মুক্তকেশী কালী মন্দির ও দক্ষিনেশ্বর বুড়ো শিব মন্দির, আড়িয়াদহ, উত্তর ২৪ পরগনা
শ্যামল কুমার ঘোষ
উত্তর ২৪ পরগনা জেলার আড়িয়াদহের গঙ্গার ধারে শ্মশানের কাছে অবস্থিত মুক্তকেশী কালী মন্দির। চৈতন্যপূর্বযুগের তান্ত্রিক সাধকদের সাধন-ক্ষেত্র ছিল এই আড়িয়াদহ শ্মশান। সমতল ছাদ বিশিষ্ট একটি দালান মন্দির। মন্দিরটি পশ্চিমমুখী, কিন্তু মায়ের গর্ভগৃহ দক্ষিণমুখী। এখানে উল্লেখ্য, মন্দিরের পশ্চিম দিকে রাস্তা।
মন্দিরটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১২৪৭ বঙ্গাব্দে। মন্দিরের প্রবেশ-দ্বারের ডানদিকে একটি শ্বেতপাথরের প্রতিষ্ঠাফলক আছে। মন্দিরটি প্রথমে ছিল তালপাতার। স্থানীয় বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার মন্দিরটির দেখাশোনা করেন। ঠাকুর রামকৃষ্ণ এই মন্দিরে আসতেন। তিনি এসে পুরোহিতের আসনে বসে মাকে পুজোও করেছেন। এখানে উল্লেখ্য, ঠাকুরের মায়ের দাহকার্য এই আড়িয়াদহ শ্মশানে সম্পন্ন হয়।
আগে এখানে পাঁঠা বলি হত। এখন চালকুমড়া, আখ, কলা ইত্যাদি বলি দেওয়া হয়। নিত্য পূজা ছাড়াও মন্দিরে জ্যৈষ্ঠ মাসে ফলহারিণী কালী পূজা, কার্তিক মাসে দীপান্বিতা কালী পূজা ও মাঘ মাসে কৃষ্ণা চতুর্থীতে রটন্তী কালী পূজা মহা সমারোহে পালিত হয়ে থাকে। মন্দিরে শান্তিনাথ শিবলিঙ্গও নিত্য পূজিত।
সকল ৭ টা থেকে ১১ টা ও বিকাল ৫ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত মায়ের মন্দির খোলা থাকে। তবে কালীপূজা, দুর্গাপূজা, অক্ষয় তৃতীয়া ও অন্নকূট উৎসবে মন্দির সারাদিনই খোলা থাকে।
মুক্তকেশী কালী, আড়িয়াদহ - ১ |
মুক্তকেশী কালী, আড়িয়াদহ - ২ |
প্রতিষ্ঠাফলক |
মুক্তকেশী কালী মন্দিরের বিপরীত দিকে, শ্মশানের পাশে অবস্থিত দক্ষিণেশ্বর বুড়ো শিবের মন্দির। প্রবাদ : বুড়ো শিব স্বয়ম্ভূ। রাজা হোসেন শাহের আমলে কোন এক ব্রাহ্মণ স্বপ্নে দেখেন, মহাদেব তাঁকে বলছেন, বহুদিন গঙ্গার ধারে জঙ্গলের মধ্যে পড়ে আছি। একটু সেবার ব্যবস্থা কর। পরদিন ব্রাহ্মণ গঙ্গার ধারে গিয়ে দেখেন সত্যিই একটি শিবলিঙ্গ রয়েছে। শোনা যায়, বড়লাট লর্ড ওয়ারেন হেস্টিংস ভারতের বিভিন্ন প্রাচীন কীর্তির বিবরণ সংগ্রহ করার সময় লোকমুখে এই কাহিনী শুনে কৌতূহলী হয়ে শিবলিঙ্গটিকে পরীক্ষা করার জন্য মাটি খোঁড়েন। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও তিনি শিবলিঙ্গটির তল পাননি। মন্দিরের একটি ফলক থেকে জানা যায় যে বানরাজার আমলে মন্দিরটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯০ খ্রীষ্টাব্দে মন্দিরটির সংস্কার করা হয়।
দক্ষিণেশ্বর বুড়ো শিব মন্দিরের প্রবেশ-দ্বার |
দক্ষিণেশ্বর বুড়ো শিব, আড়িয়াদহ |
সংস্কার-ফলক |
কী ভাবে যাবেন ?
বাসে বা ট্রেনে দক্ষিণেশ্বরে এসে নামুন। সেখান থেকে অটো, টোটো বা রিক্সায় আড়িয়াদহ ফেরি ঘাটে নামুন। কাছেই মন্দির।
সহায়ক গ্রন্থ
১) পশ্চিমবঙ্গ ভ্রমণ ও দর্শন : ভূপাতিরঞ্জন দাস
পশ্চিম বঙ্গের অন্যান্য কালী মন্দির সম্বন্ধে জানতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন :
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন