অম্বিকা-কালনার মন্দির দেখতে প্রথমেই চলুন রাজবাড়ি মন্দির চত্বরে। রাজবাড়ি মন্দির চত্বরের দক্ষিণ গেট (অর্থাৎ ১০৮ শিব মন্দিরের বিপরীত গেট ) দিয়ে রাজবাড়ি মন্দির চত্বরে ঢুকলে বাঁ দিকে প্রথম যে মন্দির পড়বে তা হল প্রতাপেশ্বর দেউল। মন্দিরটি সম্বন্ধে জানতে ক্লিক করুন : প্রতাপেশ্বর মন্দির
রাজবাড়ি মন্দির চত্বরে মন্দিরের অবস্থান - ১ |
প্রতাপেশ্বর মন্দির পেড়িয়ে বাঁধানো রাস্তা ধরে একটু হাঁটলে বাঁ দিকে পড়বে রাসমঞ্চ। এর অষ্টকোণাকৃতি ক্ষেত্রে আটটি খোলা দরজা। এর পর আর একটি অষ্টকোণাকৃতি বেষ্টনী যার খোলা দরজা ২৪ টি। অর্থাৎ, এর নির্মাণ কৌশল, আটকোণা ক্ষেত্রের মধ্যে আর একটি আটকোণা ক্ষেত্র। তার উপর গম্বুজাকৃতি শিখর। এই রাসমঞ্চ লালজী বাড়িরই একটি অঙ্গ। আগে রাসের সময় মাজি বাড়ির শ্যামচন্দ্র ও শ্যামরায় পাড়ার শ্যামরায় বিগ্রহকে জামাই হিসাবে এখানে নিয়ে এসে রাখা হত।
রাসমঞ্চ |
রাসমঞ্চে রাতের আলোক-সজ্জা - ১ |
রাসমঞ্চে রাতের আলোক-সজ্জা - ২ |
রাসমঞ্চের সামনের রাস্তা ধরে উত্তর দিকে একটু এগুলেই পড়বে পাঁচিল দিয়ে ঘেরা লালজী মন্দির। মন্দিরটি সম্বন্ধে জানতে ক্লিক করুন: লালজী মন্দির
রাজবাড়ি মন্দির চত্বরে মন্দিরের অবস্থান - ২ |
এবার ডান দিকে ঘুরে, লালজী মন্দিরকে বাঁ দিকে রেখে পূর্ব দিকে সামান্য এগুলে বাঁ দিকে পাবেন রাজবাড়ি যাওয়ার ছোট গেট। আর একটু এগুলে বাঁ দিকে পড়বে রুপেশ্বর শিব মন্দির। অনুচ্চ ভিত্তি বেদির উপর স্থাপিত এটি একটি দক্ষিণমুখী দালান মন্দির। ইঁটের তৈরী এই মন্দিরের সামনে বা কোথাও কোন টেরাকোটা অলংকরণ নেই। তবে মন্দিরের সামনের ইমারতি থাম ও পত্রাকৃতি ত্রিখিলান বিশিষ্ট অলিন্দ মন্দিরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে। মন্দিরের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ যথাক্রমে ১৮ ফুট ( ৫.৪৯ মি. ) ও ১৫ ফুট ( ৪.৬ মি. )। মন্দিরে কৃষ্ণবর্ণের শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠিত। উচ্চতা ৪ ফুট ৬ ইঞ্চি ( ১৩৭.১৬ সেমি )। মন্দিরের সামনে কার্নিসের নিচে মার্বেল পাথরের লিপি :
শ্রীরামপ্রতিমো মহাগুণময়স্ত্রৈলোক্যচন্দ্রো নৃপ-
স্তস্যাস্তেনৃপশেখরস্য মহিষী জ্যেষ্ঠা ধরিত্রীসুতা।
সাকাকর্ষীত্রিপুরান্তকস্য ভবনং কৈলাস-শৈলোপমং
শাকে তত্র রসাষ্টষণ্মহীমিতে চাপেয়-মার্তণ্ডকে।।
অর্থাৎ, রামপ্রতিম মহাগুণের অধিকারী রাজা ত্রিলোকচন্দ্রের জ্যেষ্ঠা মহিষী রূপকুমারী দেবী ১৬৮৩ শকাব্দে ( ১৭৬১ খ্রীষ্টাব্দে ) কৈলাস পর্বতের তুল্য ত্রিপুরারি শিবের এই ভবন নির্মাণ করেন।
রুপেশ্বর শিব মন্দির |
মন্দিরের প্রতিষ্ঠা-লিপি |
রুপেশ্বর শিব মন্দিরের সামনের রাস্তা ধরে আর একটু এগুলেই পড়বে পঞ্চরত্ন মন্দির। বিভিন্ন মাপের এবং একই সারিতে অবস্থিত পাঁচটি শিব মন্দির। সবগুলিই সামান্য উঁচু ভিত্তিবেদির উপর প্রতিষ্ঠিত 'আটচালা' মন্দির। দক্ষিণ দিক থেকে পর পর চারটির মুখ পশ্চিম দিকে এবং পঞ্চমটির মুখ পূর্ব দিকে। এগুলিতে আগে প্রতিষ্ঠালিপি ছিল। কিন্তু এখন সেগুলির লেখা অস্পষ্ট। মন্দিরগুলি সম্ভবত ঊনবিংশ শতকে নির্মিত।
পঞ্চরত্ন মন্দির |
পঞ্চরত্ন মন্দির ( পিছন থেকে তোলা ) |
পঞ্চরত্ন মন্দির পেড়িয়ে আরও পূর্ব দিকে এগুলে পড়বে পাঁচিল দিয়ে ঘেরা কৃষ্ণচন্দ্র মন্দির ও বিজয় বৈদ্যনাথ মন্দির। মন্দিরদুটি সম্বন্ধে জানতে ক্লিক করুন :
১) কৃষ্ণচন্দ্র মন্দির
২) বিজয় বৈদ্যনাথ মন্দির
রাজবাড়ি মন্দির চত্বরের মন্দিরগুলিতে রাতের আলোকসজ্জা দেখতে খুবই সুন্দর লাগে। পাশের ১০৮ শিব মন্দিরগুলিও রাতের কৃত্রিম আলোতে অন্য রকম লাগে। তাই এখানে দু-একদিন থাকলে ভাল হয়। মন্দিরগুলিও ভালভাবে দেখা যায়।
সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির, অম্বিকা-কালনা
সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির দেখা শেষ করে চলুন কাছেই অবস্থিত গোপালজি মন্দিরে। মন্দিরটি সম্বন্ধে জানতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন :
গোপালজি মন্দির দেখা শেষ করে এবার চলুন একটু দূরে শ্যামরায় পাড়ায় অবস্থিত অনন্ত বাসুদেব মন্দির। মন্দিরটি সম্বন্ধে জানতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন :
অনন্ত বাসুদেব মন্দির, অম্বিকা-কালনা
শ্যামরায় পাড়ায় আর একটি মন্দির শ্যামরায় মন্দির। মন্দিরটি সম্বন্ধে জানতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন :
শ্যামরায় মন্দির, অম্বিকা-কালনা
এছাড়া দেখে নিতে পারেন হিন্দু উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের বিপরীতে অবস্থিত মাজী বাড়ির শ্যামচাঁদ বিগ্রহ, গঙ্গার ধারে অবস্থিত জগন্নাথ বাড়ির জোড়া শিব মন্দির, গৌরীদাসের শ্রীপাঠ ও ভবা পাগলার মন্দির ইত্যাদি।
কী ভাবে যাবেন ?
সহায়ক গ্রন্থাবলি :
১) কালনা মহকুমার প্রত্নতত্ত্ব ও ধর্মীয় সংস্কৃতির ইতিবৃত্ত : বিবেকানন্দ দাস
২) বাংলার মন্দির স্থাপত্য ও ভাস্কর্য : প্রণব রায়
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন