গোপীনাথ মন্দির, বিশ্বাস পাড়া, দশঘরা, হুগলি
শ্যামল কুমার ঘোষ
হাওড়া-বর্ধমান কর্ড লাইনে গুড়াপ একটি রেলস্টেশন। হাওড়া থেকে গুড়াপ ১৮ তম রেলস্টেশন। রেলপথে হাওড়া থেকে দূরত্ব ৫৭.৪ কিমি। গুড়াপ-তারকেশ্বর বাস রাস্তায় দশঘরা একটি গ্রাম। এই গ্রামের বিশ্বাস পাড়ায় বিখ্যাত বিশ্বাস পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা জগমোহন দেব বিশ্বাস বারদুয়ারী রাজবংশের রামনারায়ণ পালচৌধুরীর বদান্যতায় এখানে বসতি স্থাপন করেন। তাঁর বংশধর সদানন্দ বিশ্বাস ১৬৫১ শকাব্দে ( ১৭২৯ খ্রীষ্টাব্দে ) রাধাগোপীনাথের পঞ্চরত্ন শৈলীর মন্দিরটি নির্মাণ করেন। মন্দির সংলগ্ন দুর্গাদালান, রাসমঞ্চ, দোলমঞ্চ ও শিবের আটচালা মন্দিরও বর্তমান।
মন্দিরটি উঁচু ভিত্তিবেদির উপর স্থাপিত, পশ্চিমমুখী ও ত্রিখিলান প্রবেশপথবিশিষ্ট। গর্ভগৃহের সামনে অলিন্দ। গর্ভগৃহে প্রবেশের দুটি দরজা, একটি পশ্চিম দিকে, অপরটি উত্তর দিকে। মন্দিরের বাইরের তিন দিকের ( পশ্চিম, উত্তর ও দক্ষিণ ) দেওয়াল টেরাকোটা অলংকারে অলংকৃত। তবে এই 'টেরাকোটা'র বেশির ভাগই মন্দিরের সামনের অর্থাৎ পশ্চিম দিকের দেওয়ালে স্থাপিত।
মন্দিরের সামনের দেওয়ালের টেরাকোটা অলংকারগুলির মধ্যে রাম-রাবণের যুদ্ধ, কৃষ্ণলীলা, শ্রীচৈতন্যের সপারিষদ ও ভক্তগণসহ সংকীর্তন, মহিষাসুরমর্দিনী-লক্ষ্মী-সরস্বতী মূর্তি, স্ত্রীলোকের চরকাকাটা, স্ত্রীলোকের কেশবিন্যাস, বেহালা বাদন, মালা জপরত সাধু, গড়গড়া হাতে ব্যক্তি, বন্দুক হাতে সাহেব ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। দক্ষিণ ও উত্তর দিকে পোড়ামাটির মূর্তির বদলে ফুল ও লতাপাতার 'টেরাকোটা'র ফলক আছে। দ্বিতলে মূল রত্নের গায়েও ফুল ও লতাপাতার 'টেরাকোটা'র ফলক সন্নিবেশিত। ভাস্কর্যের ক্ষেত্রে 'কল্পলতা' বা 'মৃত্যুলতা'কে দেওয়ালের কোণে বা গায়ে খাড়া করে লাগানোই প্রচলিত রীতি। এখানেও মন্দিরের চার কোণে তা নিবদ্ধ এবং তা একতলার কার্নিস পর্যন্ত উঠে গেছে। মন্দিরে একটি প্রতিষ্ঠাফলক আছে।
১৯৩৭-৩৮ খ্রীষ্টাব্দে তৎকালীন বিশ্বাস বংশের কর্তা পৃথ্বীশ চন্দ্র বিশ্বাসের ইচ্ছায় কুমোরটুলির শিল্পী তারাপদ পাল, যিনি বিশ্বাসবাড়ির দুর্গাপ্রতিমা তৈরী করতেন, জীর্ণ হয়ে যাওয়া মৃৎফলকগুলি নতুন করে তৈরি করে দেওয়ালে যথাস্থানে স্থাপন করেন। এই কাজের জন্য পাল মহাশয় তাঁর আদি নিবাস নদিয়ার কৃষ্ণনগর থেকে চার জন সহকারীকে নিয়োগ করেছিলেন।
মন্দিরের গর্ভগৃহের পশ্চিম দিকের কাঠের দরজা কারুকার্যযুক্ত। যদিও অযত্নে ও রঙের প্রলেপে তা অনেকটাই ম্লান । গর্ভগৃহে গোপীনাথ ও রাধিকা বিগ্রহ নিত্য পূজিত। মন্দিরের সামনে ১৮৩৬ খ্রীষ্টাব্দে নির্মিত একটি চারদিক খোলা খিলানযুক্ত নাটমন্দির বর্তমান।
|
মন্দিরের সামনের বিন্যাস |
|
মন্দিরের শিখরদেশ ( দক্ষিণ দিক থেকে তোলা ) |
|
শিখরের মূলরত্ন ( দক্ষিণ দিক থেকে তোলা ) |
|
ভিত্তিবেদি সংলগ্ন 'টেরাকোটা'র কাজ - ১ |
|
ভিত্তিবেদি সংলগ্ন 'টেরাকোটা'র কাজ - ১ক |
|
ভিত্তিবেদি সংলগ্ন 'টেরাকোটা'র কাজ - ১খ |
|
ভিত্তিবেদি সংলগ্ন 'টেরাকোটা'র কাজ - ১গ
( বসুদেব-দেবকী কর্তৃক চতুর্ভূজ কৃষ্ণ ( বিষ্ণু ) বন্দনা, নিদ্রিত প্রহরীরা ও বসুদেব কর্তৃক শিশুকৃষ্ণের পা যমুনার জলে ছোঁয়ানো। ) |
|
ভিত্তিবেদি সংলগ্ন 'টেরাকোটা'র কাজ - ১ঘ
( বন্দুক হাতে সাহেব ) |
|
ভিত্তিবেদি সংলগ্ন 'টেরাকোটা'র কাজ - ১ঙ
( তৃণবর্তাসুর বধ।) |
|
ভিত্তিবেদি সংলগ্ন 'টেরাকোটা'র কাজ - ২ |
|
ভিত্তিবেদি সংলগ্ন 'টেরাকোটা'র কাজ - ২ক
( যশোদার দধিমন্থনকালে বালক কৃষ্ণের ননীপাত্রে হস্তপ্রবেশ। ) |
|
ভিত্তিবেদি সংলগ্ন 'টেরাকোটা'র কাজ - ২খ |
|
ভিত্তিবেদি সংলগ্ন 'টেরাকোটা'র কাজ - ২গ
( কৃষ্ণের নিকট যুধিষ্ঠির ও দুর্যোধন ) |
|
ভিত্তিবেদি সংলগ্ন 'টেরাকোটা'র কাজ - ২ঘ |
|
ভিত্তিবেদি সংলগ্ন 'টেরাকোটা'র কাজ - ২ঙ
( কৃষ্ণের গোষ্ঠলীলা ) |
|
ভিত্তিবেদি সংলগ্ন 'টেরাকোটা'র কাজ - ৩ |
|
ভিত্তিবেদি সংলগ্ন 'টেরাকোটা'র কাজ - ৩ক |
|
ভিত্তিবেদি সংলগ্ন 'টেরাকোটা'র কাজ - ৩খ
( শ্রীচৈতন্যের সপারিষদ ও ভক্তগণসহ সংকীর্তন ) |
|
ভিত্তিবেদি সংলগ্ন 'টেরাকোটা'র কাজ - ৩গ
( বকাসুর বধ ) |
|
ভিত্তিবেদি সংলগ্ন 'টেরাকোটা'র কাজ - ৪ |
|
ভিত্তিবেদি সংলগ্ন 'টেরাকোটা'র কাজ - ৪ক |
|
ভিত্তিবেদি সংলগ্ন 'টেরাকোটা'র কাজ - ৪খ
( কৃষ্ণের নিকট চতুর্ভুজ ব্রহ্মার নতিস্বীকার ) |
|
ভিত্তিবেদি সংলগ্ন 'টেরাকোটা'র কাজ - ৪গ |
|
ভিত্তিবেদি সংলগ্ন 'টেরাকোটা'র কাজ - ৪ঘ
( কৃষ্ণের মথুরাগমন দৃশ্য ) |
|
ভিত্তিবেদি সংলগ্ন 'টেরাকোটা'র কাজ - ৪ঙ |
|
ভিত্তিবেদি সংলগ্ন 'টেরাকোটা'র কাজ - ৪চ
( কুবলয়পীড় ও কংস বধ ) |
|
ভিত্তিবেদি সংলগ্ন 'টেরাকোটা'র কাজ - ৪ছ
|
|
স্তম্ভের গায়ের 'টেরাকোটা'র কাজ - ১ |
|
স্তম্ভের গায়ের 'টেরাকোটা'র কাজ - ২ |
|
স্তম্ভের গায়ের 'টেরাকোটা'র কাজ - ৩
( অঘাসুর বধ ) |
|
স্তম্ভের গায়ের 'টেরাকোটা'র কাজ - ৪ |
|
স্তম্ভের গায়ের 'টেরাকোটা'র কাজ - ৫
( স্ত্রীলোকের চরকাকাটা ) |
|
স্তম্ভের গায়ের 'টেরাকোটা'র কাজ - ৬
( স্ত্রীলোকের কেশবিন্যাস ) |
|
স্তম্ভের গায়ের 'টেরাকোটা'র কাজ - ৭ |
|
স্তম্ভের গায়ের 'টেরাকোটা'র কাজ - ৮
( মহিষাসুরমর্দিনী-লক্ষ্মী-সরস্বতী ) |
|
স্তম্ভের গায়ের 'টেরাকোটা'র কাজ - ৯
( কৃষ্ণের দাবাগ্নি ভক্ষণ ) |
|
কুলুঙ্গির মধ্যের 'টেরাকোটা'র কাজ- ১ |
|
কুলুঙ্গির মধ্যের 'টেরাকোটা'র কাজ- ২ |
|
কুলুঙ্গির মধ্যের 'টেরাকোটা'র কাজ- ৩
( বেহালা বাদিকা ) |
|
কুলুঙ্গির মধ্যের 'টেরাকোটা'র কাজ- ৪ |
|
কুলুঙ্গির মধ্যের 'টেরাকোটা'র কাজ- ৫ |
|
কুলুঙ্গির মধ্যের 'টেরাকোটা'র কাজ- ৬
( মালা জপরত সাধু ) |
|
কুলুঙ্গির মধ্যের 'টেরাকোটা'র কাজ- ৭ |
|
কুলুঙ্গির মধ্যের 'টেরাকোটা'র কাজ- ৮ |
|
কুলুঙ্গির মধ্যের 'টেরাকোটা'র কাজ- ৯ |
|
কুলুঙ্গির মধ্যের 'টেরাকোটা'র কাজ- ১০ |
|
কুলুঙ্গির মধ্যের 'টেরাকোটা'র কাজ- ১১
( ষড়ভুজ গৌরাঙ্গ ) |
|
কুলুঙ্গির মধ্যের 'টেরাকোটা'র কাজ- ১২ |
|
কুলুঙ্গির মধ্যের 'টেরাকোটা'র কাজ- ১৩ |
|
কুলুঙ্গির মধ্যের 'টেরাকোটা'র কাজ- ১৪ |
|
কুলুঙ্গির মধ্যের 'টেরাকোটা'র কাজ- ১৫ |
|
কুলুঙ্গির মধ্যের 'টেরাকোটা'র কাজ- ১৬ |
|
কুলুঙ্গির মধ্যের 'টেরাকোটা'র কাজ- ১৭ |
|
কুলুঙ্গির মধ্যের 'টেরাকোটা'র কাজ- ১৮ |
|
কুলুঙ্গির মধ্যের 'টেরাকোটা'র কাজ- ১৯ |
|
কুলুঙ্গির মধ্যের 'টেরাকোটা'র কাজ- ২০ |
|
কুলুঙ্গির মধ্যের 'টেরাকোটা'র কাজ- ২১ |
|
কুলুঙ্গির মধ্যের 'টেরাকোটা'র কাজ- ২২ |
|
কুলুঙ্গির মধ্যের 'টেরাকোটা'র কাজ- ২৩ |
|
কুলুঙ্গির মধ্যের 'টেরাকোটা'র কাজ- ২৪ |
|
বাঁ দিকের খিলানের উপরের কাজ |
|
ডান দিকের খিলানের উপরের কাজ |
|
মাঝের খিলানের উপরের কাজ |
|
যুদ্ধরত রাম-লক্ষণ ও অন্যান্যেরা |
|
যুদ্ধরত রাবণ ও অন্যান্যেরা |
|
মন্দিরের প্রতিষ্ঠাফলক |
|
কল্পলতা বা মৃত্যুলতা - ১ |
|
কল্পলতা বা মৃত্যুলতা - ২ |
|
কল্পলতা বা মৃত্যুলতা - ৩ |
|
কল্পলতা বা মৃত্যুলতা - ৪ |
|
বাঁকানো কার্নিসের নিচের কাজ - ১ |
|
বাঁকানো কার্নিসের নিচের কাজ - ২ |
|
বাঁকানো কার্নিসের নিচের কাজ - ৩ |
|
দক্ষিণ দিকের দেওয়ালের বিন্যাস |
|
মন্দিরের কাঠের দরজার কাজ - ১ |
|
মন্দিরের কাঠের দরজার কাজ - ২ |
|
গোপীনাথের সিংহাসনের উপরের অংশ |
|
শ্রীগোপীনাথ ও শ্রীরাধিকা বিগ্রহ - ১ |
|
শ্রীগোপীনাথ ও শ্রীরাধিকা বিগ্রহ - ২ |
গোপীনাথ মন্দিরের দক্ষিণ দিকে ঝিলের ধারে দুর্গাদালান, একটি আটকোণা রাসমঞ্চ, একটি চারচালা দোলমঞ্চ ও একটি আটচালা শিবমন্দির অবস্থিত। শিবমন্দিরটি পশ্চিমমুখী।
|
ঝিলের ধারে রাসমঞ্চ, দোলমঞ্চ, চণ্ডীমণ্ডপ ও শিবমন্দির |
|
শিবমন্দিরের সামনের দ্বারী |
|
রাসমঞ্চ |
|
দোলমঞ্চ |
দশঘরার গ্রামে যেতে হলে হাওড়া থেকে কর্ড লাইনের বর্ধমান লোকাল ধরুন। নামুন গুড়াপ স্টেশনে। স্টেশন থেকে তারকেশ্বর গামী বাসে বা দশঘরা গামী ট্রেকারে উঠুন। নামুন দশঘরা মোড়ে। সেখান থেকে অন্য একটি গাড়িতে বিশ্বাস পাড়া স্টপেজ। সেখান থেকে হেঁটে মন্দির। তারকেশ্বর বা চুঁচুড়া থেকেও দশঘরা যেতে পারেন।
মন্দিরটি পরিদর্শনের তারিখ : ১২.০১.২০১৭
সহায়ক গ্রন্থাবলী :
১) হুগলি জেলার পুরাকীর্তি : নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য
২) বাংলার মন্দির স্থাপত্য ও ভাস্কর্য : প্রণব রায়
৩) হুগলি জেলার দেব দেউল : সুধীর কুমার মিত্র
৪) দেখা হয় নাই : অমিয়কুমার বন্দোপাধ্যায়
দশঘরার অন্যান্য মন্দির সম্বন্ধে জানতে ক্লিক করুন :
বিশালাক্ষী ও অন্যান্য মন্দির, দশঘরা, হুগলি
-------------------------------------------
আমার ইমেল : shyamalfpb@gmail.com প্রয়োজনে যোগাযোগ করতে পারেন।
-------------------------
Extremely detailed documentation...thank you so much
উত্তরমুছুনধন্যবাদ
মুছুনBhari shundor lekha! Thank you for this detailed description of the RadhaGopinath temple at Doshghora, Hooghly. My ancestor (Didima's great-great-grandfather) left Doshghora (probably a few decades after this temple was built) and settled in Shibpur, where he established a Shib-mondir at his home. My great-grandfather Amrito Lal Pal built a fine mansion (containing that pujo-ghor) in the 1880s. His son (my Didima's father) was Acharya Dhruba Kumar Pal, who was a scientist and Principal of Uttarpara College (now known as Raja Peary Mohan College) for 25 years. The college's address is 1, Acharya Dhruba Pal Road. The college is on the opposite side of the river from Belur Math and Dakshineshwar mondir.
উত্তরমুছুনধন্যবাদ
মুছুন