মঙ্গলবার, ৩১ জুলাই, ২০১৮

Rudreshwar Shib Temple, Matiyari, Banpur, Nadia District, West Bengal


রুদ্রেশ্বর  শিব  মন্দির,  মাটিয়ারি,  বানপুর, নদিয়া 

শ্যামল  কুমার  ঘোষ 

              শিয়ালদহ-গেদে  বা  রানাঘাট-গেদে  রেলপথের  একটি  স্টেশন  বানপুর।  বানপুর  স্টেশনের  উত্তর-পূর্ব  দিকে  ১  কি. মি.  দূরের  একটি  গ্রাম  মাটিয়ারি।  নদিয়ার  সদর  শহর  কৃষ্ণনগর  থেকে  বাসেও  এই  গ্রামে  যাওয়া  যায়।  

            নদিয়া  রাজবংশের  প্রতিষ্ঠাতা  ভবানন্দ  মজুমদার  নিকটবর্তী  বাগোয়ান  ( বর্তমান  বাংলাদেশের  কুষ্ঠিয়া  জেলার  অন্তর্গত )  গ্রাম  থেকে  তাঁর  রাজধানী  এই  গ্রামে  স্থানান্তরিত  করেন। আদিশূর  কর্তৃক  আনীত  পঞ্চব্রাহ্মণের  অন্যতম  ভট্টনারায়ণের  অধস্তন  ২০ তম  পুরুষ  ভবানন্দ।  তাঁর  পূর্ব  নাম  ছিল  দুর্গাদাস  সমাদ্দার।  তিনি  এক  সময়ে  যশোহররাজ  প্রতাপাদিত্যের  অধীনে  কর্মচারী  ছিলেন।  প্রতাপাদিত্যকে  দমন  করতে  সাহায্য  করার  জন্য  মোগল সেনাপতি  মানসিংহ  ভবানন্দের প্রতি  সন্তুষ্ট  হন।  তাঁর  সুপারিশে  জাহাঙ্গীর  ১৬০৬  খ্রীষ্টাব্দে  ভবনন্দকে  নদিয়া,  মহৎপুর,  লেপা,  সুলতানপুর  প্রভৃতি  ১৪  টি  পরগণার  জমিদারি  ফরমান  ও  সম্মানসূচক  ' মজুমদার '  উপাধি  দিয়ে  সম্মানিত  করেন।  এইভাবে  বিরাট  ভূসম্পত্তি  ও  রাজসম্মানের  অধিকারী  হয়ে  ভবানন্দ  মাটিয়ারি  গ্রামে  পরিখাবেষ্টিত  এক  রাজবাড়ি  ও  গড়  নির্মাণ  করেন।   তার  কিছুই  আজ  আর  অবশিষ্ট  নেই।      

            ভবানন্দের  পৌত্র  রাজা  রাঘব  রায়  এখানে  ১৫৮৭  শকে  ( ১৬৬৫  খ্রীষ্টাব্দে )  তাঁর  পুত্র  রুদ্রের  নামে  রুদ্রেশ্বর  নামে  এক  শিবমন্দির  নির্মাণ  করেন।  উঁচু  ভিত্তিবেদির  উপর  স্থাপিত,  পোড়ামাটির  অলংকারযুক্ত,  দক্ষিণমুখী,  অলিন্দবিহীন  মন্দিরটি   বাংলা  চারচালা  শৈলীর।  মন্দিরে  প্রবেশের  তিনটি  দরজা,  সামনে  ও  দুপাশে।  পাদপীঠের  উপরে  মন্দিরের  দৈর্ঘ্য  ৫.৪  মি,  প্রস্থ  ৩.৫ মি  ও  উচ্চতা  প্রায়  ৭.৬  মি।  মন্দিরের  সামনের  দেওয়ালে  'টেরাকোটা'  আছে।  কিন্তু  বার  বার  অপটু  হাতের  সংস্কারে  সেই  টেরাকোটার  অবস্থা  খুবই  করুন।  সামনের  প্রবেশদ্বারের  দুপাশে  দুটি  ছোট  ছোট  থাম।  পত্রাকৃতিখিলানের  উপরে  ফুলকারি  নকশা  ও  ১২  টি  প্রতীক  আটচালা  শিবমন্দির।  ভিত্তিবেদি  সংলগ্ন  দুই  সারি  টেরাকোটার  নিচের  সারির  বিষয় :  হাতি  ও  অশ্বারোহীদের  যুদ্ধদৃশ্য,  বস্ত্রহরণ,  নৌকাবিলাস,  বাঘ  শিকার, হরিণের  প্রাণভয়ে  পলায়ন  ইত্যাদি।  উপরের  সারিতে  আছে  একটানা  সুন্দর  হংসশ্রেণি।  একটি  উল্লেখযোগ্য,  মন্দিরে  অনেকগুলি  মোগল  মূর্তির  উপস্থিতি।   

             মন্দিরটি  পরিদর্শনের  তারিখ ২৮.১০.২০১৫


রুদ্রেশ্বর  শিবমন্দির - ১ 

রুদ্রেশ্বর  শিবমন্দির - ২ 

মন্দিরের  শিখর 

ভিত্তিবেদি  সংলগ্ন  টেরাকোটার  কাজ - ১

ভিত্তিবেদি  সংলগ্ন  টেরাকোটার  কাজ - ২
ভিত্তিবেদি  সংলগ্ন  টেরাকোটার  কাজ - ৩

ভিত্তিবেদি  সংলগ্ন  টেরাকোটার  কাজ - ৪

ভিত্তিবেদি  সংলগ্ন  টেরাকোটার  কাজ - ৫

থাম ও প্রতীক  শিবালয় 

প্রতীক  শিবালয়  ও  শিবলিঙ্গ 

মোগল  মূর্তি 

টেরাকোটার  ফুল 

রুদ্রেশ্বর  শিবলিঙ্গ - ১

রুদ্রেশ্বর  শিবলিঙ্গ - ২
    
  সহায়ক  গ্রন্থ : 
                          ১)  নদীয়া  জেলার  পুরাকীর্তি : মোহিত  রায়  ( তথ্য-সংকলন  ও  গ্রন্থনা )
                                                                   

           -------------------------------------------

            আমার  ইমেল :  shyamalfpb@gmail.com   প্রয়োজনে  যোগাযোগ  করতে  পারেন।

           --------------------------------------------


1 টি মন্তব্য:

  1. আপনার লেখা পড়ে অনেক কিছু জানতে পারলাম। সুন্দরবনে থাকি। নেতীধোপানী মনসা মন্দির সম্পর্কে যদি একটু আলোকপাত করেন। ধন্যবাদ

    উত্তরমুছুন