দামোদর মন্দির, মণ্ডলপরিবারের মেজতরফের বাড়িঘর সংলগ্ন,
হদল নারায়ণপুর, বাঁকুড়া
শ্যামল কুমার ঘোষ
বাঁকুড়া জেলার পাত্রসায়র ব্লকের অন্তর্গত একটি একটি গ্রাম হদল-নারায়ণপুর। আসলে গ্রামটি নারায়ণপুর। অন্য নারায়ণপুরের সঙ্গে পার্থক্য করার জন্য নারায়ণপুরের পাশের গ্রাম হদলের সঙ্গে যোগ করে হদল-নারায়ণপুর নামে অভিহিত করা হয়। এই গ্রামে যেতে হলে বর্ধমানের আলিশা বাসস্ট্যান্ড থেকে বাঁকুড়ার বাসে উঠে ধগড়িয়া-তে নামুন। সেখান থেকে টোটোতে ৪.৫ কিমি দূরের গ্রাম নারায়ণপুর। আরামবাগ বা বাঁকুড়া থেকেও এখানে যেতে পারেন। থাকার জন্য সোনামুখীতে 'সোনামুখী পৌর আবাসিক ভবন' ও অন্যান্য অনেক লজ আছে।
মণ্ডল উপাধিধারী ভূতপূর্ব জমিদার-পরিবারের তিন তরফের প্রতিষ্ঠিত কয়েকটি 'টেরাকোটা' মন্দির ও রাসমঞ্চ প্রভৃতি এখানকার প্রধান পুরাকীর্তি। এ পরিবারের মুচিরাম ঘোষ, মল্লরাজ গোপাল সিংহের আমলে ( ১৭২০-১৭৫২ খ্রীষ্টাব্দ ), প্রাক্তন নিবাস নীলপুর থেকে উঠে এসে এখানে বসতি স্থাপন করেন। গোপাল সিংহের সভাসদ ও সংলগ্ন গ্রাম রামপুরের অধিবাসী শুভঙ্কর দাস তাঁকে মল্ল-রাজদরবারে পরিচয় করিয়ে দেন। কিন্তু নিজ কৃতিত্বে অল্পকালের মধ্যেই তিনি এ অঞ্চলের প্রশাসক নিযুক্ত হন এবং মণ্ডল উপাধি লাভ করেন। পরে, বিস্তীর্ণ জমিদারির অধিকারী হন। নীলের কারবারেও এই পরিবার প্রভূত অর্থ সঞ্চয় করেন। সেই ঐশ্বর্যের ফলশ্রুতি, এখানকার প্রধান পুরাকীর্তিগুলি। এখানে আমি মেজ তরফের প্রতিষ্ঠিত দামোদর মন্দির নিয়ে লিখব। মণ্ডলদের অন্য দুটি বাড়ির মন্দির সম্বন্ধে জানতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন :
২) রাসমঞ্চ ও দামোদর মন্দির, মণ্ডল পরিবার ( বড় তরফ )
গ্রামের প্রধান পথ ধরে, ছোটতরফের বাড়ি ছাড়িয়ে আরও উত্তরে এগুলে বড়তরফের বাড়ির বাঁ দিকের বাড়িঘরের পিছনে, মেজতরফের দামোদর মন্দিরে পৌঁছানো যায়। মন্দিরটি অল্প উঁচু ভিত্তিবেদির উপর স্থাপিত, পূর্বমুখী ও নবরত্ন শৈলীর। পূর্ব ও উত্তর দিকে ত্রিখিলান প্রবেশপথযুক্ত অলিন্দ। মন্দিরে প্রবেশের একটিই দরজা, সামনে। উত্তর দিকে ভরাটকরা দরজা। দক্ষিণ দিকের ঢাকা বারান্দায় উপরে যাওয়ার সিঁড়ি। পূর্ব ও উত্তর দিকের তিনটি করে খিলানের উপরে, বাঁকানো কার্নিসের নিচের এক সারি করে কুলুঙ্গির মধ্যে ও দুই প্রান্তের এক সারি করে কুলুঙ্গির মধ্যে 'টেরাকোটা'র ফলক আছে। টেরাকোটা'র বিষয় : রামায়ণ-মহাভারতের কাহিনী, দশাবতার, কৃষ্ণলীলা, দেবদেবী প্রভৃতি। এদের মধ্যে পূর্ব দিকের খিলানশীর্ষে কৃষ্ণের চূড়াবাঁধা, অনন্তশায়ী বিষ্ণু, রামরাবণের যুদ্ধ ও ষড়ভুজ গৌরাঙ্গের ভাস্কর্যগুলি প্রথম শ্রেণীর। গর্ভগৃহে শ্রীশ্রী দামোদর ( নারায়ণ শিলা ) নিত্য পূজিত।
মন্দিরটি পরিদর্শনের তারিখ : ২৪.০৩.২০১৯
সহায়ক গ্রন্থ :
১) বাঁকুড়া জেলার পুরাকীর্তি : অমিয়কুমার বন্দোপাধ্যায়
*****
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন