শ্রীশ্রী মদন গোপাল জিউ মন্দির, শান্তিপুর, নদিয়া
শ্যামল কুমার ঘোষ
১৪৩৪ খ্রীষ্টাব্দে শ্রীঅদ্বৈতাচার্য শ্রীহট্টের অন্তর্গত লাউড় পরগণার নবগ্রাম নামক পল্লীতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম কুবের মিশ্র, মাতা লাভাদেবী। কুবের আচার্য লাউরের রাজা দিব্যসুন্দরের সভাপণ্ডিত ছিলেন। অদ্বৈতাচার্য়ের বাল্যকালের নাম কমলাক্ষ। বারো বছর বয়সে তিনি শান্তিপুরে আসেন স্মৃতি শাস্ত্র ও ন্যায় শাস্ত্র পড়ার জন্য। শান্তিপুরের অন্তর্গত পূর্ণবাটী গ্রাম নিবাসী শান্ত বেদান্তবাগীশ নামক জনৈক অধ্যাপকের কাছে বেদচতুষ্টয় অধ্যয়ন করে তিনি "বেদ পঞ্চানন" ও "অদ্বৈত আচার্য" উপাধি লাভ করেন। বিদ্যাশিক্ষা শেষ করে তিনি স্থ্যায়ীভাবে শান্তিপুরে বসবাস করতে মনস্থ করেন।
শ্রীঅদ্বৈতাচার্য শ্রীধাম বৃন্দাবনে তাঁর গুরু পরম ভাগবত শ্রীমাধবেন্দ্র পুরীর কাছ থেকে মদন গোপাল বিগ্রহটি পেয়ে শান্তিপুরে নিয়ে আসেন এবং তাঁর বাবলার আশ্রমে প্রতিষ্ঠা করেন। মূর্তিটি দারু নির্মিত।
শ্রীঅদ্বৈতাচার্য ১২৫ বছর ধরাধামে লীলা করেন। তাঁর ছয় পুত্র ছিল। জ্যেষ্ঠ পুত্র শ্রীঅচ্যুতানন্দ, দ্বিতীয় শ্রীকৃষ্ণ মিশ্র, তৃতীয় গোপাল, চতুর্থ বলরাম, পঞ্চম স্বরূপ ও ষষ্ঠ জগদীশ। তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র অচ্যুতানন্দ বাল্যকাল থেকেই সংসার বিরাগী ছিলেন, সেইজন্য শ্রীঅদ্বৈতাচার্য তাঁর দ্বিতীয় পুত্র শ্রীকৃষ্ণ মিশ্র কে মদন গোপালের সেবা ও পূজার ভার অর্পণ করেন। কৃষ্ণ মিশ্র বাবলা ত্যাগ করে শান্তিপুরের বর্তমান মদন গোপাল পাড়ায় এসে নিজ ভদ্রাসন নির্মাণ করেন এবং মদন গোপাল বিগ্রহ কে পাঁচ খিলান বিশিষ্ট এক দালান মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করেন। মন্দিরে মদন গোপাল বিগ্রহ ছাড়াও শ্রীঅদ্বৈত প্রভু ও তাঁর পত্নী সীতাদেবীর মূর্তিও আছে। মন্দিরের সামান্য দূরে একটি রাসমন্দিরও বর্তমান। মদন গোপালের নামানুসারে পাড়ার নাম হয় মদনগোপাল পাড়া। মদন গোপাল বিগ্রহকে কেন্দ্র করে অনেক অলৌকিক কাহিনী প্রচলিত আছে।
এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, শ্রীকৃষ্ণ মিশ্রের বংশে একাধিক মহাপণ্ডিতের জন্ম হয়েছে। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন রাধিকানাথ গোস্বামী ( চৈতন্য চরিতামৃতের ভাষ্য রচয়িতা ), রাধাবিনোদ গোস্বামী ( শ্রীমদ্ ভাগবতের ব্যাখ্যাকর্তা ), জিতেন্দ্রনাথ গোস্বামী ( ভাগবত ভাষ্যকার ), নৃসিংহ প্রাসাদ গোস্বামী ( ভাগবত ভাষ্যকার ), পণ্ডিত কৃষ্ণচন্দ্র গোস্বামী ( ভাগবত অমৃত রচয়িতা ), পণ্ডিত হরিশচন্দ্র গোস্বামী (পুরাণাদির ব্যাখ্যাকার ), পণ্ডিত বিশ্বেশ্বর গোস্বামী ( দর্শন শাস্ত্রে সুপণ্ডিত ও সংক্ষিপ্ত মহাভারত কাব্য প্রণেতা ), রামকৃষ্ণ গোস্বামী ( বৈষ্ণব অভিধান গ্রন্থের রচনাকার ) এবং পণ্ডিত শ্যামসুন্দর গোস্বামী ( সংস্কৃত ব্যাকরণ কৌমুদীর প্রণেতা ) প্রভৃতি।
শান্তিপুরে যেতে হলে শিয়ালদহ থেকে শান্তিপুর লোকাল ধরুন। রেলপথে শান্তিপুরের দূরত্ব ৯৩ কিমি। ট্রেনে সময় লাগে ঘন্টা আড়াই। ৩৪ নং জাতীয় সড়ক শান্তিপুরের ওপর দিয়ে গেছে। তাই বাসে বা গাড়িতেও যেতে পারেন।
সহায়ক গ্রন্থাবলি :
১. বাংলায় ভ্রমণ ( ১ ম খণ্ড ) : পূর্ববঙ্গ রেলপথের প্রচার বিভাগ কর্তৃক প্রকাশিত
২. রাসোৎসব - ২০১৫ উপলক্ষে শান্তিপুর বিগ্রহবাড়ি সমন্বয় সমিতি কর্তৃক প্রকাশিত পুস্তিকা
শান্তিপুরে যেতে হলে শিয়ালদহ থেকে শান্তিপুর লোকাল ধরুন। রেলপথে শান্তিপুরের দূরত্ব ৯৩ কিমি। ট্রেনে সময় লাগে ঘন্টা আড়াই। ৩৪ নং জাতীয় সড়ক শান্তিপুরের ওপর দিয়ে গেছে। তাই বাসে বা গাড়িতেও যেতে পারেন।
![]() |
শ্রীশ্রী মদন গোপাল জিউ মন্দির |
![]() |
শ্রীশ্রী মদন গোপাল ও অন্যান্য বিগ্রহ |
![]() |
অন্যান্য বিগ্রহ |
![]() |
শ্রীশ্রী মদন গোপাল বিগ্রহ |
![]() |
শ্রীঅদ্বৈত প্রভু ও সীতাদেবীর মূর্তি |
![]() |
রাসমান্দির |
সহায়ক গ্রন্থাবলি :
১. বাংলায় ভ্রমণ ( ১ ম খণ্ড ) : পূর্ববঙ্গ রেলপথের প্রচার বিভাগ কর্তৃক প্রকাশিত
২. রাসোৎসব - ২০১৫ উপলক্ষে শান্তিপুর বিগ্রহবাড়ি সমন্বয় সমিতি কর্তৃক প্রকাশিত পুস্তিকা
৩. পশ্চিমবঙ্গ ভ্রমণ ও দর্শন : ভূপতিরঞ্জন দাস
-----------------------
রামায়ণের ৭টি খণ্ডের ৬৪ টি উপাখ্যান ও ১৮৫ টি টেরাকোটা ফলকের আলোকচিত্র সংবলিত আমার লেখা এবং 'রা প্রকাশন' কর্তৃক প্রকাশিত বই 'বাংলার টেরাকোটা মন্দিরে রামায়ণ' প্রকাশিত হয়েছে। বইটির মুদ্রিত মূল্য - ৫৯৯ টাকা।
বইটি ডাক যোগে সংগ্রহ করতে হলে যোগাযোগ করুন : 9038130757 এই নম্বরে।
বইটি ডাক যোগে সংগ্রহ করতে হলে যোগাযোগ করুন : 9038130757 এই নম্বরে।
কলকাতার কলেজস্ট্রিটের মোড়ে দুই মোহিনীমোহন কাঞ্জিলালের কাপড়ের দোকানের মাঝের রাস্তা ১৫, শ্যামাচরণ দে স্ট্রিটের উপর অবস্থিত বিদ্যাসাগর টাওয়ারের দু'তলায় 'রা প্রকাশনে'র দোকান। ওখান থেকে বইটি সংগ্রহ করতে পারেন। কোনও অসুবিধা হলে উপরোক্ত নম্বরে ফোন করতে পারেন।
প্রকাশনীতে বইটা বেস্টসেলার হয়েছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন