রবিবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

Gopinath Jiu Temple, Agradwip, Purba Bardhaman

     শ্রীগোপীনাথ  জিউ  মন্দির, অগ্রদ্বীপ, পূর্ব  বর্ধমান 

 শ্যামল কুমার ঘোষ 

            পূর্ব  বর্ধমান  জেলার  কাটোয়া  মহকুমার  অন্তর্গত  ভাগীরথীর বাম  তীরস্থ  একটি  প্রাচীন  গ্রাম  অগ্রদ্বীপ।  কীর্তিনাশিনী  ভাগীরথী বার  বার  গ্রামটিকে  বিধ্বস্থ  করেছে।  তাই  গ্রামটি  কখনও ভাগীরথীর  বাম  তীরে  আবার  কখনও  বা  ডান  তীরে।  পূর্বতন  অগ্রদ্বীপ  বর্তমান  স্থানের  ১.৫  কিমি  উত্তরে  অবস্থিত  ছিল।  গঙ্গার  ভাঙনে  প্রাচীন  গ্রাম  বিলুপ্ত  হওয়ায়  নতুন  করে  গ্রাম  পত্তন  হয়েছে।  হাওড়া  থেকে  হাওড়া-বাণ্ডেল-কাটোয়া  রেলপথে  ১৩১  কিমি  দূরের  একটি রেলস্টেশন  অগ্রদ্বীপ। ( শিয়ালদহ  থেকেও  যাওয়া  যায়।)  গোপীনাথ  মন্দিরে  যেতে  হলে  স্টেশনে নেমে  অটোতে  চেপে  গঙ্গার  ঘাটে  যেতে  হবে।  সময়  লাগবে   মিনিট  পনেরো।  নৌকায়  গঙ্গা  পেরিয়ে  কিছুটা  হাঁটলে অগ্রদ্বীপের  গোপীনাথ  মন্দিরে  পৌঁছে  যাবেন।  শিয়ালদহ-লালগোলা  রেলপথে  বেথুয়াডহরি  স্টেশনে  নেমে  বাসেও  যেতে  পারেন। 

            অগ্রদ্বীপ  কথার  অর্থ,  আগে  বা  প্রথমে  যে  দ্বীপ  জেগে  ওঠে।  ভাগীরথীর  প্রথম  জেগে  ওঠা  দ্বীপ  অগ্রদ্বীপ।  প্রাচীন  কাল  থেকেই  অগ্রদ্বীপ  তীর্থস্থান  বলে  খ্যাত।  দিগ্বিজয়প্রকাশে  লেখা  আছে  যে  বারুণীতে  অগ্রদ্বীপে  গঙ্গা-স্নান  করলে  বারাণসীতে  গঙ্গা-স্নানের  সমান  পুণ্য  লাভ  হয়।  কথিত  আছে,  এখানকার  ফল  মাহাত্মের  জন্য  রাজা  বিক্রমাদিত্য  এখানে  গঙ্গাস্নান  করতে  আসতেন।  অগ্রদ্বীপে  বারুণী  উৎসব  উপলক্ষ্যে  স্নানের  রেওয়াজ  শ্রীগোপীনাথ  জিউ  প্রতিষ্ঠার  আগে  থেকেই।  ঘটনাচক্রে  গোপীনাথজির  প্রতিষ্ঠাতা  ও  প্রথম  সেবায়েত  গোবিন্দ  ঘোষের    তিরোধান  উৎসব  চৈত্র  মাসের  কৃষ্ণা  একাদশী  এবং  ত্রয়োদশীর  বারুণী  স্নানের  সময়ের  ব্যবধান  মাত্র  একদিন। 

            কাটোয়া  শহর  থেকে  ১৬  কিমি  উত্তর-পশ্চিমে  প্রাচীন  কুলাই  গ্রাম।  এই  গ্রামের  উত্তররাঢ়ীয়  কায়স্থ-ঘোষবংশে  গোবিন্দের  জন্ম।  তাঁর  পিতার  নাম  বল্লভ  ঘোষ।  গোবিন্দ  শ্রীচৈতন্যদেবের  অন্যতম  পার্ষদ  ছিলেন।  চৈতন্যদেব  একবার  গোবিন্দ  ঘোষ  ও  আরও  কয়েকজনকে  নিয়ে  বৃন্দাবন  যাওয়ার  পথে  গঙ্গার  ধার  দিয়ে  যেতে  যেতে  একটি  গ্রামের  এক  গৃহস্থ  বাড়িতে  মধ্যাহ্ন  ভোজনের  পর  মুখশুদ্ধি  চাইলে  গোবিন্দ  ঘোষ  এক  বাড়ি  থেকে  একটি  হরীতকী  চেয়ে  এনে  মহাপ্রভুকে  তার  থেকে  এক  টুকরো  দিয়ে  বাকিটুকু  রেখে  দিলেন।  গ্রাম  পরিক্রমাকালে  পরদিন  অগ্রদ্বীপে  এসে  একটি  বাড়িতে  মধ্যাহ্ন  ভোজনের  পর  চৈতন্যদেব  পুনরায়  মুখশুদ্ধি  চাইলে  গোবিন্দ  আগের  দিনের  সঞ্চিত  হরীতকীর  বাকি  অংশটুকু  মহাপ্রভুর  দিকে  এগিয়ে  দিলেন।  মহাপ্রভু  হেঁসে  বললেন,  "গোবিন্দ,  আমার  সঙ্গে  তোমার  যাওয়া  হবে  না।  তোমার  এখনও  বিষয়  বাসনা  যায়  নি।"   এই  কথা  শুনে  গোবিন্দ  অঝোরে  কাঁদতে  কাঁদতে  বললেন,  "প্রভু,  তোমার  সেবা  করব  বলেই  গৃহ  থেকে  বেরিয়েছি,  আমি  তোমাকে  ছেড়ে  কিছুতেই  যাব  না।"  মহাপ্রভু  তাঁকে  বললেন,  "দুঃখ  পেয়ো  না  গোবিন্দ।  তুমি  এখানে  থেকে  গৃহীজীবন-যাপন  কর   এবং  এখানে  এক  বিষ্ণুবিগ্রহ  স্থাপন  করে  তাঁর  সেবা  কর,  তাহলেই   আমার  সেবা  করা  হবে।"  গোবিন্দ  গঙ্গাতীরে  একটা  ছোট্ট  কুটির  তৈরি  করে  সাধন-ভজনে  মন  দিলেন।  পরে  কষ্টিপাথরে  ( মতান্তরে,  ব্রহ্মশিলা )  নির্মিত  গোপীনাথ  বিগ্রহের  প্রতিষ্ঠা  করলেন।  অপরূপ  এই  গোপীনাথ  বিগ্রহ !  মূর্তিটি  ভাস্কর্য  শিল্পের  এক  অনুপম  সৃষ্টি।  মন্দিরের  সামনে  একলা  দাঁড়িয়ে  হঠাৎ  এই  শ্রীমূর্তি  দেখলে  মনে  হয়  যেন  স্বয়ং  গোপীনাথ    বৃন্দাবন  থেকে  অগ্রদ্বীপে  হাজির  হয়েছেন।                

            গোপীনাথ  বিগ্রহ  প্রতিষ্ঠার  পর  ঘোষঠাকুর ( গোবিন্দ  ঘোষ  কে  এই  নামেই  ডাকা  হত )  বহুকাল  জীবিত  ছিলেন।  অগ্রদ্বীপের  নিকটবর্তী  কাশীপুর  বিষ্ণুতলায়  সিংহ-বংশে  তাঁর  বিবাহ  হয়  এবং  বৎসরান্তে  একটি  সন্তানের  জন্ম  দিতে  গিয়ে  তাঁর  স্ত্রীর  মৃত্যু  হয়।  গোবিন্দ  মাতৃহারা  শিশুকে  মানুষ  করতে  থাকেন  এবং  একই  সঙ্গে  পুত্ররূপে  গোপীনাথের  সেবাও  করতে  থাকেন।  পাঁচ  বছর  বয়সে  তাঁর  শিশু  পুত্রটি  মারা  যায়।  গোবিন্দ  শোকে  মুহ্যমান  হয়ে  পড়েন  এবং  মৃত্যু  বরণ  করবেন  বলে  সিদ্ধান্ত  নেন।  কথিত  আছে,  গোপীনাথ  নাকি  তখন  তাঁকে  সান্তনা  দেন  এবং  প্রতিশ্রুতি  দেন  যে  তিনি  স্বয়ং  তাঁর  পুত্রের  করণীয়  কাজগুলি  করবেন।  এমনকি  শ্রাদ্ধশান্তিও।  কোন  এক  বারুণী  উৎসবের  পূর্বে  চৈত্র  মাসের  একাদশী  তিথিতে  ঘোষঠাকুর  ইহলোক  ত্যাগ  করেন।  জনশ্রুতি,  সেদিন  গোপীনাথ  বিগ্রহের  চোখে  বিন্দু  বিন্দু  জল  দেখা  দিয়েছিল।  ঘোষঠাকুরকে  মন্দিরের  পাশে  সমাধি  দেওয়া  হয়।  স্বয়ং  গোপীনাথ  শ্রাদ্ধের  বাস  ও  কুশাঙ্গুরীয়  পরিধান  করে  ঘোষঠাকুরের  শ্রাদ্ধ  করেন।  এখনও  প্রতি  বছর  ওই  তিথিতে  বিগ্রহকে  শ্রাদ্ধের  বসন  পরানো  হয়  এবং  তাঁকে  দিয়ে  পিণ্ড  দান  করানো  হয়।

            অন্য  মতে,  মহাপ্রভুর  আদেশে  গোপীনাথ  বিগ্রহ  প্রতিষ্ঠার   আগেই  গোবিন্দ্র  ঘোষ  বিবাহিত  ছিলেন।  তাঁর  একটি  পুত্র  সন্তানও  জন্মেছিল। অকালে  পুত্রটি  মারা  গেলে  তিনি  শোকে  মুহ্যমান  হয়ে  পড়েন  এবং  সংসারের  প্রতি  তাঁর  বৈরাগ্য  আসে।  এই  সময়  তিনি  মহাপ্রভুর  কৃপা  লাভ  করেন।  গোপীনাথ  বিগ্রহ  প্রতিষ্ঠার  পর  গোবিন্দ  গোপীনাথের  মধ্যেই  নিজের  পুত্রকে  দেখতে  পান  এবং  পুত্র  বাৎসল্যে  গোপীনাথের  সেবা  করতে  থাকেন। তাঁর  অপ্রকট-কাল  উপস্থিত  হলে  তিনি  শিষ্যদের  বলে  যান  যে  স্বয়ং  গোপীনাথই  তাঁর  শ্রাদ্ধাদি  কার্য  সম্পন্ন  করবেন।  শিষ্যরা  ঘোষঠাকুরের  আদেশ  ভক্তিভরে  পালন  করেন  এবং  কালক্রমে  তা  প্রথা  হয়ে  দাঁড়ায়  যা  এখনও  চলে  আসছে।                        
         
            গোবিন্দ  ঘোষের  তিরোধানের  পর  তাঁর  শিষ্য  ও  ভক্তগণের  প্রচেষ্টায়  গোপীনাথ  বিগ্রহের  খ্যাতি  চারিদিকে  ছড়িয়ে  পড়ে।  বহু  দূরদেশ  থেকে  ভক্তগণ  অগ্রদ্বীপে  আসতেন।  তাতে   যথেষ্ট  আয়  হত।  ঘোষঠাকুরের  ভায়ের  বংশধররা  এসে  সেবাকাজ  চালাতেন।  পূর্ববঙ্গের  বহু  সভ্ৰান্ত  ব্যক্তি  তাঁদের  কারও  কারও  শিষ্যত্ব  গ্রহণ  করলেন।  তাঁরাও  শিষ্য  ও  সম্পত্তি  রক্ষার  জন্য  পূর্ববঙ্গে  বাস  করতে  বাধ্য  হলেন।  এই  সময় তাঁদের  কেউ  কেউ  গোপীনাথ  বিগ্রহকে  পূর্ববঙ্গে  সরিয়ে  নিয়ে  যাওয়ার  চেষ্টা  করেন।  কিন্তু  তাঁদের  যেসব  সরিক  রাঢ়ে  ছিলেন  তাঁরা  গোপীনাথ  বিগ্রহের  অধিকার  ছাড়তে  রাজি  না  হওয়ায়  ড়যন্ত্রকারীরা  গোপনে  একদিন  দেববিগ্রহ  নিয়ে  পালিয়ে  যান। তখন  অগ্রদ্বীপের  অধিবাসীরা  পাটুলির  জমিদারকে ( রাজা  উপাধি  প্রাপ্ত )  গোপীনাথ  বিগ্রহ  উদ্ধারের  জন্য  অনুরোধ  করায়  তিনি  একদল  সৈন্য  পাঠিয়ে  কুষ্টিয়ার  নিকট  বিগ্রহ  উদ্ধার  করেন।  কিন্তু  পাটুলিরাজ  বিগ্রহ  উদ্ধারের  পর  গোপীনাথ  বিগ্রহকে  অগ্রদ্বীপ  বাসীদের  হাতে  না  দিয়ে  পাটুলি-নারায়ণপুরের  রাজবাড়িতে  প্রতিষ্ঠা  করলেন।  গোপীনাথ  অগ্রদ্বীপের  হাতছাড়া  হল।  কেবল  চৈত্রমাসের  একাদশীর  আগে  গোপীনাথকে  অগ্রদ্বীপে  পাঠানো  হত  ঘোষঠাকুরের  শ্রাদ্ধ  উপলক্ষ্যে। 

            এরপর  গোপীনাথ  বিগ্রহ  আবার  হাত  বদল  হয়।  সম্ভবত  অষ্টাদশ  শতকে  বারুণী  উৎসবের  সময়  প্রচুর  জনসমাগম  হয়।  ভিড়ের  চাপে  কিছু  লোকের  প্রাণহানি  ঘটে।  এই  সংবাদে  মুর্শিদাবাদের  নবাব  মুর্শিদকুলি  খাঁ  পাটুলির  রাজাকে  প্রাণহানির  কারণ  দর্শাতে  বলেন।  নির্দিষ্ট  দিনে  পাটুলির  রাজার  উকিল  রাজ  দরবারে  উপস্থিত  থেকেও  ঘাবড়ে  গিয়ে  উত্তর  দানে  বিরত  থাকেন।  এই  সুযোগে  নদিয়ার  রাজা  রঘুরামের  উকিল  নবাবকে  জানান  যে  মেলায়  প্রচুর  জনসমাগমের  ফলে  প্রাণহানি  ঘটেছে।  তবে  ভবিষ্যতে  যাতে  এরকম  না  হয়  সেইজন্য  নদিয়ারাজ  নিশ্চয়  সাবধানতা  অবলম্বন  করবেন। উত্তরে  নবাব  সন্তুষ্ট  হলেন।  উকিলের  কৌশলে  গোপীনাথ  বিগ্রহসহ  অগ্রদ্বীপের  জমিদারি  নদিয়ার  রাজার  হস্তগত  হল।  অগ্রদ্বীপে  নতুন  মন্দির  নির্মাণ  করে  গোপীনাথ  বিগ্রহকে  স্থাপন  করা  হল।  কেবলমাত্র  বারোদোল  উৎসবের  আগে  বিগ্রহকে  কৃষ্ণনগরে  নিয়ে  যাওয়া  হত।  মাস  খানেক  পরে  বিগ্রহ  আবার  অগ্রদ্বীপে  ফিরে  যেতেন।  পরে  ফেরার  সময়  পরিবর্তিত  হয়ে  হয়  দুর্গাপুজোর  পঞ্চমী  কিংবা  ষষ্ঠী।  প্রসঙ্গত  উল্লেখযোগ্য,  বর্তমানে  এই  প্রথা  বন্ধ  হয়ে  গেছে।  বারোদোল  উপলক্ষ্যে  শ্রী  গোপীনাথ  জিউকে  আর  কৃষ্ণনগরে  পাঠানো  হয়  না।  স্নানযাত্রা  উপলক্ষ্যে  গোটপাড়াতেও  আর  বিগ্রহ  পাঠানো  হয়  না।     
   
            শোভাবাজার  রাজবাড়ির  মহারাজা  নবকৃষ্ণ  দেব  তাঁর  মাতৃশ্রাদ্ধ  উপলক্ষে  রাজবাড়িতে  এক  দেবসভার ( বহু  দেবদেবীর  সমাবেশ )  আয়োজন  করেছিলেন।  এই  দেবসভায়  নিমন্ত্রিত  হয়ে  এসেছিলেন  বল্লভপুরের ( শ্রীরামপুর )  রাধাবল্লভ,  খড়দহের  শ্যামসুন্দর,  সাঁইবনার  নন্দদুলাল,  বিষ্ণুপুরের  মদনমোহন  ও  অগ্রদ্বীপের  গোপীনাথ  জিউ।  উৎসব  শেষে  সব  বিগ্রহই  তাঁদের  নিজ  নিজ  মন্দিরে  ফিরে  যান  একমাত্র  গোপীনাথ  বিগ্রহ  ছাড়া।  গোপীনাথের  মোহন  মূর্তি  দেখে  নবকৃষ্ণ  তাঁকে  নিজের  বাড়িতে  রেখে  দিতে  চাইলেন।  তিনি  দাবি  করলেন  যে  গোপীনাথ  তাঁকে  স্বপ্নে  দেখা  দিয়ে  তাঁর  কাছে  থেকে  যাবার  ইচ্ছা  প্রকাশ  করেছেন।  রাজা  কৃষ্ণচন্দ্রের  অধিকারভুক্ত  গোপীনাথের  পরিবর্তে  তিনি  কৃষ্ণচন্দ্রের  ঋণ  মুক্ত  করে  দিতে  চাইলেন।  এই সংক্রান্ত  বিবাদ  পিভি  কাউন্সিল  পর্যন্ত  গড়িয়েছিল।  বিচারের  রায়  নবকৃষ্ণের  বিপক্ষে  যায়।  কৌশলী  রাজা  এক  কারিগরকে  দিয়ে  গোপীনাথের  একটি  প্রতিরূপ  তৈরি  করান।  দুটি  বিগ্রহকে  পাশাপাশি  রেখে  কৃষ্ণচন্দ্রকে  বেছে  নিতে  বলা  হয়।  সঠিক  বিগ্রহ  বাছার  জন্য  গোপীনাথের  পুরোহিতও  উপস্থিত  ছিলেন।  শোভাবাজার  রাজবাড়ির  তরফে  বলা  হয়  কৌশল  করে  নবকৃষ্ণ  আসল  মূর্তিটি  রেখে  দিতে  সক্ষম  হন।  কিন্তু  অন্যমতে,  পুরোহিত  রাতে  স্বপ্ন  দেখেছিলেন  আসল  গোপীনাথের  কপালে  জলবিন্দু   দেখা  যাবে।  কাজে  কাজেই   আসল  গোপীনাথকে  চিনতে  পুরোহিতের  কোন  কষ্টই  হয়  নি।
        
            কথিত  আছে  গোপীনাথের  জন্য  মনোহারিণী  মন্দির  প্রথম  তৈরী  করান  কৃষ্ণনগরের  রাজা  কৃষ্ণচন্দ্র।  কিন্তু  সে  মন্দির  এখন  আর  নেই।  গোপীনাথের  বর্তমান  মন্দিরটি  একটি  ছোট  দালান  মন্দির।  মন্দিরটিতে  এখন  ( ২০১৬)  সংস্কারের  কাজ  চলছে।  তাই  বিগ্রহ  দোলমন্দিরে  স্থানান্তরিত।  দোল  মন্দিরটি  মূল  মন্দিরের  কিছুটা  দূরে  স্থানীয়  স্কুলের  পাশে  অবস্থিত।  মূল  মন্দিরের  পাশে  আছে  গোবিন্দ  ঘোষের  সমাধি  মন্দির। 
                       
            পৃথিবীতে  অনেক  মন্দিরে  অনেক  দেবতা  আছেন।  কিন্তু  কোথাও  দেবতা  ভক্তের  ছেলে  হয়ে,  কাছা  পরে  শ্রাদ্ধ  করছে  শোনা  যায়  না।  তাই  অসংখ্য  ভক্ত  চৈত্রমাসের  একাদশী  তিথিতে  অগ্রদ্বীপে  ঘোষ  ঠাকুরের  শ্রাদ্ধ  দেখতে  হাজির  হন।  এই  দিন  কেউ  অন্ন  গ্রহণ  করেন  না।  দই-চিঁড়ে-কলা  খেয়ে  চিঁড়ে  উৎসব  পালন  করেন।  ভক্তরা  ঐ  দিন  মাটির  সরায়  দই-চিঁড়ে-মুড়কি-বাতাসা  দিয়ে  গোপীনাথকে  উৎসর্গ  করেন।  এই  উপলক্ষে  অগ্রদ্বীপে  বিরাট  মেলা  বসে।  সাধারণ  পূর্ণার্থী  ছাড়াও  দলে  দলে  বিভিন্ন  সম্প্রদায়ের  ভক্তগণ  অগ্রদ্বীপে  সমবেত  হয়ে  নাম-কীর্তনে  মেলা-প্রাঙ্গণ  মুখরিত  করে  তোলেন।  সমবেত  বৈষ্ণব  সম্প্রদায়গুলির  মধ্যে  সাহেবধনী  ও  বলরামভজা  দলের  ভিড়  হয়  বেশি।  আসেন  বিভিন্ন  বাউলেরা।  দ্বিতীয়  দিন  ভক্তরা  অন্ন-মহোৎসব  পালন  করেন।  তৃতীয়  দিন  আম  বারুণীর  গঙ্গা-স্নান  করে  তাঁরা  বাড়ি  ফিরে  যান।


শ্রীগোপীনাথ  জিউ  মন্দির,  অগ্রদ্বীপ

গোবিন্দ  ঘোষের  সমাধি  মন্দির

গোপীনাথের  দোলমন্দিরের  শিখর-দেশ

শ্রীগোপীনাথ  জিউ  ও  শ্রী  রাধিকা  বিগ্রহ, অগ্রদ্বীপ 

শ্রীগোপীনাথ  জিউ  ও  শ্রী  রাধিকা  বিগ্রহ, শোভাবাজার  রাজবাড়ি  

সহায়ক  গ্রন্থাবলি  :
             ১) বর্ধমানের  ইতিকথা ( প্রাচীন  ও  আধুনিক ) : নগেন্দ্রনাথ  বসু  সম্পাদিত 
          ২) বর্ধমান : ইতিহাস  ও  সংস্কৃতি ( ৩ য়  খণ্ড ) :  যজ্ঞেশ্বর  চৌধুরী 
         ৩) গোপীনাথের  উৎসব  ও  মেলা,  অগ্রদ্বীপ : কালীচরণ  দাস  ( বর্ধমান  সমগ্র  ( ৬ ষ্ঠ  খণ্ড ) : গোপীকান্ত  কোঙার  সম্পাদিত )

            

1 টি মন্তব্য: