পরিত্যক্ত দুর্গা মন্দির, বালি-দেওয়ানগঞ্জ, হুগলি
শ্যামল কুমার ঘোষ
আরামবাগ মহকুমার গোঘাট থানার অন্তর্গত বালি ও দেওয়ানগঞ্জ দুটি পৃথক গ্রাম। রেশম শিল্প ও পিতল সামগ্রীর জন্য বালি-দেওয়ানগঞ্জ এক সময়ে খুবিই প্রসিদ্ধ ছিল। আগে উত্তরপাড়ার কাছে যে বালি সেটা হুগলি জেলার অন্তর্গত ছিল। ( এখন এটি হাওড়া জেলার অন্তর্গত। ) তাই তার থেকে পৃথক করার জন্য এটিকে বালি-দেওয়ানগঞ্জ বলে অভিহিত করা হয়। অন্য বালিকে উত্তরপাড়া-বালি বলা হয়।
বালির আগের নাম ছিল 'মকদমনগর'। একবার দ্বারকেশ্বর নদের প্রবল বন্যায় এখানকার ঘর-বাড়ি, হাট-বাজার সহ সমস্ত 'মকদমনগর বালির নিচে চাপা পড়ে যায়। সেই সময় শালিবাহন রাজার দেওয়ান জগৎসিংহ মকদমনগরের দুরাবস্থা দেখে দুঃখিত হন এবং বহু ব্যয়ে সমস্ত বালি সরিয়ে জায়গাটি পুনরুদ্ধার করেন এবং গ্রামের দক্ষিণে একটি গঞ্জ বা বাজার স্থাপন করেন। সেই সময় থেকে পুনরুদ্ধার করা বালুকাময় স্থানটি 'বালি' নামে এবং দেওয়ানজির চেষ্টায় যেখানে গঞ্জ স্থাপিত হয় সেই স্থানটি 'দেওয়ানগঞ্জ নামে অভিহিত হয়ে আসছে।
বালির রাউতপাড়ায় পরিত্যক্ত দুর্গামন্দিরটি একটি পুরাকীর্তি। এখানে যেতে হলে তারকেশ্বর বা আরামবাগ থেকে বালি-দেওয়ানগঞ্জের বাসে হালদার পাড়ায় নামুন। সেখান থেকে হেঁটে মন্দির।
বালির রাউতপাড়ায় অবস্থিত পূর্বমুখী দুর্গামন্দিরটির একটি স্থাপত্যগত বৈশিষ্ট আছে। এখানে প্রায় ভূমি সমতলে অবস্থিত একটি জোড়বাংলা মন্দিরের উপর একটি নবরত্ন মন্দির বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। জোড়বাংলা মন্দিরের সামনে ত্রিখিলান প্রবেশপথ বর্তমান। এই ধরনের মন্দির আর কোথাও দেখা যায় না। মন্দিরের সামনের দেওয়ালে মৃৎফলকের বড় মাপের সপরিবারে দুর্গার কারুকলা বর্তমান। কার্নিসের নিচে বিশেষভাবে নির্মিত রেখধরনের শিখরযুক্ত চৌখুপির মধ্যে দুর্গা-লক্ষ্মী-সরস্বতী-কার্তিক-গণেশ মূর্তিগুলি স্থাপিত। এছাড়া দু প্রান্তের এক সারি করে কুলুঙ্গির মধ্যে কিছু 'টেরাকোটা' ফলক আছে। মন্দিরে তিনটি খিলানের উপরে উলম্বভাবে অবস্থিত চার সারি 'কল্পলতা'ও লক্ষ্য করা যায়।
প্রণব রায় তাঁর মন্দির 'টেরাকোটা'য় গণেশ প্রবন্ধে লিখেছেন, " মন্দির-'টেরাকোটা' অলংকরণে গণেশের অপর একটি চিত্র লক্ষ্য করা যায় দেবী চণ্ডীর কোলে শিশু গণেশের মধ্যে। এটি টেরাকোটা-শিল্পের 'গণেশ-জননী' 'মোটিফ'। সতের থেকে উনিশ শতকের মধ্যে তৈরি বহু মন্দিরে এই 'মোটিফ' স্থান পেয়েছে। কিন্তু শুধুমাত্র গণেশজননী-'টেরাকোটা'- ফলকের চেয়ে এই দৃশ্য রূপায়িত হয়েছে 'চণ্ডীমঙ্গলে' বর্ণিত 'কমলেকামিনী' দৃশ্যের মধ্যে। সেখানে সমুদ্রের মাঝদরিয়ায় দেবী চণ্ডী বা অভয়া একটি বিকশিত পদ্মের ওপর আসীনা, তাঁর কোলে শিশু গণেশকে তিনি যেন স্তন্যপান করাচ্ছেন। ..... 'চণ্ডীমঙ্গলে'র কাহিনী অনুসারে কিন্তু 'কমলেকামিনী' গণেশজননী নন, তিনি মাঝদরিয়ায় পদ্মের ওপর বসে একটি হাতিকে গলাধঃকরণ করছিলেন, অপরদিকে সেই হাতিকে মুখ থেকে আবার বের করছিলেন।... টেরাকোটা-শিল্পী এই বীভৎস দৃশ্যের থেকে করুণাময়ী গণেশজননীর মূর্তিই রূপায়িত করেছেন প্যানেলে।" এই মন্দিরে কুলুঙ্গির মধ্যে দু রকমের 'গনেশ-জননী'র ফলক দেখা যায়।
|
সপরিবারে দুর্গা |
|
জোড়বাংলা-নবরত্ন মন্দির, বালি-দেওয়ানগঞ্জ, হুগলি - ১ |
|
জোড়বাংলা-নবরত্ন মন্দির, বালি-দেওয়ানগঞ্জ, হুগলি - ২ |
|
কুলুঙ্গির মধ্যের কাজ - ১ |
|
সাহেব |
|
হুঁকো সেবন |
|
কুলুঙ্গির মধ্যের কাজ - ২ |
|
সাহেব-মেম |
|
কুলুঙ্গির মধ্যের কাজ - ৩ |
|
শিব-পার্বতী |
|
দু ধরনের গনেশ-জননী |
|
মাঝদরিয়ায় দেবী চণ্ডী রূপী গনেশ-জননী |
|
সাধারণ গণেশ জননী |
|
ভগীরথের গঙ্গা আনয়ন |
|
'কল্পলতা' - ১ |
|
বড় করে |
|
বড় করে |
|
অন্য দিক থেকে তোলা |
|
'কল্পলতা' বা মৃত্যুলতা - ২ |
|
অলিন্দের খিলানের উপরের কাজ |
মন্দিরটির পরিদর্শনের তারিখ : ০৯.০৯.২০১৯
সহায়ক গ্রন্থাবলী :
১) হুগলি জেলার ইতিহাস ও বঙ্গসমাজ ( ৩ য় খণ্ড ) : সুধীরকুমার মিত্র
২) হুগলি জেলার পুরাকীর্তি : নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য
-------------------------------------------
আমার ইমেল : shyamalfpb@gmail.com প্রয়োজনে যোগাযোগ করতে পারেন।
--------------------------------------------
ভালো লেখা। মন্দিরের সংস্কার একদম হয় না। ২০১৩-১৪ সালে দেখেছি।
উত্তরমুছুনশুনলাম, এ মন্দিরের নবরত্নগুলো ভেঙে ফেলে দিয়ে তারপর না কি সংস্কার হবে ! কাদের মাথা থেকে এ বুদ্ধি বেরোল ভেবে হতবাক হয়ে যাচ্ছি...
উত্তরমুছুনWest Bengal a jato guli mandir ba Devalay akhano ache jar maddhe ShivDurga mandir preservation, conservation janno tatparata nite paren abedan pathia ASI India & ASI W.Bengal a ,apnara Jara Banglar Mandir saili heritage sachetan.Kichu vul bole thakle marjanyo.
উত্তরমুছুন