সোমবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৬

Dolmancha and other temples, Haripal, Hooghly

       
দোলমঞ্চ  ও  অন্যান্য  মন্দির,  হরিপাল,  হুগলি

                                                                শ্যামল  কুমার  ঘোষ 

             হাওড়া-তারকেশ্বর  রেলপথে  হাওড়া  থেকে  হরিপাল   ১৬  তম  রেলস্টেশন।  শেওড়াফুলি  থেকে  সপ্তম  স্টেশন।  রেলপথে  হাওড়া  থেকে  দূরত্ব  ৪৫  কিমি।  অনেকগুলি  গ্রাম  নিয়ে  হরিপাল  থানা  ও  ব্লক  গঠিত।  হরিপালের  আগের  নাম  ছিল  সিমুল।  'দিগ্বিজয়প্রকাশ'  নামক  প্রাচীন  সংস্কৃত  গ্রন্থ  থেকে  জানা  যায়  যে  নৃপতি  কুলপালের  হরিপাল  ও  অহিপাল  নামে  দুই  পুত্র  ছিল।  রাজা  হরিপাল  সিংহপুর  বা  সিঙ্গুরের  পশ্চিমে  একটি  মহাগ্রাম  স্থাপন  করে  নিজের  নামে  নাম  রাখেন  হরিপাল।  রাজা  হরিপাল  সম্ভবত  বঙ্গের  পাল  বংশের  কোন  শাখা।  ইস্ট  ইন্ডিয়া  কোম্পানির  আমলেও  হরিপাল  একটি  প্রসিদ্ধ  স্থান  ছিল।

             হরিপালে  বহু  প্রাচীন  মন্দির  আছে।  তার  মধ্যে  সবচেয়ে  উল্লেখযোগ্য  রায়পাড়ায়  অবস্থিত  রাধাগোবিন্দের  মন্দির।  এই  মন্দির  সম্ভন্ধে  অন্যত্র  আলোচনা  করবো।  রাধাগোবিন্দ  মন্দিরের পাঁচিলের  বাইরে,  দক্ষিণদিকে  আছে  রাধাগোবিন্দের  দোলমঞ্চ  এবং  তিনটি  শিবের  মন্দির।  এই  তিনটি  মন্দিরের  দুটি  একদিকে  এবং  আর  একটি  বিপরীত  দিকে।  এক  দিকে  যে  মন্দিরদুটি  আছে  সে  দুটি  পূর্বমুখী  এবং  অপর  দিকের  মন্দিরটি  পশ্চিমমুখী।  তিনটি  মন্দিরই  অল্প  উঁচু  ভিত্তিবেদির  উপর প্রতিষ্ঠিত,  আটচালা  শৈলীর,  এক  দ্বার  বিশিষ্ট  এবং  টেরাকোটা  অলংকারযুক্ত।  তিনটি  মন্দিরেরই  কেবলমাত্র  সামনের  দিকের  দেওয়ালে  টেরাকোটার  কাজ  আছে।  যদিও  সেই  টেরাকোটার  বেশিরভাগই  নষ্ট  হয়ে  গেছে।  আটচালা  দোলমঞ্চটি  উঁচু  ভিত্তিবেদির  উপর  প্রতিষ্ঠিত  ও  চারটি  স্তম্ভের  উপর  দণ্ডায়মান।  স্তম্ভগুলি  পরস্পর  ধনুরাকৃতি  খিলানের  দ্বারা  সংযুক্ত।

দোলমঞ্চ 

পূর্বমুখী  এক  জোড়া  শিবমন্দির 

একটি  মন্দিরের  সামনের  বিন্যাস

মন্দিরটির  খিলানের  উপরের  কাজ

মন্দিরটির  টেরাকোটার  নকশা 

অপর  মন্দিরের  সামনের  বিন্যাস

মন্দিরটির  খিলানের  উপরের  কাজ

মন্দিরটির  'টেরাকোটা'র  নকশা
পাশ্চিমমুখী  শিবমন্দির 

শিবমন্দিরের  সামনের  বিন্যাস

মন্দিরের  খিলানের  উপরের  কাজ

             এই  মন্দির  তিনটির  দক্ষিণ  দিকে  আর  একটু  এগুলে  একজোড়া  শিবমন্দির  দেখা  যাবে।  দুটি  মন্দিরই  অল্প  উঁচু  ভিত্তিবেদির  উপর  প্রতিষ্ঠির,  একদ্বারবিশিষ্ট,  পশ্চিমমুখী,  আটচালা  শৈলীর  ও  টেরাকোটা  অলংকারযুক্ত।  দুটি  মন্দিরেরই  কেবলমাত্র  সামনের  দিকেই  টেরাকোটার  অলংকার  আছে।  যদিও  সেই  টেরাকোটা  অলংকারের  বেশিরভাগই  নষ্ট  হয়ে  গেছে।


পশ্চিমমুখী  জোড়া  শিবমন্দির

একটি  মন্দিরের  সামনের  বিন্যাস

মন্দিরের  খিলানের  উপরের  কাজ

রামরাবণের  যুদ্ধের  একাংশ

মন্দিরের  কোনাচ 

মন্দিরের  টেরাকোটার  নকশা

             আরও  খানিকটা  দক্ষিণে  এগুলে,  চালতাতলা  ফুলবাগানে  চারটি  শিবমন্দির  আছে।  মন্দির  চারটি  একই  সারিতে  অবস্থিত।  তিনটি  এক  দিকে  এবং চতুর্থটি  আর  এক  দিকে।  মাঝখানে  রাস্তা।  মন্দিরগুলি  অল্প  উঁচু  ভিত্তিবেদির  উপর  প্রতিষ্ঠিত,  পশ্চিমমুখী  ও  আটচালা  শৈলীর।  প্রথম  তিনটি  মন্দিরের  একটি  টেরাকোটা  অলংকারযুক্ত  এবং  দুটির  'টেরাকোটা'  সংস্কারের  সময়  অপসৃত  হয়েছে।  রাস্তার  অপর  পাড়ের  মন্দিরটি  টেরাকোটা  অলংকারযুক্ত।  উপরোক্ত  মন্দিরগুলি  সবই  রায়দের  বিভিন্ন  শরিকদের।

একদিকের  তিনটি  মন্দির 

টেরাকোটাযুক্ত  মন্দিরটির  খিলানের  উপরের  কাজ 

রাস্তার  অপর  পাড়ের  মন্দির 

মন্দিরটির  সামনের  ত্রিখিলান  বিন্যাস

বাঁ  দিকের  খিলানের  উপরের  কাজ

মাঝের  খিলানের  উপরের  কাজ

ডান  দিকের  খিলানের  উপরের  কাজ 

মন্দিরের  টেরাকোটার  নকশা

             এবার  চলুন  ঘোষপাড়ায়।  ঘোষপড়ার  শুরুতে  দুটি  আটচালা  পোড়ো  শিবমন্দির  আছে।  আরও  এগুলে  ঘোষপাড়ায়   দত্তদের  একটি  পশ্চিমমুখী  শিবমন্দির,  একটি  শ্রীধর  জিউ  ( নারায়ণ  শিলা )-এর  সাধারণ  দালান  মন্দির  ও  শ্রীধর  জিউ'র  একটি   দোলমঞ্চ  আছে।  শিব মন্দিরের  সামনের  দেওয়ালে  সামান্য  টেরাকোটার  কাজ  আছে।  আটচালা  শৈলীর  দোলমঞ্চটি  উঁচু  ভিত্তিবেদির  উপর  প্রতিষ্ঠিত  চারটি  স্তম্ভের  উপর  দণ্ডায়মান।  স্তম্ভগুলি  পরস্পর  ধনুরাকৃতি  খিলানের  দ্বারা  সংযুক্ত।

শিবমন্দির 

দোলমঞ্চ 

           এবার  চলুন  গাঙ্গুলীপাড়ায়।  এই  পাড়ায়  ঘোষেদের ( এঁরা  নাট্যকার  গিরিশ  চন্দ্র  ঘোষের  উত্তরপুরুষ )  বাড়িতে  গোপীনাথের ( নারায়ণ  শিলা )  পূর্বমুখী  একটি  সাধারণ  দালান  মন্দির  ও  একটি  ছয়কোণা  দোলমঞ্চ  আছে।  এখানে  নাট্যকারের  একটি  স্মৃতিফলক  আছে। 

শ্রীশ্রী গোপীনাথের  মন্দির

শ্রীশ্রী গোপীনাথ ( নারায়ণ  শিলা )

দোলমঞ্চ 

গিরিশ  চন্দ্র  ঘোষের  স্মৃতিস্তম্ভ

             এবার  ফিরতি  পথে  চলুন  ভট্টাচার্য  পাড়া।  এই  পাড়ায়  ভট্টাচার্য্যদের  একটি  আটচালা  মন্দির  আছে।  মন্দিরটি  শ্রীশ্রী  অনন্তদেব  জিউ'র  ( নারায়ণ  শিলা )।  মন্দিরটি  উঁচু  ভিত্তিবেদির  উপর  প্রাতিষ্ঠিত  ও  আটচালা  শৈলীর।  মন্দিরটির  সামনে  ত্রিখিলান  প্রবেশদ্বার। গর্ভগৃহের  সামনে  ঢাকা  বারান্দা।  গর্ভগৃহে  ঢোকার  দুটি  প্রবেশদ্বার।  একটি  সামনের  দিকে  ও  অপরটি  পাশে।  সামনের  দেওয়ালে  'টেরাকোটা'র  কাজ  আছে।  এই  'টেরাকোটা'র  সামান্যই  অবশিষ্ট  আছে।  পাশের  দেওয়ালে  খিলানের  উপরে  টেরাকোটার  কাজ  আছে।  মন্দিরের  সামনে  চাঁদনি  আকৃতির  একটি  নাটমন্দির  আছে।  নাটমন্দিরের  ছাদে  টিনের  ছাউনি  দেওয়াতে  মন্দিরের  অনেকটাই  সৌন্দর্য  হানি  হয়েছে।  নাটমন্দিরে  পাশে  একটি  দুর্গাদালান  আছে।  এখানে  দুর্গা,  লক্ষ্মী  ও  কালী  পূজা  হয়।  মন্দিরে  একটি  সিংহাসনে  অনন্তদেব  প্রতিষ্ঠিত  ও  নিত্য  পূজিত।  সমস্ত  পূজা  পরিচালনা  করেন  'ভট্টাচার্যপাড়া  দেবোত্তর  ট্রাস্ট'।  এই  ভট্টাচার্যরা  পূর্বোক্ত  রায়দের  পুরোহিত  বংশ।  এই  মন্দিরের  রাস্তার  বিপরীতে  একটি  আটচালা  শিবমন্দির  আছে।

শ্রীশ্রী অনন্তদেবের  মন্দির

মন্দিরের সামনের  বিন্যাস 

সামনের  দেওয়ালের  খিলানের  উপরের  কাজ

একটি  টেরাকোটার  ফলক  

পাশের  দেওয়ালের  খিলানের  উপরের  কাজ 

খিলানের  উপরের  কাজ ( বড়  করে )

শ্রীশ্রী অনন্তদেব ( নারায়ণ  শিলা )

শিবমন্দির



          
             আজকের  মতো  হরিপালের  মন্দির  দর্শন  এখানেই  শেষ  করলাম। 

             রায়পাড়ার  মন্দিরে  যেতে  হলে  হাওড়া  থেকে  তারকেশ্বর  লোকালে  উঠুন।  নামুন  হরিপাল  স্টেশনে।  স্টেশনের  পাশ  থেকে  গজার  মোড়  গামী  অটোতে  উঠুন।  নামুন  বড়বাজারের  পরে  শিতলাতলা।  সেখান  থেকে  রিকশায়  বা  হেঁটে  মন্দির।  রায়পাড়া  অটোতে  যেতে  হলে  অটো  রিজার্ভ  করতে  হবে।                      

       সহায়ক  গ্রন্থাবলী  :
                 ১)  হুগলি  জেলার  ইতিহাস  ও  বঙ্গসমাজ ( ৩ য়  খণ্ড ) :  সুধীর  কুমার  মিত্র 
                 ২)  হুগলি  জেলার  পুরাকীর্তি : নরেন্দ্রনাথ  ভট্টাচার্য  
             -------------------------------------------
            আমার  ইমেল :  shyamalfpb@gmail.com   প্রয়োজনে  যোগাযোগ  করতে  পারেন।

           --------------------------------------------   

1 টি মন্তব্য: