বৃহস্পতিবার, ৫ নভেম্বর, ২০২০

Nalateshwari Temple, Nalhati, Birbhum

 

নলাটেশ্বরী  মন্দির,  নলহাটি,  বীরভূম

                    শ্যামল  কুমার  ঘোষ 

            বীরভূম  জেলার  রামপুরহাট  মহকুমার  অন্তর্গত  নলহাটি  একটি  পৌর  শহর।  সম্ভবত  নল  রাজার  নাম  থেকে  নলহাটি  নামের  উৎপত্তি।  কারণ  দেবীর  নামানুসারে  নলহাটি  নামের  উৎপত্তি  হলে  পীঠমালা  মহাতন্ত্রে  "নলাহট্টাং  নলাপাতো  ..  "  লেখা  থাকতো  না।  সাহেবগঞ্জ  লুপ  লাইনে  অবস্থিত  নলহাটি  জংশন স্টেশন  পূর্ব  রেলের  অন্যতম  প্রধান  রেল  স্টেশন।  এখান  থেকে  একটি  শাখা  মুর্শিদাবাদ  জেলার  আজিমগঞ্জ  পর্যন্ত  গিয়েছে।  কলকাতা  থেকে  নলহাটির  দূরত্ব  ২৪২  কিমি।  কলকাতা / হাওড়া  থেকে  সোজা  এখানে  আসতে  হলে  হাওড়া  স্টেশন  থেকে  সকল  ৬  টা  ৫  মিনিটে  গণদেবতা  এক্সপ্রেসে  উঠুন।  নলহাটি  স্টেশনে  ১০  টা  ৩১  মিনিটে  এই  ট্রেন  পৌঁছে  যায়।  অন্য  ট্রেনে  রামপুরহাট  এসে  সেখান  থেকে  ট্রেনে  বা  গাড়িতেও  এখানে  আসা  যায়।  স্টেশনের  পশ্চিম  দিকে  ১.৬  কিমি  দূরে  একটি  ছোট  পাহাড়ের  অগ্নিকোণে  দেবী  'নলাটেশ্বরী'র  মন্দির।  স্টেশন  থেকে  অটোতে  সহজেই  মন্দিরে  পৌঁছানো  যায়।  থাকতে  হলে  আপনি  মন্দিরের  অতিথিনিবাসে  থাকতে  পারেন  আর  হোটেলে থাকতে  হলে  আপনাকে  রামপুরহাটে  থাকতে  হবে। 

            ৫১  সতীপীঠের  অন্যতম  ( ১৮  নম্বর )  শক্তিপীঠ  'নলাটেশ্বরী'।  এখানে  উল্লেখ্য,  বীরভূমে  পাঁচটি  সতীপীঠ  বর্তমান।  পীঠনির্ণয়  তন্ত্রে  উল্লেখ  আছে,  বিষ্ণুচক্রে  কর্তিত  সতীর  দেহাংশের  'নলা'  বা  কণ্ঠনালী  পতিত  হওয়ায়  নলহাটিতে  দেবী  কালিকা  এবং  ভৈরব  যোগেশ  বিরাজ  করছেন।  কেউ  কেউ  দেবীর  নাম  বলেন  'ললাটেশ্বরী'।  তাঁদের  মতে,  এখানে  দেবীর  ললাট  পড়েছিল  তাই  দেবীর  নাম  'ললাটেশ্বরী'।  তা  কিন্তু  সঠিক  নয়।  সম্ভবত  'নলহাট্টেশ্বরী'  থেকে  অপভ্ৰংশে  'ললাটেশ্বরী'  হয়েছে।  কারণ  তন্ত্রে  নলাপাতের  কথাই  বলা  হয়েছে।  পাহাড়ে  অধিষ্ঠিতা  বলে  তিনি  পার্বতী  নামেও  পরিচিতা  হয়েছেন।  আবার  মাকে  'শেফালিকা'  নামেও  ডাকা  হয়। 

            চারচালা  মন্দিরের  সামনে  প্রাচীন  স্থাপত্যের  কিছু  কিছু  নিদর্শন  এখনও  রয়েছে।  মন্দিরের  গর্ভগৃহে  সিঁদুরচর্চিত  মা  নলাটেশ্বরী  বিরাজমান।  পাথরের  উপর  বসানো  ত্রিনয়নী  মায়ের  মুখ।  দু  দিকের  দাঁতের  মধ্যে  রয়েছে  সোনার  তৈরি  জিব।  উপরে  রয়েছে  রুপোর  ছাতা।  সিঁদুরচর্চিত  এই  মুখমণ্ডলের  নিচে  রয়েছে  মায়ের  কন্ঠনালী।  ভোরবেলায়  মায়ের  স্নান  ও  শৃঙ্গারের  সময়ে  এই  কণ্ঠনালীর  দর্শন  পান  দর্শনার্থীরা।  এখন  যেমন  মায়ের  মুখমণ্ডল  দেখা  যায়  প্রথমে  তা  ছিল  না।  কৃষ্ণ  বসাক  নামে  এক  স্বর্ণকার  মায়ের  এই  রূপ  দিয়েছিলেন।  গর্ভগৃহে  ঢোকার  মুখে,  উপরে  রয়েছে  গণেশ  মূর্তি,  তাকে  ঘিরে  রয়েছে  আটটি  সাপ।  মন্দিরের  উত্তর  দিকে  অবস্থিত  পঞ্চমুন্ডির  আসন।  অনেক  সাধক   এই  পঞ্চমুন্ডির  আসনে  সিদ্ধি  লাভ  করেছেন।            

            সারা  বছর  কালী  রূপে  পূজিত  হলেও  দুর্গাপূজার  চারদিন  মাকে  দুর্গা  রূপে  পূজা  করা  হয়।  এই  মন্দিরে  এখনও  বলি  প্রথা  চালু  আছে।  দুর্গাপূজার  নবমী  ও  কালীপূজার  দিন  অবশ্যই  মন্দিরে   বলি  হয়।  মা  নলাটেশ্বরীর  নিত্য  অন্যসেবা  হয়।  ভক্তরা  চাইলে  মন্দির  কর্তৃপক্ষের  সঙ্গে  কথা  বলে  অন্নপ্রসাদ  পেতে  পারেন। 

নলাটেশ্বরী মন্দির 
মন্দিরের সামনের কাজ 
গর্ভগৃহে মা নলাটেশ্বরী
গর্ভগৃহের সামনের গণেশ মূর্তি ও আটটি  সাপ। 
মা নলাটেশ্বরী- ১
মা নলাটেশ্বরী - ২
পাশের মন্দিরের গনেশ মূর্তি 
পাশের মন্দিরের সামনের কাজ - ১
পাশের মন্দিরের সামনের কাজ - ২
পাশের মন্দিরের সামনের কাজ - ৩
পাশের মন্দিরের সামনের কাজ - ৪
পাশের মন্দিরের সামনের কাজ - ৫
পাশের মন্দিরের সামনের কাজ - ৬

সহায়ক  গ্রন্থাবলি :
                  ১)  বীরভূম  বিবরণ ( ২য়  খণ্ড ) :  মহিমানিরঞ্জন চক্রবর্তী  তত্ত্বভূষণ 
                  ২)  বীরভূম  জেলার  পুরাকীর্তি :  দেবকুমার  চক্রবর্তী           

                    ---------------------------

            আমার  ইমেল :  shyamalfpb@gmail.com   প্রয়োজনে  যোগাযোগ  করতে  পারেন।