প্রতিষ্ঠাফলক আছে। দুটি প্রতিষ্ঠাফলকেই মন্দিরটি ইং  ১৬১০ সালে প্রতিষ্ঠিত বলে উল্লেখ আছে। নাটমন্দিরের দেওয়ালে  নিবদ্ধ বোর্ডে লেখা লিপি :

            " শ্রীশ্রী ঁজয়চন্ডী চিত্তেশ্বরী 

       শ্রীশ্রী ঁচিত্তেশ্বরী মাতা পশ্চিমবঙ্গের প্রাচীন স্থাপিত চিতে  ডাকাতের আরাধ্য  দূর্গা দেবী। বহুবছর আগে চিতে ডাকাত গঙ্গার  জলে ভেসে আসা নিম কাঠ দিয়ে দশভুজা চিত্তেশ্বরীর মূর্ত্তি এই স্থানে স্থাপন করে পূজো শুরু করেন। কালক্রমে চিতে ডাকাতের মৃত্যুর  পর দূর্গা গভীর জঙ্গলে পড়ে রইলেন। পরবর্ত্তী কালে নৃসিংহ  ব্রহ্মচারী নামে এক তান্ত্রিক সাধু ইং ১৫৮৬ খ্রিস্টাব্দে দেবী চিত্তেশ্বরীর  স্বপ্নাদেশ পেয়ে  যথাস্থানে পুনরায় জঙ্গলে দেবীকে স্থাপন করে পূজো শুরু  করেন। উক্ত স্থানের তৎকালীন জমিদার মনোহর ঘোষ ইং ১৬১০  খ্ৰীষ্টাব্দে চিত্তেশ্বরীর এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করে দেন। চিৎপুর রোড  এই চিত্তেশ্বরী দেবীর নাম থেকে খ্যাত হয়েছে। চিত্তেশ্বরী দূর্গার এই দারু  বিগ্রহ পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম প্রাচীন পুরাকীর্ত্তি। বর্তমান সেবায়েত  শ্রী কাশীশ্বর।"              

              তারাপদ সাঁতরার লেখা কলকাতার মন্দির মসজিদ গ্রন্থ  থেকে পাই,  লেখক যখন এই মন্দিরটি পরিদর্শন করেন তখন  তিনি নাটমন্দিরের দেওয়ালে নিবদ্ধ বোর্ডে নিম্নলিখিত উৎকীর্ণ  লিপি  দেখতে পান :

             "৩৮৮ বৎসর পূর্ব্বে শ্রীচৈতন্যদেবের অন্তরঙ্গ পার্ষদ অগ্রদ্বীপের ও ঘোষপাড়ার বাসুদেব ঘোষের বংশধর বর্দ্ধমান ও  মুর্শিদাবাদ জেলার সীমানায় কুলাই গ্রামের জমিদার মনোহর ঘোষ ও  তাহার পত্নী সেওড়াফুলী রাজার কন্যা উভয়ে ইং ১৫৮৬ সালে এই  চিত্তেশ্বরী দেবীর মন্দির স্থাপন করিয়া কিছু ভূসম্পত্তিসহ তদীয়  সেবাইত মহন্ত নৃসিংহ ব্রহ্মচারিকে দান করেন। চিতুডাকাত এই  দেবীকে পূজা করিতেন। কলিকাতা চিৎপুর  রোড এই চিত্তেশ্বরী  দেবীর নাম হইতে আখ্যাত। উপস্থিত সেবিকা -  বিল্বমাতা  ব্রহ্মচারিণী।  ইং ১৯৭৪। "  

            রাধারমণ মিত্র তাঁর কলিকাতা - দর্পণ ( প্রথম পর্ব ) গ্রন্থে  লিখেছেন :

      " মনোহর ঘোষ ওরফে মহাদেব ঘোষ চিত্তেশ্বরী দেবীর প্রতিষ্ঠা  করেন। প্রতিষ্ঠার তারিখ ম্যাককাচ্চন সাহেব ১৫৮৬ বলে উল্লেখ  করেছেন। এ তারিখ তিনি কোথা থেকে পেলেন? মন্দিরের মাথায়  লেখা আছে ১৬১০ খ্রীষ্টাব্দ। এই তারিখই ঠিক বলে মনে হয়। মনোহর  ঘোষ ছিলেন হুগলি জেলার আখনার বাসিন্দা। ইনি ছিলেন প্রথমে  রাজা টোডরমলের গোমস্তা, পরে হন মুহুরি। শেষে সুবর্ণরেখা  নদীতীরে বাস করেন। মোগল-পাঠান যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে সুবর্ণরেখা  ত্যাগ ক'রে চিৎপুরে এসে বাস করেন। সেই সময়ে চিত্তেশ্বরী দেবীর  প্রতিষ্ঠা করেন।" 

            প্রতিষ্ঠাকালের হেরফের সম্পর্কে তারাপদ সাঁতরার লেখা  কলকাতার মন্দির মসজিদ গ্রন্থে দেবাশিস বসু সম্পাদিত প্রাণকৃষ্ণ  দত্ত : 'কলিকাতার ইতিবৃত্ত ও অন্যান্য রচনা ' গ্রন্থ থেকে উদ্ধৃতি  দিয়েছেন,  " ... সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে,নৃসিংহের পর  তাঁর শিষ্য রামনৃসিংহ ব্রহ্মচারী ও প্রশিষ্য ক্ষেত্র ব্রহ্মচারী চিত্তেশ্বরীর  মোহন্ত হন। ঘটনাচক্রে বিবাহ করতে বাধ্য হন ক্ষেত্র ব্রহ্মচারী। তাঁর  দুই কন্যা। জ্যেষ্ঠা যাদুমণির বিবাহ হয় এক অশীতিপর বৃদ্ধের সঙ্গে।  কনিষ্ঠা ক্ষেত্রমণি বড়িশার সাবর্ণ-বংশীয় আনন্দমোহন রায়চোধুরীর  সঙ্গে পরিণীতা হন। বর্তমান সেবায়েত শ্রীরবীন্দ্রকুমার রায়চৌধুরী  আনন্দমোহনের প্রপৌত্র। কাজেই এই চিত্তেশ্বরী মন্দিরের ইতিহাস  মাত্র সাত প্রজন্মের। " 

            শেষে শ্রী সাঁতরা  তাঁর লেখা পূর্বোক্ত গ্রন্থে এই মন্দিরের  প্রাচীনত্ব নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।

             কী ভাবে যাবেন?

            কলকাতার শ্যামবাজার থেকে বি. টি. রোড গামী যে কোন  বাসে উঠে চিড়িয়া মোড়ে নামুন। সেখান থেকে অটোতে উঠে বিবি  বাজারে নামুন। সেখান থেকে একটু দূরেই মন্দির। চিড়িয়া মোড়  থেকে খগেন্দ্র চ্যাটার্জী রোড ধরে হেঁটেও মন্দির যেতে পারেন। ট্রেনে  দমদম স্টেশনে নেমে অটোতে চিড়িয়া মোড় এসে মন্দিরে যেতে  পারেন। বর্তমান সেবায়েত কাশীশ্বর রায়চৌধুরীর ফোন নম্বর :  ৬২৮৯২৪৯৪৮৬, প্রয়োজনে তাঁকে ফোন করতে পারেন।

            মন্দিরটি পরিদর্শনের তারিখ :  ২৪.০৯.২০২১   

আদি চিত্তেশ্বরী মা - ১

আদি চিত্তেশ্বরী মন্দিরের প্রবেশ পথ

আদি চিত্তেশ্বরী মন্দির, কাশীপুর

মন্দিরের সামনের নাটমন্দির ( বাইরে থেকে )

মন্দিরের সামনের নাটমন্দির ( ভিতর থেকে )

নাটমন্দিরের দক্ষিণের দেওয়ালে লাগানো প্রতিষ্ঠাফলক

আদি চিত্তেশ্বরী মা - ২

আদি চিত্তেশ্বরী মা - ৩

শিবলিঙ্গ

              কলকাতার অন্যান্য মন্দির সম্বন্ধে জানতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন / লিংকের উপর আঙুল দিয়ে টোকা দিন : 

                        কলকাতার  মন্দির 

----------------------------------------------------------

রামায়ণের ৭টি খণ্ডের ৬৪ টি উপাখ্যান ও ১৮৫ টি টেরাকোটা ফলকের আলোকচিত্র সংবলিত আমার লেখা এবং 'রা প্রকাশন' কর্তৃক প্রকাশিত বই 'বাংলার টেরাকোটা মন্দিরে রামায়ণ' প্রকাশিত হয়েছে।


 বইটি ডাক যোগে সংগ্রহ করতে হলে যোগাযোগ করুন :  9038130757 এই নম্বরে। 

কলকাতার কলেজস্ট্রিটের মোড়ে দুই মোহিনীমোহন কাঞ্জিলালের কাপড়ের দোকানের মাঝের রাস্তা ১৫, শ্যামাচরণ দে স্ট্রিটের উপর অবস্থিত বিদ্যাসাগর টাওয়ারের দু'তলায় 'রা প্রকাশনে'র দোকান। ওখান থেকে বইটি সংগ্রহ করতে পারেন। কোনও অসুবিধা হলে উপরোক্ত নম্বরে ফোন করতে পারেন।

--------------------------------------------------------

সোমবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১

Kripamoyi Kali Temple / Bamandas Mukhopadhyay Kali Bari, Cossipore Road, North Kolkata

 কৃপাময়ী কালীমন্দির / বামনদাস মুখোপাধ্যায়  কালীবাড়ি, কাশীপুর রোড, উত্তর  কলকাতা 

শ্যামল কুমার ঘোষ

             কৃপাময়ী কালী মন্দির উত্তর কলকাতার কাশীপুর উদ্যান  বাটির কাছে ( ৮৭ বি কাশীপুর রোড ) অবস্থিত একটি প্রাচীন কালীমন্দির। যদিও মন্দিরটি বামনদাস মুখোপাধ্যায় কালীবাড়ি  নামেই বেশি পরিচিত। ১৮২৫ শকাব্দের ( ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে ) মাঘী  পূর্ণিমার দিন মন্দিরটি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠা করেন বামনদাস  মুখোপাধ্যায়।  

            বামনদাস ছিলেন কনৌজের কবি শ্রীহর্ষের বংশধারার ফুলিয়া শাখার পণ্ডিত নীলকণ্ঠ ঠাকুরের পুত্র শ্রীধরের অধঃস্তন সপ্তম  পুরুষ। ১৮৪৭ খ্রিস্টাব্দে হুগলি জেলার গোস্বামী মালিপাড়া গ্রামে  তিনি জন্ম গ্রহণ করেন। কর্মজীবনে সফল ব্যবসায়ী ও কয়লা খনির  মালিক বামনদাস ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দে কাশীপুরে ব্রিটিশ এটর্নি জন হার্ট  সাহেবের ৩৫ বিঘা বাগান বাড়ি ক্রয় করে ঠাকুর বাড়ি, বাগান, পুকুর,  সিংহ ফটক ও এই নবরত্ন মন্দির নির্মাণ করেন। বিগ্রহের পূজা ও  মন্দির ইত্যাদি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কলকাতা, বর্ধমান, হুগলি ও  যশোহর জেলায় সম্পত্তি ক্রয় করে তিনি দেবতার নামে উৎসর্গ  করেন। ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি মন্দিরের জন্য ট্রাস্টি বোর্ড গঠন  করেন। ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে এখানেই তিনি পরলোক গমন করেন। 

            উঁচু ভিত্তিবেদির স্থাপিত, ত্রিখিলান প্রবেশপথযুক্ত, দক্ষিণমুখী  মন্দিরটি নবরত্ন শৈলীর। মন্দিরের কার্নিস সোজা। মন্দিরের  খিলানের এক একটি স্তম্ভ 'কলাগেছ্যা' রীতির গোল ও সরু স্তম্ভগুচ্ছের সমষ্টি।  খিলানের উপর পঙ্খের সুন্দর কাজ আছে। মূল ফটকের উপরে ও  গলি-প্রবেশপথের উপরেও পঙ্খের কাজ বর্তমান। মন্দিরের সামনে  ফাঁকা উঠোন এবং তাকে ঘিরে চকমিলানো অনেকগুলি ঘর।  বারান্দায় ইংল্যান্ডের বার্মিংহাম থেকে আনা ঢালাই লোহার স্তম্ভ  ব্যবহার করা হয়। তখন এদেশে শ্বেতপাথর পাওয়া যেত না। তাই  ইতালি থেকে শ্বেতপাথর ও বার্ম  ( বর্তমান মায়নামার ) থেকে  জানলা দরজার জন্য সেগুন কাঠ আনা হয়।  

            গর্ভগৃহে শ্বেতপাথরের সিংহাসনের উপর কষ্টিপাথরের  কৃপাময়ী কালী মূর্তি, কষ্টিপাথরের দুৰ্গেশ্বর ও ক্ষেত্রেশ্বর নামক দুটি  শিবলিঙ্গ এবং রঘুনাথ নারায়ণ শিলা প্রতিষ্ঠিত ও নিত্য পূজিত।  মন্দিরে নিত্য পূজা ছাড়াও সারা বছর বিশ্বকর্মা ও কার্তিক পূজা ছাড়া  সমস্ত পূজা-পার্বণ অনুষ্ঠিত হয়। দুর্গা পূজাও অনুষ্ঠিত হয়। মন্দিরে  কোনো বলিদান হয় না। অবশ্য আগেও ছিল না। আগ  কালীপূজার  সময় খুব ধুমধাম হত। কয়েক দিন ধরে যাত্রা হত। তুবড়ি  প্রতিযোগিতা হত। অনেক লোকজন খাওয়ানো হত। কাঙালি  ভোজন করা হত। এখন আর সেই জাঁকজমক নেই। মন্দিরে বৈষ্ণব মতে  পূজা হয়। মাকে নিরামিষ ভোগ দেওয়া হয়। 

            মন্দির খোলা থাকার সময় : সকাল ৮ টা থেকে ১০ টা এবং  বিকাল ৫ টা থেকে রাত  ৭ টা।    

            ১৯৩৯ সালে সুভাষচন্দ্র বসু কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত  হওয়ার পর তাঁকে এখানে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এই ঠাকুর বাড়ি  C.M.C. কর্তৃক 'হেরিটেজ' ঘোষণা করা হয়েছে।

            মন্দিরটি পরিদর্শনের তারিখ : ২৫.০৯.২০২১ 

বামনদাস কালী বাড়ির ফটক 

গলি প্রবেশপথের উপরে পঙ্খের কাজ

কৃপাময়ী কালী মন্দির, কাশীপুর, কলকাতা  

মন্দিরের ত্রিখিলান বিন্যাস 

স্তম্ভ গুচ্ছ 

মাঝের খিলানের পঙ্খের কাজ 

পশ্চিম দিকের বারান্দা 

ঢালাই লোহার থামের নিচের অংশ 

ঢালাই লোহার থামের উপরের অংশ

ফলক - ১

ফলক - ২

কৃপাময়ী মা - ১

কৃপাময়ী মা - ২

রঘুনাথ  নারায়ণ  শিলা

ক্ষেত্রেশ্বর শিবলিঙ্গ 
       সহায়ক সূত্র :                                    
                     ১)  বামনদাস  মুখোপাধ্যায়ের  প্রপৌত্র  অসীম  মুখোপাধ্যায়ের  বক্তব্য 
                    ২)  মন্দিরে  লাগানো  ফলক
           
                                                                *******
            পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য কালী মন্দির সম্বন্ধে জানতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন / লিংকের উপর আঙুল দিয়ে টোকা দিন : 

  কলকাতার অন্যান্য মন্দির সম্বন্ধে জানতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন / লিংকের উপর আঙুল দিয়ে টোকা দিন : 

                        কলকাতার  মন্দির  

----------------------------------------------------------

রামায়ণের ৭টি খণ্ডের ৬৪ টি উপাখ্যান ও ১৮৫ টি টেরাকোটা ফলকের আলোকচিত্র সংবলিত আমার লেখা এবং 'রা প্রকাশন' কর্তৃক প্রকাশিত বই 'বাংলার টেরাকোটা মন্দিরে রামায়ণ' প্রকাশিত হয়েছে।


 বইটি ডাক যোগে সংগ্রহ করতে হলে যোগাযোগ করুন :  9038130757 এই নম্বরে। 

কলকাতার কলেজস্ট্রিটের মোড়ে দুই মোহিনীমোহন কাঞ্জিলালের কাপড়ের দোকানের মাঝের রাস্তা ১৫, শ্যামাচরণ দে স্ট্রিটের উপর অবস্থিত বিদ্যাসাগর টাওয়ারের দু'তলায় 'রা প্রকাশনে'র দোকান। ওখান থেকে বইটি সংগ্রহ করতে পারেন। কোনও অসুবিধা হলে উপরোক্ত নম্বরে ফোন করতে পারেন।

--------------------------------------------------------

রবিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১

Nistarini Kali Temple / Goho Kali Temple, 11 Brindaban Bose Lane, North Kolkata

 নিস্তারিণী  কালীমন্দির / গোহো  কালীমন্দির,  বৃন্দাবন  বসু  লেন,  উত্তর  কলকাতা 

শ্যামল  কুমার  ঘোষ 

            উত্তর  কলকাতার  হেদুয়া  পার্ক  কে  ডান  দিকে  রেখে  বিধান  সরণি'র  বাঁ  ফুটপাত  ধরে  যদি  আপনি  হাতিবাগানের  দিকে  হাঁটতে  থাকেন  তবে  একটি  প্রসিদ্ধ  তেলেভাজার  দোকান  ( লক্ষ্মীনারায়ণ  সাউ  এন্ড  সন্স )  পড়বে।  এই  দোকানের  পাশের  গলি  বৃন্দাবন  বসু  লেন।  গলিতে  ঢুকে  একটু  এগুলেই  ডান  দিকে  দেখতে  পাবেন  নিস্তারিণী  কালীমন্দির  অর্থাৎ  গোহোদের  কালীমন্দির। 

            উঁচু  ভিত্তিবেদির  উপর  স্থাপিত,  দক্ষিণমুখী  মন্দিরটি  দালান  শৈলীর।  গর্ভগৃহের  সামনে  অলিন্দ।  গর্ভগৃহে  কষ্টিপাথরে  নির্মিত  'নিস্তারিণী'  কালীর  বিগ্রহ  শ্বেতপাথরের  সিংহাসনে  প্রতিষ্ঠিত  ও  নিত্য  পূজিত।  মন্দিরটি  ১২৫৭  বঙ্গাব্দে ( ১৮৫০ খ্রীষ্টাব্দে )  প্রতিষ্ঠিত  হয়।  প্রতিষ্ঠা  করেন  শিবচন্দ্র  গোহো।  মন্দিরের  সামনে  থামগুলির  ফাঁকে  ফাঁকে  কাঠের  'ঝিলমিল' ( Venetian  blind )  লাগানো  আছে।  মন্দিরের  সামনের  দেওয়ালে  একটি  প্রতিষ্ঠাফলক  আছে।  তাতে  শিবচন্দ্রের  জায়গায়  শিবচরণ *  লেখা  হয়েছে।  মন্দিরের  বাঁ  দিকে  একটি  আটচালা  শিবমন্দির  আছে।  গর্ভগৃহে  'শান্তিনাথ'  নামক  কষ্টিপাথরের  শিবলিঙ্গ  নিত্য  পূজিত। 

            দক্ষিণেশ্বরের  ভবতারিণীর  বিগ্রহ  তৈরি  করেছিলেন  পূর্ব  বর্ধমান  জেলার  কাটোয়া  মহকুমার  অন্তর্গত  দাঁইহাটের  শিল্পী  নবীন  ভাস্কর।  সেই  সময়  তিনি  তিনটি  মূর্তি  তৈরি  করেছিলেন।  প্রথম  যে  মূর্তিটি  তিনি  তৈরি  করেন  তা  'নিস্তারিণী'  নামে  এই  মন্দিরে  ১২৫৭  বঙ্গাব্দে ( ১৮৫০ খ্রীষ্টাব্দে )  প্রতিষ্ঠিত  হয়।  দ্বিতীয়  মূর্তিটি  'ব্রহ্মময়ী'  কালী  রূপে  প্রতিষ্ঠিত  হয়  বরানগরের  প্রামাণিক  কালীবাড়িতে  ১২৫৯  বঙ্গাব্দে ( ১৮৫৩ খ্রীষ্টাব্দে )।  প্রতিষ্ঠা  করেন  রামগোপাল  দে  ও  দুর্গাপ্রসাদ  দে।  সম্পর্কে  তাঁরা  ছিলেন  কাকা-ভাইপো।  তৃতীয়  মূর্তিটি  'ভবতারিণী'  নামে  দক্ষিণেশ্বরের  মন্দিরে  ১৮৫৫ খ্রীষ্টাব্দে  প্রতিষ্ঠিত  হয়।  অনেকে  বলেন,  প্রথম  দুটি  মূর্তি  দক্ষিণেশ্বর  মন্দিরের  গর্ভগৃহের  সঙ্গে  মানানসই  না  হওয়ার  জন্য  রানি  রাসমণি  গ্রহণ  করেন  নি। 

            মন্দিরে  তিন  জন  পুরোহিত  আছেন।  হরপ্রসাদ  চক্রবর্তী,  সোমনাথ  ব্যানার্জী  ও  মনোজ  মুখার্জী।  এঁরা  পুরুষানুক্রমে  মন্দিরে  পূজা  করছেন।  মন্দির  খোলা  থাকার  সময় :

                      সকাল  ৪ টা  ৩০ মিনিট  থেকে  দুপুর  ১২ টা এবং  বিকাল  ৪ টা  ৩০ মিনিট  থেকে  রাত   ৯ টা।  

            মন্দিরে  এখনও  পাঁঠাবলি  প্রথা  চালু  আছে। 

            মন্দিরটি  পরিদর্শনের  তারিখ :  ১৬.০৯.২০২১

        * কলকাতার  মন্দির-মসজিদ :  তারাপদ  সাঁতরা

 

গোহো কালীমন্দির 

শান্তিনাথ শিবমন্দির ও গোহো কালীমন্দির 
কাঠের  'ঝিলমিল' ( Venetian  blind )

 প্রতিষ্ঠাফলক

নিস্তারিণী মা - ১

নিস্তারিণী মা - ২

নিস্তারিণী মা - ৩


শান্তিনাথ শিবলিঙ্গ

********

                  পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য কালী মন্দির সম্বন্ধে জানতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন / লিংকের উপর আঙুল দিয়ে টোকা দিন : 

                  কলকাতার অন্যান্য মন্দির সম্বন্ধে জানতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন / লিংকের উপর আঙুল দিয়ে টোকা দিন : 

                        কলকাতার  মন্দির

---------------------------------------

রামায়ণের ৭টি খণ্ডের ৬৪ টি উপাখ্যান ও ১৮৫ টি টেরাকোটা ফলকের আলোকচিত্র সংবলিত আমার লেখা এবং 'রা প্রকাশন' কর্তৃক প্রকাশিত বই 'বাংলার টেরাকোটা মন্দিরে রামায়ণ' প্রকাশিত হয়েছে।


 বইটি ডাক যোগে সংগ্রহ করতে হলে যোগাযোগ করুন :  9038130757 এই নম্বরে। 

কলকাতার কলেজস্ট্রিটের মোড়ে দুই মোহিনীমোহন কাঞ্জিলালের কাপড়ের দোকানের মাঝের রাস্তা ১৫, শ্যামাচরণ দে স্ট্রিটের উপর অবস্থিত বিদ্যাসাগর টাওয়ারের দু'তলায় 'রা প্রকাশনে'র দোকান। ওখান থেকে বইটি সংগ্রহ করতে পারেন। কোনও অসুবিধা হলে উপরোক্ত নম্বরে ফোন করতে পারেন।
 
---------------------------------------

বুধবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২১

Siddheswari Kali Bari, Kuthighat, Baranagar, North 24 Parganas

সিদ্ধেশ্বরী  কালী  বাড়ি,  কুঠিঘাট,  বরানগর,  উত্তর  ২৪  পরগনা 

               শ্যামল  কুমার  ঘোষ 

            বরানগর  কুঠিঘাটের  জয়  মিত্র  কালীবাড়ির  কিছুটা  দক্ষিণ-পূর্বে  কুঠিঘাট  অটো  স্ট্যান্ডের  পাশে,  বি. কে. মৈত্র  রোডে  সিদ্ধেশ্বরী  কালীর  দালান  মন্দিরটি  উল্লেখযোগ্য।  দালানটি  দক্ষিণমুখী  ও  প্রশস্ত।  বিগ্রহ  দারু  নির্মিত।  বরানগরে  এই  কালী  খুবিই  প্রসিদ্ধা।  

            শ্রীরামকৃষ্ণ  এই  মন্দিরে  কয়েকবার  এসেছিলেন।  একবার  কেশবচন্দ্র  খুব  অসুস্থ  হলে  শ্রীরামকৃষ্ণ  তাঁর  আরোগ্য  কামনায়  এই  মায়ের  কাছে  ডাব-চিনি  মানত  করেন।  এখনও  বেলুড়  মঠের  মহারাজরা  তাঁদের  মঠের  কেউ  অসুস্থ  হলে  ডাব-চিনি  মানত  করেন  এবং  সেরে  ওঠার  পর  ডাব-চিনি  সহযোগে  এই  মায়ের  কাছে  পুজো  দেন।

            মন্দিরের  বর্তমান  সেবায়েত-পুরোহিত  দেবকুমার  চট্টোপাধ্যায়।  প্রায়  দুই  শত  বছর  আগে  রটন্তী  কালী  পূজার  দিন  স্থানীয়  জমিদার  জয়নারায়ণ  বন্দোপাধ্যায়  এই  মন্দির  প্রতিষ্ঠা করেন।  দৈনিক  পূজা  ছাড়াও  মন্দিরে  মূল  তিনটি  উৎসব  পালন  করা  হয়।  রটন্তী  কালী  পূজার  দিন  ব্যৎসরিক  পূজা,  দীপাবলি  কালী  পূজা  ও  ফলহারিণী  কালী  পূজা  অনুষ্ঠিত  হয়।  এছাড়া  চৈত্র,  পৌষ  ও  ভাদ্র  মাসে  ধানের  লক্ষ্মী  পূজাও  এই  মন্দিরে  অনুষ্ঠিত  হয়  এবং  সেই  উপলক্ষ্যে  মায়ের  বিশেষ  পূজা,  ভোগ  ও আরতি  হয়ে  থাকে।  উৎসব  উপলক্ষ্যে  মন্দিরে  প্রচুর  ভক্ত  সমাগম  হয়।  মন্দিরে  ডানদিকের  একটি  ঘরে  বাবা  সিদ্ধেশ্বর  নামক  শুভ্র  বর্ণের  একটি  ছোট  শিবলিঙ্গ  প্রতিষ্ঠিত  এবং  নিত্যপূজিত।       

কী  ভাবে  যাবেন ?

            হাওড়া,  শিয়ালদহ  বা  শ্যামবাজার  থেকে  বি. টি. রোড  গামী  বাসে  উঠে  সিঁথির  মোড়ে  নামুন।  সেখান  থেকে  কুঠিঘাট  গামী  অটোতে  উঠে  কুঠিঘাট  অটো  স্ট্যান্ডে  নামুন। অটো  স্ট্যান্ডেই  মন্দির। 

            মন্দিরটি  পরিদর্শনের  তারিখ :  ১৮.০৮.২০২১ 


সিদ্ধেশ্বরী কালী বাড়ি, কুঠিঘাট, বরানগর 

সিদ্ধেশ্বরী কালী মাতা - ১

সিদ্ধেশ্বরী কালী মাতা - ২

সিদ্ধেশ্বরী কালী মাতা - ৩

সহায়ক  গ্রন্থ /  সূত্র : 
                 ১)  বাংলার  মন্দির  স্থাপত্য  ও  ভাস্কর্য :  প্রণব  রায়। 

                                              *********
            পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য কালী মন্দির সম্বন্ধে জানতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন / লিংকের উপর আঙুল দিয়ে টোকা দিন : 

----------------------------------------------------------

রামায়ণের ৭টি খণ্ডের ৬৪ টি উপাখ্যান ও ১৮৫ টি টেরাকোটা ফলকের আলোকচিত্র সংবলিত আমার লেখা এবং 'রা প্রকাশন' কর্তৃক প্রকাশিত বই 'বাংলার টেরাকোটা মন্দিরে রামায়ণ' প্রকাশিত হয়েছে।


 বইটি ডাক যোগে সংগ্রহ করতে হলে যোগাযোগ করুন :  9038130757 এই নম্বরে। 

কলকাতার কলেজস্ট্রিটের মোড়ে দুই মোহিনীমোহন কাঞ্জিলালের কাপড়ের দোকানের মাঝের রাস্তা ১৫, শ্যামাচরণ দে স্ট্রিটের উপর অবস্থিত বিদ্যাসাগর টাওয়ারের দু'তলায় 'রা প্রকাশনে'র দোকান। ওখান থেকে বইটি সংগ্রহ করতে পারেন। কোনও অসুবিধা হলে উপরোক্ত নম্বরে ফোন করতে পারেন।

--------------------------------------------------------