সোমবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৫

Adwaitaprabhu and Gokulchand Temple, Madhyam Goswami Bari, Hatkhola Para, Santipur

    

    অদ্বৈতপ্রভু  ও গোকুলচাঁদ  মন্দির,  মধ্যম  গোস্বামী  বাড়ি,  হাটখোলা  পাড়া, শান্তিপুর 

                                                            শ্যামল  কুমার  ঘোষ

                 
             শান্তিপুরের  মধ্যম  গোস্বামী  বাড়ির  অদ্বৈতপ্রভু  ও  গোকুলচাঁদের  মন্দির  স্থাপত্য  ও  ভাস্কর্যের  দিক  থেকে  খুবই  উল্লেখযোগ্য।  দুটি  মন্দিরই  বাংলা  আটচালা  রীতিতে  নির্মিত।  শ্রীঅদ্বৈতাচার্য়ের  পৌত্র  মথুরেশের  দ্বিতীয়  পুত্র  ঘনশ্যাম  থেকে  মধ্যম  গোস্বামী  বাড়ি  বা  হাটখোলা  গোস্বামী  বাড়ির  উৎপত্তি।

             অদ্বৈতপ্রভুর  মন্দিরটি  উঁচু  ভিত্তিবেদির  উপর  স্থাপিত  ও  পূর্বমুখী।  গর্ভগৃহের  সামনে  তিনটি  পত্রাকৃতি   খিলানযুক্ত   আবৃত  অলিন্দ  আছে।   তিনটি  খিলানের  মধ্যে  ধারের  খিলান  দুটির  উপরের  চারপাশে  আটচালা  প্রতীক  শিবালয়  ও  তারমধ্যে  শিবলিঙ্গ।  মাঝের  খিলানটির  উপরের  চারপাশে  আটচালা  প্রতীক  মন্দির  এবং  লক্ষ্যণীয়,  তারমধ্যে  বিভিন্ন  মূর্তি।   থামগুলি  বত্রিশ  স্তর  ইঁটের  সমবায়ে  গঠিত।  অলিন্দের  প্রবেশপথগুলি  খুবই  সংকীর্ণ।  মন্দিরটি  দৈর্ঘে  ও  প্রস্থে  ১৫ ফুট  ( ৪.৬ মি. )  ও  উচ্চতায়  প্রায়  ২৫  ফুট  ( ৭.৬ মি. ) ;  গর্ভগৃহে,  সিংহাসনে,   অদ্বৈতপ্রভু  ও  তাঁর  পত্নী  সীতাদেবীর  মূর্তি  স্থাপিত।  মন্দিরের  সামনের  দেওয়াল  টেরাকোটা  অলংকরণে  অলংকৃত।  মূর্তিগুলি  পৌরাণিক  ও  সামাজিক।  সামাজিক  ভাস্কর্যগুলি  পাদপীঠ  সংলগ্ন  সমান্তরাল  সারিতে  উৎকীর্ণ - যথা, পালকি  বা  সুখাসান  বাহিত  সভ্রান্ত  ব্যক্তি,  শিকারদৃশ্য,  বাঘের  আক্রমণ, শিকারী  কুকুর,  তীরন্দাজ  ব্যাধ  ও  ত্রস্ত  পলায়নরত  হরিণপাল  প্রভৃতি।  পৌরাণিক  চিত্রের  মধ্যে  আছে - দশাবতার,  কৃষ্ণলীলার  বিভিন্ন  দৃশ্য,  দশভুজা  মহিষমর্দিনী  ( দেবীর  ডাইনে  গণেশ  ও  লক্ষ্মী  এবং  বামে  কার্তিক  ও  সরস্বতী )  প্রভৃতি।  এছাড়া  আছে  অন্যান্য  নকশা।  মূর্তিগুলি  নিখুঁত।  কোন  প্রতিষ্ঠালিপি  না  থাকায়  বলা  কঠিন,  মন্দিরটি  ঠিক  কোন  সময়ের।  তবে  এটি  যে  বেশ  প্রাচীন  তাতে  কোন  সন্দেহ  নেই।  মন্দিরটি  পশ্চিম  বঙ্গ  সরকার  কর্তৃক  সংরক্ষিত। 


শ্রীঅদ্বৈত  প্রভুর  মন্দির, শান্তিপুর 

মন্দিরের  শিখরদেশ

মন্দিরের  সামনের  ত্রিখিলান  বিন্যাস 

মন্দিরের  মাঝের  খিলানের  কাজ

বাঁ  দিকের  খিলানের  ওপরের  কাজ

মন্দিরের  টেরাকোটার  কাজ -১

মন্দিরের  টেরাকোটার  কাজ -২

মন্দিরের  টেরাকোটার  কাজ -৩

মন্দিরের  টেরাকোটার  কাজ -৪

শ্রীঅদ্বৈত  প্রভু  ও  তাঁর  পত্নী  সীতাদেবীর  মূর্তি 

             এ  মন্দিরের  উত্তর  দিকে,  গোকুলচাঁদের  দক্ষিণমুখী,  বাংলা  আটচালা  রীতির  মন্দিরটিও   উঁচু  ভিত্তিবেদির  উপর  প্রতিষ্ঠিত  এবং  গঠন  ও  আয়তনে  
 অদ্বৈতপ্রভুর  মন্দিরটির  ঠিক  অনুরূপ।  গর্ভগৃহের  সামনে  ত্রিখিলানযুক্ত  আবৃত  অলিন্দ।  কোন  প্রতিষ্ঠাফলক  না  থাকলেও  এটির  প্রতিষ্ঠাকাল  ১৬৬২  শকাব্দ ( ১৭৪০  খ্রীষ্টাব্দ )  বলে  জানা  যায়।  ঘনশ্যাম  গোস্বামীর  পুত্র  শ্রীরঘুনন্দন  গোস্বামী  ছিলেন  এই  বংশের  প্রাণপুরুষ।  তিনি  সুপণ্ডিত  ছিলেন।  কথিত  আছে,  রঘুনন্দন  গুপ্তিপাড়ার  শ্রীশ্রী বিন্দাবনচন্দ্র  জিউর  সেবায়েত  দণ্ডীর  নিকট  বেদান্ত  শাস্ত্রাদি  অধ্যয়ন  করতে  যান।  পাঠ  শেষ  করে  ফিরে  আসবার  সময়  তিনি  সেখানকার  দুটি  বিগ্রহের  মধ্যে  একটি  প্রার্থনা  করেন।  দণ্ডী  চোখ  বন্ধ  অবস্থায়  তাঁকে  একটিকে  নিতে  বলেন।  যেটি  তিনি  ঐ  অবস্থায়  স্পর্শ  করে  নিয়ে  আসেন  সেটিই  শ্রীশ্রী গোকুলচাঁদ  বিগ্রহ  এবং  অপরটি  গুপ্তিপাড়া  মঠের  কৃষ্ণচন্দ্র   বিগ্রহ।  বর্ধমান  জেলার  জামগ্রামের  নন্দীদের  সহায়তায়  মন্দিরটি  নাকি  নির্মিত  হয়েছিল।  এ  মন্দিরের  গায়ে  পোড়ামাটির  কোন  মূর্তি  বা  অলংকরণ  নেই,  তবে  পঙ্খের  ফুলকারি  ও  জ্যামিতিক  কিছু  নকশা  দেখা  যায়।  গর্ভগৃহে  অদ্বৈতপ্রভুর  অভিষিক্ত  এবং  ঘনশ্যাম  গোস্বামীর  প্রতিষ্ঠিত  কষ্টিপাথরের  রাধাবিনোদ  মূর্তি,  কাঠের  গোকুলচাঁদ, ধাতুময়ী  কয়েকটি  ছোট  ছোট  মূর্তি  ও  শালগ্রামশিলাদি  আছে।  মন্দিরে  বিগ্রহের  নিয়মিত  সেবা-পূজা-ভোগ-আরতি  হয়।  এছাড়াও   বিশেষ  পূজা  যেমন  রাস,  দোল,  ঝুলন  ও  জন্মাষ্টমী  উৎসব  পালিত  হয়। 

              মন্দিরদুটি  পরিদর্শনের  তারিখ :  ০৭.১২.২০১৫ 


গোকুলচাঁদ  মন্দির 

মন্দিরের শিখরদেশ

মন্দিরের  সামনের  ত্রিখিলান  বিন্যাস 

মন্দিরের  সামনের  থামগুলি

শ্রীশ্রী গোকুলচাঁদ  ও  অন্যান্য  বিগ্রহ

শ্রীশ্রী গোকুলচাঁদ  ও  রাধিকা  বিগ্রহ

শ্রীশ্রী রাধাবিনোদ  ও  রাধিকা  বিগ্রহ 

             গোকুলচাঁদ  মন্দিরের  বিপরীত  দিকে  একটি  দালান  মন্দিরে  রামচন্দের  মূর্তি,  গৌর-নিতাই,  জগন্নাথ  ও  অন্যান্য  মূর্তি  আছে।  এই  মন্দিরের  পূর্ব  দিকের  দেওয়ালে  পোড়ামাটির  একটি  কালী  মূর্তি  ও  অন্য  আর  একটি  মূর্তি  উৎকীর্ণ  আছে।  তবে  কলিচুনের  প্রলেপে  মূর্তি  দুটি  অনেকটাই  ম্লান।  অদ্বৈতপ্রভুর  মন্দিরের  বিপরীত  দিকে  আছে  দুর্গাদালান।  উল্লেখ্য,  শান্তিপুরে  অদ্বৈতাচার্য়ের  বংশধরদের  যে  বিগ্রহবাড়িগুলি  আছে তার  মধ্যে  বড়গোস্বামী  ও  মধ্যম  গোস্বামী  বাড়ি  দুটিতেই  একমাত্র  দুর্গা  পূজা  হয়ে  থাকে। চারটি  মন্দিরের  মধ্যস্থলের  ফাঁকা  জায়গাটি  উঁচু  করে  বাঁধানো  এবং  রেলিং  দিয়ে  ঘেরা।   মধ্যম  গোস্বামীর  এই  ঠাকুর  বাড়ি  পাঁচিল  দিয়ে  ঘেরা।  এই  বাড়ির  বাইরে  একটি রাসমন্দিরও  আছে। 



শ্রীশ্রী রামচন্দ্র  

গৌর-নিতাই  মূর্তি

দুর্গা  দালান

দুটি  মন্দির  ও  তার  সামনের  উঁচু  বাঁধান  চত্বর

রাসমান্দির
          শান্তিপুরে  যেতে  হলে  শিয়ালদহ  থেকে  শান্তিপুর  লোকাল  ধরুন।   রেলপথে  কলকাতা  থেকে  শান্তিপুরের  দূরত্ব  ৯৩  কি মি। ট্রেনে  সময়  লাগে  ঘন্টা  আড়াই।  ৩৪ নং  জাতীয়  সড়ক  শান্তিপুরের  ওপর  দিয়ে  গেছে।  তাই  বাসে  বা  গাড়িতেও  যেতে  পারেন।

সহায়ক গ্রন্থাবলি  :
               ১. নদিয়া  জেলার  পুরাকীর্তি  :  মোহিত  রায় ( তথ্য-সংকলন  ও  গ্রন্থনা ) 
               ২. বাংলার  মন্দির  স্থাপত্য  ও  ভাস্কর্য  :  প্রণব  রায় 
               ৩. রাসোৎসব - ২০১৫  উপলক্ষে  শান্তিপুর  বিগ্রহবাড়ি  সমন্বয়  সমিতি  কর্তৃক  প্রকাশিত  পুস্তিকা
               ৪. শান্তিপুর - পরিচয়  ( ২ য়  ভাগ ) :  কালীকৃষ্ণ  ভট্টাচার্য 
           

      

বৃহস্পতিবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৫

Atabunia Goswami Bari, Santipur, Nadia, West Bengal

   আতাবুনিয়া  গোস্বামী  বাড়ি ( সাধক  বিজয়কৃষ্ণ  গোস্বামী  বাড়ি ),  শান্তিপুর,  নদিয়া 

                                                     শ্যামল  কুমার  ঘোষ

               আতাবুনিয়া  গোস্বামী  বাড়ির  প্রতিষ্ঠাতা  শান্তিপুর  পুরন্দর  শ্রীঅদ্বৈতাচার্যের  পৌত্র  দেবকীনন্দন  গোস্বামী।  কথিত  আছে,  আগে  এখানে  আতাবন  ছিল।  তাই  নাম  হয়  আতাবুনিয়া।  এই  বংশকে  বকুলতলা  গোস্বামী  শাখাও বলা  হয়।  এই  বংশের  কুলদেবতা  শ্রীশ্রী শ্যামসুন্দর-রাধিকা  ( রাধাকৃষ্ণ )  এক  দালান  মন্দিরে  প্রতিষ্ঠিত।  নোয়াখালির  জমিদার  নরেন্দ্রকিশোর  রায়  মন্দিরটি  নির্মাণ  করে  দেন।  প্রবাদ,  অদ্বৈতপ্রভু  দেবকীনন্দনের শ্যামসুন্দর  বিগ্রহের  প্রতিষ্ঠাকার্যে  পৌরোহিত্য  করেছিলেন।  মন্দিরটি  উঁচু  ভিত্তিবেদির  উপর  স্থাপিত  এবং  পাঁচ  খিলান  বিশিষ্ট।  মন্দিরের  সামনে  ফাঁকা  উঠোন  এবং  তাকে  ঘিরে চকমিলানো  ছোট  ছোট  ঘর।

               এই  বংশে  শ্রীঅদ্বৈতপ্রভুর  নবম  পুরুষে  আনন্দকিশোর   গোস্বামী  নামে  এক  পরম  ভাগবত  জন্মগ্রহণ  করেন।  সাধক  বিজয়কৃষ্ণ  গোস্বামী  ছিলেন  পিতা  আনন্দকিশোর   গোস্বামী  ও  মাতা  স্বর্ণময়ী  দেবীর  সুসন্তান।  শ্যামসুন্দর  বিগ্রহের  সঙ্গে  সাধক  বিজয়কৃষ্ণের  অনেক  মধুর  লীলার  সাক্ষী  এই   আতাবুনিয়া  গোস্বামী  বাড়ি  বা  বিজয়কৃষ্ণ  গোস্বামী  বাড়ি।  এখানে  বিজয়কৃষ্ণের  সাধনগৃহ  সযত্নে  সংরক্ষিত।

             শান্তিপুরে  বিজয়কৃষ্ণ  গোস্বামী  বাড়ি   যেতে  হলে  শিয়ালদহ  থেকে  শান্তিপুর  লোকালে  উঠুন।  রেলপথে  শান্তিপুরের  দূরত্ব  ৯৩  কি. মি. ; ট্রেনে  সময়  লাগে  আড়াই  ঘন্টা।  ৩৪  নং  জাতীয়  সড়ক শান্তিপুরের  ওপর  দিয়ে  গেছে।  তাই  বাসে  বা  গাড়িতেও  যেতে  পারেন।  স্টেশন  থেকে  টোটো  বা  রিকশায়  পৌঁছে  যান  বিজয়কৃষ্ণ  গোস্বামী  বাড়ি।

আতাবুনিয়া  গোস্বামী  বাড়ি

শ্রীশ্রী  শ্যামসুন্দর  জিউ  মন্দির

বিজয়কৃষ্ণ  গোস্বামীর  সাধনগৃহ 

শ্রীশ্রী  শ্যামসুন্দর  বিগ্রহ - ১

শ্রীশ্রী  শ্যামসুন্দর  বিগ্রহ - ২

       সহায়ক  গ্রন্থাবলি  :
                ১. নদিয়া  জেলার  পুরাকীর্তি  :  মোহিত  রায়  ( তথ্য-সংকলন  ও  গ্রন্থনা )
                ২. রাসোৎসব - ২০১৫  উপলক্ষে  শান্তিপুর  বিগ্রহ  বাড়ি  সমন্বয়  সমিতি  কর্তৃক  প্রকাশিত  পুস্তিকা 
                ৩. পশ্চিমবঙ্গ  ভ্রমণ  ও  দর্শন  :  ভূপতিরঞ্জন  দাস       
                        --------------------------
            আমার  ইমেল :  shyamalfpb@gmail.com   প্রয়োজনে  যোগাযোগ  করতে  পারেন।                   

বুধবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৫

Chakfera Goswami Bari, Santipur, Nadia, West Bengal


শ্রীশ্রী  রাধাবল্লভ  জিউ  মন্দির,    চাকফেরা  গোস্বামী  বাড়ি , শান্তিপুর,  নদিয়া 

                                         শ্যামল  কুমার  ঘোষ 

             বৈষ্ণব  কুলতিলক  শ্রীঅদ্বৈতাচার্যের  পুত্র  বলরাম  মিশ্রের  কৃতি  সন্তান  মথুরেশ  গোস্বামীর ( চক্রবর্তী )  কনিষ্ট  পুত্র  রামেশ্বর  গোস্বামী ( চক্রবর্তী )-র  বংশধরেরা  চাকফেরা  গোস্বামী  বাড়ি  নামে  পরিচিত।  এই  বাড়ি  সীতানাথের  বাড়ি   নামেও  পরিচিত।   রামেশ্বর-প্রতিষ্ঠিত  রাধাবল্লভ ( রাধা কৃষ্ণ )  বিগ্রহ  তিন  খিলান  বিশিষ্ট  এক  দালান  মন্দিরে  প্রতিষ্ঠিত।  মন্দিরে  রাধাবল্লভ  বিগ্রহ  ছাড়াও  গৌর-নিতাই  ও  সীতানাথ-সীতাবুড়ীর  মূর্তি  আছে।  মূল  মন্দির  ছাড়াও  এই  গোস্বামী  বাড়িতে  একটি  রাসমন্দির  ও  একটি  নাটমন্দির  আছে।  তা  ছাড়া  বাড়ির  বাইরে,  কিছুটা  দূরে  একটি  দোলমঞ্চও  আছে।  এই  বাড়িতে  রাসের  সময়  'রাসমণ্ডল'-এর  মত  রাধাবল্লভ  বিগ্রহকে  মধ্যস্থলে  রেখে,  এক  গোলাকার  কাঠের  চাকার  প্রান্তে  স্থাপিত  জোড়ায়  জোড়ায়  গোপগোপিনী  মূর্তি  পরস্পরের  হাত  ধরে  ঘুরতে  থাকেন  বলে  এই  বাড়ির  নাম  হয়  'চাকাফেরা'  বা  'চাকফেরা'।
   
             শ্রীঅদ্বৈতাচার্যের  প্রপৌত্র  রামেশ্বর  অসাধারণ  পাণ্ডিত্যের  জন্য  আচার্যের  জীবদ্দশায়  'চক্রবর্তী  সার্বভৌম'  উপাধি  পান।  সমস্ত  শাস্ত্রে  তাঁর  দখল  ছিল।  বিদেশী  ভাষা  সহ  সাতটি  ভাষায়  তিনি  পারদর্শী  ছিলেন।  জনশ্রুতি,  আহ্নিক  ও  রাসপঞ্চাধ্যায়  অধ্যয়ন  করতে  করতে  তিনি  নাকি  রাধাবল্লভ  জিউর  দর্শন  পেতেন।  শান্তিপুরের  একটি  চলতি  কথা  আছে, ' দিনে  রাস  রাতে  দোল  এই  হ'ল  রামেশ্বরের  বোল।'  রামেশ্বরের আমলে  দিনে  রাস  হলেও  বর্তমানে  শান্তিপুরে  অন্যান্য  মন্দিরের  মত  রাধাবল্লভের  রাস  রাতেই  হয়। তাঁর  অনবদ্য  সৃষ্টি  'চাকরাস'  আজও  ছোট  গোস্বামী  বাড়ির  এক  প্রাণবন্ত নজির।  বর্তমান  সেবায়তরা  মূল  মন্দির  ও  রাসমন্দিরের  আমূল  সংস্কার  করেছেন।  এ  ছাড়া  শতাব্দি  প্রাচীন  নাটমন্দিরটি  ধ্বংস  হওয়ায়  ওই  স্থানে  নতুন  নাটমন্দির  নির্মাণ  করা  হয়েছে।

             শান্তিপুরে  যেতে  হলে  শিয়ালদহ  থেকে  শান্তিপুর  লোকাল  ধরুন।  রেলপথে  শান্তিপুরের  দূরত্ব  ৯৩ কি. মি. ; ট্রেনে  সময়  লাগে  আড়াই  ঘন্টা।  ৩৪  নং  জাতীয়  সড়ক শান্তিপুরের  ওপর  দিয়ে  গেছে।  তাই  বাসে  বা  গাড়িতেও  যেতে  পারেন। 


চাকফেরা  গোস্বামী  বাড়ির  ফটক

শ্রীশ্রী  রাধাবল্লভ  মন্দির

রাসমন্দির

নাটমন্দির  ও  রাসমন্দির 

দোলমঞ্চ

গৌর  ও  নিতাই

সীতানাথ  ও  সীতাবুড়ি

শ্রীশ্রী  রাধাবল্লভ  বিগ্রহ - ১ 

শ্রীশ্রী  রাধাবল্লভ  বিগ্রহ - ২

সহায়ক  গ্রন্থাবলি  :
                  ১. নদিয়া  জেলার  পুরাকীর্তি : মোহিত  রায়  ( তথ্য-সংকলন  ও  গ্রন্থনা )       
                  ২. রাসোৎসব - ২০১৫  উপলক্ষে  শান্তিপুর  বিগ্রহ  বাড়ি  সমন্বয়  সমিতি  কর্তৃক  প্রকাশিত  পুস্তিকা 
                           ৩. পশ্চিমবঙ্গ  ভ্রমণ  ও  দর্শন  : ভূপতিরঞ্জন  দাস 

                        --------------------------

            আমার  ইমেল :  shyamalfpb@gmail.com   প্রয়োজনে  যোগাযোগ  করতে  পারেন।        

মঙ্গলবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০১৫

Banshbunia Goswami Bari, Santipur, Nadia, West Bengal

       

   শ্যামসুন্দর জিউ  মন্দির, বাঁশবুনিয়া  গোস্বামী  বাড়ি, শান্তিপুর,  নদিয়া  

                                                       শ্যামল  কুমার  ঘোষ 
                বৈষ্ণব  চূড়ামণি  শ্রীঅদ্বৈতাচার্য়ের  চতুর্থ  পুত্র  বলরাম  গোস্বামীর  জ্যেষ্ঠ পুত্র  মথুরেশ  গোস্বামীর  কনিষ্ঠ  পুত্র  রামেশ্বর  থেকেই  ছোট  গোস্বামী  বাড়ির  উৎপত্তি।  রামেশ্বর  গোস্বামীর  ছোট  পুত্র  সন্তোষ  গোস্বামীই  বাঁশবুনিয়া  গোস্বামী  বাড়ির  প্রতিষ্ঠাতা।  কথিত  আছে,  আগে  এখানে  বাঁশগাছের  বন  ছিল।  সেজন্যই  নাম  বাঁশবুনিয়া।
                আনুমানিক  ৩৫০ বছর  আগে  সন্তোষ  গোস্বামী  বাঁশবন  পরিষ্কার  করে  শ্যামসুন্দর  জীউর  মূর্তি  প্রতিষ্ঠা  করেন।  মূল  মন্দির  ছাড়াও  এই  গোস্বামী  বাড়িতে  একটি  ভোগ  মন্দির  ও  কিছুটা  দূরে  একটি  রাস  মন্দির  আছে।  আগে  এখানে  বিদ্যাচর্চার  জন্য  টোল  ছিল।  এই  বাড়িতে আগে  দুর্গাপূজাও  হত  ধুমধামের  সঙ্গে। 
                নিত্যানন্দ  গোস্বামী  ছিলেন  এই  বংশের  সুসন্তান ।  তিনি  শান্তিপুরে  বাংলা  (অধুনা  হিন্দু )  স্কুলের  প্রতিষ্ঠা  করেন  এবং  বাংলা  ভাষায়  " বঙ্গভাষা  ব্যকরণ "  ও  " সুলভ  ব্যকরণ "  পুস্তক  রচনা  করেন।  বর্তমানে  এই  বংশের  অষ্টম  পুরুষদের  দ্বারা  শ্রীশ্রীশ্যামসুন্দর  জীউর  সেবাকার্য  পরিচালিত  হচ্ছে।  

                শান্তিপুরে  যেতে  হলে  শিয়ালদহ  থেকে  শান্তিপুর  লোকাল  ধরুন।  রেলপথে  শান্তিপুরের  দূরত্ব  ৯৩  কি. মি. ;  ট্রেনে  সময়  লাগে  ঘন্টা  আড়াই। ৩৪ নং  জাতীয়  সড়ক  শান্তিপুরের  ওপর  দিয়ে  গেছে।  তাই  বাসে  বা  গাড়িতেও  যেতে  পারেন। 


বাঁশবুনিয়া  গোস্বামী  বাড়ির  তোরণপথ  

শ্রীশ্রী  শ্যামসুন্দর  জিউ  মন্দির

ভোগ  মন্দির 

রাসমন্দির

শ্রীশ্রী  শ্যামসুন্দর  বিগ্রহ - ১

শ্রীশ্রী  শ্যামসুন্দর  বিগ্রহ - ২

          সহায়ক  গ্রন্থ  : 
                            ১. রাসোৎসব - ২০১৫  উপলক্ষে  শান্তিপুর  বিগ্রহবাড়ি  সমন্বয়  সমিতি  কর্তৃক  প্রকাশিত  পুস্তিকা      
           
                           -----------------------
            আমার  ইমেল :  shyamalfpb@gmail.com   প্রয়োজনে  যোগাযোগ  করতে  পারেন।                    

সোমবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৫

ShriShri Madan Gopal Jiu Temple, Santipur, Nadia

     

  শ্রীশ্রী  মদন  গোপাল  জিউ  মন্দির, শান্তিপুর,  নদিয়া  

         শ্যামল কুমার  ঘোষ 

            ১৪৩৪  খ্রীষ্টাব্দে  শ্রীঅদ্বৈতাচার্য  শ্রীহট্টের  অন্তর্গত  লাউড়  পরগণার  নবগ্রাম  নামক  পল্লীতে  জন্মগ্রহণ  করেন।  তাঁর  পিতার  নাম  কুবের  মিশ্র,  মাতা  লাভাদেবী।  কুবের  আচার্য  লাউরের  রাজা  দিব্যসুন্দরের  সভাপণ্ডিত  ছিলেন।  অদ্বৈতাচার্য়ের   বাল্যকালের  নাম  কমলাক্ষ।  বারো  বছর  বয়সে  তিনি  শান্তিপুরে  আসেন  স্মৃতি  শাস্ত্র  ও  ন্যায়  শাস্ত্র  পড়ার  জন্য।  শান্তিপুরের অন্তর্গত  পূর্ণবাটী  গ্রাম  নিবাসী  শান্ত  বেদান্তবাগীশ  নামক  জনৈক  অধ্যাপকের  কাছে  বেদচতুষ্টয়  অধ্যয়ন  করে  তিনি  "বেদ  পঞ্চানন" ও  "অদ্বৈত  আচার্য"  উপাধি  লাভ  করেন।  বিদ্যাশিক্ষা  শেষ  করে  তিনি  স্থ্যায়ীভাবে  শান্তিপুরে  বসবাস  করতে  মনস্থ  করেন।

            শ্রীঅদ্বৈতাচার্য  শ্রীধাম  বৃন্দাবনে  তাঁর  গুরু  পরম  ভাগবত  শ্রীমাধবেন্দ্র  পুরীর  কাছ  থেকে  মদন  গোপাল  বিগ্রহটি  পেয়ে  শান্তিপুরে  নিয়ে  আসেন  এবং  তাঁর  বাবলার  আশ্রমে  প্রতিষ্ঠা  করেন।  মূর্তিটি  দারু  নির্মিত।

            শ্রীঅদ্বৈতাচার্য  ১২৫  বছর  ধরাধামে  লীলা  করেন।  তাঁর  ছয়  পুত্র  ছিল। জ্যেষ্ঠ  পুত্র  শ্রীঅচ্যুতানন্দ,  দ্বিতীয়  শ্রীকৃষ্ণ  মিশ্র, তৃতীয়  গোপাল,  চতুর্থ  বলরাম, পঞ্চম  স্বরূপ  ও  ষষ্ঠ  জগদীশ।  তাঁর  জ্যেষ্ঠ  পুত্র  অচ্যুতানন্দ  বাল্যকাল  থেকেই  সংসার  বিরাগী  ছিলেন,  সেইজন্য  শ্রীঅদ্বৈতাচার্য  তাঁর  দ্বিতীয়  পুত্র  শ্রীকৃষ্ণ  মিশ্র  কে  মদন  গোপালের  সেবা  ও পূজার  ভার  অর্পণ  করেন।  কৃষ্ণ  মিশ্র  বাবলা  ত্যাগ  করে  শান্তিপুরের  বর্তমান  মদন  গোপাল  পাড়ায়  এসে  নিজ  ভদ্রাসন  নির্মাণ  করেন  এবং  মদন  গোপাল  বিগ্রহ  কে  পাঁচ  খিলান  বিশিষ্ট  এক  দালান  মন্দিরে  প্রতিষ্ঠা  করেন।  মন্দিরে  মদন  গোপাল  বিগ্রহ  ছাড়াও  শ্রীঅদ্বৈত  প্রভু  ও  তাঁর  পত্নী  সীতাদেবীর  মূর্তিও  আছে।  মন্দিরের  সামান্য  দূরে  একটি  রাসমন্দিরও  বর্তমান।  মদন  গোপালের  নামানুসারে  পাড়ার  নাম  হয়  মদনগোপাল  পাড়া।  মদন  গোপাল  বিগ্রহকে  কেন্দ্র  করে  অনেক  অলৌকিক  কাহিনী  প্রচলিত  আছে।

            এই  প্রসঙ্গে  উল্লেখ্য,  শ্রীকৃষ্ণ  মিশ্রের  বংশে  একাধিক  মহাপণ্ডিতের  জন্ম  হয়েছে।  তাঁদের  মধ্যে  উল্লেখযোগ্য  হলেন  রাধিকানাথ  গোস্বামী  ( চৈতন্য  চরিতামৃতের  ভাষ্য  রচয়িতা ),  রাধাবিনোদ  গোস্বামী  ( শ্রীমদ্  ভাগবতের  ব্যাখ্যাকর্তা ),   জিতেন্দ্রনাথ  গোস্বামী  ( ভাগবত  ভাষ্যকার ),  নৃসিংহ  প্রাসাদ  গোস্বামী  ( ভাগবত  ভাষ্যকার ),  পণ্ডিত  কৃষ্ণচন্দ্র  গোস্বামী ( ভাগবত  অমৃত  রচয়িতা ),  পণ্ডিত  হরিশচন্দ্র  গোস্বামী  (পুরাণাদির  ব্যাখ্যাকার ), পণ্ডিত  বিশ্বেশ্বর  গোস্বামী  ( দর্শন  শাস্ত্রে  সুপণ্ডিত  ও  সংক্ষিপ্ত  মহাভারত  কাব্য  প্রণেতা ),  রামকৃষ্ণ  গোস্বামী  ( বৈষ্ণব  অভিধান  গ্রন্থের  রচনাকার )  এবং  পণ্ডিত  শ্যামসুন্দর  গোস্বামী  ( সংস্কৃত  ব্যাকরণ  কৌমুদীর  প্রণেতা )  প্রভৃতি।

            শান্তিপুরে  যেতে  হলে  শিয়ালদহ  থেকে  শান্তিপুর  লোকাল  ধরুন।  রেলপথে  শান্তিপুরের  দূরত্ব  ৯৩ কিমি।  ট্রেনে  সময়  লাগে  ঘন্টা  আড়াই।  ৩৪ নং  জাতীয়  সড়ক  শান্তিপুরের  ওপর  দিয়ে  গেছে।  তাই  বাসে  বা  গাড়িতেও  যেতে  পারেন। 

শ্রীশ্রী মদন গোপাল জিউ  মন্দির

শ্রীশ্রী মদন গোপাল  ও  অন্যান্য  বিগ্রহ

অন্যান্য  বিগ্রহ 

শ্রীশ্রী মদন গোপাল  বিগ্রহ

শ্রীঅদ্বৈত  প্রভু  ও  সীতাদেবীর  মূর্তি

রাসমান্দির 

সহায়ক  গ্রন্থাবলি   :
  

                               ১. বাংলায়  ভ্রমণ  ( ১ ম  খণ্ড ) :  পূর্ববঙ্গ  রেলপথের  প্রচার  বিভাগ  কর্তৃক  প্রকাশিত 
                     ২. রাসোৎসব - ২০১৫  উপলক্ষে  শান্তিপুর  বিগ্রহবাড়ি  সমন্বয়  সমিতি  কর্তৃক  প্রকাশিত  পুস্তিকা   
                        ৩. পশ্চিমবঙ্গ  ভ্রমণ  ও  দর্শন ভূপতিরঞ্জন  দাস 
    
                        -----------------------
            আমার  ইমেল :  shyamalfpb@gmail.com   প্রয়োজনে  যোগাযোগ  করতে  পারেন।                                              

শুক্রবার, ২৭ নভেম্বর, ২০১৫

Radhakrishna Temple, Ula Birnagar, Nadia

           

  কৃষ্ণচন্দ্র  রায়  দেব  মন্দির, উলা  বীরনগর, নদিয়া

                                   শ্যামল  কুমার  ঘোষ

            শিয়ালদহ-কৃষ্ণনগর  রেলপথে  বীরনগর  একটি  স্টেশন।  কলকাতা  থেকে  রেলপথে  দূরত্ব  ৮১.৬  কিমি।  বীরনগর  স্টেশন  থেকে  ২  কিমি  পূর্ব  দিকে  উলার  মুস্থাফি  পাড়া।  এই  পাড়ার  মিত্র  মুস্থাফিদের  রাধাকৃষ্ণের  জোড়বাংলা  মন্দিরটি   বিখ্যাত।  মন্দিরটি  টেরাকোটা  অলংকরণে  অলংকৃত।

            বীরনগরের  প্রাচীন  নাম  উলা।  উলা  নামকরণ  সম্পর্কে  নানান  লোকশ্রুতি  প্রচলিত  আছে।  উলুবন  পরিষ্কার  করে  প্রথম  বসতি  স্থাপিত  হয়  বলে  নাম  হয়  উলা।  আবার  অনেকে  বলেন  এই  গ্রামের  প্রাচীন  ও  বিখ্যাত  দেবতা  উলাই  চণ্ডীর  নামানুসারে  নাম  হয়  উলা।  এখানে  একসময়  গ্রামবাসীদের  চেষ্টায়  এক  দুর্ধর্ষ  ডাকাতদল  ধরা  পড়লে  ইংরেজ  সরকার  উলার  নতুন  নামকরণ  করেন  বীরনগর  অর্থাৎ  বীরদের  নগর। 

            উলার  প্রাচীন  জমিদার  মুস্তৌফি  বংশের  প্রতিষ্ঠাতা  রামেশ্বর  মিত্র  মুর্শিদকুলী  খাঁর  রাজত্বকালে  বাংলার  মুস্তৌফি (= নায়েব  কানুনগো ) পদে  নিযুক্ত  হন।  তিনি  ১৬১৬  শকাব্দে  (   ১৬৯৪  খ্রীষ্টাব্দে )  মুস্তাফি  পাড়ায়  তাঁর  বসতবাড়ির  কাছে  রাধাকৃষ্ণের  একটি  সুন্দর  জোড়বাংলা  মন্দির  নির্মাণ  করেন।  দুটি  'দোচালা'  বা  'একবাংলা'  জোড়া  দিয়ে  এ  ধরণের  মন্দির  তৈরি  হয়  বলে  এই  স্থাপত্যশৈলীর  নাম  'জোড়বাংলা'।  মন্দিরটির  সামনের  দিকে  পোড়ামাটির  প্রতিষ্ঠা-ফলকের  পাঠ  হল  :

              অঙ্গৈককালেন্দুমিতে 
              শকাব্দে  ১৬১৬  কায়স্থ
              কায়স্থহবেষ  ধর্ম্মঃ। 
              যো  নির্ম্মমে  শ্রীহরিযুগ্ম ধাম  
              শ্রীযুত  রামেশ্বরমিত্রদাস। 

              অর্থাৎ  ১৬১৬  শকাব্দে ( ১৬৯৪ খ্রীষ্টাব্দে )  কায়স্থকুলোদ্ভব   শ্রী  রামেশ্বর  মিত্র  শ্রীহরির  এই  যুগ্মগৃহ  নির্মাণ  করলেন।  এখানে  'অঙ্গ' = ছয়,   'এক' = এক,  'কাল' = ছয়,  'ইন্দু' = এক  ধরে  অঙ্কের  বামাগতি  নিয়মানুসারে  ১৬১৬  শকাব্দ  হয়েছে।  মন্দিরে  রাধাকৃষ্ণ  বিগ্রহ  নিত্যপূজিত।  মন্দিরের  কৃষ্ণ  বিগ্রহটি  রামেশ্বর  মিত্র  প্রতিষ্ঠিত। রাধিকা  মূর্তিটি  কোন  এক  সময়ে  চুরি  গেলে  পুনরায়  অন্য  মূর্তি  প্রতিষ্ঠা  করা  হয়।

            ভিত্তিবেদির  উপর  স্থাপিত,  পশ্চিমমুখী  এই  মন্দিরের  দৈর্ঘ্য,  প্রস্থ  ও  উচ্চতা  যথাক্রমে  ৬.৭  মি. ,  ৬.৭  মি. এবং  ৭.৬ মি.।  প্রতিটি  দোচালার  প্রস্থ  ৩.৩ মি.। প্রথম  দোচালাটি  অলিন্দ  এবং  দ্বিতীয়  দোচালাটি  গর্ভগৃহ  হিসাবে  ব্যবহৃত  হয়। উৎকৃষ্ট  টেরাকোটা  অলংকারে  মন্দিরটি  অলংকৃত।  পাদপীঠ  সংলগ্ন  দেওয়াল  থেকে  আরম্ভ  করে  সামনের  দিকের  প্রায়  সর্বত্রই  পোড়ামাটির  অলংকরণ  দেখা যায়।  কারিগরি  নৈপুণ্যে  সেগুলি  নদিয়া  জেলার  টেরাকোটা  মন্দিরগুলির  মধ্যে  শ্রেষ্ঠ  নিদর্শনের  তুল্য  হলেও  অপটু  হাতের  সংস্কারে  ও  রঙের  প্রলেপে  তা  এখন  অনেকটাই  ম্লান।  বাইরের  দেওয়ালে,  ভিত্তিবেদি-সংলগ্ন  দুটি  অনুভূমিক  সারির  নিচের  সারিতে  টেরাকোটায়  পালকিবাহিত  বাবু  ও  রক্ষকগণ,  নৌকাভ্রমণ,  মুঘল  যোদ্ধা,  বানিজ্যতরী,  মৃগয়া  প্রভৃতি  সামাজিক  চিত্র  ও  উপরের  সারিতে  একটানা  হংসশ্রেণী  উৎকীর্ণ  আছে।  বাইরের  ত্রিখিলান  প্রবেশপথের  তিনদিক  ঘিরে  কুলুঙ্গিতে  নিবদ্ধ  এক  সারি  মূর্তি-ভাস্কর্যের  মধ্যে  কৃষ্ণলীলা,  রাম,  লক্ষ্মণ,  ভরত,  শত্রুঘ্ন  ও  শিবদূর্গা  প্রভৃতি  পৌরাণিক  দেবদেবীই  প্রধান।  বাঁ  দিকের  স্তম্ভের  গায়ে  কার্তিক-গনেশসহ  মহিষমর্দিণী  মূর্তিটি  সুন্দর।  দেওয়ালের  বাকি  অংশে  ফুলকারি  নকশা  দ্বারা  অলংকৃত।  গর্ভগৃহে  ( দ্বিতীয়  দোচালা )  প্রবেশপথের  উপরেও  টেরাকোটার  কিছু  কাজ  আছে।  সেখানে,  খিলানশীর্ষের  দুপাশে  দুটি  লম্ফমান  সিংহ  দৃষ্টি-আকর্ষণী। 

            মিত্র  মুস্তাফিদের  কাঠের  তৈরি  কারুকার্যশোভিত  একটি  দুর্গামণ্ডপ  ছিল।  শোনা  যায়  সেই  সময়  এই  দুর্গামণ্ডপটি  দেখার  জন্য  বাংলার  বিভিন্ন  স্থান  থেকে  অনেক  লোক  এখানে  হাজির  হত।  অনেক  দিন  হল  সেটি  একপ্রকার  বিনষ্ট।  শুধু  কাঠের  ওপর  খোদাই  করা  কয়েকটি  থাম  বা  কড়ি  ইঁটের  তৈরি  নতুন  দুর্গামণ্ডপে  রাখা  আছে।  কীটপতঙ্গের অত্যাচারে  সেগুলিও  এখন  জীর্ণ-দীর্ণ।
                        
            উপরোক্ত  মন্দিরে  যেতে  হলে  শিয়ালদহ  থেকে  লালগোলা  প্যাসেঞ্জার  বা  কৃষ্ণনগর  লোকালে  উঠুন।  নামুন  বীরনগর  স্টেশনে।  স্টেশনের  পূর্ব  দিক  থেকে  টোটো  বা  রিকশায়  উঠে  পৌঁছে  যান  মন্দিরে।



জোড়বাংলা  মন্দির, উলা  বীরনগর

মন্দিরের  সামনের  ত্রিখিলান  প্রবেশপথ 

মাঝের  খিলানের  উপরের  কাজ

মন্দিরের  প্রতিষ্ঠা-ফলক

ভিত্তিবেদি-সংলগ্ন  টেরাকোটার  কাজ - ১

ভিত্তিবেদি-সংলগ্ন  টেরাকোটার  কাজ - ২

ভিত্তিবেদি-সংলগ্ন  টেরাকোটার  কাজ - ৩

কুলুঙ্গিতে  নিবদ্ধ  ও  আশেপাশের  টেরাকোটার  কাজ - ১

কুলুঙ্গিতে  নিবদ্ধ  ও  আশেপাশের  টেরাকোটার  কাজ - ২

কুলুঙ্গিতে  নিবদ্ধ  ও  আশেপাশের  টেরাকোটার  কাজ - ৩

মন্দিরের  শিখরদেশ

গর্ভগৃহের  সামনের  খিলানের  উপরের  কাজ

মন্দিরের  বিগ্রহ - ১

মন্দিরের  বিগ্রহ - ২

বিনষ্ট  দুর্গামণ্ডপের  কাঠের  উপর  কারুকার্যের  নমুনা



            মন্দিরটি  পরিদর্শনের  তারিখ : ০৩.১১.২০১৫

সহায়ক  গ্রন্থাবলি  :

   ১. বাংলার  মন্দির  স্থাপত্য  ও  ভাস্কর্য  :  প্রণব  রায় 
   ২.  নদিয়া  জেলার  পুরাকীর্তি :  মোহিত  রায়  (তথ্য-সংকলন  ও  গ্রন্থনা )

             -------------------------------------------
            আমার  ইমেল :  shyamalfpb@gmail.com   প্রয়োজনে  যোগাযোগ  করতে  পারেন।

           --------------------------------------------