হরিহর মন্দির, গঙ্গাবাস, আমঘাটা, নদিয়া
শ্যামল কুমার ঘোষ
শিয়ালদহ-কৃষ্ণনগর রেলপথে কৃষ্ণনগর শেষ স্টেশন। কলকাতা থেকে দূরত্ব ৯৯ কি মি। কৃষ্ণনগর থেকে ৮ কিমি দূরে আমঘাটা ( এখানে ওই নামে পূর্বের কৃষ্ণনগর-নবদ্বীপঘাট ন্যারো গেজ রেলপথের একটি স্টেশন আছে। বর্তমানে রেলপথটি ব্রড গেজে পরিবর্তনের কাজ চলছে )। আমঘাটা স্টেশনের ১ কি মি দূরে গঙ্গাবাস গ্রাম। এই গ্রামের পাশ দিয়ে অলকানন্দা নদী প্রবাহিত। অলকানন্দা জলঙ্গীর শাখা নদী হয়ে ভাগীরথীতে মিশেছে। তাই অলকানন্দায় প্রবাহিত জল গঙ্গারই পবিত্র জল এই জ্ঞানে কৃষ্ণনগরের মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র প্রবীণ বয়সে জ্যেষ্ঠ পুত্র শিবচন্দ্রকে নিজ জমিদারির ভার অর্পণ করে গঙ্গা-বাসের জন্য এখানে একটি প্রাসাদ নির্মাণ করেন এবং জায়গাটির নাম দেন গঙ্গাবাস। সেই সময় পৌষসংক্রান্তি, বারুণী ও দশহরা উপলক্ষ্য পুণ্যস্নানের জন্য এখানে বহু লোকের সমাগম হত। অবশ্য কৃষ্ণচন্দ্র নির্মিত সেই প্রাসাদের কোন চিহ্ন এখন আর নেই। আর স্রোতস্বিনী অলকানন্দাও এখন রুদ্ধ। এখানেই তিনি বাংলা ১১৮৯ সনের ২২ শে আষাঢ় ( ১৭৮২ খ্রীষ্টাব্দে ) ৭৩ বৎসর বয়সে পরলোকগমন করেন। এই নদী তীরে কৃষ্ণচন্দ্র ১৬৯৮ শকাব্দে ( ১৭৭৬ খ্রীষ্টাব্দে ) ইঁটের তৈরি হরিহরের মন্দির নির্মাণ করেন। মন্দিরটির গড়ন অভিনব। একটি সমতল ছাদ দালানের উপর দুটি পিরামিড আকৃতির চারচালা শিখর। দক্ষিণমুখী মন্দিরে হরিহরের চতুর্ভুজ প্রস্তরবিগ্রহ ( একই বিগ্রহে হরি ও হর প্রকাশিত ) প্রতিষ্ঠিত। মূর্তিটির এক হাতে চক্র ও অন্য হাতে ত্রিশূল। কৃষ্ণচন্দ্র হরি ও হরের অভেদ রূপ প্রতিপাদনের জন্য এই বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করেন। মন্দিরের দক্ষিণ দিকে মাটি-সংলগ্ন পাদপিঠে লাগানো প্রস্তরফলকের লিপি নিম্নরূপ :
গঙ্গাবাসে বিধিশ্রুত্যনুগতসুকৃতক্ষৌণিপালে শক্যেম্মিন্
শ্রীযুক্তো বাজপেয়ী ভুবি বিদিত মহারাজরাজেন্দ্রদেবঃ
ভেত্তুং ভ্রান্তিং মুরারিত্রিপুরহরভিদামজ্ঞাতাং পামরাণাং
অদ্বৈতং ব্রহ্মরূপং হরিহরমুময়া স্থাপয়োল্লনয়া চ ।।
শ্লোকটির ভাবার্থ এই, ' যে অজ্ঞ শিব ও বিষ্ণুকে পৃথক পৃথক মনে করে পরস্পরকে বিদ্বেষ করে, তাদের ভ্রান্তি দূর করার জন্য ভুবনবিখ্যাত বাজপেয়ী মহারাজেন্দ্রদেব ( মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র ) ১৬৯৮ শকে গঙ্গাবাসে এই মন্দির ও হরিহরের ব্রহ্মরূপ অদ্বৈতমূর্তি লক্ষ্মী ও উমার সঙ্গে স্থাপন করলেন। এখানে 'বিধিশ্রুত্যনুগত' = ৮, 'সুকৃত' = ৯, 'ক্ষৌণিপাল' ( চাঁদের ষোল কলা ) = ১৬ এই অর্থ ধরে অঙ্কের বামাগতি নিয়মানুসারে প্রতিষ্ঠাকাল দাঁড়ায় ১৬৯৮ শকাব্দ। ১৯৯৯ সালে ভক্তিবেদান্ত স্বামী চ্যারিটি ট্রাস্টের উদ্যোগে মন্দিরটির সংস্কার করা হয়।
শোনা যায় যে কৃষ্ণচন্দ্র বিপুল অর্থব্যয় ও পরিশ্রমে চিত্রকুট পর্বত থেকে শ্রীরামচন্দ্রের প্রস্তর-পদচিহ্ন এনে এখানে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেটি এখনও এখানে আছে। অনেকে এটিকে মহাবিষ্ণু গদাধরের পাদপদ্ম বলে থাকেন।
হরিহর ছাড়াও কৃষ্ণচন্দ্র এখানে অন্যান্য দেবদেবীর মূর্তিও প্রতিষ্ঠা করেন। অন্নপূর্ণা ও মহালক্ষ্মী মূর্তি দুটি আগে অষ্টধাতুর ছিল। সেগুলি চুরি যাওয়ায় মাটির মূর্তি প্রতিষ্ঠা করা হয়। এ ছাড়া শীতলা, বালগোপাল, জগন্নাথ ও শিবলিঙ্গ আছে। হরিহরের মন্দিরের পূর্ব দিকে আর একটি মন্দির আছে। এটি কালভৈরবের মন্দির নামে পরিচিত। কালভৈরবের প্রস্তর মূর্তি চতুর্ভুজ। পিছনে কুকুর। এই মন্দিরে হনুমান ও গণেশের মূর্তিও আছে। হরিহরসহ সকল বিগ্রহ এখানে নিত্য পূজিত।
গঙ্গাবাসে যেতে হলে শিয়ালদহ থেকে লালগোলা প্যাসেঞ্জার বা কৃষ্ণনগর লোকালে উঠুন। নামুন কৃষ্ণনগরে। স্টেশন থেকে নবদ্বীপঘাট গামী অটোতে উঠে পৌঁছে যান আমঘাটা। কৃষ্ণনগর বাসস্ট্যাণ্ড থেকে বাসেও যেতে পারেন। আমঘাটা স্টেশনের পাশ থেকে ভ্যান রিকশায় উঠে পৌঁছে যান গঙ্গাবাসের মন্দিরে। মন্দির দেখে গ্রামটি ঘুরে দেখতে পারেন। আমঘাটার দুটো স্টপেজ আগে সুবর্ণবিহার। হরিহরের মন্দির দর্শন করে ওখানকার রাধাকৃষ্ণের মন্দিরও দর্শন করে নিতে পারেন।
গঙ্গাবাসে বিধিশ্রুত্যনুগতসুকৃতক্ষৌণিপালে শক্যেম্মিন্
শ্রীযুক্তো বাজপেয়ী ভুবি বিদিত মহারাজরাজেন্দ্রদেবঃ
ভেত্তুং ভ্রান্তিং মুরারিত্রিপুরহরভিদামজ্ঞাতাং পামরাণাং
অদ্বৈতং ব্রহ্মরূপং হরিহরমুময়া স্থাপয়োল্লনয়া চ ।।
শ্লোকটির ভাবার্থ এই, ' যে অজ্ঞ শিব ও বিষ্ণুকে পৃথক পৃথক মনে করে পরস্পরকে বিদ্বেষ করে, তাদের ভ্রান্তি দূর করার জন্য ভুবনবিখ্যাত বাজপেয়ী মহারাজেন্দ্রদেব ( মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র ) ১৬৯৮ শকে গঙ্গাবাসে এই মন্দির ও হরিহরের ব্রহ্মরূপ অদ্বৈতমূর্তি লক্ষ্মী ও উমার সঙ্গে স্থাপন করলেন। এখানে 'বিধিশ্রুত্যনুগত' = ৮, 'সুকৃত' = ৯, 'ক্ষৌণিপাল' ( চাঁদের ষোল কলা ) = ১৬ এই অর্থ ধরে অঙ্কের বামাগতি নিয়মানুসারে প্রতিষ্ঠাকাল দাঁড়ায় ১৬৯৮ শকাব্দ। ১৯৯৯ সালে ভক্তিবেদান্ত স্বামী চ্যারিটি ট্রাস্টের উদ্যোগে মন্দিরটির সংস্কার করা হয়।
শোনা যায় যে কৃষ্ণচন্দ্র বিপুল অর্থব্যয় ও পরিশ্রমে চিত্রকুট পর্বত থেকে শ্রীরামচন্দ্রের প্রস্তর-পদচিহ্ন এনে এখানে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেটি এখনও এখানে আছে। অনেকে এটিকে মহাবিষ্ণু গদাধরের পাদপদ্ম বলে থাকেন।
হরিহর ছাড়াও কৃষ্ণচন্দ্র এখানে অন্যান্য দেবদেবীর মূর্তিও প্রতিষ্ঠা করেন। অন্নপূর্ণা ও মহালক্ষ্মী মূর্তি দুটি আগে অষ্টধাতুর ছিল। সেগুলি চুরি যাওয়ায় মাটির মূর্তি প্রতিষ্ঠা করা হয়। এ ছাড়া শীতলা, বালগোপাল, জগন্নাথ ও শিবলিঙ্গ আছে। হরিহরের মন্দিরের পূর্ব দিকে আর একটি মন্দির আছে। এটি কালভৈরবের মন্দির নামে পরিচিত। কালভৈরবের প্রস্তর মূর্তি চতুর্ভুজ। পিছনে কুকুর। এই মন্দিরে হনুমান ও গণেশের মূর্তিও আছে। হরিহরসহ সকল বিগ্রহ এখানে নিত্য পূজিত।
গঙ্গাবাসে যেতে হলে শিয়ালদহ থেকে লালগোলা প্যাসেঞ্জার বা কৃষ্ণনগর লোকালে উঠুন। নামুন কৃষ্ণনগরে। স্টেশন থেকে নবদ্বীপঘাট গামী অটোতে উঠে পৌঁছে যান আমঘাটা। কৃষ্ণনগর বাসস্ট্যাণ্ড থেকে বাসেও যেতে পারেন। আমঘাটা স্টেশনের পাশ থেকে ভ্যান রিকশায় উঠে পৌঁছে যান গঙ্গাবাসের মন্দিরে। মন্দির দেখে গ্রামটি ঘুরে দেখতে পারেন। আমঘাটার দুটো স্টপেজ আগে সুবর্ণবিহার। হরিহরের মন্দির দর্শন করে ওখানকার রাধাকৃষ্ণের মন্দিরও দর্শন করে নিতে পারেন।
মন্দিরটি পরিদর্শনের তারিখ : ২০.১১.২০১৫
সহায়ক গ্রন্থাবলি :
১. নদীয়া-কাহিনী : কুমুদনাথ মল্লিক
২. নদিয়া জেলার পুরাকীর্তি : মোহিত রায় ( তথ্য-সংকলন ও গ্রন্থনা )
৩. বাংলার মন্দির স্থাপত্য ও ভাস্কর্য : প্রণব রায়
৪. Nadia Gazetteer - Chapter XVI
হরিহর মন্দির, গঙ্গাবাস |
মন্দিরের শিখরদেশ |
প্রতিষ্ঠাফলক |
হরিহর ও অন্যান্য বিগ্রহ |
হরিহর বিগ্রহ |
কালভৈরবের মন্দির |
হনুমান, গণেশ ও কালভৈরব বিগ্রহ |
অলকানন্দা নদী |
সহায়ক গ্রন্থাবলি :
১. নদীয়া-কাহিনী : কুমুদনাথ মল্লিক
২. নদিয়া জেলার পুরাকীর্তি : মোহিত রায় ( তথ্য-সংকলন ও গ্রন্থনা )
৩. বাংলার মন্দির স্থাপত্য ও ভাস্কর্য : প্রণব রায়
৪. Nadia Gazetteer - Chapter XVI
-------------------------------------------
আমার ইমেল : shyamalfpb@gmail.com প্রয়োজনে যোগাযোগ করতে পারেন।
--------------------------------------------
Beautiful
উত্তরমুছুন