শ্রী শ্রী কৃষ্ণরায় জিউ মন্দির, তেহট্ট, নদিয়া
শ্যামল কুমার ঘোষ
শিয়ালদহ-কৃষ্ণনগর রেলপথে কৃষ্ণনগর শেষ স্টেশন। কলকাতা থেকে দূরত্ব ৯৯ কিমি। কৃষ্ণনগর থেকে ৪৪ কিমি উত্তরে তেহট্ট। তেহট্টের প্রাচীন নাম ত্রিহট্ট। এক সময়ে এই অঞ্চলের তিনটি স্থানে সপ্তাহে দুদিন করে হাট বসত। পরে জনসাধারণের সুবিধার্থে জলঙ্গী নদীর পূর্ব তীরে এক প্রশস্ত জায়গায় তিনটি হাট একত্র হয়ে বসতে আরম্ভ করে। স্থানটির নাম হয় তেহাটা বা ত্রিহট্ট। পরে নাম হয় তেহট্ট।
তেহট্টের ঠাকুরপাড়ায় কৃষ্ণরায়ের 'জোড়বাংলা' টেরাকোটা মন্দিরটি উল্লেখযোগ্য। দুটি 'দোচালা' বা 'একবাংলা' জোড়া দিয়ে এ ধরণের মন্দির তৈরি হয় বলে এই স্থাপত্য শৈলীর নাম 'জোড়বাংলা'। মন্দিরটি ১৬০০ শকাব্দে বা ১৬৭৮ খ্রীষ্টাব্দে নির্মিত। মন্দিরটির দক্ষিণ দিকের দেওয়ালে পোড়ামাটির হরফে উৎকীর্ণ প্রতিষ্ঠা-ফলকের পাঠ হল :
১৬০০ শাকে শূন্যনভঃষড়িন্দুগণিতে মেষগতে ভাস্করে
শ্রীগোবিন্দপদারবিন্দনিরতঃ শ্রীরামদেব মহান
লক্ষ্মী যস্য পদারবিন্দসেবনবিধৌ ব্যাপারসম্পাদিনী
তস্য শ্রীপুরুষোত্তমস্য চ গৃহং যত্নৈরকার্ষীত্ স্বয়ং ।।
অর্থাৎ ১৬০০ শকাব্দের ( ১৬৭৮ খ্রীষ্টাব্দের ) বৈশাখ মাসে শ্রীগোবিন্দের পাদপদ্মসেবী মহান পুরুষ রামদেব যত্নের সঙ্গে শ্রীপুরুষোত্তমের এ মন্দির নির্মাণ করেছিলেন। লক্ষ্মীদেবী তাঁর পদসেবা করতেন এবং তাঁর উপাসনার জন্য রামদেব এই মন্দির নির্মাণ করেন। এখানে শূন্য = ০ , নভ = ০ , ষড় = ৬ এবং ইন্দু = ১ ধরে অঙ্কের বামাগতি নিয়মানুসারে প্রতিষ্ঠাকাল ১৬০০ শকাব্দ। জানা যায় যে এই লক্ষ্মীদেবী রামদেবের বিধবা কন্যা ( মতান্তরে শিষ্যা ) ছিলেন।
এক সময়ে এই মন্দির ও বিগ্রহ নদিয়া রাজবংশের অধীন ছিল। নদিয়া রাজবংশ কর্তৃক প্রদত্ত দেবোত্তর সম্পত্তির আয় খেকে বিগ্রহের নিত্যপূজা ও পার্বণাদি অনুষ্ঠিত হত। তাই আগে বারদোলের মেলায় এই বিগ্রহ কৃষ্ণনগরে নিয়ে যাওয়া হত। তবে অনেক দিন হল বিগ্রহ আর কৃষ্ণনগরে পাঠানো হয় না।
ইঁটের তৈরী মন্দিরটি পশ্চিমমুখী। উল্লেখ্য, মন্দিরের পশিম দিকে রাস্তা। সামনের দোচালাটির দেওয়াল পলেস্তারা আবৃত। শোনা যায়, আগে সামনের দেওয়াল টেরাকোটা অলংকারে অলংকৃত ছিল। বর্তমানে পিছনের দোচালাটির ( গর্ভগৃহের ) প্রবেশপথের সামনের দেওয়ালে পোড়ামাটির অলংকরণ দেখা যায়। তবে রঙের প্রলেপে তা অনেকটাই ম্লান। টেরাকোটাগুলির মধ্যে উল্লেখ্য চারটি মূর্তির দুটি চতুর্ভুজ শ্রীকৃষ্ণ এবং অপর দুটি রাজ কর্মচারী বা রাজার। এই চারটি মূর্তি দুটি দুটি করে প্রবেশ-পথের দুদিকের দেওয়ালের নিচের দিকে অবস্থিত। এ ছাড়া মেঝের ঠিক উপরের দেওয়ালে হংসশ্রেণী। খিলানের চতুর্দিকে সাতটি করে দুপাশে চোদ্দটি প্রতীক আটচালা শিবালয় ও তার মধ্যে শিবলিঙ্গ। পোড়ামাটির কয়েকটি ফুল ও অন্যান্য নকশাও দেখা যায়। মন্দিরে কষ্টিপাথরের কৃষ্ণরায় নিত্য পূজিত। এখানে কৃষ্ণ বিগ্রহ একক। কোন রাধিকা মূর্তি নেই। এ সম্পর্কে শ্রী কুমুদনাথ মল্লিকের 'নদিয়া কাহিনী' গ্রন্থে পাই, " কথিত আছে কোনও সময়ে ঠাকুরাণীর গাত্র হইতে যবন জাতীয় চৌরে অলঙ্কার অপহরণ করিলে পূজারি তাঁহাকে মন্দির সন্নিহিত দীর্ঘিকায় বিসর্জ্জন দেন, তদবধি ঠাকুরের অদৃষ্টে আর দেবী মিলে নাই।"
মন্দিরের সামনে একটি নবনির্মিত নাটমন্দির আছে। মন্দিরের ও নাটমন্দিরের মেঝে শ্বেতপাথর দিয়ে তৈরি। মন্দিরের কিছু দূরে চাতর বাজারের কাছে একটি নবনির্মিত দোলমঞ্চে ( পুরানোটি বিনষ্ট ) দোলের সময় বিগ্রহ রেখে দোল উৎসব পালন করা হয়। এ ছাড়া ঝুলন, রথযাত্রা, জন্মাষ্টমী, রাখি, স্নানযাত্রা ও মাঘী পূর্ণিমায় উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। মাঘী পূর্ণিমার উৎসবটি জাঁকজমক সহকারে পালন করা হয়।
তেহট্টের কৃষ্ণরায় মন্দিরে যেতে হলে শিয়ালদহ থেকে লালগোলা প্যাসেঞ্জার বা কৃষ্ণনগর লোকালে উঠুন। নামুন কৃষ্ণনগরে। স্টেশন থেকে রিকশায় বা টোটোতে বাসস্ট্যান্ড। বাসস্ট্যান্ড থেকে শিকারপুর, করিমপুর বা পাটিকাবাড়ি গামী বাসে উঠুন। নামুন তেহট্টের P.W.D. মোড়ে। সেখান থেকে টোটোতে হাসপাতাল রোড ধরে মন্দির। কলকাতা থেকে বাসে বা গাড়িতেও যেতে পারেন। দুপুরে ১২ টা থেকে ৪ টে পর্যন্ত মন্দির বন্ধ থাকে।
এক সময়ে এই মন্দির ও বিগ্রহ নদিয়া রাজবংশের অধীন ছিল। নদিয়া রাজবংশ কর্তৃক প্রদত্ত দেবোত্তর সম্পত্তির আয় খেকে বিগ্রহের নিত্যপূজা ও পার্বণাদি অনুষ্ঠিত হত। তাই আগে বারদোলের মেলায় এই বিগ্রহ কৃষ্ণনগরে নিয়ে যাওয়া হত। তবে অনেক দিন হল বিগ্রহ আর কৃষ্ণনগরে পাঠানো হয় না।
ইঁটের তৈরী মন্দিরটি পশ্চিমমুখী। উল্লেখ্য, মন্দিরের পশিম দিকে রাস্তা। সামনের দোচালাটির দেওয়াল পলেস্তারা আবৃত। শোনা যায়, আগে সামনের দেওয়াল টেরাকোটা অলংকারে অলংকৃত ছিল। বর্তমানে পিছনের দোচালাটির ( গর্ভগৃহের ) প্রবেশপথের সামনের দেওয়ালে পোড়ামাটির অলংকরণ দেখা যায়। তবে রঙের প্রলেপে তা অনেকটাই ম্লান। টেরাকোটাগুলির মধ্যে উল্লেখ্য চারটি মূর্তির দুটি চতুর্ভুজ শ্রীকৃষ্ণ এবং অপর দুটি রাজ কর্মচারী বা রাজার। এই চারটি মূর্তি দুটি দুটি করে প্রবেশ-পথের দুদিকের দেওয়ালের নিচের দিকে অবস্থিত। এ ছাড়া মেঝের ঠিক উপরের দেওয়ালে হংসশ্রেণী। খিলানের চতুর্দিকে সাতটি করে দুপাশে চোদ্দটি প্রতীক আটচালা শিবালয় ও তার মধ্যে শিবলিঙ্গ। পোড়ামাটির কয়েকটি ফুল ও অন্যান্য নকশাও দেখা যায়। মন্দিরে কষ্টিপাথরের কৃষ্ণরায় নিত্য পূজিত। এখানে কৃষ্ণ বিগ্রহ একক। কোন রাধিকা মূর্তি নেই। এ সম্পর্কে শ্রী কুমুদনাথ মল্লিকের 'নদিয়া কাহিনী' গ্রন্থে পাই, " কথিত আছে কোনও সময়ে ঠাকুরাণীর গাত্র হইতে যবন জাতীয় চৌরে অলঙ্কার অপহরণ করিলে পূজারি তাঁহাকে মন্দির সন্নিহিত দীর্ঘিকায় বিসর্জ্জন দেন, তদবধি ঠাকুরের অদৃষ্টে আর দেবী মিলে নাই।"
মন্দিরের সামনে একটি নবনির্মিত নাটমন্দির আছে। মন্দিরের ও নাটমন্দিরের মেঝে শ্বেতপাথর দিয়ে তৈরি। মন্দিরের কিছু দূরে চাতর বাজারের কাছে একটি নবনির্মিত দোলমঞ্চে ( পুরানোটি বিনষ্ট ) দোলের সময় বিগ্রহ রেখে দোল উৎসব পালন করা হয়। এ ছাড়া ঝুলন, রথযাত্রা, জন্মাষ্টমী, রাখি, স্নানযাত্রা ও মাঘী পূর্ণিমায় উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। মাঘী পূর্ণিমার উৎসবটি জাঁকজমক সহকারে পালন করা হয়।
তেহট্টের কৃষ্ণরায় মন্দিরে যেতে হলে শিয়ালদহ থেকে লালগোলা প্যাসেঞ্জার বা কৃষ্ণনগর লোকালে উঠুন। নামুন কৃষ্ণনগরে। স্টেশন থেকে রিকশায় বা টোটোতে বাসস্ট্যান্ড। বাসস্ট্যান্ড থেকে শিকারপুর, করিমপুর বা পাটিকাবাড়ি গামী বাসে উঠুন। নামুন তেহট্টের P.W.D. মোড়ে। সেখান থেকে টোটোতে হাসপাতাল রোড ধরে মন্দির। কলকাতা থেকে বাসে বা গাড়িতেও যেতে পারেন। দুপুরে ১২ টা থেকে ৪ টে পর্যন্ত মন্দির বন্ধ থাকে।
মন্দিরটি পরিদর্শনের তারিখ : ০৯.১১.২০১৫
-------------------------------------------
মন্দিরের ফটক |
নাটমন্দির ও মন্দির |
নাটমন্দির ( আংশিক ) ও মন্দির |
মন্দির ( দক্ষিণ দিক থেকে ) |
মন্দির ( সামনের দিক থেকে ) |
মন্দির (নাটমন্দির থেকে ) |
মন্দিরের প্রতিষ্ঠাফলক |
|
চতুর্ভুজ শ্রীকৃষ্ণ, রাজ কর্মচারী বা রাজা ও অন্যান্য টেরাকোটার চিত্র |
টেরাকোটার নকশা |
বাতিদান |
কৃষ্ণরায় জিউ - ১ |
কৃষ্ণরায় জিউ - ২ |
দোলমঞ্চ |
সহায়ক গ্রন্থাবলি :
১. বাংলার মন্দির স্থাপত্য ও ভাস্কর্য : প্রণব রায়
২. নদিয়া জেলার পুরাকীর্তি : মোহিত রায় (তথ্য-সংকলন ও গ্রন্থনা )
৩. পশ্চিমবঙ্গের পূজা-পার্বণ ও মেলা ( ২য় খণ্ড ) : অশোক মিত্র ( সম্পাদক ) ২. নদিয়া জেলার পুরাকীর্তি : মোহিত রায় (তথ্য-সংকলন ও গ্রন্থনা )
-------------------------------------------
আমার ইমেল : shyamalfpb@gmail.com প্রয়োজনে যোগাযোগ করতে পারেন।
--------------------------------------------
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন