বুধবার, ১৭ জুলাই, ২০১৯

Radhabinod Temple, Kharbangla, Bishnupur, Bankura, West Bengal


রাধাবিনোদ  মন্দির,  খড়বাংলা  তাঁতিপাড়া,  বিষ্ণুপুর,  বাঁকুড়া,  পশ্চিম  বঙ্গ 

শ্যামল  কুমার  ঘোষ 


            বিষ্ণুপুরের  খড়বাংলা  পল্লীর  বিশেষ  দর্শনীয়  পুরাবস্তুটি  হল  শ্রীশ্রীরাধাবিনোদ  জিউ-এর  মন্দির।  অল্প  উঁচু  ভিত্তিবেদির  উপর  প্রতিষ্ঠিত,  ইঁটের  তৈরি,  ত্রিখিলান  প্রবেশপথবিশিষ্ট  ও  পূর্বমুখী  মন্দিরটি  আটচালা  শৈলীর।  আটচালা  দেবালয়টির  নিচের  চারচালা  থেকে  উপরের  চারচালা  অল্প  ব্যবধানে  নির্মিত  হওয়ার  জন্য  মন্দিরটিকে  খর্ব  দেখায়।  মন্দিরের  সামনের  দিকে  গর্ভগৃহে  ঢোকার  একটি  দরজা  ছাড়াও  দক্ষিণ  দিকে  আর  একটি  দরজা  আছে।  উত্তর  দিকে  আছে  টেরাকোটা-ভাস্কর্য  সমন্বিত  একটি  ভরাট  করা  দরজা।  কালের  প্রকোপে  মন্দিরের পূর্বদিকের  ছাদসহ  দেওয়াল  এবং  তার  উপর  চারচালার  কিছুটা  অংশ  ভেঙে  পড়েছিল।  অনেক  দিন আগে  'ভারতীয়  পুরাতত্ত্ব  সর্বেক্ষণ'  মন্দিরটি  অধিগ্রহণ  করে  ভেঙে  পড়া  অংশ  পুনর্নির্মাণ  করে  মন্দিরটিকে  ধ্বংসের  হাত  থেকে  রক্ষা  করেন।  বর্তমানে  তাঁরা  মন্দিরটির  চারদিক  ঘিরে  দিচ্ছেন।

            মন্দিরটি  দৈর্ঘ্যে-প্রস্থে  ৬.৪  মিটার  ও  উচ্চতায়  ১০.৭  মিটার।  ১৬৬৫  খ্রীষ্টাব্দে  অর্থাৎ  ৯৬৫  মল্লাব্দে  রাজা  রঘুনাথ  সিংহের  মহিষী  মন্দিরটি  নির্মাণ  করেন।  সামনের  অলিন্দের  উত্তর  দিকের  দেওয়ালে  একটি  প্রতিষ্ঠাফলক  আছে।  এখানে  উল্লেখ্য,  বঙ্গাব্দের  চেয়ে  মল্লাব্দ  ১০১  বছর  কম।  চিত্তরঞ্জন  দাসগুপ্ত  লিখেছেন, "খড়বাংলার  শ্ৰীশ্ৰীরাধাবিনোদ  মন্দিরে  টেরাকোটার  সংখ্যা  অল্প।  এখানে  কয়েকটি  উজ্জ্বল  এবং  জীবন্ত  টেরাকোটার  মধ্যে  'গজেন্দ্রমোক্ষ'  ও  জনৈক  গোস্বামীর  পুঁথিপাঠের  চিত্রটি  উল্লেখযোগ্য।  এগুলির  মাধ্যমে  গৌড়ীয়  বৈষ্ণব  দর্শনেরই  (  শরণাগতি  এবং  শ্রবণ-মনন )  অভিব্যক্তি  ঘটেছে।  'গজেন্দ্রমোক্ষ'  চিত্রটি   শরণাগতির  প্রতীক  এবং  পুঁথিপাঠের  চিত্রটিতে  পরিস্ফুট  হয়েছে  শ্রবণ  এবং  স্মরণ।  পুঁথিপাঠরত  গোস্বামীর  সম্মুখে  মালা  হাতে  দুই  নারী-শ্রোতা।  তাঁরা  পাঠ  শুনছেন  এবং  মালা  জপ  করছেন।"  তিনি  আরও  লিখেছেন,  " গোস্বামী  পাড়ায়  অবস্থিত  শ্রীনিবাস  আচার্যের  সাধন-পীঠের  সন্নিকটবর্তী  এই  রাধাবিনোদ  মন্দিরে  বৈষ্ণব  গোস্বামীদের  বিভিন্ন  ধরনের  একাধিক  টেরাকোটা  চিত্রের  সন্নিবেশ  লক্ষ্য  করা  যায়।"

           অমিয়কুমার  বন্দ্যোপাধ্যায়  লিখেছেন,  "মন্দিরের  সামনের  প্রবেশদ্বারের  দুপাশে,  রথারূঢ়  ধনুর্বাণধারী  যোদ্ধার  যে  আটটি  বেশ  বড়  'টেরাকোটা'-প্যানেল  দেখা  যায়,  তাদের  সঙ্গে  জোড়বাংলা ( কেষ্টরায় )  মন্দিরের  অনুরূপ  'প্যানেল' -এর  বেশ  সাদৃশ্য  আছে।  পুব  ও  দক্ষিণের  প্রবেশপথ  ও  উত্তরের  এক  নকল  দরজার  তিন  দিক  ঘিরে  ফুল-লতাপাতার  যে  অলংকরণগুলি  নিবদ্ধ,  তার  তুলনা  সারা  পশ্চিমবঙ্গে  বিরল।"

            মন্দিরের  গর্ভগৃহে  শ্রীশ্রীরাধাবিনোদ  ( রাধাকৃষ্ণ )  বিগ্রহ  নিত্য  পূজিত।  বিংশ  শতাব্দীর  সাতের  দশকে  অষ্টধাতুর  শ্রীরাধা  মূর্তি  চুরি  যাওয়ায়  অনেক  দিন  বিনোদ  বিগ্রহটি  একক  ভাবে  পূজিত  হচ্ছিলেন।  পরে  নতুন  রাধিকা  মূর্তি  যুক্ত  করা  হয়। 
  
শ্রীশ্রীরাধাবিনোদ মন্দির, বিষ্ণুপুর 


মন্দিরের সামনের বিন্যাস 

দক্ষিণ দিকের দরজার খিলানের উপরের কাজ 

উত্তর দিকের ভরাট করা দরজা ও খিলানের উপরের কাজ 

উত্তর দিকের ভরাট করা দরজার খিলানের উপরের কাজ 

পূর্ব দিকের ভিত্তিবেদি সংলগ্ন কাজ 

উত্তর দিকের ভিত্তিবেদি সংলগ্ন কাজ 

টেরাকোটা চিত্র - ১

টেরাকোটা চিত্র - ২

টেরাকোটা চিত্র - ৩

টেরাকোটা চিত্র - ৪

টেরাকোটা চিত্র - ৫

কৌণিক ভাস্কর্য 

নৃসিংহ মূর্তি 

গোস্বামী চিত্র - ১

গোস্বামী চিত্র - ২

পুঁথিপাঠের  চিত্র

গজেন্দ্র মোক্ষ 

পূর্ব দিকের দরজার খিলানের উপরের কাজ

রথারূঢ়  ধনুর্বাণধারী  যোদ্ধা - ১

রথারূঢ়  ধনুর্বাণধারী  যোদ্ধা - ২

প্রতিষ্ঠাফলক 

শ্রীশ্রীরাধাবিনোদ বিগ্রহ 

      সহায়ক  গ্রন্থ :
         ১)  বাঁকুড়া  জেলার  পুরাকীর্তি : অমিয়কুমার  বন্দোপাধ্যায় 
         ২)  মল্লভূম  বিষ্ণুপুর : মনোরঞ্জন  চন্দ্র  

                                                          ******              

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন