শ্রীশ্রী অন্নপূর্ণা মন্দির, বাবুবাজার, তেলেনিপাড়া, ভদ্রেশ্বর, হুগলি
শ্যামল কুমার ঘোষ
হাওড়া-ব্যাণ্ডেল রেলপথে ভদ্রেশ্বর একাদশতম রেলস্টেশন। রেলপথে হাওড়া থেকে দূরত্ব ২৮ কিমি। ভদ্রেশ্বরের তেলেনিপাড়ার বাবুবাজারের ফেরিঘাট স্ট্রীটে অন্নপূর্ণা মন্দির অবস্থিত। মন্দিরটি স্থানীয় জমিদার বৈদ্যনাথ বন্দোপাধ্যায় বাংলা ১২০৮ সালে ফাল্গুনী পূর্ণিমায় প্রতিষ্ঠা করেন। অল্প উঁচু ভিত্তিবেদির উপর স্থাপিত, বিশালায়তন, দক্ষিণমুখী, নবরত্ন মন্দির। নবরত্ন মন্দিরের ছাদের গঠনে বক্রতা না এনে সমতল করায় বিশালায়তন এই মন্দিরের গঠনে সার্বিক লালিত্য অনেকটা ক্ষুন্ন হয়েছে। নবরত্নটির প্রথম তলের চার কোণে চারটি শিখর এবং দ্বিতলের চার কোণে চারটি প্রথম তলের চেয়ে অপেক্ষাকৃত ছোট শিখর আছে। তাদের মাঝখানে মূল রত্নটি অবস্থিত। দ্বিতীয় তলের কক্ষটিতে বঙ্গীয় স্থাপত্য-রীতি অনুসারে তিনটি খিলানের জন্য দূর থেকে মন্দিরটিকে গাম্ভীর্যমণ্ডিত মনে হয়। মন্দিরের সম্মুখভাগে পত্রাকৃতি ত্রিখিলানের পরিবর্তে ইউরোপীয় স্থাপত্যরীতি অনুসারে স্তম্ভের ব্যবহার করা হয়েছে। মন্দিরের জগমোহনটি ত্রিখিলান।
গর্ভগৃহে কাঠের সিংহাসনে অষ্টধাতুর মা অন্নপূর্ণা উপবিষ্টা। অন্নদানে রতা মাতৃমূর্তি। তাঁর ডান হাতে অন্নদান করার হাতা এবং বাঁ হাতে অন্নপাত্র। দেবীর ডানপাশে রুপোর তৈরী মহাদেব, বাঁ হাতে শিঙা ও ডমরু এবং ডান হাতে ভিক্ষাপাত্র। এ ছাড়া সিংহাসনে আছেন নারায়ণ-লক্ষ্মী-সরস্বতী ও নারায়ণ শিলা। মন্দির প্রাঙ্গণে তিনটি ঘরে তিনটি শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠিত। দেবীর তন্ত্র মতে পুজো হয়। দেবীকে ভোগে প্রতিদিন মাছ দেওয়া হয়। আগে মোষ বলি দেওয়া হত। এখন কোন পশু বলি দেওয়া হয় না।
দেবীর নিত্য পূজা ছাড়াও চৈত্র মাসে অন্নপূর্ণা পুজোর সময় বিশেষ পূজা হয়। আর একটি উল্লেখযোগ্য, অক্ষয় তৃতীয়ার অনুষ্ঠান। ওই দিন দেবী রথে চড়ে পল্লীবাসীদের পুজো নিতে নিতে গঙ্গার ঘাটে যান এবং সেখানে অপরাহ্ন পর্যন্ত অবস্থান করেন। সেখানে বিশেষ পূজা ও হোম হয়। বিকাল বেলায় মন্দিরের লক্ষ্মী-নারায়ণকে সঙ্গে নিয়ে সবাই মিলে গান গাইতে গাইতে সেখানে যান এবং দেবীকে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন। এই উপলক্ষে মন্দিরের কাছে এক বিরাট মেলা বসে। গানটি হল :
আনতে শিব অন্নপূর্ণা চল সবে যাই গো ত্বরা,
অবসান হল দিবা, উচিত নয় বিলম্ব করা।।
তৃতীয়ার উপলক্ষে, হর গৌরী অন্তরীক্ষে,
রথেতে গঙ্গা সমক্ষে বিরাজিছেন মনোহরা।।
সত্বর পদ সঞ্চারে, চল যাই জাহ্নবী তীরে,
বুঝি মা রেখেছেন হরে হয়ে বিরহ কাতরা।।
ত্যজি দম্ভ গর্বমদ, হেরিগে সেই অভয়পদ,
যে পদ সম্পদপ্রদ সর্বাপদ নাশ করা।।
( গানটির কথা ও সুর - জীতেন্দ্র নাথ বন্দোপাধ্যায় ( কালোবাবু ), রাগিনী মিশ্র বাগেশ্রী, তাল ঝাঁপতাল। )
মন্দির প্রাঙ্গনে প্রতি বছর দূর্গা পূজা, কালী পূজা ও সরস্বতী পূজা অনুষ্ঠিত হয়। মন্দিরের দেবসেবা বন্দোপাধ্যায় বংশের সকলে পালাক্রমে করে থাকেন। মন্দিরের বর্তমান (২০১৬ ) পুরোহিত অক্ষয় বন্দোপাধ্যায়।
মন্দিরটি পরিদর্শনের তারিখ : ২২০.১০.২০১৬
উপরোক্ত মন্দিরে যেতে হলে হাওড়া থেকে পূর্বরেলের মেন লাইনের লোকালে উঠুন। নামুন ভদ্রেশ্বর স্টেশনে। স্টেশনের পূর্ব দিক থেকে অটো রিকশায় উঠে পৌঁছে যান বাবুবাজার। সেখান থেকে টোটোতে বা হেঁটে পৌঁছে যান মন্দিরে। অথবা, শিয়ালদহ থেকে মেন লাইনের লোকালে উঠুন। নামুন শ্যামনগর। গঙ্গার ঘাট থেকে তেলেনিপাড়ার ফেরি নৌকায় উঠে তেলেনিপাড়ার ঘাটে নামুন। সেখান থেকে কাছেই মন্দির। জি. টি. রোড দিয়ে গাড়িতেও যেতে পারেন।
শ্রীশ্রী অন্নপূর্ণা মন্দির - ১ |
শ্রীশ্রী অন্নপূর্ণা মন্দির - ২ |
জগমোহনের ত্রিখিলান বিন্যাস |
তিনটি শিবলিঙ্গের একটি |
লক্ষ্মী-নারায়ণ-সরস্বতী বিগ্রহ |
অন্নপূর্ণা ও মহাদেব মূর্তি - ১ |
অন্নপূর্ণা ও মহাদেব মূর্তি - ২ |
মা অন্নপূর্ণা ও বাবা ভোলানাথ ( মন্দির থেকে প্রাপ্ত ) |
উপরোক্ত মন্দিরে যেতে হলে হাওড়া থেকে পূর্বরেলের মেন লাইনের লোকালে উঠুন। নামুন ভদ্রেশ্বর স্টেশনে। স্টেশনের পূর্ব দিক থেকে অটো রিকশায় উঠে পৌঁছে যান বাবুবাজার। সেখান থেকে টোটোতে বা হেঁটে পৌঁছে যান মন্দিরে। অথবা, শিয়ালদহ থেকে মেন লাইনের লোকালে উঠুন। নামুন শ্যামনগর। গঙ্গার ঘাট থেকে তেলেনিপাড়ার ফেরি নৌকায় উঠে তেলেনিপাড়ার ঘাটে নামুন। সেখান থেকে কাছেই মন্দির। জি. টি. রোড দিয়ে গাড়িতেও যেতে পারেন।
সহায়ক গ্রন্থ :
১) হুগলি জেলার দেব দেউল : সুধীর কুমার মিত্র
-------------------------------------------
আমার ইমেল : shyamalfpb@gmail.com প্রয়োজনে যোগাযোগ করতে পারেন।
--------------------------------------------
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন