বৃহস্পতিবার, ৫ নভেম্বর, ২০২০

Nalateshwari Temple, Nalhati, Birbhum

 

নলাটেশ্বরী  মন্দির,  নলহাটি,  বীরভূম

                    শ্যামল  কুমার  ঘোষ 

            বীরভূম  জেলার  রামপুরহাট  মহকুমার  অন্তর্গত  নলহাটি  একটি  পৌর  শহর।  সম্ভবত  নল  রাজার  নাম  থেকে  নলহাটি  নামের  উৎপত্তি।  কারণ  দেবীর  নামানুসারে  নলহাটি  নামের  উৎপত্তি  হলে  পীঠমালা  মহাতন্ত্রে  "নলাহট্টাং  নলাপাতো  ..  "  লেখা  থাকতো  না।  সাহেবগঞ্জ  লুপ  লাইনে  অবস্থিত  নলহাটি  জংশন স্টেশন  পূর্ব  রেলের  অন্যতম  প্রধান  রেল  স্টেশন।  এখান  থেকে  একটি  শাখা  মুর্শিদাবাদ  জেলার  আজিমগঞ্জ  পর্যন্ত  গিয়েছে।  কলকাতা  থেকে  নলহাটির  দূরত্ব  ২৪২  কিমি।  কলকাতা / হাওড়া  থেকে  সোজা  এখানে  আসতে  হলে  হাওড়া  স্টেশন  থেকে  সকল  ৬  টা  ৫  মিনিটে  গণদেবতা  এক্সপ্রেসে  উঠুন।  নলহাটি  স্টেশনে  ১০  টা  ৩১  মিনিটে  এই  ট্রেন  পৌঁছে  যায়।  অন্য  ট্রেনে  রামপুরহাট  এসে  সেখান  থেকে  ট্রেনে  বা  গাড়িতেও  এখানে  আসা  যায়।  স্টেশনের  পশ্চিম  দিকে  ১.৬  কিমি  দূরে  একটি  ছোট  পাহাড়ের  অগ্নিকোণে  দেবী  'নলাটেশ্বরী'র  মন্দির।  স্টেশন  থেকে  অটোতে  সহজেই  মন্দিরে  পৌঁছানো  যায়।  থাকতে  হলে  আপনি  মন্দিরের  অতিথিনিবাসে  থাকতে  পারেন  আর  হোটেলে থাকতে  হলে  আপনাকে  রামপুরহাটে  থাকতে  হবে। 

            ৫১  সতীপীঠের  অন্যতম  ( ১৮  নম্বর )  শক্তিপীঠ  'নলাটেশ্বরী'।  এখানে  উল্লেখ্য,  বীরভূমে  পাঁচটি  সতীপীঠ  বর্তমান।  পীঠনির্ণয়  তন্ত্রে  উল্লেখ  আছে,  বিষ্ণুচক্রে  কর্তিত  সতীর  দেহাংশের  'নলা'  বা  কণ্ঠনালী  পতিত  হওয়ায়  নলহাটিতে  দেবী  কালিকা  এবং  ভৈরব  যোগেশ  বিরাজ  করছেন।  কেউ  কেউ  দেবীর  নাম  বলেন  'ললাটেশ্বরী'।  তাঁদের  মতে,  এখানে  দেবীর  ললাট  পড়েছিল  তাই  দেবীর  নাম  'ললাটেশ্বরী'।  তা  কিন্তু  সঠিক  নয়।  সম্ভবত  'নলহাট্টেশ্বরী'  থেকে  অপভ্ৰংশে  'ললাটেশ্বরী'  হয়েছে।  কারণ  তন্ত্রে  নলাপাতের  কথাই  বলা  হয়েছে।  পাহাড়ে  অধিষ্ঠিতা  বলে  তিনি  পার্বতী  নামেও  পরিচিতা  হয়েছেন।  আবার  মাকে  'শেফালিকা'  নামেও  ডাকা  হয়। 

            চারচালা  মন্দিরের  সামনে  প্রাচীন  স্থাপত্যের  কিছু  কিছু  নিদর্শন  এখনও  রয়েছে।  মন্দিরের  গর্ভগৃহে  সিঁদুরচর্চিত  মা  নলাটেশ্বরী  বিরাজমান।  পাথরের  উপর  বসানো  ত্রিনয়নী  মায়ের  মুখ।  দু  দিকের  দাঁতের  মধ্যে  রয়েছে  সোনার  তৈরি  জিব।  উপরে  রয়েছে  রুপোর  ছাতা।  সিঁদুরচর্চিত  এই  মুখমণ্ডলের  নিচে  রয়েছে  মায়ের  কন্ঠনালী।  ভোরবেলায়  মায়ের  স্নান  ও  শৃঙ্গারের  সময়ে  এই  কণ্ঠনালীর  দর্শন  পান  দর্শনার্থীরা।  এখন  যেমন  মায়ের  মুখমণ্ডল  দেখা  যায়  প্রথমে  তা  ছিল  না।  কৃষ্ণ  বসাক  নামে  এক  স্বর্ণকার  মায়ের  এই  রূপ  দিয়েছিলেন।  গর্ভগৃহে  ঢোকার  মুখে,  উপরে  রয়েছে  গণেশ  মূর্তি,  তাকে  ঘিরে  রয়েছে  আটটি  সাপ।  মন্দিরের  উত্তর  দিকে  অবস্থিত  পঞ্চমুন্ডির  আসন।  অনেক  সাধক   এই  পঞ্চমুন্ডির  আসনে  সিদ্ধি  লাভ  করেছেন।            

            সারা  বছর  কালী  রূপে  পূজিত  হলেও  দুর্গাপূজার  চারদিন  মাকে  দুর্গা  রূপে  পূজা  করা  হয়।  এই  মন্দিরে  এখনও  বলি  প্রথা  চালু  আছে।  দুর্গাপূজার  নবমী  ও  কালীপূজার  দিন  অবশ্যই  মন্দিরে   বলি  হয়।  মা  নলাটেশ্বরীর  নিত্য  অন্যসেবা  হয়।  ভক্তরা  চাইলে  মন্দির  কর্তৃপক্ষের  সঙ্গে  কথা  বলে  অন্নপ্রসাদ  পেতে  পারেন। 

নলাটেশ্বরী মন্দির 
মন্দিরের সামনের কাজ 
গর্ভগৃহে মা নলাটেশ্বরী
গর্ভগৃহের সামনের গণেশ মূর্তি ও আটটি  সাপ। 
মা নলাটেশ্বরী- ১
মা নলাটেশ্বরী - ২
পাশের মন্দিরের গনেশ মূর্তি 
পাশের মন্দিরের সামনের কাজ - ১
পাশের মন্দিরের সামনের কাজ - ২
পাশের মন্দিরের সামনের কাজ - ৩
পাশের মন্দিরের সামনের কাজ - ৪
পাশের মন্দিরের সামনের কাজ - ৫
পাশের মন্দিরের সামনের কাজ - ৬

সহায়ক  গ্রন্থাবলি :
                  ১)  বীরভূম  বিবরণ ( ২য়  খণ্ড ) :  মহিমানিরঞ্জন চক্রবর্তী  তত্ত্বভূষণ 
                  ২)  বীরভূম  জেলার  পুরাকীর্তি :  দেবকুমার  চক্রবর্তী           

                    ---------------------------

            আমার  ইমেল :  shyamalfpb@gmail.com   প্রয়োজনে  যোগাযোগ  করতে  পারেন।                                                                    

শনিবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২০

Kiriteshwari Temple, Kiritkona Village, Dahapara, Nabagram, Murshidabad


কিরীটেশ্বরী  মন্দির,  কিরীটকণা,  মুর্শিদাবাদ 

                    শ্যামল  কুমার  ঘোষ 

            মুর্শিদাবাদ  জেলার  নবগ্রাম  থানার  অন্তর্গত  একটি  গ্রাম  কিরীটকণা।  কিরীটেশ্বরী  বা  সংক্ষেপে  কিরীট  নামেও  এই  গ্রাম   পরিচিত।  পূর্ব  রেলের  কাটোয়া-আজিমগঞ্জ  রেলপথে  ডাহাপাড়া  ধাম  স্টেশনে  নেমে  টোটোতে  এই  গ্রামে  যাওয়া  যায়।  ভাগীরথীর  পশ্চিমতীরস্থ  এই  গ্রাম  খুবই  প্রাচীন।  গ্রামে   কিরীটেশ্বরী  মন্দিরটি  উল্লেখযোগ্য।  তন্ত্রচূড়ামণির  পীঠনির্ণয়ে  এখানে  সতীর  মাথার  কিরীট  পতনের  কথা  লেখা  আছে।  এই  গ্রন্থানুসারে  এই  দেবস্থান  সতীর  ৫১  পীঠের  অন্যতম।  কিরীটের  দেবতার  নাম  বিমলা  এবং  ভৈরবের  নাম  সম্বর্ত।  এখানে  সতীর  দেহের  কোন  অংশ  পড়ে  নি,  কিরীটের  একটি  কণা  পড়েছিল।  তাই  এটিকে  উপপীঠ  বলে  গণ্য  করা  হয়।  কিরীট  বা  মুকুট  পথিত  হওয়ার  জন্য  এই  দেবীকে  'মুকুটেশ্বরী'  নামেও  অভিহিত  করা  হয়। 
           
              কিরীটেশ্বরীর  বর্তমান  মন্দিরটি  খুব  প্রাচীন  নয়।  প্রতিষ্ঠাতা  ছিলেন  নবাব  মুর্শিদকুলি  খানের  প্রধান  কানুনগো  লালগোলার  রাজা  দর্পনারায়ণ  রায়।  মন্দিরে  লাগানো  একটি  সংস্কার  ফলক  থেকে  জানা  যায়  যে  পরবর্তীতে  লালগোলার  মহারাজা  যোগেন্দ্রনারায়ণ  রায়  মন্দিরটির  সংস্কার  করেন।  তাঁদের পূর্বপুরুষ  ভগবান  রায়  মোগল  বাদশাহের  কাছ  যে  সমস্ত  দেবোত্তর  লাখেরাজ  সম্পত্তি  পেয়েছিলেন  কিরীটেশ্বরী  তাদের  মধ্যে  অন্যতম।  মূল  মন্দিরের  কাছাকাছি  আরও  কয়েকটি  মন্দির  আছে।     

            মূল  মন্দিরে  কোন  বিগ্রহ  নেই।  একটি  লাল  রঙের  শিলাকে  দেবী  রূপে  পূজা  করা  হয়।  শিলাটি  একটি  আবরণ  দ্বারা  আচ্ছাদিত।  প্রতি  বছর  দুর্গাষ্টমী  তিথিতে  এই  আবরণটি  সকলের  অগোচরে  পাল্টানো  হয়।  নাটোরের  সাধক-রাজা  রামকৃষ্ণ  বড়নগর  থেকে  এখানে  এসে  সাধনা  করতেন। 

           এই  মন্দিরের  পাশে  আর  একটি  মন্দিরে  দেবী  মূর্তির  মুখমণ্ডলকে  মা  কিরীটেশ্বরী  রূপে  অর্চনা  করা  হয়।    

             গ্রামের  মধ্যে  'গুপ্তমঠে' ( এটি  একটি  দালান  মন্দির )  কিরীটেশ্বরীর  কিরীট  রক্ষিত  আছে  বলে  জানা  যায়।  এখানেও  কয়েকটি  মন্দির  আছে।  

          মন্দিরটি  পরিদর্শনের  তারিখ : ০৪.০৩.২০২০

কিরীটেশ্বরী ও অন্যান্য মন্দির 
কিরীটেশ্বরী মন্দির 
গর্ভগৃহ 
মন্দিরে  লাগানো  সংস্কার  ফলক
মা কিরীটেশ্বরী 
গুপ্তমঠের মন্দির 
গুপ্তমঠের মন্দিরের গর্ভগৃহ 

 সহায়ক গ্রন্থাবলি :
                  ১)  মুর্শিদাবাদ  কাহিনী :  নিখিলনাথ  রায় 
                  ২)  মুর্শিদাবাদের  ইতিহাস :  প্রতিভা  রঞ্জন  মৈত্র 
                  ৩)  বাংলার  মন্দির  স্থাপত্য  ও  ভাস্কর্য :  প্রণব  রায়  
         
                                    ------------------------------
            আমার  ইমেল :  shyamalfpb@gmail.com   প্রয়োজনে  যোগাযোগ  করতে  পারেন।
                                                          

সোমবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২০

Radhakanta and other Temples, Dhanyakuria, North 24 Parganas


শ্রীশ্রী রাধাকান্ত  ও  অন্যান্য  মন্দির,  ধান্যকুড়িয়া,  উত্তর  ২৪  পরগনা 

শ্যামল  কুমার  ঘোষ 

            উত্তর  চব্বিশ  পরগনা  জেলার  বসিরহাট  মহকুমার  অন্তর্গত  একটি  গ্রাম  ধান্যকুড়িয়া।  কলকাতা  থেকে  দূরত্ব  ৫২  কিমি।  অনেক  আগে  এটি  ছিল  সুন্দরবনের  অন্তর্গত।  জঙ্গলাকীর্ণ,  লবণাক্ত  ও  শ্বাপদসংকুল  এলাকা।  ১৭৪২  খ্রীষ্টাব্দে  বাংলায়  মারাঠা  আক্রমণের  সময়ে  নিরাপদ  আশ্রয়ের  সন্ধানে  নদিয়া  থেকে  ধান্যকুড়িয়া  এসে  বসতি  স্থাপন  করেন  জগন্নাথ  দাস।  স্থানটিকে  বাসযোগ্য  করে  তুলতে  জগন্নাথ  ও  তার  পুত্র  রত্নেশ্বর  প্রবল  প্রতিকূলতার  সঙ্গে  লড়াই  করেছিলেন।  ধীরে  ধীরে  গড়ে  ওঠে  গ্রাম।  ধান্যকুড়িয়ার  সমৃদ্ধি  ঘটলে  অনেক  পরিবার  এখানে  এসে  বসতি  স্থাপন  করেন।  ধান্যকুড়িয়ায়  পুরানো  জমিদার  বাড়িগুলি  যেমন  দ্রষ্টব্য  তেমনই  এখানে  কয়েকটি  মন্দিরও  দ্রষ্টব্য। 

            প্রথমে  চলুন  রাধাকান্ত  মন্দিরে।  উঁচু  ভিত্তিভূমির  উপর  অবস্থিত,  ত্রিখিলান  প্রবেশপথবিশিষ্ট,  দক্ষিণমুখী  মন্দিরটি  একটি  দালান।  মন্দিরটি  নির্মাণ  করেন  স্থানীয়  সাউ  পরিবার।  মন্দিরে  কিছু  পঙ্খের  কাজ  আছে।  গর্ভগৃহে  রাধাকান্ত  ও  রাধিকা  মূর্তি  নিত্য  পূজিত। 

রাধাকান্ত মন্দির, ধান্যকুড়িয়া 
মন্দিরের পঙ্খের কাজ - ১
মন্দিরের পঙ্খের কাজ - ২

মন্দিরের অলিন্দে টাঙানো একটি ছবি 

রাধাকান্ত ও রাধিকা বিগ্রহ - ১

রাধাকান্ত ও রাধিকা বিগ্রহ - ২


            এই  মন্দিরের  অদূরে  অবস্থিত  শ্রীশ্রী  মদনমোহন  মন্দির।   অল্প  উঁচু  ভিত্তিভূমির  উপর  অবস্থিত,  ত্রিখিলান  প্রবেশপথবিশিষ্ট,  দক্ষিণমুখী  মন্দিরটি  একটি  দালান।  মন্দিরটি  নির্মাণ  করেন  রামদেব  কাবাসি।  ১৪১২  বঙ্গাব্দে  ডাঃ  অসীমকুমার  বল্লব  ও  তাঁর  স্ত্রী  গায়ত্রী  বল্লভের  উদ্যোগে  বিগ্রহ  ও  মন্দির  নবসাজে  সজ্জিত  হয়।  গর্ভগৃহে  মদনমোহন  ও  রাধিকা  মূর্তি  নিত্য  পূজিত।
            
শ্রীশ্রী মদনমোহন মন্দির 

  •  শ্রীশ্রী মদনমোহন  ও  রাধিকা  বিগ্রহ 

                ধান্যকুড়িয়ার  মন্দিরগুলির  মধ্যে  অন্যতম  মহাপ্রভু  মন্দির।  এটি  একটি  দালান  মন্দির।  মন্দিরের  সামনে  একটি  নাটমন্দির  আছে।  মন্দিরে  গৌরাঙ্গ,  নিত্যানন্দ  ও  অন্যান্য  বিগ্রহ  বর্তমান।  কালী  পূজার  পরের  দিন  মন্দিরে  ধুমধাম  সহকারে  অন্নকূট  উৎসব  পালন  করা  হয়।  এছাড়া  অন্যান্য  বৈষ্ণব  উৎসব  যেমন  ঝুলন  ইত্যাদিও  পালিত  হয়।
মহাপ্রভু মন্দির, ধান্যকুড়িয়া 

মন্দিরে গৌরাঙ্গ, নিত্যানন্দ ও অন্যান্য বিগ্রহ - ১

মন্দিরে গৌরাঙ্গ, নিত্যানন্দ ও অন্যান্য বিগ্রহ - ২


                   এবার  চলুন  গাইন  বাড়ির  লাগোয়া  অবস্থিত   শ্যামসুন্দর  মন্দিরে।  অল্প  উঁচু  ভিত্তিভূমির  উপর  স্থাপিত,  ত্রিখিলান  প্রবেশপথবিশিষ্ট,  পূর্বমুখী  মন্দিরটি  একটি  দালান।  শ্যামসুন্দর  গাইন পরিবারের  গৃহ  দেবতা।  মন্দিরে  কিছু  পঙ্খের  কাজ  আছে।
মন্দিরের  গর্ভগৃহে  শ্যামসুন্দর ও  রাধারানি বিগ্রহ  নিত্য  পূজিত। 

শ্যামসুন্দর  মন্দির - ১
শ্যামসুন্দর  মন্দির - ২

মন্দিরের  পঙ্খের কাজ 

অন্যান্য বিগ্রহ - ১
অন্যান্য বিগ্রহ - ২
শ্যামসুন্দর ও  রাধারানি বিগ্রহ - ১

শ্যামসুন্দর ও  রাধারানি বিগ্রহ - ২

           
 শ্যামসুন্দর  মন্দির  থেকে  আর  একটু  উত্তরে  হাঁটলে  চোখে  পড়বে  রাসমঞ্চ।  উঁচু  ভিত্তিবেদির  উপর  স্থাপিত  রাসমঞ্চটি  নবরত্ন  শৈলীর।  রাসমঞ্চটি  সাউ, বল্লভ  ও  গাইন  পরিবারের  ব্যবসায়িক  প্রতিষ্ঠান  P. G. W. &  Sawoo  এর  জমিতে  প্রতিষ্ঠিত।  রাসের  সময়  এখানে  ধুমধাম  সহকারে  রাস  উৎসব  পালন  করা  হয়।  এত  বড়  নবরত্ন  শৈলীর  রাসমঞ্চ  বিরল।

রাসমঞ্চ

            ধান্যকুড়িয়ায়  যেতে  হলে  ধর্মতলা  বা  উল্টাডাঙ্গা  থেকে  বসিরহাট  গামী  বাসে  উঠুন।  নামুন  টাকি  রোডের  উপর  অবস্থিত  ধান্যকুড়িয়া  স্টপেজে।  সেখান  থেকে  মোটর  ভ্যানে  গ্রাম।  বসিরহাটের  বাস  না  পেলে  প্রথমে  বাসে  বারাসত।  সেখান  থেকে  আর  একটি  বাসে  বেড়াচাঁপা।  বেড়াচাঁপা  থেকে  ট্রেকারে  ধান্যকুড়িয়া।  ট্রেনে  যেতে  চাইলে  শিয়ালদহ  থেকে  হাসনাবাদ  গামী  ট্রেনে  কাঁকড়া  মির্জানগর  স্টেশনে  নামুন। 


 সহায়ক  গ্রন্থ :
         ১)  চব্বিশ  পরগণা :  কমল  চৌধুরী     
        
 *****

রবিবার, ১১ অক্টোবর, ২০২০

Kankaleshwari Kali Temple, Kanchannagar, Bardhaman Town

 


কঙ্কালেশ্বরী  কালী  মন্দির,  শহর  বর্ধমান,  পূর্ব  বর্ধমান 

শ্যামল  কুমার  ঘোষ

            বর্ধমান  রেল  স্টেশন  থেকে  আট  কিমি  পশ্চিমে  কাঞ্চননগরে  রয়েছে  কঙ্কালেশ্বরী  কালী  মন্দির।  টোটোতে শেয়ারে  যেতে  হলে  বর্ধমান  রেল  স্টেশন  থেকে  প্রথমে  একটি  টোটোতে  রাজবাড়ির  উত্তর  ফটক।  সেখান  থেকে  আর  একটি  টোটোতে  কাঞ্চননগর।  কাঞ্চননগর  পল্লী  আগেকার  বর্ধমানের  বাণিজ্য  স্থান  ছিল।  তখন  কাঞ্চনগরের  ছুরি-কাঁচি  খুবই  প্রসিদ্ধ  ছিল।  

            কঙ্কালেশ্বরী  দেবী  মূর্তি  খুব  প্রাচীন।  অদ্ভুত  এই  কালীমূর্তি।  মা  এখানে  কঙ্কালরূপিণী।  এটি  একটি  অষ্টভুজা  চামুণ্ডা  মূর্তি।  মূর্তিটির  উচ্চতা  প্রায়  ১.৮ মিটার।  কালীর  এই  চামুণ্ডা  মূর্তিটি  অনেকে  বৌদ্ধ  চামুণ্ডার  রূপ  বলেন।  আবার  অনেকের  মতে  এটি  বৌদ্ধ  আমলে  তৈরি।  মূর্তিটি  দেখলে  মনে  হবে  পাথরের  উপরে  মানুষের  দেহের  যেন  কঙ্কাল-রূপ।  কঙ্কালসার  মূর্তিতে  মানব  দেহের  শিরা-উপশিরা-ধমনীর  প্রত্যেকটি  খুব  নিখুঁতভাবে  খোদাই  করা।  যে  শিল্পী  পাথরের  উপর  এই  মূর্তি  খোদায়  করেছিলেন  তাঁর  মানব  দেহ  সম্পর্কে  নিশ্চয়ই  গভীর  জ্ঞান  ছিল।  তা  না  হলে  এই  রকম  মূর্তি  খোদাই  করা  সম্ভব  হত  না।  মূর্তির  গলায়  নরমুন্ডের  মালা।  কালো  পাথরের  খোদাই  করা  এই  মূর্তির  পদতলে  শায়িত  অবস্থায়  আছেন  মহাদেব।  মূর্তির  উপরে  ডান  দিকে  আছে  হস্তি  মুণ্ড।  মূর্তির  নিচে  ডান  দিকে  আছে   এক  উলঙ্গ  পুরুষের  কাঁধে  শবদেহ।  বাঁ  দিকে  এক  নগ্ন  নারী  মূর্তি।  মায়ের  এই  ভয়ঙ্কর  রূপ  দেখে  ভক্তরা  ভয়ার্ত  চিত্তে  মাকে  ভক্তি  জানায়।  স্থাপত্য  শিল্পের  দিক  থেকে  মা  কঙ্কালেশ্বরী  মূর্তি  সত্যই   অপূর্ব।  এখানে  উল্লেখ্য,  এই  মূর্তির  বাঁ  দিকে  আছে  আর  একটি  চামুন্ডা  মূর্তি। 

            কঙ্কালেশ্বরী  মূর্তি  সম্বন্ধে  জনশ্রুতি,  ১৩২০ সালে  বর্ধমানে  ভয়ঙ্কর  বন্যা  হয়।  এই  বন্যায়  মায়ের  মূর্তি  ভেসে  এসে  মুসলমান  অধ্যুষিত  চৌধুরী  দহে  ( বর্তমান  নাম  কালীদহ )  এসে  উল্টোভাবে  পড়েছিল।  তারপর  রজকেরা  ওই  পাথর  কে  কাপড়  কাচার  'পাটা'  হিসাবে  ব্যবহার  করে  কাপড়  কাচতে  থাকে।  এই  ভাবে  ওই  মূর্তির  উপর  কাপড়  কাচা  চলতে  থাকে।  ১৩২৩ বঙ্গাব্দে  আষাঢ়  মাসের  ভূমিকম্পে  ওই  দহের  ভূমি  ধ্বসে  পড়ে  ওই  পাথর  উল্টে  গিয়ে  মায়ের  মূর্তি  সকলের  দৃষ্টিগোচর  হয়।  তখন  মুসলমান  পাড়া,  তেলি  পাড়া,  মালি  পাড়া  ও  তালবোনার  বাসিন্দাগণ  এই  সংবাদ  বর্ধমান  মহারাজের  গোচরে  আনেন।  বর্ধমান  মহারাজা  সপারিষদ  ওই  স্থানে  উপস্থিত  হন  এবং  মায়ের  ওই  ভয়ঙ্কর  রূপ  দেখে  আশ্চর্য  হন।  তারপর  তিনি  আষাঢ়  মাসের  উল্টোরথের  দিন  মায়ের  মূর্তিটি  এই  মন্দিরে  প্রতিষ্ঠা  করেন।  মহারাজ  ওই  অঞ্চলের  কিছু  জমি,  বাগান  ইত্যাদি  স্থানীয়  বাসিন্দাদের  দিয়ে  তাঁদেরই  মায়ের  সেবায়েত  করে  দেন।

            দক্ষিণমুখী  মন্দিরটি  নবরত্ন  শৈলীর।  সামনের  দেওয়ালে  টেরাকোটা  ফলক  বর্তমান।  মনে  হয়,  সংস্কারের  সময়  এই  টেরাকোটা  লাগানো  হয়।  মন্দিরের  পশ্চিমে  আছে  একটি  বেলগাছ।  তার  তলায়  একটি  কালো  পাথরের  শিবলিঙ্গ।  বেলগাছের  পাশে  আছে  পঞ্চমুন্ডির  আসন।  বহু  তান্ত্রিক  সাধক  সিদ্ধি  লাভের  জন্য  এখানে  এসে  তন্ত্র  সাধনা  করতেন।  ১৩২৪-২৫  বঙ্গাব্দে  কমলানন্দ  স্বামী  নামে  একজন  স্বামিজী  এসেছিলেন।  তিনি  বর্ধমান  শহরের  বেশ  কিছু  ব্যক্তির  কাছ  থেকে  সাহায্য  নিয়ে  মন্দিরের  সংস্কার  করেন।  তিনি  কিছু  সেবা  মূলক  কাজেও  যুক্ত  ছিলেন। 

            মায়ের  নিত্যপূজা  ছাড়াও  প্রতি  অমাবস্যায়  বিশেষ  পূজা  অনুষ্ঠিত  হয়।  কালীপূজার  দিন  ধুম-ধাম  করে  মায়ের  বাৎসারিক  পূজা  হয়  ।  সেদিন  মন্দিরে  প্রচুর  জন  সমাগম  হয়ে  থাকে।

            মন্দিরটি  পরিদর্শনের  তারিখ : ১২.১২.১৯১৯

কঙ্কালেশ্বরী কালী মন্দির, কাঞ্চননগর, বর্ধমান শহর 

মন্দিরের টেরাকোটা ফলক - ১

মন্দিরের টেরাকোটা ফলক - ২

মন্দিরের টেরাকোটা ফলক - ৩

মন্দিরের টেরাকোটা ফলক - ৪

মন্দিরের টেরাকোটা ফলক - ৫

মন্দিরের টেরাকোটা ফলক - ৬

কঙ্কালেশ্বরী কালী ও অন্যান্য মূর্তি 

কঙ্কালেশ্বরী কালী মূর্তি - ১

কঙ্কালেশ্বরী কালী মূর্তি - ২

আর একটি  চামুণ্ডা মূর্তি 

            
            এই  মন্দিরের  দক্ষিণে  একটি  পঞ্চরত্ন  টেরাকোটা  মন্দির  আছে।  মন্দিরে  একটি  বিষ্ণু  মূর্তি  নিত্য  পূজিত। 



পঞ্চরত্ন বিষ্ণু মন্দির, কাঞ্চননগর 

মন্দিরের সামনের বিন্যাস 

বিষ্ণু মূর্তি 

     সহায়ক  গ্রন্থ : 
                   ১)  নগর  বর্ধমানের  দেবদেবী :  নীরদবরণ  সরকার 

                                             *******
            পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য কালী মন্দির সম্বন্ধে জানতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন / লিংকের উপর আঙুল দিয়ে টোকা দিন :