নবরত্ন ও দামোদর মন্দির,
মণ্ডলপরিবারের ছোট তরফের বাড়ি,
হদল নারায়ণপুর, বাঁকুড়া
শ্যামল কুমার ঘোষ
গ্রামে ঢুকে ব্রহ্মানী দেবীর মন্দিরকে বাঁ দিকে রেখে উত্তরে এগুলে ডান দিকে পড়বে মণ্ডলদের ছোট তরফের ভদ্রাসন। বাড়ির প্রাঙ্গণে মন্দির। মন্দিরটি উঁচু ভিত্তিবেদির উপর স্থাপিত, দক্ষিণমুখী ও নবরত্ন শৈলীর। এই মন্দিরের চেহারায় যে গির্জার আদল দেখা যায় তা অভিনব। সামনে ত্রিখিলান প্রবেশপথযুক্ত অলিন্দ। সামনে, পূর্ব ও পশ্চিম দিকে 'টেরাকোটা'-অলংকরণ আছে। 'টেরাকোটা'র বিষয় : কৃষ্ণলীলা, পৌরাণিক-সামাজিক দৃশ্য ও ফুলকারি সজ্জা। মন্দিরের সামনের দিকের মাঝের খিলানশীর্ষে অর্জুনের লক্ষ্যভেদের বড় প্যানেলটি খুবই সুন্দর ও অভিনব। পর পর ঘোড়া, সওয়ার, হাতি, সিংহ প্রভৃতি বসানো মৃত্যুলতা দেওয়ালের কোণে বা গায়ে খাড়া করে লাগানোই সর্বত্রপ্রচলিত রীতি। কিন্তু এখানে সেগুলি প্রতি কোণের দু পাশে সমতলভাবে নিবদ্ধ। মন্দিরে চার সারি বিভিন্ন মুখের ফলক আছে যা অন্য মন্দিরে দেখা যায় না। আর আছে বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র বাজনরত বাজিয়ে। মন্দিরে কোন প্রতিষ্ঠাফলক নেই। তবে পারিবারিক সূত্রানুসারে, বাবুরাম মণ্ডল তাঁর নাবালক পুত্র গঙ্গাপ্রসাদের নামে এ মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠাকাল খ্রীষ্টীয় ১৯শ শতাব্দীর প্রথম দিক। মন্দিরটিতে এখন সংস্কারের কাজ হচ্ছে।
ছোটতরফের বসতবাড়ির ফটক থেকে রাস্তা ধরে উত্তর দিকে সামান্য এগুলে ডান দিকে পড়বে দামোদর ( নারায়ণ শিলা ) মন্দির। সামান্য উঁচু ভিত্তিবেদির উপর স্থাপিত, দক্ষিণমুখী মন্দিরটি পঞ্চরত্ন শৈলীর। সামনে ত্রিখিলান প্রবেশপথবিশিষ্ট অলিন্দ। 'টেরাকোটা'-অলংকরণ কেবল সামনের দেওয়ালের খিলানগুলির উপর নিবদ্ধ। বাঁ দিকের খিলানের উপর অনন্তশায়ী বিষ্ণু ও মাঝের খিলানের উপর লঙ্কাযুদ্ধের 'টেরাকোটা'-ভাস্কর্য। ডান দিকের খিলানের উপর ভীষ্মের শরশয্যা। যদিও এ 'টেরাকোটা' এখন অর্ধেক ভগ্ন। গর্ভগৃহে কোন বিগ্রহ নেই। মন্দিরটি এখন ভগ্ন ও পরিত্যক্ত।
বাঁকুড়া জেলার পাত্রসায়র ব্লকের অন্তর্গত একটি গ্রাম হদল-নারায়ণপুর। আসলে গ্রামটি নারায়ণপুর। অন্য নারায়ণপুরের সঙ্গে পার্থক্য করার জন্য নারায়ণপুরের পাশের গ্রাম হদলের সঙ্গে যোগ করে হদল-নারায়ণপুর নামে অভিহিত করা হয়। এই গ্রামে যেতে হলে বর্ধমানের আলিশা বাসস্ট্যান্ড থেকে বাঁকুড়ার বাসে উঠে ধগড়িয়া-তে নামুন। সেখান থেকে টোটোতে ৪.৫ কিমি দূরের গ্রাম নারায়ণপুর। আরামবাগ বা বাঁকুড়া থেকেও এখানে যেতে পারেন। থাকার জন্য সোনামুখীতে 'সোনামুখী পৌর আবাসিক ভবন' ও অন্যান্য অনেক লজ আছে।
মণ্ডল উপাধিধারী ভূতপূর্ব জমিদার-পরিবারের তিন তরফের প্রতিষ্ঠিত কয়েকটি 'টেরাকোটা' মন্দির ও রাসমঞ্চ প্রভৃতি এখানকার প্রধান পুরাকীর্তি। এ পরিবারের মুচিরাম ঘোষ, মল্লরাজ গোপাল সিংহের আমলে ( ১৭২০-১৭৫২ খ্রীষ্টাব্দ ), প্রাক্তন নিবাস নীলপুর থেকে উঠে এসে এখানে বসতি স্থাপন করেন। গোপাল সিংহের সভাসদ ও সংলগ্ন গ্রাম রামপুরের অধিবাসী শুভঙ্কর দাস তাঁকে মল্ল-রাজদরবারে পরিচয় করিয়ে দেন। কিন্তু নিজ কৃতিত্বে অল্পকালের মধ্যেই তিনি এ অঞ্চলের প্রশাসক নিযুক্ত হন এবং 'মণ্ডল' উপাধি লাভ করেন। পরে, বিস্তীর্ণ জমিদারির অধিকারী হন। নীলের কারবারেও এই পরিবার প্রভূত অর্থ সঞ্চয় করেন। সেই ঐশ্বর্যের ফলশ্রুতি, এখানকার প্রধান পুরাকীর্তিগুলি। এখানে আমি ছোট তরফের প্রতিষ্ঠিত নবরত্ন দামোদর মন্দির নিয়ে লিখব। মণ্ডলদের অন্য দুটি বাড়ির মন্দির সম্বন্ধে জানতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন :
গ্রামে ঢুকে ব্রহ্মানী দেবীর মন্দিরকে বাঁ দিকে রেখে উত্তরে এগুলে ডান দিকে পড়বে মণ্ডলদের ছোট তরফের ভদ্রাসন। বাড়ির প্রাঙ্গণে মন্দির। মন্দিরটি উঁচু ভিত্তিবেদির উপর স্থাপিত, দক্ষিণমুখী ও নবরত্ন শৈলীর। এই মন্দিরের চেহারায় যে গির্জার আদল দেখা যায় তা অভিনব। সামনে ত্রিখিলান প্রবেশপথযুক্ত অলিন্দ। সামনে, পূর্ব ও পশ্চিম দিকে 'টেরাকোটা'-অলংকরণ আছে। 'টেরাকোটা'র বিষয় : কৃষ্ণলীলা, পৌরাণিক-সামাজিক দৃশ্য ও ফুলকারি সজ্জা। মন্দিরের সামনের দিকের মাঝের খিলানশীর্ষে অর্জুনের লক্ষ্যভেদের বড় প্যানেলটি খুবই সুন্দর ও অভিনব। পর পর ঘোড়া, সওয়ার, হাতি, সিংহ প্রভৃতি বসানো মৃত্যুলতা দেওয়ালের কোণে বা গায়ে খাড়া করে লাগানোই সর্বত্রপ্রচলিত রীতি। কিন্তু এখানে সেগুলি প্রতি কোণের দু পাশে সমতলভাবে নিবদ্ধ। মন্দিরে চার সারি বিভিন্ন মুখের ফলক আছে যা অন্য মন্দিরে দেখা যায় না। আর আছে বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র বাজনরত বাজিয়ে। মন্দিরে কোন প্রতিষ্ঠাফলক নেই। তবে পারিবারিক সূত্রানুসারে, বাবুরাম মণ্ডল তাঁর নাবালক পুত্র গঙ্গাপ্রসাদের নামে এ মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠাকাল খ্রীষ্টীয় ১৯শ শতাব্দীর প্রথম দিক। মন্দিরটিতে এখন সংস্কারের কাজ হচ্ছে।
মন্দিরটি পরিদর্শনের তারিখ : ২৪.০৩.২০১৯
রামরাজা |
নবরত্ন মন্দির, ছোটতরফ, হদল-নারায়ণপুর |
মন্দিরের সামনের বিন্যাস |
বাঁ দিকের খিলানের উপরের কাজ |
রামরাজা |
সংকীর্তনের সময় মহাপ্রভুর ভাব সমাধি |
অর্জুনের লক্ষ্যভেদ ( মাঝের খিলানের উপরে ) |
ডান দিকের খিলানের উপরের কাজ |
বাতায়নে মুখ - ১ |
বাতায়নে মুখ - ২ |
বাতায়নে মুখ - ৩ |
বাতায়নে মুখ - ৪ |
কুলুঙ্গির মধ্যের কাজ - ১ |
কুলুঙ্গির মধ্যের কাজ - ২ |
কুলুঙ্গির মধ্যের কাজ - ৩ |
কুলুঙ্গির মধ্যের কাজ - ৪ |
কুলুঙ্গির মধ্যের কাজ - ৫ |
কুলুঙ্গির মধ্যের কাজ - ৬ |
কুলুঙ্গির মধ্যের কাজ - ৭ |
কুলুঙ্গির মধ্যের কাজ - ৮ |
কুলুঙ্গির মধ্যের কাজ - ৯ |
কুলুঙ্গির মধ্যের কাজ - ১০ |
কুলুঙ্গির মধ্যের কাজ - ১১ |
কুলুঙ্গির মধ্যের কাজ - ১২ |
কুলুঙ্গির মধ্যের কাজ - ১৩ |
কুলুঙ্গির মধ্যের কাজ - ১৪ |
বলবান |
নকশা |
কুলুঙ্গির কাজ ও মৃত্যুলতা |
মৃত্যুলতা - ১ |
মৃত্যুলতা - ২ |
মৃত্যুলতা - ৩ |
মৃত্যুলতা - ৪ |
মৃত্যুলতা - ৫ |
মৃত্যুলতা - ৬ |
ছোটতরফের বসতবাড়ির ফটক থেকে রাস্তা ধরে উত্তর দিকে সামান্য এগুলে ডান দিকে পড়বে দামোদর ( নারায়ণ শিলা ) মন্দির। সামান্য উঁচু ভিত্তিবেদির উপর স্থাপিত, দক্ষিণমুখী মন্দিরটি পঞ্চরত্ন শৈলীর। সামনে ত্রিখিলান প্রবেশপথবিশিষ্ট অলিন্দ। 'টেরাকোটা'-অলংকরণ কেবল সামনের দেওয়ালের খিলানগুলির উপর নিবদ্ধ। বাঁ দিকের খিলানের উপর অনন্তশায়ী বিষ্ণু ও মাঝের খিলানের উপর লঙ্কাযুদ্ধের 'টেরাকোটা'-ভাস্কর্য। ডান দিকের খিলানের উপর ভীষ্মের শরশয্যা। যদিও এ 'টেরাকোটা' এখন অর্ধেক ভগ্ন। গর্ভগৃহে কোন বিগ্রহ নেই। মন্দিরটি এখন ভগ্ন ও পরিত্যক্ত।
মন্দিরটি পরিদর্শনের তারিখ : ২৪.০৩.২০১৯
মন্দিরের ত্রিখিলান বিন্যাস |
অনন্তশায়ী বিষ্ণু ( বাঁ দিকের খিলানের উপর ) |
লঙ্কাযুদ্ধ ( মাঝের খিলানের উপর ) |
লঙ্কাযুদ্ধ ( বড় করে ) |
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন