অন্নপূর্ণা মন্দির, গোলক কয়াল ঠাকুরবাড়ি,
হরিশ চ্যাটার্জী স্ট্রিট, ভবানীপুর, কলকাতা
হরিশ চ্যাটার্জী স্ট্রিট থেকে এই ঠাকুরবাড়ির গলি পথে ঢুকে একটু এগিয়ে প্রথমে বাঁ দিকে এবং তারপর ডান দিকে ঘুরলে প্রথমেই পড়বে একটি আটচালা শিবমন্দির। অল্প উঁচু ভিত্তিবেদির উপর স্থাপিত, দক্ষিণমুখী শিবমন্দিরে একটি কষ্টিপাথরের শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠিত ও নিত্য পূজিত। শিবমন্দিরের গায়ে একটি শ্বেতপাথরের ফলক আছে। এর পর এই শিবমন্দিরের লাগোয়া কয়েকটি ঘর সংবলিত, দক্ষিণমুখী ও একটি লম্বা-টানা অলিন্দযুক্ত দালান শৈলীর কয়ালদের ঠাকুরবাড়ি। বাঁ দিকের প্রথম ঘরটিতে আছেন রাধামাধব ও রাধারানি বিগ্রহ। রাধামাধব কালো পাথরের ও রাধারানি ধাতুময়ী। এছাড়াও এই ঘরে আছেন জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রা, কালী, শণি, নাড়ু গোপাল ইত্যাদি অনেক দেবদেবী। সমস্ত বিগ্রহই নিত্য পূজিত।
এই ঘরের ডানদিকের একটি ঘরে দক্ষিণ দিকে মুখ করে আছেন দারু নির্মিত মা অন্নপূর্ণার মূর্তি। এখানে উল্লেখ্য, মা অন্নপূর্ণার প্রচলিত যে মূর্তি সর্বত্র দেখা যায় তা হল, অন্নপূর্ণার ডান হাতে অন্নদান করার হাতা, বাঁ হাতে অন্নপাত্র এবং তাঁর ডান পাশে শিব ভিক্ষাপাত্র হাতে বা ভিক্ষার ঝোলা কাঁধে দাঁড়িয়ে থাকেন। এ মন্দিরে দেখা যায়, একটি কাঠের সিংহাসনে মা অন্নপূর্ণা উপবিষ্টা। তাঁর ডান হাতে অন্নদান করার হাতা, বাঁ হাতে অন্নপাত্র। কিন্তু অন্নপূর্ণার ডান পাশে জায়গা না থাকার জন্য অন্নপূর্ণার সামনে, ঘরের বাঁ দিকে পূর্ব দিকে মুখ করে দণ্ডায়মান অবস্থায় আছেন গঙ্গাধর শিব। এই বিগ্রহ সিমেন্টের। শিবের ডান হাতে একটি ডমরু ঝোলানো ও ডান কাঁধে একটি কাপড়ের ঝোলা আছে। এছাড়াও এই ঘরে আছেন শ্বেতপাথরের বিষ্ণু ও লক্ষ্মী মূর্তি। বিগ্রহগুলি নিত্য পূজিত।
১২৮৯ বঙ্গাব্দে অর্থাৎ ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে গোলক চন্দ্র কয়াল কালীঘাটের আদিগঙ্গার তীরে এই ঠাকুরবাড়ি ও সংলগ্ন ঘাটটি প্রতিষ্ঠা করেন। ঠাকুরবাড়ির সংলগ্ন ঘাটটি গোলক কয়ালের ঘাট নামে পরিচিত। নিত্য পূজা ছাড়াও চৈত্র মাসে অন্নপূজার সময় অন্নপূর্ণার বিশেষ পূজা ও অন্নকুট উৎসব পালিত হয়। বাকি দেবদেবীর বছরের নির্দিষ্ট সময়ে বিশেষ পূজাও অনুষ্ঠিত হয়। কলকাতায় দারুনির্মিত অন্নপূর্ণার মূর্তি আর কোথাও দেখা যায় না। ঠাকুরবাড়ির বাইরের দেওয়ালে কলকাতা কর্পোরেশন কর্তৃক লেখা ( 'গোলক কয়াল ঘাট গ্রেড ১ হেরিটেজের মর্যাদা প্রাপ্ত' ) একটি ধাতব ফলক লাগানো আছে।
![]() |
রাধামাধব ও রাধারানি |
![]() |
দারু নির্মিত মা অন্নপূর্ণা |
![]() |
গঙ্গাধর শিব |
![]() |
শ্বেতপাথরের বিষ্ণু ও লক্ষ্মী মূর্তি |
![]() |
কষ্টিপাথরের শিবলিঙ্গ |
![]() |
দেওয়ালে লাগানো শ্বেতপাথরের ফলক |
![]() |
কলকাতা কর্পোরেশন কর্তৃক প্রদত্ত গ্রেড ১ হেরিটেজ ফলক |
কী ভাবে যাবেন?
ধর্মতলা থেকে ভবানীপুর গামী যেকোনও বাসে উঠে চক্রবেড়িয়াতে নামুন। সেখান থেকে সুহাসিনী গাঙ্গুলি সরণি ধরে আদি গঙ্গার দিকে হাঁটলে গোলক কয়াল ঠাকুরবাড়ি পৌঁছে যাবেন।
----------------------------------------
রামায়ণের ৭টি খণ্ডের ৬৪ টি উপাখ্যান ও ১৮৫ টি টেরাকোটা ফলকের আলোকচিত্র সংবলিত আমার লেখা এবং 'রা প্রকাশন' কর্তৃক প্রকাশিত বই 'বাংলার টেরাকোটা মন্দিরে রামায়ণ' প্রকাশিত হয়েছে। বইটির মুদ্রিত মূল্য - ৫৯৯ টাকা।
বইটি ডাক যোগে সংগ্রহ করতে হলে যোগাযোগ করুন : 9038130757 এই নম্বরে।