শুক্রবার, ৬ আগস্ট, ২০২১

Temples of Ranaghat, Ranaghat, Nadia

 রানাঘাটের  মন্দির ,  রানাঘাট,  নদিয়া

শ্যামল  কুমার  ঘোষ


            চুর্নি  নদীর  তীরে  অবস্থিত  রানাঘাট  নদিয়া  জেলার  অন্যতম  মহকুমা  শহর।  রানাঘাট  নাম  নিয়ে  অনেক  মত  প্রচলিত  আছে।  বহুকাল  আগে  এখানে  রনা  বা  রানা  নামের  এক  ডাকাতের  ঘাঁটি  ছিল।  তার  নাম  থেকে  রানার  ঘাঁটি  এবং  তার  থেকে  হয়েছে  রানাঘাট।  অন্য  মতে,  নদিয়ারাজমহিষীর  ঘাট  অর্থাৎ  রানির  ঘাট  থেকে  হয়েছে  রানাঘাট।  এখানে  উল্লেখ্য,  মহারাজা  কৃষ্ণচন্দ্রের  ছোট  রানির  বাপের  বাড়ি  ছিল  রানাঘাটের  কাছেই  নৌকাড়ি  গ্রামে।  আবার  কেউ  বলেন,  রাণা  মানসিংহ  যশোহর  আক্রমনের  সময়  এখানে  চুর্নি  নদী  তীরে  অবতরণ  করেন।  রাণার  ঘাট  থেকে  হয়েছে  রানাঘাট।

            রানাঘাট  স্টেশন  থেকে  কাছেই  সিদ্ধেশ্বরীতলায়  বহুকাল  পূর্বের  রনা  ডাকাতের  প্রতিষ্ঠিত  সিদ্ধেশ্বরী  কালী  এক  দালান  মন্দিরে  আজও  পূজিত  হচ্ছেন।  পাল  চৌধুরী  (  রানাঘাটের  জমিদার )  বাড়ির  কাছে  আছে  নিস্তারিণী  কালীর  মন্দির।  এই  দুটি  মন্দিরের  বিবরণ  আগেই  দিয়েছি।  সিদ্ধেশ্বরী  ও  ইস্তারিণী  মন্দির  সম্বন্ধে  জানতে  নিচের  লিংকে  ক্লিক  করুন :

         সিদ্ধেশ্বরী  ও  নিস্তারিণী  মন্দির,  রানাঘাট,  নদিয়া 

           

            কাছেই  একটি  দালান  মন্দিরে  পাল  চৌধুরীদের   কাঠের  জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রা,  কষ্টিপাথরের  বংশীধারী   গোপীনাথ,  অষ্টধাতুর  রাধিকা,  পাথরের  গোপাল,  শ্রীধর  ও  রাধাগোবিন্দ-রাধিকা  মূর্তি  নিত্য  পূজিত  হন।  পাল  চৌধুরীদের  প্রাচীন  গোপীনাথ  মন্দির  চুর্নি  গর্ভে  বিলীন  হবার  পর  আনুমানিক  দেড়শ  বছর  আগে  এই  মন্দির  নির্মাণ  করা  হয়।  ১৯৫৮  খ্রীষ্টাব্দে  এই  মন্দিরের  পূর্ণ  সংস্কার  করা  হয়।  পাল  চৌধুরী  বাড়ির  সদস্য  অঞ্জন  পাল  চৌধুরী  আমাকে  গোপীনাথের  ফটো  তুলতে  সাহায্য  করেন।  সেজন্য  তাঁকে  ধন্যবাদ।


গোপীনাথ  মন্দির

জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রা  বিগ্রহ

গোপীনাথ  ও  অন্যান্য  বিগ্রহ 

গোপীনাথ  ও  রাধিকা  বিগ্রহ


            কাছেই  রানাঘাটের  অন্যতম  জমিদার  পাল  চৌধুরীদের  ভদ্রাসন।  'পাল  চৌধুরী'   নদিয়ারাজ  কর্তৃক  প্রদত্ত  উপাধি।  এই  বংশের  পূর্বপুরুষ  কৃষ্ণ  চন্দ্র  পান্তি  অতি  সাধারণ  অবস্থা  থেকে  নিজের  চেষ্টায়  প্রচুর  ভূসম্পত্তির  অধিকারী  হন।  রানাঘাটের  পাল  চৌধুরী  বাড়ির  এলাকার  মধ্যে  একই  ভিত্তিবেদির  উপর  একজোড়া  শিবমন্দির  আছে।  ( মন্দিরের  বিস্তারিত  বিবরণ  আমার  ব্লগের  অন্যত্র  দিয়েছি । )   এক  সময়  শম্ভুচন্দ্রের  ( কৃষ্ণচন্দ্রের  মেজ  ভাই )  বজরায়  স্থাপিত  দুটি  কামান  এই  বাড়ির  ফটকে  রক্ষিত  আছে।

পাল  চৌধুরী  বাড়িতে  রক্ষিত  একটি  কামান 
            নিস্তারিণী  মন্দিরের  কাছেই  ব্রজবল্লভ  দালান  মন্দির।  মন্দিরে  কষ্টিপাথরের  কৃষ্ণ  এবং  অষ্টধাতুর  রাধিকা  ও  অন্যান্য  বিগ্রহ  নিত্যপূজিত।  লাগোয়া  একটি  দালানের  উপর  নবচূড়াযুক্ত  মন্দিরে  একটি  প্রাচীন  শিবলিঙ্গ,  সিংহবাহিনী  ও  গণেশ  বিগ্রহ  নিত্যপূজিত। 


ব্রজবল্লভ  মন্দিরের  panoramic ছবি

কৃষ্ণ  ও  রাধিকা   বিগ্রহ

অন্যান্য  বিগ্রহ

শিবলিঙ্গ

সিংহবাহিনী  বিগ্রহ

গণেশ   বিগ্রহ 

কী  ভাবে  যাবেন ?
            
রানাঘাটের  উপরোক্ত   মন্দিরগুলোতে  যেতে  হলে  শিয়ালদহ  থেকে  লালগোলা  পাসেঞ্জার,  রানাঘাট,  শান্তিপুর, গেদে  বা  কৃষ্ণনগর  লোকালে  উঠুন।  নামুন  রানাঘাটে। স্টেশন  থেকে  হেঁটে,  রিকশায়  বা  টোটোতে  প্রথমে  পৌঁছান  সিদ্ধেশ্বরী  কালী  মন্দিরে।  রানাঘাট  থেকে  কৃষ্ণনগর,  লালগোলা,  শান্তিপুর,  গেদে,  বনগাঁ  ও  শিয়ালদেহের  ট্রেন  পাওয়া  যায়।  ৩৪  নং  জাতীয়  সড়ক  ধরেও  রানাঘাট  যেতে  পারেন।  শিয়ালদহ  থেকে  রানাঘাট  যেতে  ট্রেনে  সময়  লাগে  দু  ঘন্টা।

    সহায়ক  গ্রন্থাবলি  :
                      ১. নদিয়া  জেলার  পুরাকীর্তি :  মোহিত  রায়  ( তথ্য  সংকলন  ও  গ্রন্থনা )
                      ২. Nadia Gazetteer - Chapter XVI


               -------------------------------------------
            আমার  ইমেল :  shyamalfpb@gmail.com   প্রয়োজনে  যোগাযোগ  করতে  পারেন।

           --------------------------------------------

           

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন