শ্রীশ্রী রাধাকান্ত ও অন্যান্য মন্দির, ধান্যকুড়িয়া, উত্তর ২৪ পরগনা
শ্যামল কুমার ঘোষ
উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার বসিরহাট মহকুমার অন্তর্গত একটি গ্রাম ধান্যকুড়িয়া। কলকাতা থেকে দূরত্ব ৫২ কিমি। অনেক আগে এটি ছিল সুন্দরবনের অন্তর্গত। জঙ্গলাকীর্ণ, লবণাক্ত ও শ্বাপদসংকুল এলাকা। ১৭৪২ খ্রীষ্টাব্দে বাংলায় মারাঠা আক্রমণের সময়ে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে নদিয়া থেকে ধান্যকুড়িয়া এসে বসতি স্থাপন করেন জগন্নাথ দাস। স্থানটিকে বাসযোগ্য করে তুলতে জগন্নাথ ও তার পুত্র রত্নেশ্বর প্রবল প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করেছিলেন। ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে গ্রাম। ধান্যকুড়িয়ার সমৃদ্ধি ঘটলে অনেক পরিবার এখানে এসে বসতি স্থাপন করেন। ধান্যকুড়িয়ায় পুরানো জমিদার বাড়িগুলি যেমন দ্রষ্টব্য তেমনই এখানে কয়েকটি মন্দিরও দ্রষ্টব্য।
প্রথমে চলুন রাধাকান্ত মন্দিরে। উঁচু ভিত্তিভূমির উপর অবস্থিত, ত্রিখিলান প্রবেশপথবিশিষ্ট, দক্ষিণমুখী মন্দিরটি একটি দালান। মন্দিরটি নির্মাণ করেন স্থানীয় সাউ পরিবার। মন্দিরে কিছু পঙ্খের কাজ আছে। গর্ভগৃহে রাধাকান্ত ও রাধিকা মূর্তি নিত্য পূজিত।
|
রাধাকান্ত মন্দির, ধান্যকুড়িয়া |
|
মন্দিরের পঙ্খের কাজ - ১ |
|
মন্দিরের পঙ্খের কাজ - ২ |
|
মন্দিরের অলিন্দে টাঙানো একটি ছবি |
|
রাধাকান্ত ও রাধিকা বিগ্রহ - ১ |
|
রাধাকান্ত ও রাধিকা বিগ্রহ - ২
এই মন্দিরের অদূরে অবস্থিত শ্রীশ্রী মদনমোহন মন্দির। অল্প উঁচু ভিত্তিভূমির উপর অবস্থিত, ত্রিখিলান প্রবেশপথবিশিষ্ট, দক্ষিণমুখী মন্দিরটি একটি দালান। মন্দিরটি নির্মাণ করেন রামদেব কাবাসি। ১৪১২ বঙ্গাব্দে ডাঃ অসীমকুমার বল্লব ও তাঁর স্ত্রী গায়ত্রী বল্লভের উদ্যোগে বিগ্রহ ও মন্দির নবসাজে সজ্জিত হয়। গর্ভগৃহে মদনমোহন ও রাধিকা মূর্তি নিত্য পূজিত।
|
|
শ্রীশ্রী মদনমোহন মন্দির |
|
শ্রীশ্রী মদনমোহন ও রাধিকা বিগ্রহ
ধান্যকুড়িয়ার মন্দিরগুলির মধ্যে অন্যতম মহাপ্রভু মন্দির। এটি একটি দালান মন্দির। মন্দিরের সামনে একটি নাটমন্দির আছে। মন্দিরে গৌরাঙ্গ, নিত্যানন্দ ও অন্যান্য বিগ্রহ বর্তমান। কালী পূজার পরের দিন মন্দিরে ধুমধাম সহকারে অন্নকূট উৎসব পালন করা হয়। এছাড়া অন্যান্য বৈষ্ণব উৎসব যেমন ঝুলন ইত্যাদিও পালিত হয়।
|
|
মহাপ্রভু মন্দির, ধান্যকুড়িয়া |
|
মন্দিরে গৌরাঙ্গ, নিত্যানন্দ ও অন্যান্য বিগ্রহ - ১ |
|
মন্দিরে গৌরাঙ্গ, নিত্যানন্দ ও অন্যান্য বিগ্রহ - ২
এবার চলুন গাইন বাড়ির লাগোয়া অবস্থিত শ্যামসুন্দর মন্দিরে। অল্প উঁচু ভিত্তিভূমির উপর স্থাপিত, ত্রিখিলান প্রবেশপথবিশিষ্ট, পূর্বমুখী মন্দিরটি একটি দালান। শ্যামসুন্দর গাইন পরিবারের গৃহ দেবতা। মন্দিরে কিছু পঙ্খের কাজ আছে। মন্দিরের গর্ভগৃহে শ্যামসুন্দর ও রাধারানি বিগ্রহ নিত্য পূজিত।
|
|
শ্যামসুন্দর মন্দির - ১ |
|
শ্যামসুন্দর মন্দির - ২ |
|
মন্দিরের পঙ্খের কাজ |
|
অন্যান্য বিগ্রহ - ১ |
|
অন্যান্য বিগ্রহ - ২ |
|
শ্যামসুন্দর ও রাধারানি বিগ্রহ - ১ |
|
শ্যামসুন্দর ও রাধারানি বিগ্রহ - ২ |
শ্যামসুন্দর মন্দির থেকে আর একটু উত্তরে হাঁটলে চোখে পড়বে রাসমঞ্চ। উঁচু ভিত্তিবেদির উপর স্থাপিত রাসমঞ্চটি নবরত্ন শৈলীর। রাসমঞ্চটি সাউ, বল্লভ ও গাইন পরিবারের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান P. G. W. & Sawoo এর জমিতে প্রতিষ্ঠিত। রাসের সময় এখানে ধুমধাম সহকারে রাস উৎসব পালন করা হয়। এত বড় নবরত্ন শৈলীর রাসমঞ্চ বিরল।
|
রাসমঞ্চ
ধান্যকুড়িয়ায় যেতে হলে ধর্মতলা বা উল্টাডাঙ্গা থেকে বসিরহাট গামী বাসে উঠুন। নামুন টাকি রোডের উপর অবস্থিত ধান্যকুড়িয়া স্টপেজে। সেখান থেকে মোটর ভ্যানে গ্রাম। বসিরহাটের বাস না পেলে প্রথমে বাসে বারাসত। সেখান থেকে আর একটি বাসে বেড়াচাঁপা। বেড়াচাঁপা থেকে ট্রেকারে ধান্যকুড়িয়া। ট্রেনে যেতে চাইলে শিয়ালদহ থেকে হাসনাবাদ গামী ট্রেনে কাঁকড়া মির্জানগর স্টেশনে নামুন। |
সহায়ক গ্রন্থ :
১) চব্বিশ পরগণা : কমল চৌধুরী
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন