মঙ্গলবার, ২৪ মে, ২০২২

Octogonal Atchala Shib Temple, Takipur, Purba Bardhaman

 

আটকোনা  শিব  মন্দির, তকিপুর, পূর্ব  বর্ধমান

                              শ্যামল  কুমার  ঘোষ

            পূর্ব  বর্ধমান  জেলার  আউশগ্রাম  থানার  অন্তর্গত  তকিপুর  গ্রামটি  বেশ  প্রাচীন।  বর্ধমান-রামপুরহাট  রেলপথে  বনপাস  রেলস্টেশন  থেকে  টোটোতে  সহজেই  এই  গ্রামে  যাওয়া  যায়।

            গ্রামস্থ  ভট্টাচার্য  পরিবারের  মন্দির  চত্বরে  অনেকগুলি  মন্দির  আছে।  তারমধ্যে  আটকোনা  শিবের  মন্দিরটি  উল্লেখযোগ্য।  অল্প  উঁচু  ভিত্তিবেদির  উপর  স্থাপিত,  ইঁটের  তৈরি  মন্দিরটি  পশ্চিমমুখী।  মন্দিরটি  টেরাকোটা  অলংকারযুক্ত।  মন্দিরের  অনেক  টেরাকোটা  ফলক  নষ্ট  হয়ে  গেলেও  যা  অবশিষ্ট  আছে  তা  খুবই  সুন্দর।  মন্দিরের  দরজার  খিলানের  উপর  সপরিবারে  দুর্গার  ফলকটি  অনবদ্য।  পাশের  দুটি  খিলানের  উপর  টেরাকোটা  ফলক  নষ্ট  হয়ে  গেলেও  যেটুকু  অবশিষ্ট  আছে  তাতে  পাখির  ভাস্কর্য  গুলি  সুন্দর।  কুলুঙ্গির  মধ্যে  টেরাকোটার  বিষয় :  দশাবতার,  বেণু  কৃষ্ণ, কার্তিক,  শিশু  কৃষ্ণের  দধিমন্থনপাত্রে  হস্তপ্রবেশ  দৃশ্য,  ভক্ত  হনুমান  ইত্যাদি।  মন্দিরে  একটি  প্রতিষ্ঠাফলক  আছে।  কিন্তু  তা  পাঠ  যোগ্য  নয়। 

             কী  ভাবে  যাবেন ?

            বর্ধমান-রামপুরহাট  রেলপথে  বনপাশ  স্টেশন  থেকে  টোটোতে  সহজেই  এই  গ্রামে  যাওয়া  যায়।  বর্ধমানের  নবাবহাটের  উত্তরা  বাসস্ট্যান্ড  থেকে  গুসকরার  বাসে  ( সব  বাস  যায়  না )  সিউড়ি  রোডের  উপর  অবস্থিত  বড়  চৌরাস্তায়  নেমে  টোটোতে  এই  গ্রামে  যাওয়া  যায়।  বর্ধমানের  নবাবহাটের  উত্তরা  বাসস্ট্যান্ড  থেকে  ভোতা  গামী  বাসে  সরাসরি  এই  গ্রামে  যাওয়া  যায়।

সপরিবারে দুর্গা 

আটকোনা মন্দির, তকিপুর, পূর্ব বর্ধমান 

মন্দিরের সামনের বিন্যাস 

মাঝের খিলানের উপরের কাজ 

সপরিবারে দুর্গা

বাঁ দিকের খিলানের উপরের কাজ

ডান দিকের খিলানের উপরের কাজ

কুলুঙ্গির কাজ - ১
( বামন অবতার ও বলরাম )

কুলুঙ্গির কাজ - ২
( কৃষ্ণ ও অন্য চিত্র )

কুলুঙ্গির কাজ - ৩
( শিশু কৃষ্ণের দধিমন্থনপাত্রে হস্তপ্রবেশ ও অন্য চিত্র )

কুলুঙ্গির কাজ - ৪

কুলুঙ্গির কাজ - ৫
( বরাহ ও মৎস্য অবতার )

কুলুঙ্গির কাজ - ৬
( কার্তিক ও যোগাসনের ভঙ্গিমা ) 

কুলুঙ্গির কাজ - ৭
( যোগাসনের ভঙ্গিমা ও বেণু কৃষ্ণ )

কুলুঙ্গির কাজ - ১৮
( বীণা বাদক ও কল্কি অবতার )

কুলুঙ্গির কাজ - ৯
( রাধাকৃষ্ণ ও রাম ) 

কুলুঙ্গির কাজ - ১০
( ভক্ত হনুমান ও কূর্ম অবতার )

কুলুঙ্গির কাজ - ১১
( কূর্ম অবতার ও ছেলে কাঁকে মহিলা )

প্রতিষ্ঠাফলক 


                                                                      *******

সোমবার, ২৩ মে, ২০২২

Cluster of four Shib temples, Orgram, Purba Bardhaman

 

চারটি  শিব  মন্দিরের  গুচ্ছ,  ওড়গ্রাম,  পূর্ব  বর্ধমান

                       শ্যামল  কুমার  ঘোষ

            পূর্ব  বর্ধমান  জেলার  ভাতার  ব্লকের  অন্তর্গত  ওড়গ্রাম  একটি  গ্রাম।  গ্রামটি  বর্ধমান  শহর  থেকে  ২৯ কিমি  উত্তর-পশ্চিমে  অবস্থিত।  সাধক  কমলাকান্ত  ভট্টাচার্যের  পৈতৃক  বাসস্থান  ও  সাধনপীঠ  রূপে  ওড়গ্রামের  প্রসিদ্ধি।  কমলাকান্ত  তাঁর  মাতুলালয়  অম্বিকা  কালনায়  অষ্টাদশ  শতকের  দ্বিতীয়ার্ধে  জন্ম  গ্রহণ  করেন। 

            ওড়গ্রামে  অনেক  মন্দির  আছে।  তারমধ্যে  জেষ্ঠ্য  পাড়ায়  অবস্থিত  চারটি  শিব  মন্দিরের  গুচ্ছ  এখানের  আলোচ্য  বিষয়।  এই  মন্দির  গুচ্ছের  মধ্যে  আছে  এক  জোড়া  দেউল  ও  এক  জোড়া  আটচালা  শিব  মন্দির।  

            ইঁটের  তৈরী,  দক্ষিণমুখী  জোড়া  দেউল  অল্প  উঁচু  ভিত্তিবেদির  উপর  স্থাপিত।  উভয়  মন্দিরের  একটি  করে  প্রবেশদ্বার।  বাঁ  দিকের  মন্দিরের  সামনের  দরজার  খিলানের  উপর  ও  পিছনের  অর্থাৎ  উত্তর  দিকের  নকল দরজার  খিলানের  উপর  টেরাকোটার  অলঙ্করণ  আছে।  সামনের  দরজার  খিলানের  উপরের  টেরাকোটার  বিষয় :  কৃষ্ণলীলা।  পিছনের  অর্থাৎ  উত্তর  দিকের  নকল  দরজার  খিলানের  উপরে  নিচের  প্রান্ত  বরাবর  আছে  দশটি  প্রতীক  শিবমন্দির  এবং  তার  মধ্যে  শিবলিঙ্গ।  এ  ছাড়া  আছে  কিছু  পাখি।  ডান  দিকের  মন্দিরের  সামনে  দরজার  খিলানের  উপর,  পিছনের  অর্থাৎ  উত্তর  দিকের  নকল  দরজার   খিলানের  উপর  এবং  পূর্ব  দিকের  নকল দরজার  খিলানের  উপর  টেরাকোটার  অলঙ্করণ  আছে।  সামনের  দরজার  খিলানের  উপর  টেরাকোটার  বিষয় :  রামের  রাজসভা  দৃশ্য,  বৃষপৃষ্ঠে  হরগৌরী,  সিদ্ধিদাতা  গণেশ  মূর্তি,  শিশু  কৃষ্ণের  দধিমন্থন  পাত্রে  হস্ত  প্রবেশ,  ময়ূর  ও  অন্যান্য  পাখি  ইত্যাদি।  পিছনের  অর্থাৎ  উত্তর  দিকের  নকল  দরজার  খিলানের  উপর  নিচের  প্রান্ত  বরাবর  আছে  দশটি  প্রতীক  শিবমন্দির  এবং  তার  মধ্যে  শিবলিঙ্গ।  এ  ছাড়া  আছে  কিছু  পাখি।  পূর্ব  দিকের  নকল  দরজার  খিলানের  উপর  আছে  টেরাকোটার  বড়  বড়  ফুল  ও  নানারকম  পাখি।

            পাশাপাশি  অবস্থিত,  ইঁটের  তৈরি,  পশ্চিমমুখী  আটচালা  শিব  মন্দির  দুটি  অল্প  উঁচু  ভিত্তিবেদির  উপর  স্থাপিত।  উভয়  মন্দিরের  একটি  করে  প্রবেশদ্বার।  মন্দিরদুটির  সামনের  দরজার  খিলানের  উপর  টেরাকোটার  অলঙ্করণ  আছে। 

            মন্দির  চারটি  স্থানীয়  রায়,  ঘোষ  ও  কোঁয়ার ( Konar )  পরিবারের  মালিকানাধীন।  ডান  দিকের  দেউলটি  ঘোষ  ও  কোঁয়ার ( Konar )  পরিবারের  যৌথ  মালিকানাধীন।  বাঁ  দিকের  দেউলটি  রায়  ও  কোঁয়ার ( Konar )  পরিবারের  যৌথ  মালিকানাধীন।  আটচালা  মন্দিরদুটি  রায়  ও  কোঁয়ার ( Konar )  পরিবারের  যৌথ  মালিকানাধীন।  শেষোক্ত  কোঁয়ার ( Konar )  ও  পূর্বের  কোঁয়ার ( Konar )  একই  বংশ  নয়,  আলাদা।  যজ্ঞেশ্বর  চৌধুরীর  মতে  জোড়া  শিবের  দেউল  ঊনবিংশ  শতকের  প্রথম  পাদে  ও  জোড়া  আটচালা  শিব  মন্দির  ঊনবিংশ  শতকের  মধ্য  ভাগে  নির্মিত।  চারটি  মন্দিরের  গর্ভগৃহে  চারটি  শিবলিঙ্গ  নিত্য  পূজিত। 

            কী  ভাবে  যাবেন ?

            বর্ধমান-রামপুরহাট  রেলপথে  নোয়াদার  ঢাল  রেলস্টেশন  থেকে  টোটোতে  এই  গ্রামে  যাওয়া  যায়।  বর্ধমানের  নবাবহাটের  উত্তরা  বাসস্ট্যান্ড  থেকে  গুসকরার  বাসেও  ( সব  বাস  যায়  না )  এই  গ্রামে  যাওয়া  যায়।  ওড়গ্রাম  স্টপেজে নেমে  টোটোতে  মন্দির  যেতে  হবে।

চারটি মন্দিরের গুচ্ছ, ওড়গ্রাম, পূর্ব বর্ধমান

জোড়া দেউল, ওড়গ্রাম, পূর্ব বর্ধমান 

বাঁ দিকের দেউল 

বাঁ দিকের দেউলের সামনের খিলানের উপরের কাজ 

বাঁ দিকের দেউলের পিছনের খিলানের উপরের কাজ

ডান দিকের দেউল

ডান দিকের দেউলের সামনের খিলানের উপরের কাজ

ডান দিকের দেউলের পিছনের খিলানের উপরের কাজ

ডান দিকের দেউলের পূর্ব দিকের খিলানের উপরের কাজ

জোড়া আটচালা শিব মন্দির, ওড়গ্রাম, পূর্ব বর্ধমান 

বাঁ দিকের আটচালা মন্দিরের সামনের খিলানের উপরের কাজ

ডান দিকের আটচালা মন্দিরের সামনের খিলানের উপরের কাজ

সহায়ক  গ্রন্থ :

             ১)  বর্ধমান  জেলার  পুরাকীর্তি :  যজ্ঞেশ্বর  চৌধুরী  


Broken Pancharatna Shib temple, Bilwagram, Purba Bardhaman

 

ভগ্ন  পঞ্চরত্ন  শিব  মন্দির,  বিল্বগ্রাম,  পূর্ব  বর্ধমান

                        শ্যামল  কুমার  ঘোষ

             পূর্ব  বর্ধমান  জেলার  ( বর্ধমান-রামপুরহাট  রেলপথের )  বনপাস  রেল  স্টেশনের  কাছের  একটি  গ্রাম  বিল্বগ্রাম।  গ্রামটি  বর্ধমান  শহর  থেকে  ২৫  কিমি  উত্তর-পশ্চিমে  অবস্থিত।  গ্রামের  দক্ষিণ  পাড়ায়  অবস্থিত  স্থানীয়  মুখার্জী  পরিবারের  পঞ্চরত্ন  শিব  মন্দিরটি  উল্লেখযোগ্য।  

            সামান্য  উঁচু  ভিত্তিভূমির  উপর  স্থাপিত,  ইঁটের  তৈরি,  দক্ষিণমুখী  মন্দিরটি  প্রাথমিকভাবে  পঞ্চরত্ন  শৈলীর  ছিল।  তবে  এখন  চার  কোনার  রত্নগুলি  পড়ে  গেছে।  কেবল  মাঝের  রত্নটি  অবশিষ্ট  আছে।  মন্দিরের  গর্ভগৃহে  প্রবেশের  একটিই  দরজা,  সামনে।  মন্দিরের  সামনের  দেওয়ালে  পোড়ামাটির  অলঙ্করণ  আছে।  তবে  তার  বেশির  ভাগই  নষ্ট  হয়ে  গেছে।  যে  কটি  টেরাকোটা  ফলক  অবশিষ্ট  আছে  তার  মধ্যে  উল্লেখযোগ্য  :  লক্ষ্মী-সরস্বতী  সহ  মহিষাসুরমর্দিনী  দুর্গা,  কালী,  শিশু  কৃষ্ণ,  গণেশ  বন্দনারত  দুই  ব্যক্তি,  yali,  টেরাকোটার  বড়  বড়  ফুল,  পাখি  ইত্যাদি।  গর্ভগৃহে  শিবলিঙ্গ  নিত্য  পূজিত।  

             কী  ভাবে  যাবেন ?

            বর্ধমান-রামপুরহাট  রেলপথের  বনপাশ  স্টেশন  থেকে টোটোতে  সহজেই  এই  গ্রামে  যাওয়া  যায়।  বর্ধমানের  নবাবহাটের  উত্তরা  বাসস্ট্যান্ড  থেকে  গুসকরার  বাসে  ( সব  বাস  যায়  না )  সিউড়ি  রোডের  উপর  অবস্থিত  বড়  চৌরাস্তায়  নেমে  টোটোতে  এই  গ্রামে  যাওয়া  যায়।  বর্ধমানের  নবাবহাটের  উত্তরা  বাসস্ট্যান্ড  থেকে  ভোতা  গামী  বাসে  সরাসরি  এই  গ্রামে  যাওয়া  যায়। 

লক্ষ্মী-সরস্বতী সহ দুর্গা

পঞ্চরত্ন ( এখন একটি রত্ন অবশিষ্ট ) মন্দির, বিল্বগ্রাম 

মন্দিরের সামনের বিন্যাস 

খিলানের উপরের কাজ 

বাঁ দিকের  কৌণিক ভাস্কর্য

 ডান দিকের কৌণিক ভাস্কর্য

লক্ষ্মী-সরস্বতী সহ দুর্গা

কালী ও অন্য চিত্র 

শিশু কৃষ্ণ 

ভিত্তিভূমি সংলগ্ন টেরাকোটা ফলক 
       
     

মঙ্গলবার, ১০ মে, ২০২২

Gandheswari Temple, Rajendra Deb Lane, Kolkata

 

গন্ধেশ্বরী  মন্দির,  রাজেন্দ্র  দেব  লেন,  কলকাতা

                                 শ্যামল  কুমার  ঘোষ

             গন্ধবণিক  সম্প্রদায়ের  পূজিতা  দেবী  গন্ধেশ্বরী।  তিনি  দেবী  দুর্গারই  আর  এক  রূপ।  গন্ধবণিক  সম্প্রদায়  হচ্ছে  বাঙালি  হিন্দু  বণিক  সম্প্রদায়ের  একটি  গোষ্ঠী  যাঁরা  প্রাচীন  কাল  থেকে  মূলত  গন্ধ  দ্রব্যের  ব্যবসা  করে  আসছেন।  গন্ধ  দ্রব্য  যেমন -  প্রসাধন  দ্রব্য,  ধূপ,  চন্দন  কাঠ,  সিঁদুর,  বিভিন্ন  রকমের  মশলা  ইত্যাদি।  পরে  অবশ্য  তাঁরা  অন্য  ব্যবসাতেও  যুক্ত  হয়েছেন।  যেমন - ওষুধ,  অস্ত্র  ইত্যাদি।  বন্দুক  ব্যবসায়ী  এন. সি. দাঁয়ের  পরিবার  ও  শোভাবাজারের  বিশিষ্ট  ব্যবসায়ী  বটকৃষ্ণ  পালের  পরিবার  এই  গন্ধবণিক  সম্প্রদায়ভুক্ত।    

            দেবী  গন্ধেশ্বরীর  উৎপত্তির  পৌরাণিক  কাহিনী :  সুভুতির  ঔরসে  ও  তপতি  নামের  এক  রাক্ষসীর  গর্ভে  গন্ধাসুরের  জন্ম।  মহাদেবের  বরে  সে  পরাক্রমশালী  ও  ত্রিভুবনবিজয়ী  হয়ে  ওঠে।  সুভুতি  বৈশ্যকন্যা  সুরূপাকে  হরণ  করতে  গিয়ে  বৈশ্যদের  কাছে  চূড়ান্ত  অপমানিত  হয়।  গন্ধাসুর  পিতার  অপমানের  প্রতিশোধ  নেওয়ার  জন্য  বৈশ্যদের  উপর  অত্যাচার  শুরু  করে।  একদিন  সুবর্ণবট  নামক  এক  বৈশ্যকে  আক্রমণ  করে  হত্যা  করে।  তাঁর  স্ত্রী  চন্দ্রাবতী  প্রাণ  ভয়ে  পালিয়ে  গিয়ে  এক  বনে  আশ্রয়  নেন।  চন্দ্রাবতী  ছিলেন  গর্ভবতী।  বনে  তিনি  এক  কন্যা  সন্তানের  জন্ম  দিয়ে  মারা  যান।  সেই  বনে  ছিল  ঋষি  কশ্যপের  আশ্রম।  ঋষি  কশ্যপ  ধ্যানযোগে  এই  ঘটনা  জেনে  সেখানে  উপস্থিত  হয়ে  মৃতা  চন্দ্রাবতীর  পাশে  সেই  শিশুকন্যার  দেখা  পেলেন।  চন্দ্রাবতীর  দেহ  যথাযথ  সৎকার  করে  তিনি  সেই  শিশুকন্যাকে  নিজ  আশ্রমে  নিয়ে  এলেন।  শিশুকন্যার  দেহ  থেকে  সুগন্ধ  ছড়াতে  দেখে  শিশুকন্যার  নাম  রাখলেন  গন্ধবতী।  বড়  হয়ে  গন্ধবতী  ঋষির  কাছে  তার  পিতামাতার  মৃত্যুর  কারণ  জানলেন।  সব  জেনে  তাঁর  মনে  প্রতিশোধের  আগুন  জ্বলে  উঠল।  গন্ধবতী  যজ্ঞের  আগুন  জ্বেলে  মহামায়ার  তপস্যায়  ব্রতী  হলেন।  এদিকে  গন্ধাসুর  গন্ধবতীর  রূপলাবণ্যের  কথা  শুনে  সেই  আশ্রমে  উপস্থিত  হল।  ধ্যানমগ্ন  গন্ধবতীকে  দেখে  তার  রূপে  মোহিত  হয়ে  তাকে  প্রেম  নিবেদন  করতে  লাগল।  কিন্তু  কিছুতেই  গন্ধবতীর  ধ্যান  ভঙ্গ  না  হওয়াতে  উত্তেজিত  হয়ে  তার  চুলের  মুঠি  ধরে  আকর্ষণ  করল।  নারীর  অপমানে  রুষ্ট  হয়ে  যজ্ঞকুণ্ড  ধূমায়িত  হয়ে  উঠল  এবং  সেই  যজ্ঞকুণ্ড   থেকে  উঠে  এলেন  অস্ত্রশস্ত্রে  সজ্জিতা  চতুর্ভুজা  এক  সিংহবাহিনী  দেবী।  গন্ধবতীর  ধ্যান  ভঙ্গ  হল।  তিনি  দেবীকে  প্রণাম  করলেন।  দেবী  তাঁকে  অভয়  দান  করে  রোষ-নয়নে  গন্ধাসুরের  দিকে  এগিয়ে  গেলেন।  গন্ধাসুর  বিশাল  দেহ  ধারণ  করে  দেবীকে  আক্রমণ  করল।  শুরু  হল  ঘোরতর  যুদ্ধ।  দেবতারা  সেই  যুদ্ধ  দেখতে  ছুটে  এলেন।  তুমুল  যুদ্ধের  শেষে  দেবী  তাঁর  ত্রিশুল  দিয়ে  গন্ধাসুরকে  বিদ্ধ  করে  বধ  করলেন।  তারপর  দেবী  প্ৰচণ্ড  রোষে  গন্ধাসুরের  দেহ  সমুদ্রে  নিক্ষেপ  করলেন।  উপস্থিত  দেবতারা  দেবীর  নাম  দিলেন  'গন্ধেশ্বরী'।  দেবীর  ইচ্ছানুসারে  গন্ধাসুরের  বিশাল  দেহ  পরিণত  হল  এক  বিশাল  দ্বীপে।  সেই  দ্বীপে  উদ্ভূত  হল  মশলা  ও  সুগন্ধি  বৃক্ষ-লতা।  দেবী  বেনে  সম্প্রদায়ের  একটি  গোষ্ঠীকে  সেই  দ্বীপ  থেকে  মশলা,  গন্ধদ্রব্য  ইত্যাদি  আহরণ  করে  বাণিজ্য  করার  অধিকার  দিলেন,  তাঁদের  নাম  হল  গন্ধবণিক।            

             কলকাতায়  গন্ধেশ্বরী  মাতার  মন্দির  আছে  ঠনঠনিয়া  সিদ্ধেশ্বরী  কালী  মন্দিরের  অনতিদূরে।  বর্তমান  ঠিকানা -  ২১ সি,  রাজেন্দ্র  দেব  লেন।  পশ্চিমমুখী  মন্দিরটি  একটি  ছোট  ঘর  মাত্র।  সামনে  একটি  নাটমন্দির  আছে।  গর্ভগৃহে  অষ্টধাতুর  গন্ধেশ্বরী  মাতা  প্রতিষ্ঠিতা।  বিগ্রহ  প্রায়  তিন  ফুট  উঁচু।  চতুর্ভুজা  দেবী  সিংহের  উপর  আসিনা।  ত্রিশূল  দিয়ে  যেন গন্ধাসুরকে  বধ  করছেন।  নিত্য  পূজা  ছাড়াও  বৈশাখ  মাসে  বুদ্ধ  পূর্ণিমার  দিন  গন্ধেশ্বরী  মাতার  বিশেষ  পূজা  অনুষ্ঠিত  হয়।  এ  দিন  গন্ধবণিক  সমাজের  সমস্ত  মানুষ  মন্দিরে  উপস্থিত  হন  মায়ের  কাছে  প্রার্থনা  ও  পূজা  দেওয়ার  জন্য।  তাঁরা  সারা  বছরের  নিজেদের  ব্যবসার  সমৃদ্ধি  কামনা  করে  মায়ের  আশীর্বাদ  প্রার্থনা  করেন।  এ  দিন  বিশেষ  পূজা  উপলক্ষ্যে  মায়ের  কাছে  খিচুড়ি  ভোগ  নিবেদন  করা  হয়।  পরে  মন্দিরে  উপস্থিত  ভক্তবৃন্দ  সেই  ভোগ  পেয়ে  থাকেন।

             মন্দির  চত্বরের  মধ্যে  আছে  একটি  ছাত্রাবাস।  এখানে  গ্রাম  থেকে  কলকাতায়  পড়তে  আসা  শিক্ষার্থীরা  স্বল্পমূল্যে  থাকতে  পারেন।  এখানে  উল্লেখ্য,  গন্ধবণিক  মহাসভা  নানা  জনহিতকর  কাজের  সঙ্গে  যুক্ত।    

             ১৩৪৩  বঙ্গাব্দের  ১৪ই  বৈশাখ  এই  মন্দিরের  ভিত্তি  প্রস্তর  স্থাপন  করেন  হরিশঙ্কর  পাল।  ১৩৪৬  বঙ্গাব্দের  ১৭ই  বৈশাখ,  সোমবার,  শুক্লা  ত্রয়োদশী  তিথিতে  মন্দিরে  বিগ্রহ  প্রতিষ্ঠিত  হয়।  প্রতিষ্ঠা  করেন  সেই  সময়ের  গন্ধবণিক  মহাসভার  সভাপতি  নৃত্যগোপাল  রুদ্র।  মন্দিরের  বাইরের  দেওয়ালে  দুটি  শ্বেতপাথরের  ফলক  আছে।

             সকাল  ৬ টা.  থেকে  ১১ টা  এবং  সন্ধ্যা  ৬ টা  থেকে  ৭ টা  পর্যন্ত  মন্দির  খোলা  থাকে

             কী  ভাবে  যাবেন ?

             কলকাতার  কলেজ  স্ট্রিট  মোড়  থেকে  বিধান  সরণি  ধরে  শ্যামবাজারের   দিকে  একটা  স্টপেজ  এগিয়ে  গেলে  পড়বে  ঠনঠনিয়া  সিদ্ধেশ্বরী  কালী  বাড়ি।  এই  মন্দিরের  দক্ষিণ  দিকের  রাস্তা  রাজেন্দ্র  দেব  লেন  ধরে  খানিকটা  এগিয়ে  কাউকে  জিজ্ঞাসা  করলেই  পেয়ে  যাবেন  মন্দির।   

গন্ধেশ্বরী মাতা -১

মন্দিরের ফটক

গন্ধেশ্বরী মাতা -২

গন্ধেশ্বরী মাতা -৩

মন্দিরের ভিত্তি প্রস্তরফলক

মন্দিরের বিগ্রহের প্রতিষ্ঠাফলক
 

            -------------------------------------------

            আমার  ইমেল :  shyamalfpb@gmail.com   প্রয়োজনে  যোগাযোগ  করতে  পারেন।

           --------------------------------------------          

                                                                           

সোমবার, ৯ মে, ২০২২

Ramsita Temple, Sankharitola Street, Kolkata

 

রামসীতা  মন্দির,  শাঁখারিটোলা  স্ট্রিট,  কলকাতা 

                  শ্যামল  কুমার  ঘোষ 

            ভারতের  হিন্দিভাষী  অঞ্চলের  মতো  বাংলায়  রাম-উপাসনা  খুব  বেশি  জনপ্রিয়  না  হলেও  রামায়ণের  কাহিনী  বাংলার  সাধারণ  মানুষের  কাছে  খুবই  জনপ্রিয়  ছিল।  বিশেষ  করে  কৃত্তিবাসী  রামায়ণ।  এক  সময়  বাংলার  অনেক  বাড়িতে  সন্ধ্যায়  প্রদীপ  বা  হারিকেনের  আলোয় কৃত্তিবাসী  রামায়ণ  পাঠের  প্রচলন  ছিল।  বাংলার  পল্লীতে-পল্লীতে  সন্ধ্যায়  রামায়ণ  গানের  আসর  বসতো।  এই  আসর  চলতো  এক  মাসেরও  বেশি  সময়  ধরে।  আসরের  শেষে  রাম-সীতার  গলার  অকিঞ্চিৎকর  মালা  নিলামে  বিক্রি  হতো।  এর  থেকেই  বোঝা  যায়  যে  বাংলার  জন-মানসে  রামসীতা  কত  খানি প্রভাব  বিস্তার  করে  ছিল।

             বাংলায়  রাম-উপাসনা  একেবারেই  ছিল  না  তা  কিন্তু  সঠিক  নয়।  বাংলার  কিছু  কিছু  মন্দিরের  গর্ভগৃহে  যেমন  রাম-সীতা-লক্ষণের  বিগ্রহ  পূজিত  হয়  তেমন  কিছু  কিছু  মন্দিরে  শালগ্রাম  শিলায়  রঘুনাথ  রামচন্দ্রের  পূজাও  অনুষ্ঠিত  হয়।  এমন  কি  অনেক  কৃষ্ণমন্দিরেও  আলাদা  করে  রামচন্দ্রের  বিগ্রহও  পূজিত  হন।

              আমার  মতো  অনেক  কলকাতাবাসীর  অগোচরে  প্রায়  একশো  বছর  ধরে  রামসীতা  বিগ্রহ  পূজিত  হচ্ছেন  এই  কলকাতায়।  কলকাতার  শিয়ালদহের  কাছে  আর.  আহমেদ  দাঁতের  হাসপাতালের  পাশের  গলির  নাম  ক্রিক  রোড।  এই  রাস্তা  ধরে  একটু  এগিয়ে  ডান  দিকের  রাস্তা  ধরে  একটু  এগুলেই  বাঁ  দিকে  পড়বে  একটি  লাল  রঙের  বাড়ি।  এই  বাড়ির  এক  তলায়  আছে  রামসীতার  মন্দির।  দরজা  দিয়ে  ঢুকে  ডান  দিকে  তাকালেই  চোখে  পড়বে  বিগ্রহ।  সামনে  বিশাল  প্রশস্থ  চত্বর।  শ্বেতপাথরের  সিঁড়ি  দিয়ে  উপরে  উঠলে  পড়বে  গর্ভগৃহ।  গর্ভগৃহের  সামনে  অলিন্দ।  গর্ভগৃহে  রামসীতা  ও  অন্যান্য  বিগ্রহ  নিত্য  পূজিত।  নিত্য  পূজা  ছাড়াও  রাম  নবমীতে  মন্দিরে  বিশেষ  পূজা  অনুষ্ঠিত  হয়।  

            ১৯২৬  খ্রিস্টাব্দের  ১৫ই  জুলাই  ( ১৩৩৩  বঙ্গাব্দের  ৩০শে  আষাঢ় )  মন্দিরটি  প্রতিষ্ঠিত  হয়।  প্রতিষ্ঠা  করেন  শীতল  চন্দ্র  বন্দোপাধ্যায়  ও  তাঁর  স্ত্রী  রাজলক্ষ্মী  দেবী।  মন্দিরের  বাইরের  দেওয়ালে  একটি  শ্বেতপাথরের  প্রতিষ্ঠাফলক  আছে।      

রামসীতা বিগ্রহ 

মন্দিরের প্রবেশদ্বার 

গর্ভগৃহে ওঠার সিঁড়ি 

রামসীতা ও অন্যান্য বিগ্রহ

রামসীতা বিগ্রহ

প্রতিষ্ঠাফলক

           পশ্চিমবঙ্গের  অন্যান্য  রামসীতা  মন্দিরগুলি  সম্বন্ধে  জানতে  নিচের  লিঙ্কগুলিতে  ক্লিক  করুন :

                          

           

          -------------------------------------------

            আমার  ইমেল :  shyamalfpb@gmail.com   প্রয়োজনে  যোগাযোগ  করতে  পারেন।

           --------------------------------------------