পালপাড়া টেরাকোটা মন্দির, পালপাড়া
শ্যামল কুমার ঘোষ
শিয়ালদহ-রানাঘাট লাইনে পালপাড়া একটি ছোট্ট স্টেশন। রেলপথে শিয়ালদহ থেকে দূরত্ব ৬০ কিমি। স্টেশন থেকে পশ্চিম দিকে মাত্র পাঁচ মিনিট হাঁটলে (দুর্গানগর তারকদাস বিদ্যামন্দিরের পাশে ) দেখতে পাবেন একটি মন্দির। এটি সমগ্র নদিয়া জেলার একটি প্রাচীন মন্দির। মন্দিরটি ' চারচালা ' রীতিতে নির্মিত। প্রতিষ্ঠাফলক না থাকায় সঠিক নির্মাণকাল জানা যায় না। তবে , সতের শতকের কোনও এক সময়ে নির্মিত বলে অনুমিত হয়। মন্দিরটির ভিতরের ছাদ গম্বুজাকৃতির , কাজেই এটি মুসলিম পরবর্তীকালের। মন্দিরটি জনৈক গন্ধর্ব রায়ের প্রতিষ্ঠিত বলে অনেকে মনে করেন।
দক্ষিণমুখী এই মন্দিরটি একটি উচ্চ ভিত্তিবেদির উপর স্থাপিত। মূল মন্দিরটি আয়তকার প্রস্থচ্ছেদের , উচ্চতা আনুমানিক ১২ মিটার। ইঁট নির্মিত মন্দিরটির কোন আবৃত অলিন্দ নেই। দুটি প্রবেশ দ্বার , একটি সামনের দেওয়ালে ,অপরটি পূর্ব দিকের দেওয়ালে। সামনের প্রবেশদ্বারের দু'পাশে দু'টি ছোট ছোট থাম ও একটি কারুকাজ করা খিলান আছে। সামনের দেওয়ালে, বিশেষত: প্রবেশদ্বারের ডাইনে-বাঁয়ে-উপরে পোড়ামাটির সূক্ষ্ম কাজ দ্বারা অলংকরণ করা হয়েছে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য রাম-রাবনের যুদ্ধদৃশ্য। বাঁ দিকে রামচন্দ্র তিরধনুক হাতে তাঁর সামনে, ডানদিকে দন্ডায়মান দশাননকে আক্রমনোদ্যত। দশাননের পিছনে মুষলহাতে ভীষণাকৃতি এক রাক্ষস ও পরস্পর সম্মুখযুদ্ধেরত অনেকগুলি দৃশ্য। তোরণপথটির চারিদিকে অনেকগুলি দু' মুখো সাপ ( ভিন্ন মতে ড্রাগন ) আছে। বাম ও ডান দিকের উপরে- নিচে, কার্নিসের নিচে অনেকগুলি টেরাকোটার ছোট-বড় ফুল মন্দিরটিকে সুন্দর করে তুলেছে। এ ছাড়া নানা রকম নকশাও সামনের দিককে শ্রীবৃদ্ধি করেছে। পশ্চিম দিকের দেওয়ালের পশ্চাদভাগেও অনেকগুলি ছোট-বড় ফুল আছে।
ইং ১৮৯৬ সালে প্রকাশিত ' List of Ancient Monument in Bengal '-এ মন্দিরটির তৎকালীন মালিকরূপে বাবু কালীকুমার চৌধুরীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। মন্দিরটি 'ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ' কর্তৃক সংরক্ষিত। মন্দিরটির সংস্কার করা হয়েছে।
পালপাড়া মন্দির ( বাঁ দিক থেকে ) |
পালপাড়া মন্দির ( ডান দিক থেকে ) |
পালপাড়া মন্দির ( সামনে থেকে ) |
খিলানের উপরের টেরাকোটার কাজ |
রামচন্দ্র তিরধনুক হাতে দশাননকে আক্রমনোদ্যত |
যুদ্ধরত দশানন ও তাঁর সেনারা |
মন্দিরের পশ্চাদভাগে টেরাকোটার ফুল |
একটি টেরাকোটার বড় ফুল |
সহায়ক গ্রন্থ / প্রবন্ধ :
১. ইতিহাসের রূপরেখায় নদিয়া ও নদিয়ার পুরাকীর্তি ( প্রবন্ধ ) : মোহিত রায় , পশ্চিমবঙ্গ , নদিয়া জেলা সংখ্যা , ১৯৯৭২. বাংলার মন্দির স্থ্যাপত্য ও ভাস্কর্য : প্রণব রায়
৩. 'ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ' কর্তৃক মন্দির প্রাঙ্গণে লাগানো ফলক
-------------------------------------------
আমার ইমেল : shyamalfpb@gmail.com প্রয়োজনে যোগাযোগ করতে পারেন।
--------------------------------------------
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন