শনিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২২

Shib temple, Angora, Nanoor, Birbhum

 শিব মন্দির, আঙ্গোরা, নানুর, বীরভূম

                       শ্যামল কুমার ঘোষ


            বীরভূম জেলার নানুর থানার অন্তর্গত একটি গ্রাম আঙ্গোরা। গ্রামে ইঁটের তৈরি একটি শিব মন্দির উল্লেখযোগ্য পুরাকীর্তি। 

            অল্প উঁচু ভিত্তিবেদির স্থাপিত, পূর্বমুখী, একদুয়ারী, মন্দিরটি দেউল রীতির। এটির দৈর্ঘ্য-প্রস্থে ৩.১ মি এবং উচ্চতা প্রায় ৯ মিটার। শিখর সপ্তরথ ও খাঁজকাটা। স্থানীয় বন্দোপাধ্যায় পরিবারের কয়েক পুরুষ আগের ঁগৌরীশঙ্কর বন্দোপাধ্যায়ের অপুত্রক বিধবা পত্নী শ্রীযুক্তা হরঠাকরুণ এ মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা। বন্দোপাধ্যায় পরিবার কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হলেও বর্তমানে চট্টোপাধ্যায় পরিবার মন্দিরটি দেখাশুনা করেন। মন্দিরে কোন প্রতিষ্ঠালিপি নেই। আনুমানিক পৌনে দু শ বছরের পুরানো এই মন্দির। মন্দিরের সামনের দেওয়াল টেরাকোটা অলংকরণযুক্ত। তবে এই টেরাকোটা উন্নত মানের নয়। টেরাকোটার বিষয় : বৃষবাহন শিব, ষড়ভুজ কৃষ্ণ ইত্যাদি। গর্ভগৃহে কষ্টিপাথরের শিবলিঙ্গ নিত্য পূজিত।     

শিব মন্দির, আঙ্গোরা, বীরভূম 

খিলানের উপরের কাজ 

কুলুঙ্গির কাজ - ১

কুলুঙ্গির কাজ - ২

কুলুঙ্গির কাজ - ৩

কুলুঙ্গির কাজ - ৫

গর্ভগৃহের শিবলিঙ্গ
 
            কলকাতা থেকে কী ভাবে যাবেন ?

            কলকাতা থেকে ট্রেনে বোলপুর-শান্তিনিকেতন। বোলপুরের জামবুনি বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসে উঠে নানুর স্টপেজে নামুন। সেখান থেকে টোটোতে আঙ্গোরার মন্দির।

 সহায়ক গ্রন্থ :

               ১)  বীরভূম জেলার পুরাকীর্তি : দেবকুমার চক্রবর্তী 

 ------------------------------------------------------------

            আমার  ইমেল :  shyamalfpb@gmail.com   প্রয়োজনে  যোগাযোগ  করতে  পারেন।

--------------------------------------------------------------

শুক্রবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২২

Temples of Ray family, Khorda Bishnupur, Daspur, Paschim Bedinipur

 রায় পরিবারের ঠাকুর বাড়ি, খোর্দা বিষ্ণুপুর,

 দাসপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর

                  শ্যামল কুমার ঘোষ

            পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দাসপুর থানার অধীন একটি গ্রাম খোর্দা বিষ্ণুপুর। শিলাবতী নদী যখন বেশ নাব্য ছিল তখন এই নদীর তীরে অনেক বাণিজ্যকেন্দ্র গড়ে উঠেছিল। খোর্দা বিষ্ণুপুর, সুরতপুর ও তার পাশের গ্রাম গুঁডলি সেই সময় রেশম উৎপাদনের কেন্দ্ররূপে পরিগণিত ছিল। সুরতপুর ও তার পাশের গ্রাম গুঁডলিতে ইংরেজ বণিকরা রেশমকুঠি তৈরি করেছিল। খোর্দা বিষ্ণুপুরও সেই সময়ে জনপদ ছিল।

            খোর্দা বিষ্ণুপুর গ্রামে রায় পরিবারের প্রতিষ্ঠিত দক্ষিণমুখী  একটি পঞ্চরত্ন রঘুনাথ মন্দির ও তারই দুপাশে দুটি শিখর শিব মন্দির এখানকার উল্লেখযোগ্য পুরাকীর্তি। সুরা নয়নপুর থেকে সুরতপুরে যাওয়ার পথের ডান দিকে চাষের জমির পাশে, ঝোপ ঝাড়ের মধ্যে মন্দিরগুলি দেখা যায়। পঞ্চরত্ন মন্দিরটির সামনের দেওয়াল জুড়ে আছে টেরাকোটা অলংকরণ। কিন্তু সেগুলির বেশীর ভাগ এখন ভগ্ন। আগে এই মন্দির চত্বর প্রাচীরবেষ্টিত ছিল। রায়দের অট্টালিকা এই ঠাকুরবাড়ির সংলগ্ন ছিল। পরে কোন কারণে গ্রাম লোকালয়শূন্য হয়ে গেলে এই ঠাকুরবাড়ি পরিত্যক্ত হয় এবং জঙ্গলাকীর্ণ হয়ে যায়। ১৯৭৯ খ্রীষ্টাব্দে ঠাকুরবাড়ির জঙ্গল অপসারিত করে, পাঁচিল ও রায়দের বাড়ি বিলুপ্ত করে চাষবাস শুরু হয়।  মন্দিরগুলি রয়ে যায়। মন্দিরে এখন কোন প্রতিষ্ঠালিপি নেই। কিন্তু জানা যায় যে এটি ১৮৪৯ খ্রীষ্টাব্দে নির্মিত।

পঞ্চরত্ন ও দুপাশে দুটি শিখর শিব মন্দির

মন্দিরের ত্রিখিলান বিন্যাস 

বাঁ দিকের খিলানের উপরের কাজ 

মাঝের খিলানের উপরের কাজ 

ডান দিকের খিলানের উপরের কাজ 

কুলুঙ্গির কাজ - ১

কুলুঙ্গির কাজ - ২

কুলুঙ্গির কাজ - ৩

কুলুঙ্গির কাজ - ৪

কুলুঙ্গির কাজ - ৫

কুলুঙ্গির কাজ - ৬

কুলুঙ্গির কাজ - ৭

কুলুঙ্গির কাজ - ৮

কুলুঙ্গির কাজ - ৯

কুলুঙ্গির কাজ - ১০

কুলুঙ্গির কাজ - ১১

 
              কী ভাবে যাবেন ?

            হাওড়া থেকে মেদিনীপুর গামী ট্রেনে উঠে পাঁশকুড়া স্টেশনে নামুন। স্টেশনের কাছেই পাঁশকুড়া বাস স্ট্যান্ড। সেখান থেকে ঘাঁটালগামী বাসে উঠে ( পাঁশকুড়া-ঘাটাল বাস রাস্তায় ) বকুলতলা স্টপেজে নামুন। সেখান থেকে বাসে বা অটোতে নাড়াজোল মুখী বাস রাস্তায় সুরানয়নপুর। সেখান থেকে টোটোতে বা হেঁটে সুরতপুরে যাওয়ার পথের ডান দিকে চাষের জমির পাশে মন্দিরগুলি।

         সহায়ক গ্রন্থ :

                ১) পুরাকীর্তি সমীক্ষা - মেদিনীপুর :  তারাপদ সাঁতরা 
               ২) মেদিনীপুর জেলার প্রত্ন-সম্পদ : প্রণব রায়

                       

বৃহস্পতিবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২২

Two Shib temples, Pirtala, Daspur, Paschim Medinipur

 দুটি শিব মন্দির, পিরতলা, দাসপুর, 

পশ্চিম মেদিনীপুর

                       শ্যামল কুমার ঘোষ

            পাঁশকুড়া-ঘাটাল বাস রাস্তার একটি স্টপেজ পিরতলা। এই  পিরতলা থেকে লাওদা যাওয়ার রাস্তার ডান দিকে গুঁই পরিবার প্রতিষ্ঠিত দুটি শিব মন্দির দেখা যায়। উঁচু ভিত্তিবেদির উপর স্থাপিত, পরস্পরের মুখোমুখি অবস্থিত মন্দির দুটি আটচালা শৈলীর। একটি মন্দির উত্তরমুখী ও অপরটি দক্ষিণমুখী। মন্দিরদুটিতে একটি করে দরজা, সামনে। উত্তরমুখী মন্দিরটিতে কিছু পঙ্খের কাজ আছে। এই মন্দিরটিতে একটি শ্বেতপাথরের ফলক আছে। তাতে লেখা আছে, 'শ্রী নদের চাঁদ গুঁই / সা. পদমপুর / সন ১৩১৭ সাল ২৭ ফাল্গুন।' অর্থাৎ মন্দির দুটি ১৩১৭ বঙ্গাব্দে ( ১৯১০ খ্রীষ্টাব্দে ) প্রতিষ্ঠিত এবং প্রতিষ্ঠাতা শ্রী নদের চাঁদ গুঁই। উত্তরমুখী শিব মন্দিরে একটি শ্বেতপাথরের শিবলিঙ্গ ও দক্ষিণমুখী শিব মন্দিরে একটি কষ্টিপাথরের শিবলিঙ্গ নিত্য পূজিত।    

উত্তরমুখী শিব মন্দির

পঙ্খের কাজ 

পঙ্খের কাজ ( দ্বারবর্তিনী ) 

শ্বেতপাথরের প্রতিষ্ঠাফলক

শ্বেতপাথরের শিবলিঙ্গ

দক্ষিণমুখী শিব মন্দির 

কষ্টিপাথরের শিবলিঙ্গ

     
  কী ভাবে যাবেন ?

             হাওড়া থেকে মেদিনীপুর গামী ট্রেনে উঠে পাঁশকুড়া স্টেশনে নামুন। স্টেশনের কাছেই পাঁশকুড়া বাস স্ট্যান্ড। সেখান থেকে ঘাটাল গামী বাসে উঠে পিরতলা স্টপেজে নামুন। সেখান থেকে লাওদা যাওয়ার রাস্তার ডান দিকে পড়বে মন্দির।

   

মঙ্গলবার, ২৫ অক্টোবর, ২০২২

Ekratna Gopinath temple, Radhakantapur, Daspur, Paschim Medinipur

 একরত্ন গোপীনাথ মন্দির, রাধাকান্তপুর, দাসপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর

                    শ্যামল কুমার ঘোষ

            পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দাসপুর থানার অধীন একটি গ্রাম রাধাকান্তপুর। গ্রামে দাস পরিবারের প্রতিষ্ঠিত গোপীনাথ মন্দিরটি একটি উল্লেখযোগ্য পুরাকীর্তি। পাঁশকুড়া-ঘাটাল বাস রাস্তার একটি স্টপেজ টালিভাটা। সেখান থেকে পূর্ব দিকে হেঁটে মন্দিরে যাওয়া যায়।

            অল্প উঁচু ভিত্তিবেদির উপর স্থাপিত, দক্ষিণমুখী মন্দিরটি একরত্ন শৈলীর। আটকোনা রত্নটি ছাদের উত্তরদিকের দেওয়াল ঘেঁষে বসানো হয়েছে। গর্ভগৃহের সামনে ত্রিখিলান প্রবেশপথবিশিষ্ট অলিন্দ। গর্ভগৃহে প্রবেশের একটিই দরজা, সামনে। মন্দিরটির সামনের দেওয়ালে প্রচুর টেরাকোটা আছে। টেরাকোটার বিষয় : রামরাজা, কৃষ্ণের কালীয়দমন, কৃষ্ণ কর্তৃক গোপীদের বস্ত্রহরণ, শিবের বিবাহ, কৃষ্ণলীলা, চড়ক দৃশ্য, সিংহল যাত্রা কালে ধনপতি ও তার পুত্রের  কমলেকামিনীর পরিবর্ত হিসাবে গণেশজননীর দর্শনসিংহবাহিনী মূর্তি, রণতরী, যুদ্ধযাত্রার দৃশ্য ইত্যাদি। মন্দিরের পূর্ণস্তম্ভ দুটির ভিত্তিবেদি সংলগ্ন দুটি যুদ্ধযাত্রার প্যানেল আছে। অনেকে বলেন যে ডান দিকের প্যানেলটি শোভা সিংহের বর্ধমান আক্রমণের দৃশ্য।   

            মন্দিরের কার্নিশের কিছু নিচে পোড়ামাটির সুদীর্ঘ নয় সারি লিপি ১২৫১ সালে ( ইং ১৮৪৪ খ্রীষ্টাব্দে ) মন্দির সংস্কারকালীন। ঐ লিপি থেকে জানা যায় যে ১২৫১ বঙ্গাব্দে সংস্কারের প্রায় ২০০ বছর আগে মন্দিরটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। দাস বংশের পূর্বপুরুষ জনানন্দ দাসের জ্যেষ্ঠ পুত্র শ্যাম দাস বর্ধমান থেকে গোপীনাথ বিগ্রহ আনিয়ে এই মন্দিরে স্থাপন করেছিলেন। সে সময় চেচুয়া বরদার প্রতাপশালী জমিদার 'সভা সিংহ' ( শোভা সিংহ ) এই শ্যাম দাসের প্রতি রুষ্ট হয়ে তাঁর মুণ্ডচ্ছেদ করেন।  শ্যাম দাসের কাটা মুণ্ড 'দুর্গা দুর্গা' উচ্চারণ করায় শোভা সিংহ বিস্মিত হন। এর অনেক বছর পরে যজ্ঞেশ্বর দাস, হীরু মিস্ত্রি নামে এক মিস্ত্রিকে দিয়ে ১২৫১ সালে মন্দিরটির সংস্কার করেন। গোপীনাথ মন্দিরের সামনে তিনি একটি পুকুর, পাকা ঘাট ও একটি শিব মন্দির স্থাপন করেন। ঘাটে 'জগ্গেস্বর দাস' নামটি উৎকীর্ণ আছে। সুদীর্ঘ লিপিটি পঞ্চানন রায় কাব্যতীর্থ ও প্রণব রায়ের লেখা 'ঘাটালের কথা' গ্রন্থে কবিতার আকারে মুদ্রিত আছে ( প্রাচীন বানান পরিবর্তন করা হয়েছে )। মুদ্রিত  কবিতাটি নিচে দেওয়া হল :

রাধাকান্তপুরে বাস          জনানন্দ দাস

              স্বর্গে বাস এই সে কারণে :

মহা মহা পুণ্যবলে         সপ্ত পুত্র ক্ষিতিতলে 

              জ্যেষ্ঠপুত্র শ্যামদাস নামে : 

যিনি দাতা পুন্যোদয়      প্রকাশিত মহাশয় 

              মধ্যম তৃতীয় সহোদরে : 

বর্দ্ধমানে পাঠাইয়া        গোপীনাথে আনাইয়া 

              স্থাপন করিল এই ঘরে : 

নবাব পৃথিবী পতি         তার ভয়ে ব্যস্ত অতি 

              সীমানা ঘেরিয়া খুলিলা গড় :

দামামা দরজা পরে        জয়চণ্ডীর কৃপাবরে 

              পুস্করিণী খুলিলা তারপর : 

সন্ধান পাইল যদি           সভাসিংহ নরপতি 

              এই হেতু কড়া না আইসে : 

কম্পবান ক্রোধভরে       আজ্ঞা দিল অনুচরে 

              হান শির পদাতিক রোষে : 

বিপক্ষ হইল কাল           কাল হইল পরকাল 

              কিছু না জানিল মহাশয় : 

তাহাতে ছেদিত মুণ্ড       দুর্গা দুর্গা ডাকে তুণ্ড 

              শুনি রাজা মানিল বিস্ময় : 

কবিতা করিতে তার        এইস্থানে আঁটা ভার 

              হইল দুই শতেক বৎসর : 

আপদ হইল ইথে            বৃক্ষ হইল মন্দিরেতে 

              সারাইতে সাধ্য নাহি কার :

নারান দাসের বংশে        মধ্যম বাড়ীর অংশে 

              যজ্ঞেশ্বর জন্মেছিল সার : 

সন ১২৫১ সালে             গোষ্ঠীর সহিত মিলে 

              নানা যুক্তি করে জনে জনে :

কেহ বলে নয়া কর          কেহ বলে একেই সার 

              যজ্ঞেশ্বরের কিছুই না লয় মনে : 

পিতৃকীর্ত্তি ডুবাইয়া          কেমনে করিব ইহা    

              সারাইব যা থাকে ভাগ্যেতে :

ভদ্রলোক ডাকাইয়া          হীরু মিস্ত্রী আনাইয়া 

              উদ্যোগ করিল সারাইতে :

সন ১২৫১ সালে               গোপীনাথের কৃপাবলে 

              মন্দির করিল মেরামতি : 

হিসাব করহ সবে              ইহাতে নিকাশ পাবে 

              কবিতা সমাপ্ত হইল ইতি :

            আগেই বলা হয়েছে যে মন্দিরটি ১২৫১ বঙ্গাব্দে সংস্কারের প্রায় ২০০ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয়। পরেও কয়েকবার সংস্কার করা হয়। ২০১৯ খ্রীষ্টাব্দে রাজ্য প্রত্নতত্ত্ব দপ্তর কর্তৃক মন্দিরটির আমূল সংস্কার করা হয়।                                 

গোপীনাথ মন্দির, রাধাকান্তপুর, দাসপুর 

মন্দিরের সামনের বিন্যাস 

মন্দিরের ত্রিখিলান বিন্যাস 

বাঁ দিকের খিলানের উপরের কাজ 

শ্রীকৃষ্ণ কর্তৃক গোপীদের বস্ত্রহরণ 

মাঝের দিকের খিলানের উপরের কাজ

কালীয় দমন 

পোড়ামাটির অলংকরণে চড়ক দৃশ্য  

ডান দিকের খিলানের উপরের কাজ

সিংহল যাত্রা কালে ধনপতি ও তার পুত্রের
 কমলেকামিনীর পরিবর্ত হিসাবে গণেশজননীর দর্শন
শিবের বিয়ে 

বাঁ দিকের পূর্ণ স্তম্ভের কাজ 

বাঁ দিকের অর্ধ স্তম্ভের কাজ

ডান দিকের অর্ধ স্তম্ভের কাজ

ডান দিকের পূর্ণ স্তম্ভের কাজ

প্রতিষ্ঠাফলক 

   
           কী ভাবে যাবেন ?

             হাওড়া থেকে মেদিনীপুর গামী ট্রেনে উঠে পাঁশকুড়া স্টেশনে নামুন। স্টেশনের কাছেই পাঁশকুড়া বাস স্ট্যান্ড। সেখান থেকে ঘাটাল গামী বাসে উঠে টালিভাটা স্টপেজে নামুন। সেখান থেকে পূর্ব দিকে হেঁটে মন্দিরে যাওয়া যায়। 

      সহায়ক গ্রন্থ :

                ১) পুরাকীর্তি সমীক্ষা - মেদিনীপুর :  তারাপদ সাঁতরা 

               ২) মেদিনীপুর জেলার প্রত্ন-সম্পদ : প্রণব রায় 


Bhubaneshwar Shib temle, Uttar Gobindanagar, Daspur, Paschim Medinipur

 ভুবনেশ্বর শিব মন্দির, উত্তর গোবিন্দনগর, দাসপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর

                          শ্যামল কুমার ঘোষ

            পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দাসপুর ১ ব্লকের অধীন একটি গ্রাম উত্তর গোবিন্দপুর। পাঁশকুড়া-ঘাটাল বাস রাস্তার একটি স্টপেজ গৌরা। গৌরাতে নেমে পশ্চিম দিকে টোটোতে বা হেঁটে এই গ্রামে যাওয়া যায়। গ্রামের পাশ দিয়ে একটি খাল বয়ে গেছে। এই খালের পাশে ভুবনেশ্বর শিব মন্দির অবস্থিত। খালের অপর পাশে অবস্থিত গোবিন্দপুর গ্রামের রাধাগোবিন্দ ও রাধারমণ জিউর মন্দির।

            অল্প উঁচু ভিত্তিবেদির উপর স্থাপিত, পশ্চিমমুখী মন্দিরটি আটচালা শৈলীর। মন্দিরের সামনে ত্রিখিলান প্রবেশপথবিশিষ্ট  অলিন্দ। গর্ভগৃহে ঢোকার একটিই দরজা, সামনে। সামনের দেওয়ালের তিনটি খিলানের উপরে টেরাকোটার সুন্দর ফলক আছে। দুই প্রান্তের ও বাঁকানো কার্নিসের নিচের এক সারি কুলুঙ্গির মধ্যে টেরাকোটার ফলক থাকলেও এখন তার সবগুলিই ভগ্ন। খিলানের উপরের টেরাকোটার বিষয় : রামরাবণের যুদ্ধ, রাবণের সীতা হরণ, রামের কোলে লক্ষণ ও হনুমানের গন্ধমাদন পর্বত আনয়ন, রামরাজা, শিবের বিয়ে, সিংহল যাত্রা কালে ধনপতির কমলেকামিনীর পরিবর্ত হিসাবে গণেশজননীর দর্শন, অনন্তশয়ানে বিষ্ণু ইত্যাদি। মন্দিরে কয়েকটি মকর মূর্তি আছে। মন্দিরের সামনে একটি টিনের ছাউনি দেওয়া নাটমন্দির আছে যেটি মন্দিরের ছবি তোলার ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি করে। বাঁধ-রাস্তার মাটির জন্য মন্দিরের দক্ষিণ দিকটার অনেকটা আড়াল হয়ে গেছে।  

            মন্দিরের শীর্ষ চালার গায়ে একটি প্রতিষ্ঠাফলক আছে। প্রতিষ্ঠাফলকের পাঠ : " শ্রীশ্রী ভুবনেশ্বর / দেবাদিদেব মহাদেব / সকাব্দা ১৭৭২ সন ১২৫৭ সাল / তাং ১ ভাদ্র মিস্ত্রী শ্রী আনন্দরাম দাস সাকিম দাসপুর। " অর্থাৎ ১৮৫০ খ্রীষ্টাব্দে মন্দিরটি নির্মিত। প্রাতিষ্ঠাফলক থেকে মন্দিরের কারিগরের নাম জানা গেলেও প্রতিষ্ঠাতার নাম জানা যায় না। 

             মন্দিরটিতে এখন সংস্কারের কাজ হচ্ছে। সে কারণে গর্ভগৃহের শিবলিঙ্গটি অন্যত্র সরানো হয়েছে। মন্দিরটি পরিদর্শনের তারিখ : ১৭.১০.২০২২

সিংহল যাত্রা কালে ধনপতির কমলেকামিনীর পরিবর্ত হিসাবে গণেশজননীর দর্শন

বাঁ দিকের খিলানের উপরের কাজ 

রামরাবণের যুদ্ধ 

রাবণের সীতাহরণ 

হনুমানের গন্ধমাদন পর্বত আনায়ন
ও রামের কোলে লক্ষণ 

মাঝের খিলানের উপরের কাজ

রামরাজা 

শিবের বিয়ে 

সিংহল যাত্রা কালে ধনপতির কমলেকামিনীর পরিবর্ত হিসাবে গণেশজননীর দর্শন

অনন্তশয়ানে বিষ্ণু 

ডান দিকের খিলানের উপরের কাজ

মকর মূর্তি - ১

মকর মূর্তি - ২

প্রতিষ্ঠাফলক 

            কী ভাবে যাবেন ?

             হাওড়া থেকে মেদিনীপুর গামী ট্রেনে উঠে পাঁশকুড়া স্টেশনে নামুন। স্টেশনের কাছেই পাঁশকুড়া বাস স্ট্যান্ড। সেখান থেকে ঘাটাল গামী বাসে উঠে গৌরাতে নামুন। খালের উপর ব্রিজের পরে নামবেন। টোটোতে বা হেঁটে ( পশ্চিম দিকের ) এই গ্রামের মন্দিরে যাওয়া যায়।    

        সহায়ক গ্রন্থ :

                ১) পুরাকীর্তি সমীক্ষা - মেদিনীপুর :  তারাপদ সাঁতরা 

               ২) মেদিনীপুর জেলার প্রত্ন-সম্পদ : প্রণব রায়