সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১৯

Raghunath ( Now Shib ) Temple, Ghurisa, Illambazar, Birbhum


রঘুনাথ  ( এখন,  শিব  )  মন্দির,  ঘুড়িষা, ইলামবাজার,  বীরভূম 
                    শ্যামল  কুমার  ঘোষ 

            বীরভূম  জেলার  ইলামবাজার  ব্লক  ও  থানার  অন্তর্গত  ঘুড়িষা  একটি  গ্রাম।  এখানে  যেতে  হলে  বোলপুরের  জামবুনি  বাসস্ট্যান্ড  থেকে  বাসে  উঠে  ঘুড়িষা  আমবাগান  স্টপেজে  নামুন।  সেখান  থেকে  টোটোতে  বা  হেঁটে  ঘুড়িষা।  আগে  এখানে  অনেক  সংস্কৃতজ্ঞ  পণ্ডিতগণের  বাস  ও  চতুষ্পাঠী  ছিল।  এখানে  ভট্টাচার্য  পাড়ায়  রঘুনাথজির  উদ্দেশ্যে  নির্মিত  মন্দিরটি  এখানকার  অন্যতম  দ্রষ্টব্য।  কথিত  আছে  যে  বর্গীর  হাঙ্গামাকালে  ( ১৭৪২- ১৭৫২ খ্রীষ্টাব্দ )  মন্দিরের  সোনার  তৈরি   রামের  মূর্তি  অপহৃত  হয়।  তারপর  বহুদিন  মন্দির  বিগ্রহহীন  হয়ে  পড়েছিল।  পরে  মন্দিরে  শিবলিঙ্গ  প্রতিষ্ঠিত  হয়। 

            উঁচু  ভিত্তিবেদির  উপর  স্থাপিত,  ইঁটের  তৈরি,  পূর্বমুখী  মন্দিরটি  চারচালা  শৈলীর।  গর্ভগৃহে  ঢোকার  দুটি  দরজা,  একটি  সামনে  অর্থাৎ  পূর্ব  দিকে  এবং  অপরটি  উত্তরদিকে।  মন্দিরের  পূর্ব  ও  উত্তর  দিকের  দেওয়াল  টেরাকোটা  অলংকারে  অলংকৃত।  পূর্বদিকের  খিলানের  উপর  বৃষারূঢ়  শিব,  কালী,  ছিন্নমস্তা  প্রভৃতি  দেবদেবীর  আবির্ভাব।  লক্ষনীয়,  এখানে  একটি  মিথুন  মূর্তির  উপস্থিতি।  উত্তরদিকের  প্রবেশপথের  খিলানের  উপর  রামরাবণের  যুদ্ধের  দৃশ্যাবলী  দর্শনীয়।  পূর্বদিকে  রাবণ,  রাম,  কালী,  সরস্বতী,  লক্ষ্মী,  কূর্মাবতার,  বরাহ  অবতার,  নৃসিংহ,  ত্রিবিক্রম,  বলরাম,  মনসা,  বৃষপরি  শিব-পার্বতী,  মহালক্ষ্মী,  দুর্গা  এবং  উত্তরে,  বস্ত্রহরণ,  নবনারীকুঞ্জর,  রাসমণ্ডল,  গজেন্দ্রমোক্ষ, দুর্গা,  অনন্তশায়ীবিষ্ণু,  কালীয়দমনরত  কৃষ্ণ  ও  গোচারণে  কৃষ্ণ  প্রভৃতির  প্রতিকৃতি  উৎকীর্ণ  আছে।  মন্দিরটি  ১৫৫৫  শকাব্দে  ( ১৬৩৩  খ্রীষ্টাব্দে )  প্রতিষ্ঠিত  হয়।   প্রতিষ্ঠাতা  রঘুনাথ  ভট্টাচার্য।  মন্দিরের  পিছনে  অবস্থিত  একটি  প্রতিষ্ঠাফলকের  পাঠ  নিম্নরূপ : 
                                  " রঘুত্তমাচার্য  বিচিত্র  মন্দিরম্, 
                                    রঘুত্তম  প্রীতি  সমৃদ্ধি  বর্দ্ধনম্।
                                    হরাস্য  কামাস্ত্র  তিথি  প্রবর্ত্তিতে, 
                                    শাকে  বিনির্মিতং  ননাম  শিল্পীনা। " 

মন্দিরের  পিছনে  একটি  শ্বেতপাথরের  প্রতিষ্ঠাফলকও  আছে।  এটি  সম্ভবত  মন্দিরে  শিবলিঙ্গ  প্রতিষ্ঠার  সময়  বা  পরবর্তীতে  লাগানো  হয়।  মন্দিরে  শিবলিঙ্গ  নিত্য  পূজিত। 
  
    
রঘুনাথ ( এখন, শিব  ) মন্দির, ঘুড়িষা

মন্দিরের সামনের বিন্যাস 

পূর্ব দিকের খিলানের উপরের কাজ 

কোকমুখ কালী  

ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর-ইন্দ্র 

 ছিন্নমস্তা 

কৌণিক ভাস্কর্য - ১

কৌণিক ভাস্কর্য - ২

কূর্মাবতার

নৃসিংহ, ত্রিবিক্রম ও অন্য চিত্র 

নৃসিংহ

রাম 

বলরাম ও কল্কি অবতার  

বলরাম

কল্কি অবতার

লক্ষ্মী

সরস্বতী

তারা 

মনসা  

শিব-পার্বতী

 মহালক্ষ্মী

যুদ্ধের দৃশ্য 

কৃষ্ণ ও রাধিকা 

কৃষ্ণলীলা 

উত্তর দিকের খিলানের উপরের কাজ 

টেরাকোটা চিত্র - ১

টেরাকোটা চিত্র - ২

টেরাকোটা চিত্র - ৩

টেরাকোটা চিত্র - ৪

টেরাকোটা চিত্র - ৫

বস্ত্রহরণ

নবনারীকুঞ্জর

রাসমণ্ডল

গজেন্দ্রমোক্ষ

অনন্তশায়ীবিষ্ণু

কালীয়দমনরত  কৃষ্ণ

কালী 

বাঁ দিকে, গজ-বৃষ
ডান দিকে, ইন্দ্র 
দুর্গা 

হাতিতে চড়ে বাঘ শিকার 

রাধাকৃষ্ণের বিভিন্ন মূর্তি 

নৃত্যের তালে তালে  

বাতিদান - ১ 

বাতিদান - ২ 

মন্দিরের  প্রতিষ্ঠাফলক

শিবলিঙ্গের প্রতিষ্ঠফলক 


  মন্দিরটি  পরিদর্শনের  তারিখ :  ০.১১.২০১৯


       সহায়ক  গ্রন্থ :           
                    ৩)  বীরভূম  জেলার  পুরাকীর্তি : দেবকুমার  চক্রবর্তী                                                                                                    

  --------------------------------

            আমার  ইমেল :  shyamalfpb@gmail.com   প্রয়োজনে  যোগাযোগ  করতে  পারেন।                               

বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৯

Twin Shib Temple, Supur, Bolpur, Birbhum


জোড়া  শিব  মন্দির,  সুপুর,  বোলপুর,  বীরভূম 

                    শ্যামল  কুমার  ঘোষ 

            বীরভূম  জেলার  বোলপুর  ( শান্তিনিকেতন ) থেকে  ৭  কিমি  দূরের  একটি  গ্রাম  সুপুর।  বোলপুর  থেকে  টোটোতে  বা  বোলপুরের  জামবুনি  বাসস্ট্যান্ড  থেকে  ইলামবাজারের  বাসে  সুপুর  মোড়ে  নেমে  সেখান  থেকে  টোটোতে  এই  গ্রামে  যাওয়া  যায়।  তবে  টোটোতে  সরাসরি  যাওয়াই  ভাল। 

            সুপুরের  লালবাজার  পল্লীতে  অল্প  উঁচু  ভিত্তিবেদির  উপর  স্থাপিত,  দক্ষিণমুখী  দুটি  মন্দির  পাশাপাশি  অবস্থিত।  পূর্ব  দিকের  মন্দিরটি  আটকোনা  দেউল  ও  অপরটি  সাধারণ  চারকোনা  দেউল।  আটকোনা  দেউলটিতে  আটদিকেই  'টেরাকোটা'র  অলংকরণ  আছে।  টেরাকোটার  বিষয় :  সপরিবারে  দুর্গা,  রাজদরবারে  সিংহাসনে  উপবিষ্ট  রামসীতা,  কৃষ্ণ  কোলে  যশদাকূর্মাবতার,  বামন  অবতার,  গণেশজননী,  গোপীদের  বস্ত্রহরণ,  শিশু  কৃষ্ণকে  যমুনার  জলপূর্ণ  ঘটের  দ্বারা  স্নান  করানো,  নকশা  ইত্যাদি।  এখানে  উল্লেখ্য,  খিলানের  উপরের  কাজের  সবগুলোতেই  মাঝের  ও  নিচের  সারির  বিষয়  গুলির  পুনরাবৃত্তি  করা  হয়েছে।  মন্দিরে  শিবলিঙ্গ  নিত্য  পূজিত। 


জোড়া শিব মন্দির, সুপুর 

আটকোনা মন্দিরের সামনের বিন্যাস 

খিলানের উপরের কাজ - ১

খিলানের উপরের কাজ - ২

খিলানের উপরের কাজ - ৩

খিলানের উপরের কাজ - ৪

খিলানের উপরের কাজ - ৫

খিলানের উপরের কাজ - ৬

খিলানের উপরের কাজ - ৭

সিংহাসনে উপবিষ্ট রামসীতা ও অন্য দুটি চিত্র 

কৃষ্ণ কোলে যশোদা ও অন্যান্য চিত্র

কৃষ্ণ কোলে যশোদা ও অন্য দুটি চিত্র 
বামন অবতার ও অন্যান্য চিত্র

টেরাকোটা চিত্র - ১

টেরাকোটা চিত্র - ২

টেরাকোটা চিত্র - ৩

কূর্মাবতার 

বামন অবতার - ১

বামন অবতার - ২

গণেশজননী 

শ্রীকৃষ্ণের  বস্ত্রহরণ 

আর একটি 'টেরাকোটা' চিত্র 

শিশু কৃষ্ণকে যমুনার জলপূর্ণ ঘটের দ্বারা স্নান করানো 

তিন বাদিকা 

'টেরাকোটা'র নকশা

             পশ্চিম  দিকের  মন্দিরটি  সাধারণ  চারকোনা  দেউল।  দেউলটির  সামনের  দেওয়াল  'টেরাকোটা'  দ্বারা  সজ্জিত।  তবে  পশ্চিম  দিকে  একটি  ফলক  আছে।  টেরাকোটার  বিষয় :    সিংহাসনে  উপবিষ্ট  রামসীতা,  রাধাকৃষ্ণ,  কৃষ্ণ  কর্তৃক  রাধার  মানভঞ্জন,  কালী,  বাদ্যযন্ত্র  বাদক,  যশোদার  দধি  মন্থন  কালে  শিশু  কৃষ্ণের  দধিভান্ডে  হস্ত  প্রবেশ  ইত্যাদি।  এ  মন্দিরেও  শিবলিঙ্গ  নিত্য  পূজিত। 

পশ্চিম দিকের দেউল 

সিংহাসনে  উপবিষ্ট  রামসীতা

গোপীদের মাঝে কৃষ্ণ 

রাধাকৃষ্ণ

কৃষ্ণ  কর্তৃক  রাধার  মানভঞ্জন

যশোদা শিশু কৃষ্ণকে কিছু খাওয়াচ্ছেন 

কালী

একটি চিত্র 

বাদ্যযন্ত্র  বাদক

যশোদার  দধি  মন্থন  কালে  শিশু  কৃষ্ণের  দধিভান্ডে  হস্ত  প্রবেশ
             
            মন্দিরটি  পরিদর্শনের  তারিখ : ০১.১১.১৯

সহায়ক  গ্রন্থ : 
                 ১)  বীরভূম  জেলার  পুরাকীর্তি : দেবকুমার  চক্রবর্তী  

                    ---------------------------

            আমার  ইমেল :  shyamalfpb@gmail.com   প্রয়োজনে  যোগাযোগ  করতে  পারেন।