গোরক্ষনাথ  মন্দির,  অর্জুনপুর,  বাগুইআটি / তেঘরিয়া,  উত্তর  ২৪  পরগনা 
          শ্যামল  কুমার  ঘোষ 
         
          উত্তর  ২৪  পরগনা  জেলার  বাগুইআটি  থানার  অনতিদূরে  অর্জুনপুরে  অবস্থিত  গোরক্ষনাথের  মন্দির।  অর্জুনপুর  নাম  নিয়ে  অনেক  কিংবদন্তী  শোনা  যায়।  প্রথমটি,  আদিতে  অর্জুনপুর  গ্রামটি  ছিল  খাণ্ডব।  মহাভারতে  বর্ণিত  অর্জুন  এই  খাণ্ডববন  দহন  করার  পর  গ্রামের  নাম  হয়  অর্জুনপুর।  দ্বিতীয়টি,  বহুবছর  আগে  স্থানটি  ছিল  জঙ্গলাবৃত,  সুন্দরবনের  অংশ।  তখন  এই  স্থান  ছিল  অসংখ্য  অর্জুন  গাছে  পূর্ণ।  পাশ  দিয়ে  বয়ে  যেত  বিদ্যাধরী  নদী।  এই  নদী  পথে  ব্যবসায়ীরা  এই  গ্রামের  পাশ  দিয়ে  যাতয়াতের  সময়  অর্জুন  গাছের  নিচে  বসে  বিশ্রাম  করত।  তাদের  মুখে  মুখে  স্থানটি  অর্জুনপুর  নামে  পরিচিত  হয়ে  ওঠে। 
             অর্জুনপুরে  গোরক্ষবাসী  রোডে  অবস্থিত,  ৬০ বিঘা  জমির  ওপর  গোরক্ষনাথ  মন্দির।  বিনয়  ঘোষের  মতে,  কয়েক  হাজার  বছর  আগে  কপিলমুনি  এই  যোগীক্ষেত্রে  সাধনা  করেন।  তারপর  গোরক্ষনাথের  অনুরোধে  তিনি  এই  স্থান  পরিত্যাগ  করে  গঙ্গাসাগর  চলে  যান।  এখানে  গোরক্ষনাথের  মন্দির  নির্মাণ  করেন  হরিয়ানা  থেকে  আগত  নাথ  সম্প্রদায়ের  লোকেরা।  এখানকার  মন্দিরের  মধ্যে  কপিলমুনির  শ্বেতপাথরের  একটি ছোট  মূর্তি  আছে।  মন্দিরের  পশ্চিম  দিকের  একটি  ঘরে  রয়েছে  অনির্বাণ  ধুনি।  মঠবাসীরা  বলেন  এই  আগুন  হল  মহাকালের  প্রতীক।  এই  আগুন  নেভে  না।  আসলে,  উৎসবের  সময়  এই  ধুনি  নতুন  করে  জ্বালানো  হয়।  আশ্রমে  প্রতি  বছর  মাঘী  পূর্ণিমায়  মহাসমারোহে  গোরক্ষনাথের  বার্ষিক  উৎসব  অনুষ্ঠিত  হয়।  পৌষমাসে  এই  আশ্রমে  সাধু-সন্ন্যাসীর  সমাগম  হয়।  পৌষসংক্রান্তিতে  সাগরমেলা  যাওয়ার  পথে  ভারতের  বিভিন্ন  স্থান  থেকে  আগত  সাধু-সন্ন্যাসীরা  এখানে  কয়েক  দিন  অতিবাহিত  করেন।  পুর্নার্থীরা  গোরক্ষনাথের  নিকট  রোট  ও  লেঙ্গট  মানত  করেন।  এ  ছাড়া  ফাল্গুণ  মাসে  শিবরাত্রি  উপলক্ষ্যে  শিবলিঙ্গের  বিশেষ  পূজা  ও  চৈত্রসংক্রান্তিতে  চড়ক  উৎসব  অনুষ্ঠিত  হয়।
             আশ্রম  চত্তরের  মধ্যে  গোরক্ষনাথ  ও  ভৈরবনাথ  মন্দির  ছাড়াও  কালী,  বিষ্ণু,  হনুমান  ও  শনি  প্রভৃতি  দেবদেবীর  মন্দির  আছে।  বাগানের  মধ্যে  অনেকগুলি  সমাধি  আছে।  লাল  রঙের  বড়  সমাধি  গুলি  যোগীদের  সমাধি।  আর  ছোট  সমাধি  গুলি  মাছেদের।  একটা  বড়  পুকুরে  বড়  বড়  অনেক  মাছ  দেখা  যায়।  এখানে  মাছ  মরে  গেলে  সমাধি  দেওয়া  হয়।  আশ্রমে  মোহান্তের  বাসস্থান,  অতিথি  ও  অন্যান্য  মঠবাসীদের  থাকার  ব্যবস্থা  আছে।  মন্দির  পরিচালনার  জন্য  একটি  ট্রাস্টি  বোর্ড  আছে।  এখন  মন্দির  চত্বরের  মধ্যে  একটি  পার্ক  হয়েছে।  মন্দিরটি  সকাল  ৫ টা  থেকে  দুপুর  ১২ টা  পর্যন্ত  এবং  বিকাল  ৩ টা  থেকে  রাত  ৮ টা  পর্যন্ত  খোলা  থাকে। 
কী  ভাবে  যাবেন ?
            গোরক্ষনাথ  মন্দিরে  যেতে  হলে  হাওড়া  থেকে  এল  ২৩৮  বা  তেঘরিয়া  মিনি,  শিয়ালদহ  থেকে  ডি. এন. ১৭  বা  ৪৫ নং  বাসে,  এসপ্লানেড  থেকে  ৪৬ নং  বাসে,  উল্টোডাঙ্গা  থেকে  ভি. আই. পি. রোড  দিয়ে  এয়ারপোর্ট  গামী  যে  কোন  বাসে  উঠুন।  নামুন  তেঘরিয়া  স্টপেজে।  সেখান  থেকে  পশ্চিম  দিকে  হেঁটে  বা  রিকশায়  পৌঁছে  যান  গোরক্ষনাথের  মন্দির।
  | 
| ডান দিকে গোরক্ষনাথের মন্দির, বাঁ দিকে ধুনি ঘর  | 
  | 
| ধুনি  | 
  | 
| কপিল মুনি ও অন্যান্য বিগ্রহ  | 
  | 
| কৃষ্ণ ও রাধা  | 
  | 
| গোরক্ষনাথ ও অন্যান্য বিগ্রহ  | 
  | 
| কালী মন্দির  | 
  | 
| কালী | 
  | 
| ভৈরবনাথের বিগ্রহ  | 
  | 
| বিষ্ণু মন্দির  | 
  | 
| বিষ্ণু বিগ্রহ | 
  | 
| হনূমান বিগ্রহ  | 
  | 
| শিবমন্দির  | 
  | 
| শিবলিঙ্গ  | 
  | 
| নন্দিকেশ্বর  | 
  | 
| যোগীদের সমাধি  | 
   সহায়ক গ্রন্থ 
:
                    ১. চব্বিশ  পরগণা  :  কমল  চৌধুরী
                    ২. পশ্চিম  বঙ্গের 
পূজা-পার্বণ  ও  মেলা  ( তৃতীয়  খণ্ড  ) :   অশোক  মিত্র  সম্পাদিত  
                       -------------------------------------------------
রামায়ণের ৭টি খণ্ডের ৬৪ টি উপাখ্যান ও ১৮৫ টি টেরাকোটা ফলকের আলোকচিত্র সংবলিত আমার লেখা এবং 'রা প্রকাশন' কর্তৃক প্রকাশিত বই 'বাংলার টেরাকোটা মন্দিরে রামায়ণ' প্রকাশিত হয়েছে। বইটির মুদ্রিত মূল্য - ৫৯৯ টাকা।
 বইটি ডাক যোগে সংগ্রহ করতে হলে যোগাযোগ করুন :  9038130757 এই নম্বরে। 
কলকাতার কলেজস্ট্রিটের মোড়ে দুই মোহিনীমোহন কাঞ্জিলালের কাপড়ের দোকানের মাঝের রাস্তা ১৫, শ্যামাচরণ দে স্ট্রিটের উপর অবস্থিত বিদ্যাসাগর টাওয়ারের দু'তলায় 'রা প্রকাশনে'র দোকান। ওখান থেকে বইটি সংগ্রহ করতে পারেন। কোনও অসুবিধা হলে উপরোক্ত নম্বরে ফোন করতে পারেন।
            প্রকাশনীতে বইটি সেরা বইয়ের সম্মান স্বর্ণকলম ২০২৫ পেয়েছে ।
 
 
This mandir is located very near to my house (Baguiati). I usually visit this temple two to three times in a year. Your research work is very apprehensive.
উত্তরমুছুন