কিরীটেশ্বরী মন্দির, কিরীটকণা, মুর্শিদাবাদ
শ্যামল কুমার ঘোষ
মুর্শিদাবাদ জেলার নবগ্রাম থানার অন্তর্গত একটি গ্রাম কিরীটকণা। কিরীটেশ্বরী বা সংক্ষেপে কিরীট নামেও এই গ্রাম পরিচিত। পূর্ব রেলের কাটোয়া-আজিমগঞ্জ রেলপথে ডাহাপাড়া ধাম স্টেশনে নেমে টোটোতে এই গ্রামে যাওয়া যায়। ভাগীরথীর পশ্চিমতীরস্থ এই গ্রাম খুবই প্রাচীন। গ্রামে কিরীটেশ্বরী মন্দিরটি উল্লেখযোগ্য। তন্ত্রচূড়ামণির পীঠনির্ণয়ে এখানে সতীর মাথার কিরীট পতনের কথা লেখা আছে। এই গ্রন্থানুসারে এই দেবস্থান সতীর ৫১ পীঠের অন্যতম। কিরীটের দেবতার নাম বিমলা এবং ভৈরবের নাম সম্বর্ত। এখানে সতীর দেহের কোন অংশ পড়ে নি, কিরীটের একটি কণা পড়েছিল। তাই এটিকে উপপীঠ বলে গণ্য করা হয়। কিরীট বা মুকুট পথিত হওয়ার জন্য এই দেবীকে 'মুকুটেশ্বরী' নামেও অভিহিত করা হয়।
কিরীটেশ্বরীর বর্তমান মন্দিরটি খুব প্রাচীন নয়। প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন নবাব মুর্শিদকুলি খানের প্রধান কানুনগো লালগোলার রাজা দর্পনারায়ণ রায়। মন্দিরে লাগানো একটি সংস্কার ফলক থেকে জানা যায় যে পরবর্তীতে লালগোলার মহারাজা যোগেন্দ্রনারায়ণ রায় মন্দিরটির সংস্কার করেন। তাঁদের পূর্বপুরুষ ভগবান রায় মোগল বাদশাহের কাছ যে সমস্ত দেবোত্তর লাখেরাজ সম্পত্তি পেয়েছিলেন কিরীটেশ্বরী তাদের মধ্যে অন্যতম। মূল মন্দিরের কাছাকাছি আরও কয়েকটি মন্দির আছে।
মূল মন্দিরে কোন বিগ্রহ নেই। একটি লাল রঙের শিলাকে দেবী রূপে পূজা করা হয়। শিলাটি একটি আবরণ দ্বারা আচ্ছাদিত। প্রতি বছর দুর্গাষ্টমী তিথিতে এই আবরণটি সকলের অগোচরে পাল্টানো হয়। নাটোরের সাধক-রাজা রামকৃষ্ণ বড়নগর থেকে এখানে এসে সাধনা করতেন।
এই মন্দিরের পাশে আর একটি মন্দিরে দেবী মূর্তির মুখমণ্ডলকে মা কিরীটেশ্বরী রূপে অর্চনা করা হয়।
গ্রামের মধ্যে 'গুপ্তমঠে' ( এটি একটি দালান মন্দির ) কিরীটেশ্বরীর কিরীট রক্ষিত আছে বলে জানা যায়। এখানেও কয়েকটি মন্দির আছে।
১) মুর্শিদাবাদ কাহিনী : নিখিলনাথ রায়
২) মুর্শিদাবাদের ইতিহাস : প্রতিভা রঞ্জন মৈত্র
৩) বাংলার মন্দির স্থাপত্য ও ভাস্কর্য : প্রণব রায়
------------------------------
আমার ইমেল : shyamalfpb@gmail.com প্রয়োজনে যোগাযোগ করতে পারেন।