জগন্নাথ মন্দির, যশড়া, চাকদহ, নদিয়া
শ্যামল কুমার ঘোষ
শিয়ালদহ-রানাঘাট রেল-লাইনে চাকদহ একটি স্টেশন। কলকাতা থেকে দূরত্ব ৬২ কি মি। ট্রেনে সময় লাগে ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিট। চাকদহ স্টেশন থেকে পশ্চিম দিকে ২ কি. মি. দূরে যশড়া গ্রাম। নদিয়া জেলায় অবস্থিত এই যশড়া গ্রামে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর অন্যতম পারিষদ তথা দ্বাদশ সখার অন্যতম, প্রসিদ্ধ বৈষ্ণব জগদীশ পণ্ডিতের শ্রীপাঠ ও জগন্নাথ দেবের একটি মন্দির অবস্থিত। পূর্বে মন্দির সংলগ্ন একটি সুপ্রসিদ্ধ দোলমঞ্চ ছিল। বড়োই পরিতাপের বিষয় বর্তমানে দোলমঞ্চটি ধ্বংস প্রাপ্ত।
শ্রীচৈতন্যদেব ও শ্রীনিত্যানন্দপ্রভু এখানে পদার্পণ করে ছিলেন। কথিত আছে, মহাপ্রভু সপারিষদ নিলাচলে অবস্থান কালে একবার জগন্নাথ দেব নবকলেবর ধারণ করেন। জগদীশ পণ্ডিত পুরীর জগন্নাথ দেবের পরিত্যক্ত পুরাতন দারুময় বিগ্রহটি পুরীধাম থেকে দণ্ডে বহন করে নবদ্বীপের উদ্দেশে যাত্রা করেন। উদ্দেশ্য বিগ্রহ পুনঃ প্রতিষ্ঠা করা। বিশাল বিগ্রহ দণ্ডে ঝুলিয়ে দুজনে কাঁধে করে বয়ে নিয়ে চলেছেন। পথিমধ্যে যশড়ায় রাত্রি যাপন করলেন। পরদিন প্রাতঃকৃত্যাদি সেরে জগন্নাথ কে কাঁধে তুলবার সময় আর ওঠাতে পারলেন না। দারু-মূর্তি শিলার চেয়েও ভারী বোধ হল। দৈববাণী হল, আমি এখানেই অবস্থান করব। সেই থেকে জগন্নাথ এখানেই আছেন। জগদীশ পণ্ডিত বাকি জীবন এখানেই বসবাস করে জগন্নাথের সেবায় অতিবাহিত করেন।
সুভদ্রা ও বলরাম বিহীন জগন্নাথ দেবের কাঠের বিগ্রটির উচ্চতা ৪ ফুট (১.২ মি.)। জগন্নাথ দেব ছাড়াও শ্রীকৃষ্ণ, শ্রীরাধাবল্লভ ও বলদেব জিউ-এর মূর্তি আছে। আর আছেন জগদীশ-পত্নী 'দুঃখিনী মাতা'-পূজিত গৌর গোপাল। পুরীধাম থেকে জগন্নাথ দেবের বিগ্রটি বহন করে আনবার জন্য জগদীশ পণ্ডিত যে বড় লাঠিটি ব্যবহার করেছিলেন সেটি এখানে সযত্নে রক্ষিত আছে।
বহুবার সংস্কৃত মন্দিরটি পাঁচ খিলান বিশিষ্ট একটি দালান। দালানের উপর পাঁচটি শিখর বর্তমান। শোনা যায়, কৃষ্ণনগরের মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র মন্দিরটি নির্মাণ করে দেন এবং দেব সেবার জন্য কয়েকশো বিঘা জমি দেবত্র করে দেন। কিন্তু বর্তমানে সেই জমির সামান্যই মন্দির-কর্তৃপক্ষের হাতে আছে। মন্দিরে জ্যৈষ্ঠ পূর্ণিমায় জগন্নাথ দেবের স্নানযাত্রা, পৌষ মাসের শুক্লা তৃতীয়া তিথিতে জগদীশ পণ্ডিতের তিরোভাব উৎসব ও অন্যান্য উৎসব অনুষ্ঠিত হ । বর্তমানে " শ্রীচৈতন্য গৌড়ীয় মঠ " মন্দিরটির দেখাশোনা ও পরিচালনার কাজে নিয়োজিত ।
যশড়ার জগন্নাথ মন্দিরে যেতে হলে শিয়ালদহ থেকে সকালের লালগোলা প্যাসেঞ্জার, রানাঘাট, শান্তিপুর, গেদে বা কৃষ্ণনগর লোকালে উঠুন। নামুন চাকদহ স্টেশনে। রেলগেটের পশ্চিম দিক থেকে রিকশা বা ভ্যান-রিকশায় উঠে পৌঁছে যান মন্দিরে। আসবার সময় মন্দির থেকে রিকশা পাবেন না। একটু হেঁটে নারকেল বাগানে আসতে হবে। দুপুরে ১২ টা থেকে ৪ টা পর্যন্ত মন্দির বন্ধ থাকে। দুপুরে আহারের (প্রসাদ ) জন্য সকাল ১২ টার মধ্যে যেতে হবে। থাকার ইচ্ছে হলে অতিথিশালায় থাকতে পারেন।
মন্দিরের ঠিকানা : শ্রী শ্রী জগন্নাথ মন্দির, পোঃ- যশড়া, ভায়া - চাকদহ, জেলা - নদিয়া, পিন - ৭৪১২২২ ।
মন্দিরটির পরিদর্শনের তারিখ : ১৮.০৮.২০১৫
|
শ্রীজগন্নাথ মন্দির |
|
মন্দিরের প্রবেশ-দ্বার |
|
শ্রীজগন্নাথ দেব ও অন্যান্য বিগ্রহ |
|
শ্রীজগন্নাথ বিগ্রহ |
|
শ্রীরাধাবল্লভ ও শ্রীরাধিকা বিগ্রহ |
|
শ্রীকৃষ্ণ, বলদেব ও গৌরগোপাল বিগ্রহ |
|
বাগানের মঞ্চ, এখানে স্নানযাত্রার সময় শ্রীজগন্নাথকে এনে রাখা হয় |
|
মঞ্চের উপর আসন, পিছনে ধ্বংসপ্রাপ্ত দোলমঞ্চ |
|
প্রাচীন দোলমঞ্চ ( পশ্চিমবঙ্গ পত্রিকার সৌজন্যে ) |
|
মাধব গোস্বামী মহারাজের ভাজন কুটীর |
|
জগন্নাথদেব বিগ্রহ বহনের লাঠি |
সহায়ক গ্রন্থাবলি :
১. নদিয়া জেলার পুরাকীর্তি : মোহিত রায় ( তথ্য-সংকলন ও গ্রন্থনা )
২. পশ্চিমবঙ্গ ভ্রমণ ও দর্শন : ভূপতিরঞ্জন দাস
-------------------------------------------
আমার ইমেল : shyamalfpb@gmail.com প্রয়োজনে যোগাযোগ করতে পারেন।
--------------------------------------------
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন