ইলছোবার মন্দির 
শ্যামল কুমার ঘোষ 
            ইলছোবার দূরত্ব হাওড়া-বর্ধমান মেন্ লাইনের খন্যান স্টেশন থেকে সাড়ে তিন কিমি। খন্যান হাওড়া-বর্ধমান মেন্ লাইনের হাওড়া থেকে ২১ তম রেলস্টেশন। হাওড়া থেকে রেলপথে দূরত্ব ৫৫.৩ কিমি। ইলছোবা বিখ্যাত পণ্ডিত রামগতি ন্যায়রত্নের জন্মস্থান। তিনি ইলছোবা নামে একটি পুস্তিকা লিখেছিলেন। 
            গ্রামের মধ্যপাড়ায় দাস বংশ প্রতিষ্ঠিত তিনটি মন্দির বর্তমান। তিনটি মন্দিরের মধ্যে দুটি পঞ্চরত্ন ও একটি আটচালা। পঞ্চরত্নের শিখরগুলি রেখধরণের খাঁজকাটা। উত্তরমুখী, অলিন্দবিহীন,পঞ্চরত্ন মন্দির দুটি একই উঁচু ভিত্তিবেদির উপর স্থাপিত এবং সামনে একটি রোয়াক দ্বারা সংযুক্ত। বাঁ দিকের মন্দিরটির একটি প্রবেশদ্বার। প্রবেশদ্বারের উপর পত্রাকৃতি খিলান, অর্থাৎ খিলানের নিচের প্রান্ত বরাবর ছোটো ছোটো অর্ধবৃত্তাকারে ঢেউ খেলানো। খিলানের উপরের প্রান্ত বরাবর বারোটি প্রতীক শিবমন্দির এবং তার মধ্যে শিবলিঙ্গ। এরই উপরে আছে টেরাকোটার দুটি বড়ো বড়ো ফুল। এছাড়াও মন্দিরে সামান্য টেরাকোটা-নকশা আছে। মন্দিরটি বিষ্ণু মন্দির। গর্ভগৃহে একটি নারায়ণ শিলা ও একটি কষ্টিপাথরের বিষ্ণুমূর্তি নিত্য পূজিত। 
            ডান দিকের মন্দিরটি শিব মন্দির। মন্দিরটির তিনটি খিলান,মাঝের খিলানটির নিচে আছে একটি গর্ভগৃহে প্রবেশের দরজা। পাশের খিলানদুটির নীচে আছে টেরাকোটা-   অলংকরণ সমন্বিত দুটি ভরাট করা দরজা। তিনটি খিলানের নীচের প্রান্ত বরাবর ছোটো   ছোটো অর্ধবৃত্তাকারে ঢেউ খেলানো। মাঝের খিলানের উপরের প্রান্ত বরাবর দশটি প্রতীক  শিবমন্দির এবং তার মধ্যে শিবলিঙ্গ এবং পাশের উভয় খিলানের উপরের প্রান্ত বরাবর ছ'টি করে প্রতীক শিবমন্দির এবং তার মধ্যে শিবলিঙ্গ আছে। মন্দিরের সামনের দেওয়াল  টেরাকোটা-অলংকারে অলংকৃত। তবে এই টেরাকোটা ফলকের বেশির ভাগ হয় ভেঙে গেছে নতুবা সিমেন্ট-বালির ছিটে পড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। মাঝের খিলানের উপরে আছে দুটি রাসমণ্ডল এবং পাশের খিলান দুটিতে আছে দুটি করে টেরাকোটা-ফুল। ভিত্তিবেদি সংলগ্ন টেরাকোটা ফলকগুলির মধ্যে কৃষ্ণলীলার দৃশ্য দেখা যায়। এদের মধ্যে কৃষ্ণের জন্ম, বসুদেব-দেবকী কর্তৃক চতুর্ভূজ কৃষ্ণ ( বিষ্ণু ) বন্দনা, কৃষ্ণকে কোলে নিয়ে বসুদেবের যমুনা   অতিক্রমের দৃশ্য, শিশু কৃষ্ণকে যমুনার জলপূর্ণ ঘটের দ্বারা স্নান করানো, পুতনা বধ, শকট
 ভঞ্জন,  তৃণাবর্তাসুর বধ, শ্রীকৃষ্ণের মথুরা গমন দৃশ্য, গোপীদের বস্ত্রহরণ, বকাসুর    বধ, কুবলয়পীর বধ, চানুর ও মুষ্টিক বধ এবং কংস বধ উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও জমিদারের শিবিকায় গমন,                                                                                                              বাঁশবাজি, মহিষমর্দিনী দুর্গা, বন্দুক হাতে সাহেব, রণতরি উল্লেখযোগ্য। সামনের দেওয়ালের দুপাশের উলম্ব ও  খিলানের উপরের অনুভূমিক কুলুঙ্গিতে বিভিন্ন মূর্তি আছে। এছাড়াও সামনের দেওয়ালের ডানদিকে আছে ভগ্ন কল্পলতা বা মৃত্যুলতা।                                                   
এই দুটি পঞ্চরত্ন মন্দিরের ডান দিকে একটি আটচালা শিবমন্দির আছে। পূর্বমুখী ও অলিন্দবিহীন এই মন্দিরটি উঁচু ভিত্তিবেদির উপর স্থাপিত। মন্দিরের সামনের দেওয়ালে   টেরাকোটার কয়েকটি ছোটো ফুল ও একটি ধাবমান ষাঁড় ছাড়া আর কোনো ফলক নেই। গর্ভগৃহে ঢোকার একটিই দরজা, সামনে। গর্ভগৃহে কালো পাথরের শিবলিঙ্গ নিত্য পূজিত।
                প্রথম মন্দির দুটি প্রতিষ্ঠা করেন রাজা-জমিদার রামলোচন দাস। তিনি পশ্চিমের কোনো দেশ থেকে এসেছিলেন। তিনি বাংলার নবাবের উচ্চ পদের কর্মচারী ছিলেন। পাশের মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন রামলোচন দাসের এক জ্ঞাতি শ্রীনাথ দাস। পরবর্তী কালে তিনি এখান থেকে চলে যান। নিত্য পূজা ছাড়াও মন্দিরগুলিতে বিভিন্ন উৎসব পালন করা হয়। মন্দিরগুলিতে কোনো প্রতিষ্ঠাফলক নেই। 
 
           উপরোক্ত মন্দির তিনটি ছাড়াও ইলছোবাতে বন্দোপাধ্যায়দের প্রতিষ্ঠিত কয়েকটি আটচালা শিবমন্দির ও একটি বারোচালা শিবমন্দির আছে। বারোচালা মন্দিরটির চালাগুলি কাছাকাছি অবস্থিত। মন্দিরগুলি সবই সংস্কার করা হয়েছে। এগুলিতে এখন আর কোনো 'টেরাকোটা' নেই। মন্দিরগুলিতে কোনো প্রতিষ্ঠাফলক নেই। হুগলি জেলায় আর একটি বারোচালা মন্দির আছে সেনহাটে। 
  | 
| বাঁ দিকের মন্দিরের কুলুঙ্গির কাজ - ১  | 
  | 
| বাঁ দিকের মন্দিরের কুলুঙ্গির কাজ - ২ | 
  | 
| ডান দিকের পঞ্চরত্নমন্দির | 
  | 
| ডান দিকের পঞ্চরত্নমন্দিরের সামনের বিন্যাস | 
  | 
| ডান দিকের পঞ্চরত্নমন্দিরের তিনটি খিলান | 
  | 
ডান দিকের মন্দিরের বাঁ দিকের খিলানের কাজ
 
  | 
  | 
| ডান দিকের মন্দিরের মাঝের খিলানের কাজ | 
  | 
| মাঝের খিলানের উপরে আছে দুটি রাসমণ্ডল  | 
  | 
| বাঁ দিকের রাসমণ্ডল | 
  | 
| ডান দিকের রাসমণ্ডল | 
  | 
| ডান দিকের খিলানের কাজ | 
  | 
| ডান দিকের মন্দিরের খিলানের নীচে ভরাট করা দরজা | 
  | 
| ডান দিকেরপঞ্চরত্ন পঞ্চরত্ন মন্দিরের ভিত্তিবেদি সংলগ্ন কাজ - ১  | 
  | 
| ডান দিকেরপঞ্চরত্ন পঞ্চরত্ন মন্দিরের ভিত্তিবেদি সংলগ্ন কাজ - ২  | 
  | 
| ডান দিকেরপঞ্চরত্ন মন্দিরের ভিত্তিবেদি সংলগ্ন কাজ - ১ | 
  | 
| কুলুঙ্গির কাজ - ১  | 
  | 
| কুলুঙ্গির কাজ - ২  | 
  | 
| কুলুঙ্গির কাজ - ৩ | 
  | 
| কুলুঙ্গির কাজ - ৩ | 
  | 
| কুলুঙ্গির কাজ - ৪ | 
  | 
| কুলুঙ্গির কাজ - ৫ | 
  | 
| কুলুঙ্গির কাজ - ৬ | 
  | 
| ডান দিকের মন্দিরের কল্পলতা বা মৃত্যুলতা | 
  | 
| বিষ্ণু মন্দিরের নারায়ণ শিলা | 
  | 
| বিষ্ণু মন্দিরের বিষ্ণু বিগ্রহ | 
  | 
| ভগ্ন আটচালা মন্দির | 
  | 
| আটচালা মন্দিরের সামনের বিন্যাস | 
  | 
| আটচালা শিবমন্দিরের একটি ধাবমান ষাঁড় | 
  | 
| বারোচালা শিবমন্দির  | 
  | 
| বারোচালা শিবমন্দিরে ধাবমান ষাঁড় | 
 
            কীভাবে যাবেন ?
            হাওড়া থেকে হাওড়া-বর্ধমান মেন লাইনের ট্রেনে উঠে খন্যান স্টেশনে নামুন। খন্যান স্টেশনের রেলগেটের কাছ থেকে ইলছোবার অটোয় উঠে মন্দিরে পৌঁছে যান। ইলছোবার   পরের স্টেশন পান্ডুয়াতে নেমেও ইলছোবা যেতে পারেন।
                                                     ***********
রামায়ণের ৭টি খণ্ডের ৬৪ টি উপাখ্যান ও ১৮৫ টি টেরাকোটা ফলকের আলোকচিত্র সংবলিত আমার লেখা এবং 'রা প্রকাশন' কর্তৃক প্রকাশিত বই 'বাংলার টেরাকোটা মন্দিরে রামায়ণ' প্রকাশিত হয়েছে।
 বইটি ডাক যোগে সংগ্রহ করতে হলে যোগাযোগ করুন :  9038130757 এই নম্বরে। 
কলকাতার কলেজস্ট্রিটের মোড়ে দুই মোহিনীমোহন কাঞ্জিলালের কাপড়ের দোকানের মাঝের রাস্তা ১৫, শ্যামাচরণ দে স্ট্রিটের উপর অবস্থিত বিদ্যাসাগর টাওয়ারের দু'তলায় 'রা প্রকাশনে'র দোকান। ওখান থেকে বইটি সংগ্রহ করতে পারেন। কোনও অসুবিধা হলে উপরোক্ত নম্বরে ফোন করতে পারেন।
            প্রকাশনীতে বইটি সেরা বইয়ের সম্মান স্বর্ণকলম ২০২৫ পেয়েছে ।
 
 
আজ ঘুরে এলাম, মন্দিরের সঠিক সংস্কার প্রয়োজন। তিনটি মন্দিরের একটি প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত
উত্তরমুছুনধন্যবাদ
মুছুন