বৃহস্পতিবার, ২৬ জানুয়ারী, ২০১৭

Bon Bishalakshi Temple, Purushottampur, Singur, Hooghly

          বন  বিশালাক্ষী  মন্দির,  পুরুষোত্তমপুর,  সিঙ্গুর,  হুগলি  
            শ্যামল কুমার  ঘোষ 

            হাওড়া-তারকেশ্বর  রেলপথে  হাওড়া  থেকে  সিঙ্গুর  দ্বাদশ   রেলস্টেশন।  শেওড়াফুলি  থেকে  তৃতীয়  স্টেশন।  রেলপথে  হাওড়া  থেকে  দূরত্ব  ৩৩  কিমি। 

            প্রাচীনকালে  সিঙ্গুর  সরস্বতী  নদী  তীরে  মহারাজা  সিংহবাহুর  রাজধানী  সিংহপুর  বলে  প্রসিদ্ধ  ছিল।  খ্রীষ্টপূর্ব  ৭০০  অব্দে   মহারাজ  সিংহবাহু  সিংহপুরে  রাজত্ব  করতেন।  তাঁর  জ্যেষ্ঠপুত্র  বিজয়সিংহ  পিতার  অবাধ্য  হওয়ায়  পিতা  কর্তৃক  বিতাড়িত  হয়ে  সাতশত  যুদ্ধকুশল  অনুচর  নিয়ে  সমুদ্রযাত্রা  করেন  এবং  তাম্রপর্ণি  দ্বীপে  অবতরণ  করে  সেখানকার  অধিবাসীদের  পরাস্ত করে  লঙ্কাদ্বীপ  অধিকার  করেন।  তিনি  তাম্রপর্ণি  বা  লঙ্কাদ্বীপ  অধিকার  করে  সেখানকার  রাজকন্যাকে  বিবাহ  করেন  এবং  সেখানকার  রাজা  হন।  রাজা  হওয়ার  পর  তিনি  ওই  দ্বীপের  নাম  রাখেন  সিংহল। 

            সিঙ্গুরের  বন  বিশালাক্ষী  মন্দিরে  যেতে  হলে  তারকেশ্বর  লোকালে  উঠে  সিঙ্গুর  স্টেশনে  নামুন।  স্টেশনের  দক্ষিণ  দিকে  এস. এন. মল্লিক  রোড  থেকে  টোটো  বা  অটোতে  উঠুন।  নামুন  পুরুষোত্তমপুর  ব্রাহ্মণপাড়ায়।  বাঁ  দিকে  বন  বিশালাক্ষী  মন্দির।  কেউ  কেউ বলেন  বিশালক্ষ্মী।

            মন্দিরটি  উঁচু  ভিত্তিবেদির  উপর  প্রতিষ্ঠিত,  দক্ষিণমুখী,  চারচালা  মন্দির।  গর্ভগৃহের  সামনে  ত্রিখিলান  প্রবেশপথযুক্ত  অপ্রসস্থ  অলিন্দ।  দুটি  প্রবেশপথ  বর্তমানে  ভরাটকরা।  অলিন্দের  সামনে  রোয়াক।  গর্ভগৃহে  ঢোকার  একটিই  প্রবেশদ্বার।  মন্দিরের  সামনের  দিক  টেরাকোটা  অলংকরণে  অলংকৃত।  মন্দিরের  শিখরদেশে  গাছ   হওয়াতে  মন্দিরের  অনেকটাই  ক্ষতি  হয়েছে।  ক্ষতি  হয়েছে  টেরাকোটা  অলংকরণেরও।  কিন্তু  খিলানের  উপরের  দিকের  টেরাকোটা  ক্ষতি  হলেও  যা  এখনও  অবশিষ্ট  আছে  তা  বেশ  ভাল  অবস্থায়  আছে।  তবে  মন্দিরের  সামনে  দৃষ্টিকটুভাবে  একটি  ছাউনি  করায়  সব  ছবি  তুলতে  পারিনি। এই  ছাউনি  ও  মন্দিরের  সামনের  রোয়াকে  পরিত্যক্ত  কার্তিক  ঠাকুরের  মূর্তি  রেখে  দেওয়ায়  খুবই  দৃষ্টিকটু  লাগছে।  গর্ভগৃহে  খিলানের  উপরে  টেরাকোটার  কিছু  ফুল  ও  দরজার  দুপাশে  দুটি  থাম  আছে।  মন্দিরটি  ১৬৬২  শকাব্দে  ( ১৭৪০  খ্রিস্টাব্দে )   নির্মিত।  মন্দিরে  একটি  প্রতিষ্ঠাফলক  আছে।  

            স্থানীয়  লোকজনের  কাছে  শুনলাম  এই  মন্দির  যে  সংস্কার  করতে  গেছে  সেই  কাকতালীয়  ভাবে  মারা  গেছে।  তাই  এখন  আর  কেউ  সংস্কার  করার  সাহস  করে  না।  মন্দিরে  এখন  কোন  মূর্তি  নেই।  আগে  ছিল।  কবে  থেকে  মন্দিরে  মূর্তি  নেই  তা  কেউ  বলতে  পারলেন  না।  দুটি  পাথরকে  নিত্য  পূজা  করা  হয়।  কেউ  কেউ  বলেন  পাথরের  মূর্তিটি  নাকি  পাশের  বালি  খাতে  জলের  নিচে  আছে।  স্থানীয়  মুখার্জী  পরিবারের  শরিকরা  পালাকরে  নিত্য  পূজা  করে  থাকেন। 

            মন্দিরটি  পরিদর্শনের  তারিখ :  ২৪.১১.২০১৬

            সিঙ্গুরের  অন্যান্য  মন্দির  সম্বন্ধে  জানতে  নিচের  লিংকে  ক্লিক  করুন :
 
                        সিঙ্গুরের  মন্দির,  সিঙ্গুর,  হুগলি 


বন  বিশালাক্ষী  মন্দির,  পুরুষোত্তমপুর

মন্দিরের  সামনের  বিন্যাস

কুলুঙ্গির  মধ্যে  নিবদ্ধ  টেরাকোটা  মূর্তি - ১

কুলুঙ্গির  মধ্যে  নিবদ্ধ  টেরাকোটা  মূর্তি - ২

কুলুঙ্গির  মধ্যে  নিবদ্ধ  টেরাকোটা  মূর্তি - ৩

কুলুঙ্গির  মধ্যে  নিবদ্ধ  টেরাকোটা  মূর্তি - ৪
খিলানের  উপরের  টেরাকোটার  কাজ - ১

খিলানের  উপরের  টেরাকোটার  কাজ - ২

খিলানের  উপরের  টেরাকোটার  কাজ - ৩

রাম-রাবণের  যুদ্ধ

খিলানের  উপরের  টেরাকোটার  কাজ - ৪

বানর  সেনা

প্রতিষ্ঠা-ফলক - ১

প্রতিষ্ঠা-ফলক ( বড় করে )

মন্দিরে  টেরাকোটা  মূর্তি - ১

মন্দিরে  টেরাকোটা  মূর্তি - ২

মন্দিরে  টেরাকোটা  মূর্তি - ৩

নৌকা  বিলাস

মন্দিরে  টেরাকোটা  মূর্তি - ৪

মন্দিরে  টেরাকোটা  মূর্তি - ৫

গর্ভগৃহে  খিলানের  উপরের  কাজ
গর্ভগৃহে  দরজার  পাশের  স্তম্ভ

সহায়ক  গ্রন্থ :


                 ১)  হুগলি  জেলার  ইতিহাস  ও  বঙ্গসমাজ ( ৩ য়  খণ্ড ) :  সুধীর  কুমার  মিত্র

          -------------------------------------------

            আমার  ইমেল :  shyamalfpb@gmail.com   প্রয়োজনে  যোগাযোগ  করতে  পারেন।

           --------------------------------------------


1 টি মন্তব্য: