মঙ্গলবার, ১৬ আগস্ট, ২০১৬

Shyamray Temple, Shyamray Para, Ambika Kalna, Bardhaman

শ্রী শ্রী  শ্যামরায়  মন্দির, শ্যামরায়  পাড়া, অম্বিকা  কালনা, বর্ধমান

                              শ্যামল  কুমার  ঘোষ 

            সিদ্ধেশ্বরী  মন্দিরের  কাছেই  অনন্ত  বাসুদেব  মন্দির।  অনন্ত  বাসুদেব  মন্দিরের  পশ্চিমে  শ্যামরায়  পাড়া। এই  পাড়াতেই  শ্যামরায়  মন্দির  অবস্থিত।  বিগ্রহের  নামেই  পাড়ার  নামকরণ।  মন্দিরটি  সামান্য  উঁচু  ভিত্তিবেদির  উপর  স্থাপিত,  উত্তরমুখী,  দালান  মন্দির।  এখানে  প্রতিষ্ঠিত  ঠাকুরের  বেদিতে   যে প্রতিষ্ঠা-লিপি  রয়েছে  তা  হল :

                   শ্রী  শ্রী  শোজয়তি 
 স্ববংশ  স্থাপিত  শ্যামরায়স্য  জীর্ণ  মন্দিরম্ । 
 স্বল্পশিষ্টং  সুসংস্কৃত্য  কুমারেশোজ  দিবংগতঃ ।।
 কুমারেশ  কুমারেনারু  কুমার  শর্ম্মণঃ । 
 শেষকৃত্যং  কৃতং  তস্য  পিতুরক্ষায়  তৃপ্তয়ে  ।। 
    
           অর্থাৎ  কুমারেশ  কুমার  দিব্যধামে  গমন  করেন।  তাঁর  পুত্র  নারু  কুমার  শর্ম্মণঃ  পিতার  শেষকৃত্য  করে  পিতার  তৃপ্তির  জন্য  তাঁরই  বংশের  দ্বারা  স্থাপিত  জীর্ণ  হয়ে  যাওয়া  শ্যামরায়ের  মন্দিরটি  সংস্কার  করেন। 

            মন্দিরের  মাঝের  ঘরে  রয়েছেন  দারুনির্মিত  শ্যামরায়  ও  রাধিকা  মূর্তি।  তাঁর  ডান  পাশে  রয়েছেন  রাম-সীতা  এবং  বাম  পাশে  রয়েছেন  শ্রীকৃষ্ণ,  বলদেব  ও  জগন্নাথ  মূর্তি।  সবই  দারু  নির্মিত।  আগে  তিনটি  ঘরে  মূর্তি  থাকত।  কিন্তু  বর্তমানে  লোকাভাবে  সব  মূর্তিই  এক  ঘরে  রাখা  হয়েছে।  মন্দিরের  বর্তমান  সেবায়তরা  বাঘনাপাড়ার  গোস্বামী  পরিবারের  এক  শাখা।  যার  আদি  পুরুষ  শ্রী  রামচন্দ্র  গোস্বামী  বা  রামাই।  এখানে  উল্লেখ্য,  নিত্যানন্দের  পত্নী  জাহ্নবীদেবীর  পালিত  পুত্র  ছিলেন  রামচন্দ্র  গোস্বামী।  তাঁর  পাট  আছে  বর্ধমানের  বাঘনাপাড়ায়। 

            মন্দিরটি  প্রাচীন।  তবে  প্রাচীন  মন্দিরটির  প্রতিষ্ঠা-লিপি  না  থাকায়  কত  প্রাচীন  তা  জানা  যায়  না।  আগে  রাসের  সময়  শ্যামরায়কে  লালজী  মন্দিরে  নিয়ে  যাওয়া  হত  এবং  অন্যান্য  বিগ্রহের  সঙ্গে  লালজী  মন্দিরের  সামনে  অবস্থিত  রাসমঞ্চে  বসানো  হত।  মন্দিরে  নিত্যপূজা  ছাড়াও  অন্যান্য  উৎসব  হয়ে  থাকে।  মন্দিরের  কাছেই  বর্তমান  সেবায়তদের  মধ্যে   আনন্দ  লাল  গোস্বামী  ও  যমুনা  লাল  গোস্বামী  থাকেন।  মন্দিরটি  বন্ধ  থাকলে  ওই  বাড়িতে  গিয়ে  বললে  ওঁরা  আগ্রহের  সঙ্গে  ঠাকুর  দেখিয়ে  দেবেন।  

শ্রীশ্রী  শ্যামরায়  মন্দির

শ্রীশ্রী  শ্যামরায়  ও  অন্যান্য  বিগ্রহ

সংস্কারের  সময়ের  লিপি

রামচন্দ্র  ও  সীতা  মূর্তি 

কৃষ্ণ, বলদেব  ও  জগন্নাথ  মূর্তি

শ্যামরায়  ও   রাধিকা  মূর্তি - ১

শ্যামরায়  ও   রাধিকা  মূর্তি - ২

রামচন্দ্র  গোস্বামী ( রামাই )

              অম্বিকা  কালনার  এই  মন্দিরে  যেতে  হলে  শিয়ালদহ  থেকে  সকাল  ৮ টা  ৬ মিনিটের  কাটোয়া  লোকাল  বা  হাওড়া  থেকে  কাটোয়া  লোকাল  ধরুন।  ব্যাণ্ডেল  থেকেও  অম্বিকা  কালনা  যাওয়ার  গাড়ি  পাবেন।  স্টেশন  থেকে  রিকশা  বা  টোটোতে  মন্দিরে  পৌঁছে  যান।  নদিয়া  জেলার  শান্তিপুর  থেকেও  গঙ্গা  পেরিয়ে  কালনায়  যেতে  পারেন।

              মন্দিরটি  পরিদর্শনের  তারিখ :  ১৩.০৮. ২০১৬ 

   
    সহায়ক  গ্রন্থ  :
                 ১) কালনা  মহকুমার  প্রত্নতত্ত্ব   ও  ধর্মীয়  সংস্কৃতির  ইতিবৃত্ত    বিবেকানন্দ  দাস  

                                                *********      

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন