বৃহস্পতিবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২১

Jagaddhatri Temple, Serpentine Lane, Lebutala / Bowbazar, Kolkata

 জগদ্ধাত্রী  মন্দির,  সার্পেন্টাইন  লেন,  লেবুতলা / বৌবাজার,  কলকাতা

                               শ্যামল  কুমার  ঘোষ

            কলকাতার  বৌবাজার  /  লেবুতলা  অঞ্চলের  ১০৫/২,  সার্পেন্টাইন  লেনে  জগদ্ধাত্রী  মন্দির  অবস্থিত।  অনেকে  একে ঠাকুরবাড়ি  বলে  থাকেন।

            উঁচু  ভিত্তিবেদির  উপর  স্থাপিত,  তিন-খিলানবিশিষ্ট,  অলিন্দযুক্ত  মন্দিরটি  সমতলছাদবিশিষ্ট  একটি  দালান  শৈলীর  মন্দির।  অলিন্দের  খিলানের  এক  একটি  স্তম্ভ  'কলাগেছ্যা'  রীতির  গোল  ও  সরু  স্তম্ভগুচ্ছের  সমষ্টি। মন্দিরের  সামনে  বর্গাকৃতি  ছোট  ফাঁকা  উঠান  এবং  তাকে  ঘিরে  চকমিলানো  ঘর।  ঘরগুলির  সামনেও  মোটা  স্তম্ভযুক্ত  অলিন্দ।  সমস্ত  স্তম্ভের  উপরে  পঙ্খের  কাজ  আছে।  গর্ভগৃহের  দরজার  দু  পাশে  দেওয়ালে  আছে  দুটি  ভাস্কর্য।  অলিন্দের  সামনে  আছে  দুটি  পাথরের  পরি।  মন্দিরটি  পশ্চিমমুখী।  উল্লেখ্য,  ঠাকুরবাড়িটির  পশ্চিম  দিকে  রাস্তা।    

            ১২৯৪  বঙ্গাব্দের  ( ১৮৮৮ খ্রীষ্টাব্দে )  ১২ ই  মাঘ,  পূর্ণিমা  তিথিতে  মন্দিরটি  প্রতিষ্ঠিত  হয়।  প্রতিষ্ঠা  করেন  কেদার  নাথ  দাস। এই  দেবায়তনের  বাইরের  দরজার  উপরের  দিকে  একটি  প্রতিষ্ঠাফলক  আছে।  দরজার  বাঁ  দিকের  দেওয়ালে  একটি  ধাতুর  ফলক  লাগানো  আছে।  ফলকের  বিষয়বস্তু  নিম্নরূপ :

            পরমেশ্বর  আমাদের  প্রতি  বড়ই  দয়াবান  তিনি  সমস্ত  জীবের  উপর  সম্যক  রূপে  দয়া  করিতেছেন,  যে  তাঁহাকে  কাতর  হইয়া  ডাকিতেছে  ও  যে  নাও  ডাকিতেছে  তিনি  উভয়েরই  প্রতি  সমান।  তিনি  ন্যায়বান,  তিনি  ডাকিলেই  যে  একজন  পাপিকে  দয়া  করিবেন  তাহা  নহে।  তিনি  সমস্ত  গুণের  আধার  কিন্তু  তদ্বারা  নিজের  কোনই  উপকার  করেন  না  ও  সকলের  উপকারের  জন্য  ব্যস্ত।  কোন  পদার্থ  পাইবার  জন্য  কোনই  আশা  নাই  কারণ  তাঁহার  অভাব  নাই  তিনি  অভাবের  অভাব,  তিনি  দয়ার  দয়া,  তিনিই  সমস্ত।  কেমন  করিয়া  তাঁহার  নিকট  পৌঁছিব  এই  আমাদের  জপমালা  হওয়া  উচিৎ।  সংসার  তাঁহার  লীলার  স্থান,  তিনি  কতই  প্রকার  খেলা  দেখাইতেছেন  ও  তদ্বারা  আমাদিগকে  মোহিত  করিতেছেন।  কিন্তু  আবার  ঐ  সকল  প্রাণসন্তোষক  ও  মোহিতকর  খেলার  দ্বারা  দেখাইতেছেন  ও  বলিয়া  দিতেছেন,  রে  অবোধ  আশাময়  মানব  খুব  সাবধান  চিরদিন  কিছুই  নয়,  যাহা  কিছু  দেখিয়া  কিম্বা  শুনিয়া  মুগ্ধ  হইতেছ  তৎসমস্ত  ক্ষণেকের  জন্য  অতএব  ক্ষান্ত  হও,  ভ্রান্তমন !  ক্ষান্ত  হও !  অসার  আশার  ছলনে  ছলিত  হইও  না।  তুমি  হাওয়ার  পদার্থ  সুতরাং  তোমার  স্থায়িত্ব  কোথায়,  তুমি  ক্ষণমধ্যে  শূন্যে  মিশাইবে  কারণ  সবই  শূন্যময়।  অতএব  নিজেকে  নিজের  মধ্যে  নিয়োজিত  কর,  মূলে  আশ্রয়  গ্রহণ  কর,  আশা  ছাড়,  কামনা  ছাড়.  তাহা  হইলে  আশা  ও  তাহার  সহধর্ম্মিণী  কামনাও  তোমাকে  ছাড়িবে  ও  তোমার  শান্তি  হইবে,  সুখ  পাইবে,  এবং  সেই  অনন্ত  সুধাময়  প্রেমসাগরে  ডুবিয়া  চিরানন্দিত  হইবে।  

                             একজন  মঙ্গলাকাঙ্ক্ষী।

            মন্দিরের  গর্ভগৃহে  সিংহের  উপর  দেবী  জগদ্ধাত্রী  উপবিষ্টা।  দেবী  জগদ্ধাত্রী  অষ্টধাতুর।  বিগ্রহ  নিত্য  পূজিতা।  বাড়ি  সমেত  মন্দিরটি  বর্তমানে  হস্তান্তরিত  হয়েছে।  বর্তমান  সেবায়েত  প্রমোদ  লজ।  পাঞ্জাবি।

            মন্দিরটি  পরিদর্শনের  তারিখ :  ১৩.১২.২০২১   

জগদ্ধাত্রী মন্দির, সার্পেন্টাইন  লেন, কলকাতা 

গর্ভগৃহের সামনের বিন্যাস 

অলিন্দের সামনে পাথরের পরি - ১

অলিন্দের সামনে পাথরের পরি - ২

গর্ভগৃহের দেওয়ালের ভাস্কর্য 

অলিন্দের দেওয়ালে টাঙানো প্রাচীন বস্তু - ১

অলিন্দের দেওয়ালে টাঙানো প্রাচীন বস্তু - ২

মন্দিরের প্রবেশ-দরজার দিক ( ভিতর থেকে তোলা )

থামের উপর পঙ্খের কাজ 

প্রাতিষ্ঠাফলক 

আর একটি ফলক 

বড় করে ( ১ ম অংশ )

বড় করে ( ২ ম অংশ )

জগদ্ধাত্রী বিগ্রহ - ১

জগদ্ধাত্রী বিগ্রহ - ২

জগদ্ধাত্রী বিগ্রহ - ৩

   কী  ভাবে  যাবেন ?

            শিয়ালদহে  নীলরতন  সরকার  মেডিক্যাল  কলেজের  গেটের  বিপরীত  দিকে  অবস্থিত  গোমেজ  লেন  ( কবি  নবীন  সেন  লেন )।  এই  রাস্তা  ধরে  একটু  এগিয়ে  কাউকে  জিজ্ঞাসা  করুন  সার্পেন্টাইন  লেন  কোন  দিকে।  তাঁর  নির্দেশিত  পথে  সার্পেন্টাইন  লেনে  পৌঁছুলে  খুঁজে  নিন  ১০৫/২,  সার্পেন্টাইন  লেন।  এখানেই  আমাদের  কাঙ্খিত  মন্দির  বা  ঠাকুরবাড়ি। 

            কলকাতার অন্যান্য মন্দির সম্বন্ধে জানতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন / লিংকের উপর আঙুল দিয়ে টোকা দিন : 

                        কলকাতার  মন্দির

          -------------------------------------------

            আমার  ইমেল :  shyamalfpb@gmail.com   প্রয়োজনে  যোগাযোগ  করতে  পারেন।

           --------------------------------------------

1 টি মন্তব্য: