বৃন্দাবনচন্দ্রের মঠ, গুপ্তিপাড়া, হুগলি
শ্যামল কুমার ঘোষ
ব্যাণ্ডেল-কাটোয়া রেলপথে গুপ্তিপাড়া একটি স্টেশন। ব্যাণ্ডেল থেকে দূরত্ব ৩৫ কি. মি.। গুপ্তিপাড়া নাম নিয়ে মতভেদ আছে। একটি মতে, সম্রাট আকবরের রাজত্বকালের শেষার্ধে দশনামী সম্প্রদায়ের সত্যদেব সরস্বতী নামক এক সিদ্ধ মহাত্মা চারিধাম পর্যটন শেষে এই গ্রামে উপস্থিত হন এবং গ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও ধর্মীয় পরিবেশে মুগ্ধ হয়ে এই গ্রামের কৃষ্ণবাটি মৌজায় গঙ্গাতীরস্থ অরণ্যে আশ্রম স্থাপন করেন। পরে স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে নদিয়া জেলার শান্তিপুর গ্রাম থেকে শ্রীবৃন্দাবনচন্দ্র জিউর মূর্তি এনে আশ্রমে স্থাপন করে পূজার্চনা করতে থাকেন। যে স্থানে শ্রীবৃন্দাবনচন্দ্র বিরাজ করেন সেই স্থান স্বভাবতই বৃন্দাবন বলে মনে হয়। সেজন্য উহা 'গুপ্ত বৃন্দাবন পল্লী' নামে অভিহিত হয়। 'গুপ্ত বৃন্দাবন পল্লী' সংক্ষেপে 'গুপ্তপল্লী' এবং পরে হয় গুপ্তিপাড়া। অন্য মতে, এই গ্রামে যে সমস্ত জাতির লোকজন বাস করতেন তাঁদের মধ্যে বৈদ্য জাতিই সংখ্যাগরিষ্ট ও বর্ধিষ্ণু ছিলেন। তাঁহাদের উপাধি গুপ্ত। সেই কারণেই গ্রামের নাম হয় গুপ্তপাড়া এবং পরে হয় গুপ্তিপাড়া। বাংলার প্রথম 'বারোয়ারি পুজো' এই গুপ্তিপাড়াতেই শুরু হয়।
স্টেশন থেকে দেড় কি.মি. দূরে তারকেশ্বরের মোহান্তের অধীন দশনামী শৈবসম্প্রদায়ের মঠবাড়ি এলাকায় গুপ্তিপাড়ার প্রসিদ্ধ মন্দিরগুলি অবস্থিত। এই মঠবাড়ি এলাকায় মোট চারটি মন্দির বর্তমান। কৃষ্ণচন্দ্রের 'আটচালা', শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর 'জোড়বাংলা', বৃন্দাবনচন্দ্রের 'আটচালা' ও রামচন্দ্রের 'একরত্ন'। মন্দিরগুলি একসঙ্গে 'বৃন্দাবনচন্দ্রের মঠ' বা 'গুপ্তিপাড়ার মঠ' নামে পরিচিত। একটা পাঁচিল দিয়ে ঘেরা প্রাঙ্গণের উত্তরের অংশে চারটি মন্দির। প্রাঙ্গণের দক্ষিণ অংশে ভোগের ঘর, মঠের অধিবাসীদের থাকার ঘর ইত্যাদি। এগুলির এখন জীর্ণ দশা। চারটি মন্দিরই উঁচু ভিত্তিবেদির উপর স্থাপিত এবং এক মন্দির থেকে পরের মন্দিরে যাওয়ার জন্য ইঁটের তৈরী সাঁকো আছে। মন্দির এলাকায় প্রবেশ করলে সামনেই তোরণ। তোরণের বাঁদিকে কৃষ্ণচন্দ্রের মন্দির। মন্দিরে ওঠার সিঁড়ি আছে। ( প্রতিটি মন্দিরে ওঠার জন্য আলাদা-আলাদা সিঁড়ি নেই । ) বর্তমানে 'বৃন্দাবনচন্দ্রের মঠ' ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ, কলকাতা মণ্ডল দ্বারা সংরক্ষিত।
কৃষ্ণচন্দ্রের মন্দির : উঁচু ভিত্তি বেদির উপর স্থাপিত, ত্রিখিলানবিশিষ্ট, অলিন্দযুক্ত, পূর্বমুখী, বাংলা আটচালা শ্রেণীর বৃহৎ মন্দির। সামনের দিকে তিনটি প্রবেশদ্বার। অলিন্দের সামনে একটি বড়, দুপাশে দুটি ছোট-ছোট। দক্ষিণ ও উত্তর দিকে একটি করে প্রবেশদ্বার আছে। মন্দিরটির টেরাকোটার কাজ অল্প। সামনের দিকের দেওয়ালের খিলানগুলির উপরে, বাঁকানো কার্নিসের নিচে ও দেওয়ালের দুধারে টেরাকোটার বেশির ভাগই ফুল। অলিন্দের মধ্যের 'টেরাকোটা' কলিচুনের প্রলেপে অনেকটাই ম্লান। মন্দিরের শীর্ষে তিনটি আমলক স্তুপিকা। গর্ভগৃহে শ্রীকৃষ্ণচন্দ্র ও শ্রীরাধিকা অধিষ্ঠিত। নবাব আলিবর্দি খাঁর আমলে ১৭৪৫ খ্রীষ্টাব্দ নাগাদ মন্দিরটি নির্মাণ করেন দণ্ডি মধুসূদন। প্রবাদ, শান্তিপুরের মধ্যম গোস্বামী বাড়ির রঘুনন্দন সেবায়ত দণ্ডির নিকট বেদান্তাদি অধ্যায়ন করতেন। সেবায়ত দণ্ডির কাছে সদ্য সমাপ্ত দুটি কৃষ্ণ মূর্তি ছিল। রঘুনন্দন ফিরে যাওয়ার সময় দুটি বিগ্রহের মধ্যে একটি প্রার্থনা করেন। দণ্ডি চোখবাঁধা অবস্থায় একটি নিতে বলেন। রঘুনন্দন সেই অবস্থায় যেটি নেন সেটি মধ্যম গোস্বামী বাড়ির গোকুলচাঁদ এবং অপরটি গুপ্তিপাড়া মঠের কৃষ্ণচন্দ্র বিগ্রহ। দুটি বিগ্রহের মধ্যে খুবই সাদৃশ আছে।
মহাপ্রভু বা শ্রীচৈতন্যের মন্দির : কৃষ্ণচন্দ্রের মন্দিরের সামনের রোয়াক ধরে উত্তর দিকে সামান্য এগুলে বাঁদিকে পড়বে মহাপ্রভুর মন্দির। উঁচু ভিত্তিবেদির উপর স্থাপিত মহাপ্রভুর জোড়বাংলা মন্দিরটি এখানকার মন্দিরগুলির মধ্যে সবচেয়ে পুরানো। প্রতিষ্ঠাফলক না থাকায় মন্দিরটি কবে তৈরী তা জানা যায় না। তবে ইঁটের পাতলা গড়ন ও স্থাপত্য বৈশিষ্ট দেখে মন্দিরটি সতের শতকের গোড়ার দিকে নির্মিত বলে অনুমান করা যায়। আকবরের আমলে মন্দিরটি নির্মাণ করেন রাজা বিশ্বেশ্বর রায়। মন্দিরে শ্রীচৈতন্য ও নিত্যানন্দের কাঠের বিগ্রহ অধিষ্ঠিত। বর্তমানে মন্দিরটি পশ্চিমমুখী হিসাবে ব্যবহার করা হয় । কিন্তু মন্দিরটি প্রথমে পূর্বমুখী ছিল। পূর্ব দিকে খিলান প্রবেশপথ ও ইমারতি থাম আছে। খিলান প্রবেশপথের ওপরে পোড়ামাটির কিছু কাজ এখনও বর্তমান আছে। জানা যায়, এটি প্রথমে বৃন্দাবনচন্দ্রের মন্দির ছিল। পরে ইংরেজ আমলের গোড়ার দিকে বৃন্দাবনচন্দ্রের মন্দির তৈরী হলে মহাপ্রভুর মূর্তি এখানে প্রতিষ্ঠিত হয়।
বৃন্দাবনচন্দ্রের মন্দির : কৃষ্ণচন্দ্রের মন্দিরের সামনের রোয়াক ধরে উত্তর দিকে সামান্য এগিয়ে ডান দিকে ঘুরলে পড়বে বৃন্দাবনচন্দ্রের মন্দির। উঁচু ভিত্তিবেদির উপর স্থাপিত, ত্রিখিলানবিশিষ্ট, অলিন্দযুক্ত, দক্ষিণমুখী, বাংলা আটচালা শ্রেণীর বৃহৎ মন্দির। সামনের দিকে তিনটি প্রবেশদ্বার। অলিন্দের সামনে একটি বড়, দুপাশে দুটি ছোট-ছোট। পশ্চিম দিকে আর একটি প্রবেশদ্বার আছে। পূর্ব দিকের প্রবেশ দ্বারটি ভরাট করা। মন্দিরটিতে টেরাকোটার কাজ খুব বেশি নেই। খিলানগুলির উপরের চারিদিকে বাংলা চারচালা শ্রেণীর প্রতীক শিবালয় ও তারমধ্যে শিবলিঙ্গ। উপরের কার্নিসের নিচে দুই প্রস্থে পোড়ামাটির ফুল এবং দু পাশের উপরে-নিচেও একই রকমের ফুল মন্দিরটির অঙ্গসজ্জা রূপে রয়েছে। ইমারতি থামে কিছু পোড়ামাটির মূর্তি ইত্যাদি আছে। বাঁকানো কার্নিসের নিচেও পোড়ামাটির কাজ আছে।
এই মন্দিরের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট হল, এর ঢাকা বারান্দা ও গর্ভগৃহের দেওয়ালে রয়েছে সুন্দর-সুন্দর ফ্রেসকো পেন্টিং। বিষয়বস্তু পৌরাণিক কাহিনী, ফুল ইত্যাদি। গর্ভগৃহে শ্রী শ্রী বৃন্দাবনচন্দ্র, রাধিকা, গরুড় এবং পিছনের উঁচু বেদিতে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার বিগ্রহ নিত্য পূজিত হন। সত্যদেব সরস্বতী শান্তিপুরের এক গৃহস্থের বাড়ি থেকে শ্রী বৃন্দাবনচন্দ্রকে এনে এখানে প্রতিষ্ঠা করেন । তাঁহার শিষ্য রাজা বিশ্বেশ্বর রায় বৃন্দাবনচন্দ্রের সেবার জন্য গুপ্তিপাড়ার দক্ষিণে সোমড়া গ্রাম দেবোত্তর হিসাবে দান করেন। রথযাত্রার সময় জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার বিগ্রহ এক অত্যুচ্চ রথে বসিয়ে টানা হয়। জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা গুপ্তিপাড়ার অন্যতম আকর্ষণ। মাহেশ ছাড়া এত বড় রথ পশ্চিমবঙ্গের আর কোথাও নেই। এই উপলক্ষ্যে এখানে বড় মেলা বসে। উল্টোরথের আগের দিন মাসির বাড়িতে ( জগন্নাথদেবের মাসির বাড়ি এই মন্দিরের অল্প দুরে বড়বাজারে অবস্থিত ) দেবতার ভোগ ঠাকুরকে নিবেদন করার পর পুরোহিত মন্দিরের দরজা খুলে দেন এবং জনসাধারণ সেই প্রসাদ লুট করে। একে 'ভান্ডার লুট' বলে।
রামচন্দ্রের মন্দির : বৃন্দাবনচন্দ্র মন্দিরের সামনের রোয়াক ধরে পূর্ব দিকে এগিয়ে ডান দিকে ঘুরলে পড়বে রামচন্দ্রের মন্দির। এই মন্দির নিয়ে আলোচনা অন্যত্র করেছি। মন্দিরটি সম্বন্ধে জানতে ক্লিক করুন : রামচন্দ্র মন্দির।
গুপ্তিপাড়ার মঠে যেতে হলে শিয়ালদহ থেকে সকাল ৮ টা ৬ মিনিটের কাটোয়া লোকাল বা হাওড়া থেকে কাটোয়া লোকাল ধরুন। ব্যাণ্ডেল থেকেও গুপ্তিপাড়া যাওয়ার গাড়ি পাবেন। স্টেশন থেকে মন্দিরে যাওয়ার রিকশা, টোটো বা ভ্যান রিকশা পাবেন।
মন্দিরগুলির পরিদর্শনের তারিখ : ১৮.০৩.২০১৬
সহায়ক গ্রন্থাবলি :
৩. বাংলার মন্দির : স্থাপত্য ও ভাস্কর্য : প্রণব রায়
-------------------------------------------
স্টেশন থেকে দেড় কি.মি. দূরে তারকেশ্বরের মোহান্তের অধীন দশনামী শৈবসম্প্রদায়ের মঠবাড়ি এলাকায় গুপ্তিপাড়ার প্রসিদ্ধ মন্দিরগুলি অবস্থিত। এই মঠবাড়ি এলাকায় মোট চারটি মন্দির বর্তমান। কৃষ্ণচন্দ্রের 'আটচালা', শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর 'জোড়বাংলা', বৃন্দাবনচন্দ্রের 'আটচালা' ও রামচন্দ্রের 'একরত্ন'। মন্দিরগুলি একসঙ্গে 'বৃন্দাবনচন্দ্রের মঠ' বা 'গুপ্তিপাড়ার মঠ' নামে পরিচিত। একটা পাঁচিল দিয়ে ঘেরা প্রাঙ্গণের উত্তরের অংশে চারটি মন্দির। প্রাঙ্গণের দক্ষিণ অংশে ভোগের ঘর, মঠের অধিবাসীদের থাকার ঘর ইত্যাদি। এগুলির এখন জীর্ণ দশা। চারটি মন্দিরই উঁচু ভিত্তিবেদির উপর স্থাপিত এবং এক মন্দির থেকে পরের মন্দিরে যাওয়ার জন্য ইঁটের তৈরী সাঁকো আছে। মন্দির এলাকায় প্রবেশ করলে সামনেই তোরণ। তোরণের বাঁদিকে কৃষ্ণচন্দ্রের মন্দির। মন্দিরে ওঠার সিঁড়ি আছে। ( প্রতিটি মন্দিরে ওঠার জন্য আলাদা-আলাদা সিঁড়ি নেই । ) বর্তমানে 'বৃন্দাবনচন্দ্রের মঠ' ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ, কলকাতা মণ্ডল দ্বারা সংরক্ষিত।
এক মন্দির থেকে আর এক মন্দিরে যাওয়ার সাঁকো |
কৃষ্ণচন্দ্রের মন্দির : উঁচু ভিত্তি বেদির উপর স্থাপিত, ত্রিখিলানবিশিষ্ট, অলিন্দযুক্ত, পূর্বমুখী, বাংলা আটচালা শ্রেণীর বৃহৎ মন্দির। সামনের দিকে তিনটি প্রবেশদ্বার। অলিন্দের সামনে একটি বড়, দুপাশে দুটি ছোট-ছোট। দক্ষিণ ও উত্তর দিকে একটি করে প্রবেশদ্বার আছে। মন্দিরটির টেরাকোটার কাজ অল্প। সামনের দিকের দেওয়ালের খিলানগুলির উপরে, বাঁকানো কার্নিসের নিচে ও দেওয়ালের দুধারে টেরাকোটার বেশির ভাগই ফুল। অলিন্দের মধ্যের 'টেরাকোটা' কলিচুনের প্রলেপে অনেকটাই ম্লান। মন্দিরের শীর্ষে তিনটি আমলক স্তুপিকা। গর্ভগৃহে শ্রীকৃষ্ণচন্দ্র ও শ্রীরাধিকা অধিষ্ঠিত। নবাব আলিবর্দি খাঁর আমলে ১৭৪৫ খ্রীষ্টাব্দ নাগাদ মন্দিরটি নির্মাণ করেন দণ্ডি মধুসূদন। প্রবাদ, শান্তিপুরের মধ্যম গোস্বামী বাড়ির রঘুনন্দন সেবায়ত দণ্ডির নিকট বেদান্তাদি অধ্যায়ন করতেন। সেবায়ত দণ্ডির কাছে সদ্য সমাপ্ত দুটি কৃষ্ণ মূর্তি ছিল। রঘুনন্দন ফিরে যাওয়ার সময় দুটি বিগ্রহের মধ্যে একটি প্রার্থনা করেন। দণ্ডি চোখবাঁধা অবস্থায় একটি নিতে বলেন। রঘুনন্দন সেই অবস্থায় যেটি নেন সেটি মধ্যম গোস্বামী বাড়ির গোকুলচাঁদ এবং অপরটি গুপ্তিপাড়া মঠের কৃষ্ণচন্দ্র বিগ্রহ। দুটি বিগ্রহের মধ্যে খুবই সাদৃশ আছে।
কৃষ্ণচন্দ্রের মন্দির |
মন্দিরের সামনের ত্রিখিলান বিন্যাস |
খিলানের উপরে -পাশে টেরাকোটার কাজ |
মন্দিরের শিখর - দেশ |
মন্দিরের টেরাকোটার নমুনা |
শ্রীকৃষ্ণচন্দ্র ও শ্রীরাধিকা |
মহাপ্রভু বা শ্রীচৈতন্যের মন্দির : কৃষ্ণচন্দ্রের মন্দিরের সামনের রোয়াক ধরে উত্তর দিকে সামান্য এগুলে বাঁদিকে পড়বে মহাপ্রভুর মন্দির। উঁচু ভিত্তিবেদির উপর স্থাপিত মহাপ্রভুর জোড়বাংলা মন্দিরটি এখানকার মন্দিরগুলির মধ্যে সবচেয়ে পুরানো। প্রতিষ্ঠাফলক না থাকায় মন্দিরটি কবে তৈরী তা জানা যায় না। তবে ইঁটের পাতলা গড়ন ও স্থাপত্য বৈশিষ্ট দেখে মন্দিরটি সতের শতকের গোড়ার দিকে নির্মিত বলে অনুমান করা যায়। আকবরের আমলে মন্দিরটি নির্মাণ করেন রাজা বিশ্বেশ্বর রায়। মন্দিরে শ্রীচৈতন্য ও নিত্যানন্দের কাঠের বিগ্রহ অধিষ্ঠিত। বর্তমানে মন্দিরটি পশ্চিমমুখী হিসাবে ব্যবহার করা হয় । কিন্তু মন্দিরটি প্রথমে পূর্বমুখী ছিল। পূর্ব দিকে খিলান প্রবেশপথ ও ইমারতি থাম আছে। খিলান প্রবেশপথের ওপরে পোড়ামাটির কিছু কাজ এখনও বর্তমান আছে। জানা যায়, এটি প্রথমে বৃন্দাবনচন্দ্রের মন্দির ছিল। পরে ইংরেজ আমলের গোড়ার দিকে বৃন্দাবনচন্দ্রের মন্দির তৈরী হলে মহাপ্রভুর মূর্তি এখানে প্রতিষ্ঠিত হয়।
মহাপ্রভুর মন্দির - ১ |
মহাপ্রভুর মন্দির - ২ |
খিলানের উপরের টেরাকোটার কাজ |
শ্রীচৈতন্য ও শ্রীনিত্যানন্দ বিগ্রহ |
এই মন্দিরের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট হল, এর ঢাকা বারান্দা ও গর্ভগৃহের দেওয়ালে রয়েছে সুন্দর-সুন্দর ফ্রেসকো পেন্টিং। বিষয়বস্তু পৌরাণিক কাহিনী, ফুল ইত্যাদি। গর্ভগৃহে শ্রী শ্রী বৃন্দাবনচন্দ্র, রাধিকা, গরুড় এবং পিছনের উঁচু বেদিতে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার বিগ্রহ নিত্য পূজিত হন। সত্যদেব সরস্বতী শান্তিপুরের এক গৃহস্থের বাড়ি থেকে শ্রী বৃন্দাবনচন্দ্রকে এনে এখানে প্রতিষ্ঠা করেন । তাঁহার শিষ্য রাজা বিশ্বেশ্বর রায় বৃন্দাবনচন্দ্রের সেবার জন্য গুপ্তিপাড়ার দক্ষিণে সোমড়া গ্রাম দেবোত্তর হিসাবে দান করেন। রথযাত্রার সময় জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার বিগ্রহ এক অত্যুচ্চ রথে বসিয়ে টানা হয়। জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা গুপ্তিপাড়ার অন্যতম আকর্ষণ। মাহেশ ছাড়া এত বড় রথ পশ্চিমবঙ্গের আর কোথাও নেই। এই উপলক্ষ্যে এখানে বড় মেলা বসে। উল্টোরথের আগের দিন মাসির বাড়িতে ( জগন্নাথদেবের মাসির বাড়ি এই মন্দিরের অল্প দুরে বড়বাজারে অবস্থিত ) দেবতার ভোগ ঠাকুরকে নিবেদন করার পর পুরোহিত মন্দিরের দরজা খুলে দেন এবং জনসাধারণ সেই প্রসাদ লুট করে। একে 'ভান্ডার লুট' বলে।
বৃন্দাবনচন্দ্রের মন্দির |
মন্দিরের শিখর - দেশ |
মন্দিরের ত্রিখিলান বিন্যাস |
মন্দিরের খিলানের উপরের কাজ |
মন্দিরের একটি ইমারতি থাম |
বাঁকানো কার্নিসের নিচের টেরাকোটার কাজ |
টেরাকোটার একটি ফুল |
ঢাকা বারান্দার ফ্রেসকো পেন্টিং - ১ |
ঢাকা বারান্দার ফ্রেসকো পেন্টিং - ২ |
ঢাকা বারান্দার ফ্রেসকো পেন্টিং - ৩ |
ঢাকা বারান্দার ফ্রেসকো পেন্টিং - ৪ |
ঢাকা বারান্দার ফ্রেসকো পেন্টিং - ৫ |
ঢাকা বারান্দার ফ্রেসকো পেন্টিং - ৬ |
ঢাকা বারান্দার ফ্রেসকো পেন্টিং - ৭ |
ঢাকা বারান্দার ফ্রেসকো পেন্টিং - ৮ |
গর্ভগৃহের মধ্যের ফ্রেসকো পেন্টিং |
শ্রীবৃন্দাবনচন্দ্র ও অন্যান্য বিগ্রহ |
জগন্নাথ-বলরাম -সুভদ্রা বিগ্রহ |
শ্রীবৃন্দাবনচন্দ্র ও শ্রীরাধিকা বিগ্রহ |
গুপ্তিপাড়ার মঠে যেতে হলে শিয়ালদহ থেকে সকাল ৮ টা ৬ মিনিটের কাটোয়া লোকাল বা হাওড়া থেকে কাটোয়া লোকাল ধরুন। ব্যাণ্ডেল থেকেও গুপ্তিপাড়া যাওয়ার গাড়ি পাবেন। স্টেশন থেকে মন্দিরে যাওয়ার রিকশা, টোটো বা ভ্যান রিকশা পাবেন।
মন্দিরগুলির পরিদর্শনের তারিখ : ১৮.০৩.২০১৬
সহায়ক গ্রন্থাবলি :
১. হুগলী জেলার ইতিহাস ও বঙ্গসমাজ ( ২ য় খণ্ড ) : সুধীর কুমার মিত্র
২. District Handbook, 1951, hooghly by A. Mitra, p 227 ৩. বাংলার মন্দির : স্থাপত্য ও ভাস্কর্য : প্রণব রায়
-------------------------------------------
আমার ইমেল : shyamalfpb@gmail.com প্রয়োজনে যোগাযোগ করতে পারেন।
--------------------------------------------