রবিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২১

Narayan Temple / Kalachand Temple, Ramdulal Sarkar Street, Hedua, Kolkata

 নারায়ণ  মন্দির  /  কালাচাঁদ  মন্দির,  রামদুলাল  সরকার  স্ট্রিট,  হেদুয়া,  কলকাতা 

                          শ্যামল  কুমার  ঘোষ 


            উত্তর  কলকাতার  হেদুয়া  পার্কের  কাছে  রামদুলাল  সরকার  স্ট্রিট  ও  বেথুন  রো-এর  সংযোগস্থলের  একটি  বাড়ির  পরে  ১৩৩/২/১  রামদুলাল  সরকার  স্ট্রিটে  একটি  সুন্দর  পাথরের  মন্দির  আছে।  মন্দিরটি  স্থানীয়দের  কাছে  নারায়ণ  মন্দির  বা  কালাচাঁদ  মন্দির  নামে  পরিচিত।  মন্দিরটি  কলকাতায়  হলেও  কলকাতা  নগরবাসীর  কাছে  প্রায়  অপরিচিত। 

            মন্দিরটি  প্রতিষ্ঠা  করেন  নান  পরিবারের  বি.  সি.  নান।  বেথুন  রো-এর  নিস্তারিণী  কালী  মন্দিরের  প্রতিষ্ঠাতা  যে  নান  পরিবার  তাঁরা  এই  নান  পরিবারের  অন্য  শরিক।  এই  পরিবারের  মালিকাধীন  মানিকতলা  বাজার।  মন্দিরে  কোন  প্রতিষ্ঠাফলক  নেই।  তাই  মন্দিরটি  কবে  প্রতিষ্ঠা  হয়েছিল  তা  বলা  যাবে  না।

            উঁচু  ভিত্তিবেদির  উপর  স্থাপিত,  দক্ষিণমুখী  মন্দিরটির  স্থাপত্যশৈলী  বাংলার  প্রচলিত  মন্দিরস্থাপত্যশৈলীর  থেকে  একটু  আলাদা।  একটি  সমতল  ছাদ  দালানের  উপর  চার  কোণে  চারটি  ছোট  ছোট  শিখর  ও  মাঝখানে  আছে  একটি  বড়  শিখর।  মাঝের  শিখরটির  উপর  আছে  একটি  তেরচূড়া  প্রতীক  মন্দির।  

            মন্দিরের  দরজার  উপরে-পাশে,  জানলার  উপরে-নিচে-পাশে,  ঝুল-বারান্দায়  ও  অন্যান্য  স্থানে  চমৎকার  সব  পাথরের  কাজ  আছে।  মন্দিরের  কার্নিসের  ভার-বাহক  হিসাবে  বিভিন্ন  বাদকবৃন্দের  ছোট  ছোট  মূর্তি  দেখা  যায়।  মাঝখানের  দুটি  বিন  বাদকের  মাঝে  একটি  ছোট  শিব-অন্নপূর্ণা  মূর্তিও  আছে।  

            মন্দিরের  ঢোকার  দুটি  দরজা।  একটি  সামনে।  অপরটি  পিছনে।  সামনের  দরজা  দিয়ে  ঢুকলে  প্রথমে  পড়বে  অলিন্দ।  অলিন্দটি  বেশ  বড়।  তারপর  তিনটি  খিলানবিশিষ্ট  গর্ভগৃহ।  গর্ভগৃহে  ঢোকার  দুটি  কাঠের  দরজা  ও  একটি  কলাপসিবল  গেট।  এই  দুটি  কাঠের  দরজা  ও  মন্দিরের  অন্যান্য  কাঠের  দরজাগুলিতে  সুন্দর  কাঠের  কাজ  আছে।  গর্ভগৃহের  সামনের  দেওয়ালে  সুন্দর অলংকরণ  আছে। অলংকরণগুলির  মধ্যে  রামসীতা,  অনন্তশয়ানে  বিষ্ণু,  রাধাকৃষ্ণ,  বিভিন্ন  কৃষ্ণলীলা  ও  ফুলকারি  নকশা  উল্লেখযোগ্য।  অলিন্দে  প্রেক্ষাগৃহের  মত  সুন্দর  ঝুল-বারান্দা  আছে।  মন্দিরের  গর্ভগৃহে  নারায়ণ  শিলা  নিত্য  পূজিত।

            মন্দিরটি  পরিদর্শনের  তারিখ : ১৬.১১.২০২১ 

মন্দিরের মাঝের শিখর

মাঝের শিখরের উপর প্রতীক মন্দির 

মাঝের শিখরের ত্রিখালান বিন্যাস 

নারায়ণ / কালাচাঁদ মন্দির, রামদুলাল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা 

ভার-বাহক বাদক বৃন্দ - ১
ভার-বাহক বাদক বৃন্দ - ২
ভার-বাহক বাদক বৃন্দ - ৩
দুই বিন বাদকের মাঝে অন্নপূর্ণা মূর্তি 
ঝুল বারান্দা ও বাড়ির প্রবেশ-দরজার উপরের কাজ 
ঝুল বারান্দার কাজ ( বড় করে ) 
বাড়ির প্রবেশ-দরজার উপরের কাজ
জানলার উপরের কাজ
জানলার নিচের কাজ
মন্দির প্রবেশ-দরজার উপরের কাজ 
মন্দির প্রবেশ-দরজার উপরের কাজ ও গরুড় মূর্তি 
দরজার পাশে পাথরের কাজ - ১
দরজার পাশে পাথরের কাজ - ২
দরজার পাশে পাথরের কাজ - ৩
বাঁ দিকের শিখরের কাজ - ১
বাঁ দিকের শিখরের কাজ - ২
খিলানের কাজ 
গর্ভগৃহের সামনের বিন্যাস - ১ 
গর্ভগৃহের সামনের বিন্যাস - ২
গর্ভগৃহের সামনের বিন্যাস ( বড় করে )
গর্ভগৃহের দরজা - ১
গর্ভগৃহের দরজা - ২
অলিন্দে প্রেক্ষাগৃহের মত সুন্দর ঝুল-বারান্দা
কৃষ্ণ লীলা - ১
কৃষ্ণ লীলা - ২
কৃষ্ণ লীলা - ৩
কৃষ্ণ লীলা - ৪
কৃষ্ণ লীলা - ৫
কৃষ্ণ লীলা - ৬

---------------------------------------------------------------


রামায়ণের ৭টি খণ্ডের ৬৪ টি উপাখ্যান ও ১৮৫ টি টেরাকোটা ফলকের আলোকচিত্র সংবলিত আমার লেখা এবং 'রা প্রকাশন' কর্তৃক প্রকাশিত বই 'বাংলার টেরাকোটা মন্দিরে রামায়ণ' প্রকাশিত হয়েছে। বইটির মুদ্রিত মূল্য - ৫৯৯ টাকা।


 বইটি ডাক যোগে সংগ্রহ করতে হলে যোগাযোগ করুন :  9038130757 এই নম্বরে। 

কলকাতার কলেজস্ট্রিটের মোড়ে দুই মোহিনীমোহন কাঞ্জিলালের কাপড়ের দোকানের মাঝের রাস্তা ১৫, শ্যামাচরণ দে স্ট্রিটের উপর অবস্থিত বিদ্যাসাগর টাওয়ারের দু'তলায় 'রা প্রকাশনে'র দোকান। ওখান থেকে বইটি সংগ্রহ করতে পারেন। কোনও অসুবিধা হলে উপরোক্ত নম্বরে ফোন করতে পারেন।

        প্রকাশনীতে বইটা বেস্টসেলার হয়েছে।


JayChandi Temple, Madral, Bhatpara / Kankinara, North 24 Parganas

 জয়চণ্ডী  মন্দির,  মাদরাল,  ভাটপাড়া /  কাঁকিনাড়া,  উত্তর  ২৪  পরগনা

                         শ্যামল  কুমার  ঘোষ

            উত্তর  ২৪  পরগনা  জেলার  ভাটপাড়ার  পূর্ব  দিকে  অবস্থিত  মাদরাল  গ্রাম।  শিয়ালদহ-নৈহাটি  রেলপথে  কাঁকিনাড়া  স্টেশন  থেকে  টোটোতে  সহজেই  এই  গ্রামে  যাওয়া  যায়।  মাদরাল  গ্রামের  নামকরণ  সম্পর্কে  জানা  যায়  যে  পশ্চিম  দেশীয়  মাদার  আলী  নামে  জনৈক  মুসলমানের  নামানুসারে  গ্রামের  নাম  মাদরাইল  বা  মাদরাল  হয়েছে।  মাদরালে  জয়চণ্ডী  মন্দির  প্রসিদ্ধ।  কতকাল  আগে  এই  মন্দির  স্থাপিত  হয়েছিল  তা  জানা  যায়  না।  জনশ্রুতি,  এক  সময়  বিস্তীর্ণ  জঙ্গলের  মধ্যে  ছিল  এই  মন্দির।  সম্পূর্ণ  এলাকাটি  ছিল  ডাকাতদের  দখলে।  তখন  জয়চণ্ডী  ডাকাতদের  আরাধ্য  দেবী  ছিলেন।  তারা  মন্দিরে  নরবলিও  দিত।  লোকে  এই  জঙ্গলকে  বলত  'জয়চণ্ডীর  জঙ্গল'।  ভাটপাড়ার  মধু  ডাকাত,  তেঁতুলের  গৌরে  বেদে,  নৈহাটির  রঘু  ডাকাত  প্রভৃতি  কুখ্যাত  ডাকাত  দলের  আড্ডা  ছিল  এই  জয়চণ্ডীর  জঙ্গলে।  ডাকাত  সর্দার  গৌরে  বেদের  লাঠিয়ালরূপে  খ্যাতি  ছিল।  তা  ছাড়া  রণপায়ে  গ্রাম  থেকে  গ্রামান্তরে  অতি  দ্রুত  যেতে  পারত।  তখন  গঙ্গার  সঙ্গে  সংযোগকারী  ত্রিমোহিনী  খাল  ছিল  এই  মন্দির  সংলগ্ন  অঞ্চলে।  ডাকাতের  দল  এই  খাল  দিয়ে  ছিপ  নৌকার  সাহায্যে  ডাকাতি  করে  ফিরত  এই  জয়চণ্ডীর  জঙ্গলে।  ইংরেজ  শাসন  কালে  ডাকাতদের  বিরুদ্ধে  অভিযান  শুরু  হল।  পুলিশের  অভিযানে  কেউ  কেউ  মারা  গেল,  অনেকে  ধরা  পড়ল,  অনেকেই  আবার  ডাকাতি  ছেড়ে  দিল।  ডাকাতি  বন্ধ  হয়ে  যাওয়ায়  মন্দিরটি  পরিত্যক্ত  হল।  ডাকাতরা  মন্দির  ত্যাগ  করার  সময়  জয়চণ্ডী  দেবীর  বিগ্রহ  জয়চণ্ডী  দীঘিতে  ফেলে  দিয়ে  যায়।  বহুদিন দেবীর  মন্দির  পরিত্যক্ত  অবস্থায়  পড়ে  থাকে।  

            তারপর  মানুষের  প্রয়োজনে  জঙ্গল  পরিষ্কার  করে  লোক  বসতি  শুরু  হল।  নবিংশ  শতাব্দীর  মাঝামাঝি  কোন  এক  সময়  স্থানীয়  জগৎ  চক্রবর্তী  মহাশয়  স্বপ্নাদেশ  পেয়ে  দীঘির  জল  থেকে  বিগ্রহ  উদ্ধার  করে,  মন্দির  সংস্কার  করে,  দেবীকে  পুনরায়  প্রতিষ্ঠা  করে  নিত্য  পূজার  ব্যবস্থা  করলেন।  ১৩৪৩  বঙ্গাব্দে  ভাটপাড়ার  জ্যোতিষ,  সতীশ  ও  গিরীশ  চন্দ্র  ঘোষ  মন্দিরের  আমূল  সংস্কার  করেন।  মন্দিরে  সংস্কারকালীন  একটি  প্রতিষ্ঠাফলক  আছে। 

             উঁচু  ভিত্তিবেদির  উপর  স্থাপিত,  দক্ষিণমুখী  মন্দিরটি  আটচালা  শৈলীর।  মন্দির  সংলগ্ন  অলিন্দ  আছে।  মন্দিরের  সামনে  চাঁদনি  আকৃতির  একটি  নাটমন্দির  আছে।  মন্দিরে  এখন  কোন  বিগ্রহ  নেই।  প্রতি  বছর  ফাল্গুন  পূর্ণিমার  ছয়দিন  পর  প্রতিমা  এনে  জয়চণ্ডীর  পূজা  করা  হয়।  সপ্তম  দোল  উপলক্ষে  এখানে একটি  মেলা  বসে।

            মন্দিরটি  পরিদর্শনের  তারিখ : ১০.১১.২০২১         

জয়চণ্ডী মন্দির, মাদরাল 

মন্দিরের সামনের নাটমন্দির 

মন্দিরের শিখর 

সংস্কারফলক 

সহায়ক  গ্রন্থ :

          ১)  পশ্চিমবঙ্গের  পূজা-পার্বণ  ও  মেলা : অশোক  মিত্র  সম্পাদিত

            **************************************

রামায়ণের ৭টি খণ্ডের ৬৪ টি উপাখ্যান ও ১৮৫ টি টেরাকোটা ফলকের আলোকচিত্র সংবলিত আমার লেখা এবং 'রা প্রকাশন' কর্তৃক প্রকাশিত বই 'বাংলার টেরাকোটা মন্দিরে রামায়ণ' প্রকাশিত হয়েছে। বইটির মুদ্রিত মূল্য - ৫৯৯ টাকা।


 বইটি ডাক যোগে সংগ্রহ করতে হলে যোগাযোগ করুন :  9038130757 এই নম্বরে। 

কলকাতার কলেজস্ট্রিটের মোড়ে দুই মোহিনীমোহন কাঞ্জিলালের কাপড়ের দোকানের মাঝের রাস্তা ১৫, শ্যামাচরণ দে স্ট্রিটের উপর অবস্থিত বিদ্যাসাগর টাওয়ারের দু'তলায় 'রা প্রকাশনে'র দোকান। ওখান থেকে বইটি সংগ্রহ করতে পারেন। কোনও অসুবিধা হলে উপরোক্ত নম্বরে ফোন করতে পারেন।

প্রকাশনীতে বইটা বেস্টসেলার হয়েছে।


শনিবার, ২০ নভেম্বর, ২০২১

Balak Nath and Sita Nath Shib Temple, Tarak Pramanik Road, Simla, Kolkata

বালক  নাথ  ও  সীতা  নাথ  শিব  মন্দির,  তারক  প্রামাণিক  রোড,  সিমলা,  কলকাতা 

                       শ্যামল  কুমার  ঘোষ

           কলকাতার  বিধান  সরণির  উপর  অবস্থিত  শ্রীমানী  বাজারের  কাছে  তারক  প্রামাণিক  রোড।  এই  রাস্তার  উপর  অবস্থিত  বালক  নাথ  ও  সীতানাথ  শিব  মন্দির।  সামান্য  উঁচু  ভিত্তিবেদির  উপর  স্থাপিত,  পূর্বমুখী  মন্দিরটি  নবরত্ন  শৈলীর।  মন্দিরের  কার্নিস  সোজা।  গর্ভগৃহের  সামনে  অলিন্দ  যেটা  পরিদর্শন  কক্ষ  হিসাবে  ব্যবহার  করা  হয়।  গর্ভগৃহের  দরজার  খিলানের  এক  একটি  স্তম্ভ  'কলাগেছ্যা'  রীতির  গোল  ও  সরু  স্তম্ভগুচ্ছের  সমষ্টি।  এখানে  সামান্য  পঙ্খের  কাজ  আছে।  অলিন্দে  আছে  দুটি  পিতলের  ঘন্টা।  ১৩০৭  বঙ্গাব্দের  ( ১৯০০ খ্রীষ্টাব্দ )  ২৮  শে  আষাঢ়  মন্দিরটি  প্রতিষ্ঠা  করেন  কংস  বণিক  সমাজের  স্বর্গীয়  মধুসূদন  কুণ্ডুর  স্ত্রী  শ্রীমতী  বামা  সুন্দরী  দাসী।  মন্দিরে  একটি  প্রতিষ্ঠাফলক  আছে।  গর্ভগৃহে  বালক  নাথ  ও  সীতানাথ  নামে  দুটি  ছোট  ছোট  শিবলিঙ্গ  নিত্য  পূজিত।  কংস  বণিক  সম্প্রদায়  মন্দিরটি   দেখাশোনা  করেন।

            মন্দিরটি  পরিদর্শনের  তারিখ : ১৬.১১.২০২১      

বালক নাথ ও সীতানাথ শিব মন্দিরের শিখর 
 
বালক নাথ ও সীতানাথ শিব মন্দির

গর্ভগৃহের সামনের বিন্যাস 

দরজার খিলানের উপরের কাজ 

প্রতিষ্ঠাফলক 

আর একটি ফলক 

গর্ভগৃহে বালক নাথ ও সীতানাথ শিবলিঙ্গ 

              কলকাতার অন্যান্য মন্দির সম্বন্ধে জানতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন / লিংকের উপর আঙুল দিয়ে টোকা দিন : 

                        কলকাতার  মন্দির

          -------------------------------------------

রামায়ণের ৭টি খণ্ডের ৬৪ টি উপাখ্যান ও ১৮৫ টি টেরাকোটা ফলকের আলোকচিত্র সংবলিত আমার লেখা এবং 'রা প্রকাশন' কর্তৃক প্রকাশিত বই 'বাংলার টেরাকোটা মন্দিরে রামায়ণ' প্রকাশিত হয়েছে। বইটির মুদ্রিত মূল্য - ৫৯৯ টাকা।


 বইটি ডাক যোগে সংগ্রহ করতে হলে যোগাযোগ করুন :  9038130757 এই নম্বরে। 

কলকাতার কলেজস্ট্রিটের মোড়ে দুই মোহিনীমোহন কাঞ্জিলালের কাপড়ের দোকানের মাঝের রাস্তা ১৫, শ্যামাচরণ দে স্ট্রিটের উপর অবস্থিত বিদ্যাসাগর টাওয়ারের দু'তলায় 'রা প্রকাশনে'র দোকান। ওখান থেকে বইটি সংগ্রহ করতে পারেন। কোনও অসুবিধা হলে উপরোক্ত নম্বরে ফোন করতে পারেন।

       প্রকাশনীতে বইটা বেস্টসেলার হয়েছে।