বাঁকুড়া জেলার পাত্রসায়র ব্লকের অন্তর্গত একটি গ্রাম হদল-নারায়ণপুর। আসলে গ্রামটি নারায়ণপুর। অন্য নারায়ণপুরের সঙ্গে পার্থক্য করার জন্য নারায়ণপুরের পাশের গ্রাম হদলের সঙ্গে যোগ করে হদল-নারায়ণপুর নামে অভিহিত করা হয়। এই গ্রামে যেতে হলে বর্ধমানের আলিশা বাসস্ট্যান্ড থেকে বাঁকুড়ার বাসে উঠে ধগড়িয়া-তে নামুন। সেখান থেকে টোটোতে ৪.৫ কিমি দূরের গ্রাম নারায়ণপুর। আরামবাগ বা বাঁকুড়া থেকেও এখানে যেতে পারেন। থাকার জন্য সোনামুখীতে 'সোনামুখী পৌর আবাসিক' ভবন ও অন্য অনেক লজ আছে।
মণ্ডল উপাধিধারী ভূতপূর্ব জমিদার-পরিবারের তিন তরফের প্রতিষ্ঠিত কয়েকটি 'টেরাকোটা' মন্দির ও রাসমঞ্চ প্রভৃতি এখানকার প্রধান পুরাকীর্তি। এ পরিবারের মুচিরাম ঘোষ, মল্লরাজ গোপাল সিংহের আমলে ( ১৭২০-১৭৫২ খ্রীষ্টাব্দ ), প্রাক্তন নিবাস নীলপুর থেকে উঠে এসে এখানে বসতি স্থাপন করেন। গোপাল সিংহের সভাসদ ও সংলগ্ন গ্রাম রামপুরের অধিবাসী শুভঙ্কর দাস তাঁকে মল্ল-রাজদরবারে পরিচয় করিয়ে দেন। কিন্তু নিজ কৃতিত্বে অল্পকালের মধ্যেই তিনি এ অঞ্চলের প্রশাসক নিযুক্ত হন এবং মণ্ডল উপাধি লাভ করেন। পরে, বিস্তীর্ণ জমিদারির অধিকারী হন। নীলের কারবারেও এই পরিবার প্রভূত অর্থ সঞ্চয় করেন। সেই ঐশ্বর্যের ফলশ্রুতি, এখানকার প্রধান পুরাকীর্তিগুলি। এখানে আমি বড় তরফের প্রতিষ্ঠিত রাধা দামোদর মন্দির, রাসমঞ্চ ইত্যাদি নিয়ে লিখব। মণ্ডলদের অন্য দুটি বাড়ির মন্দির সম্বন্ধে জানতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন :
গ্রামের উত্তর প্রান্তে মণ্ডল পরিবারের বড়তরফের বাড়ি। গেট দিয়ে ঢুকলে প্রথমেই বাঁ দিকে পড়বে রাসমঞ্চ। সতের-চূড়াবিশিষ্ট, আটকোণা, দ্বিতল রাসমঞ্চটি জেলার এ জাতীয় ইমারতের মধ্যে শীর্ষস্থানীয়। প্রতি তলের প্রতি কোণায় একটি করে এবং কেন্দ্রীয় আর একটি খাঁজকাটা চূড়ার সমন্বয়ে গঠিত এ দেবসৌধের উচ্চতা প্রায় ৪০ ফুট ( ১২.২ মিটার )। এক তলায় আটটি খিলানশীর্ষে অনন্তশায়ী বিষ্ণু, গজলক্ষ্মী, কৃষ্ণরাধিকা, রামসীতা, সপরিবারে মহিষমর্দিনী দুর্গা, শিবের বিবাহ, গোষ্ঠলীলা ও শিব-নন্দী-ভৃঙ্গীর টেরাকোটা-ভাস্কর্যগুলি সুন্দর। কিন্তু কালের প্রবাহে এখন কিছুটা ম্লান। রাসের সময় বিগ্রহ এখানে এনে রাস উৎসব পালন করা হয়।
|
রাসমঞ্চের শিখর |
|
রাসমঞ্চ, বড়বাড়ি |
|
রাসমঞ্চের শিখর |
|
রাসমঞ্চের এক দিকের বিন্যাস |
|
অনন্তশায়ী বিষ্ণু - ১ |
|
অনন্তশায়ী বিষ্ণু - ২ |
|
গজলক্ষ্মী ? |
|
গজলক্ষ্মী ? |
|
রাধাকৃষ্ণ |
|
রামসীতা |
|
শিব-নন্দী-ভৃঙ্গী |
|
শিব-বিবাহ |
|
সপরিবারে মহিষাসুরমর্দিনী দুর্গা |
|
রাসমঞ্চের ভিতরের পঙ্খের নকশা |
রাসমঞ্চের পিছনে বড়তরফের দোতালা অট্টালিকাকেও পুরাকীর্তি বলা চলে। বস্তুতঃ, সেই সময়ের পশ্চিমবঙ্গের দূর গ্রামাঞ্চলে এহেন সাত-মহলা বিরাট বসতবাড়ি এবং তাতে ইউরোপীয় স্থাপত্য খুব কমই দেখা যায়।
|
বড় বাড়ির সামনের অংশ |
|
বড় করে ( পঙ্খের কাজ ) |
|
পঙ্খের কাজ |
|
পঙ্খের কাজ |
|
পঙ্খের কাজ |
|
দুর্গা দালানের পঙ্খের কাজ |
|
পাশের একটি ইমারতের পঙ্খের কাজ |
|
পঙ্খের কাজ |
|
পঙ্খের কাজ |
|
আর একটি ইমারতের পঙ্খের কাজ |
বড়তরফের ভিতর বাড়ির অঙ্গনে রাধাদামোদর মন্দিরটি উল্লেখযোগ্য। অল্প উঁচু ভিত্তিবেদির উপর স্থাপিত ও দক্ষিণমুখী মন্দিরটি পঞ্চরত্ন শৈলীর। সামনে ত্রিখিলান প্রবেশপথবিশিষ্ট অলিন্দ। খিলানের উপরে, বাঁকানো কার্নিসের নিচে এক সারি ও দুই প্রান্তের এক সারি করে কুলুঙ্গির মধ্যে 'টেরাকোটা'র অলংকরণ আছে। মন্দিরটি ১৭২৮ শকাব্দে ( ১৮০৬ খ্রীষ্টাব্দে ) নির্মিত। মন্দিরে একটি প্রতিষ্ঠাফলক আছে। হদল-নারায়ণপুরে এটিই একমাত্র প্রতিষ্ঠালিপিযুক্ত মন্দির। গর্ভগৃহে শ্রীশ্রী রাধাদামোদর ( নারায়ণ শিলা ) নিত্য পূজিত।
|
রাধাদামোদর মন্দির |
|
মন্দিরের সামনের বিন্যাস |
|
মন্দিরের ত্রিখিলান বিন্যাস |
|
বাঁ দিকের খিলানের উপরের কাজ |
|
মাঝের খিলানের উপরের কাজ |
|
ডান দিকের খিলানের উপরের কাজ |
|
কুলুঙ্গির মধ্যের কাজ - ১ |
|
কুলুঙ্গির মধ্যের কাজ - ২ |
|
কুলুঙ্গির মধ্যের কাজ - ৩ |
|
কুলুঙ্গির মধ্যের কাজ - ৪ |
|
কুলুঙ্গির মধ্যের কাজ - ৫ |
|
কুলুঙ্গির মধ্যের কাজ - ৬ |
|
রাধাকৃষ্ণ |
|
ভক্ত হনুমান |
|
প্রতিষ্ঠাফলক |
বড়বাড়ির প্রাঙ্গণের একটি ঘরে স্থিত, ১২৬১ বঙ্গাব্দে ( ১৮৫৪ খ্রীষ্টাব্দে ) স্বর্গীয় শিবনারায়ণ মণ্ডল কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত পিতলের রথটিও পুরাকীর্তি হিসাবে গণ্য। প্রায় ১০ ফুট ( ৩.১ মিটার ) উচ্চতার এই পঞ্চরত্ন শৈলীর রথটির গায়ে দশাবতার, পৌরাণিক ও সামাজিক বিষয়ে নানা চিত্র উৎকীর্ণ আছে।
|
রথের উপরের অংশ |
|
রথের প্রান্তে পিতলের মূর্তি - ১ |
|
রথের প্রান্তে পিতলের মূর্তি - ২ |
|
রথের প্রান্তে পিতলের মূর্তি - ৩ |
|
রথের গায়ে উৎকীর্ণ চিত্র - ১ |
|
রথের গায়ে উৎকীর্ণ চিত্র - ২ |
|
রথের গায়ে উৎকীর্ণ চিত্র - ৩ |
|
রথের গায়ে উৎকীর্ণ চিত্র - ৪ |
|
রথের গায়ে উৎকীর্ণ চিত্র - ৫ |
বড়তরফের বাড়িটি পরিদর্শনের তারিখ : ২৪.০৩ ২০১৯
সহায়ক গ্রন্থ :
১) বাঁকুড়া জেলার পুরাকীর্তি : অমিয়কুমার বন্দোপাধ্যায়
চমৎকার অ্যালবাম।
উত্তরমুছুনভালো লাগলো।
ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ
মুছুনDarun
উত্তরমুছুনধন্যবাদ।
উত্তরমুছুনApurbo.very informative and enlightening.
উত্তরমুছুনThank you.
মুছুন