গিরিবালা  ঠাকুরবাড়ি,  কামারহাটি,  পানিহাটি,  উত্তর  ২৪  পরগনা
                               শ্যামল  কুমার  ঘোষ
            ব্যারাকপুর  ট্রাঙ্ক  রোডে  অবস্থিত  আগরপাড়ার  মোল্লার  হাটের  মোড়  থেকে  হলধর  বোস  রোড  ধরে  গঙ্গার  দিকে  হাঁটলে  গঙ্গার  ধারে  পড়বে  গিরিবালা  ঠাকুরবাড়ি।  অনেকে  একে  ছোট  দক্ষিনেশ্বর  বলে  থাকেন।  এই  মন্দিরের  অবস্থান  দক্ষিণেশ্বরের  মত  গঙ্গাতীরে  এবং  শিবমন্দিরগুলির  গঠনশৈলী  মোটামুটি  একই  রকম।  দক্ষিণেশ্বরের  মূল  দেবতা  দক্ষিণাকালী,  কিন্তু  এখানকার  মূল  দেবতা  রাধাগোবিন্দ  জিউ।  মন্দিরের  পশ্চিম  দিকে  গিরিবালা  ঘাট।  আছে  নহবত  খানা,  নাটমন্দির।  মন্দিরটি  নির্মাণ  করতে  সেই  সময়ে  প্রায়  সাড়ে  তিন  লক্ষ  টাকা  খরচ  হয়েছিল।   
            মন্দিরটি  বাংলা  ১৩১৮  সালের  (  ১৯১১  খ্রিষ্টাব্দে )  ১৮ই  জ্যৈষ্ঠ  রানি  রাসমনির  নাতবৌ,  কলকাতার  জানবাজারের  গোপালকৃষ্ণ  দাসের  বিধবা  স্ত্রী  গিরিবালা  দাসী  প্রতিষ্ঠা  করেন।  পাঁচিল  দিয়ে  ঘেরা  মন্দির  প্রাঙ্গণের  ঠিক  মাঝখানে  রাধাগোবিন্দজির  মন্দির।  উঁচু  ভিত্তিবেদির  উপর  স্থাপিত,  ত্রিখিলান  প্রবেশপথযুক্ত,  দক্ষিণমুখী  মন্দিরটি  পঞ্চরত্ন  শৈলীর।  গর্ভগৃহের  সামনে  অলিন্দ।  মন্দিরে  ওঠার  সিঁড়ির  দুপাশে  দুটি  পাথরের  নারীমূর্তি,  হাতে  কাচের  বাতিদান।  মন্দিরের  চারিদিকে  বাঁকানো  কার্নিসের  নিচে  সুন্দর  পঙ্খের  কাজ  আছে।  
            মন্দিরের  সামনে  বড়  নাটমন্দির।  প্রাঙ্গণের  পশ্চিমদিকে   ছটি  আটচালা  শিবমন্দির।  শিবমন্দিরগুলির  নাম  ( দক্ষিণ  দিক  থেকে  উত্তরে ) :  রামেশ্বর,  রাজেশ্বর,  গোপেশ্বর,  তারকেশ্বর,  ভুবনেশ্বর  ও  গিরিশ্বর।  ১ নং  রামেশ্বর  শিবমন্দিরের  পূর্ব  দিকের  দরজার  খিলানের  উপর  রয়েছে  যুগলমিলন  মূর্তি  এবং  পশ্চিম  দিকের  দরজার  খিলানের  উপর  রয়েছে  কৃষ্ণ-বলরাম  মূর্তি।  ২ নং  রাজেশ্বর  শিবমন্দিরের  পূর্ব  দিকের  দরজার  খিলানের  উপর  মূর্তিটি  ভেঙে  গেছে।  এই  শিবমন্দিরের  পশ্চিম  দিকের  দরজার  খিলানের  উপর  রয়েছে  রামরাজার  মূর্তি।  ৩ নং  গোপেশ্বর  শিবমন্দিরের  পূর্ব  দিকের  দরজার  খিলানের  উপর  রয়েছে  রাইরাজার  মূর্তি।  এই  শিবমন্দিরের  পশ্চিম  দিকের  দরজার  খিলানের  উপর  রয়েছে নন্দীর  পিঠে  হরপার্বতী  মূর্তি,  এ  ছাড়াও  রয়েছেন  একজন  শিঙ্গাবাদক  ও  একজন  শঙ্খবাদক।  ৪ নং  তারকেশ্বর  শিবমন্দিরের  পূর্ব  দিকের  দরজার  খিলানের  উপর  রয়েছে  অনন্ত  শয়ানে  বিষ্ণু।  ৫ নং  ভুবনেশ্বর  শিব মন্দিরের  পূর্ব  দিকের  দরজার  খিলানের  উপর  রয়েছে  রাইমিলন  মূর্তি।  এই  মন্দিরের  পশ্চিম  দিকের  দরজার  খিলানের  উপর  রয়েছে  শিব  ও  অন্নপূর্ণার  মূর্তি।  ৬ নং  গিরিশ্বর  মন্দিরের  পূর্ব  দিকের  দরজার  খিলানের  উপর  রয়েছে  কৃষ্ণের  কালীয়  দমন  মূর্তি।  এই  মন্দিরের  পশ্চিম  দিকের  দরজার  খিলানের  উপর  রয়েছে  শিবের বাহন নন্দীর  পিঠে  শিব-গণেশজননী  ও  ইন্দ্রের বাহন  ঐরাবতের  পিঠে  ইন্দ্র-শচি।  এখানে বৃষ-গজের  একই মাথা।
            মন্দিরের  গর্ভগৃহে  কষ্টিপাথরের  কৃষ্ণ,  অষ্টধাতুর  রাধা,  গণেশ,  নারায়ণ  শিলা  ও  অন্যান্য  দেবদেবীর  মূর্তি  প্রতিষ্ঠিত  ও  নিত্যপূজিত।  মন্দির  প্রতিষ্ঠার  সময়  যে  রাধারানির  মূর্তিটি  ছিল  সে  মূর্তিটি  চুরি  হওয়ার  পরে  শ্বেতপাথরের  একটি  রাধারানি  মূর্তি  পূজা  করা  হত।  রাধারানিকে  স্নান  করানোর  সময়  পুরোহিতের  অসাবধানতায়  তা  ভেঙে  যায়।  সেই  ভাঙা  মূর্তিটি  জোড়া  দিয়ে  দীর্ঘদিন  পূজা  করা  হয়।  ১৯৮৫  সালের  ২০ শে  জানুয়ারি  গিরিবালা  দাসীর  বংশধররা  মন্দিরের  রক্ষণাবেক্ষণের  দায়িত্ব  ভোলাগিরি  আশ্রম  কর্তৃপক্ষের  হাতে  অর্পণ  করেন।  তারপর  স্বামী  শিবানন্দ  গিরি  মহারাজ  এই  মন্দিরে  ভারপ্রাপ্ত  হয়ে  আসেন।  তিনি  বৃন্দাবন  ধাম  থেকে  একটি  অষ্টধাতুর  রাধারানির  মূর্তি  এনে  অভিষেক  করিয়ে  পূজার  ব্যবস্থা  করেন।  এখনও  সেই  মূর্তিই  পূজিত  হচ্ছেন।
            মন্দিরে  নিত্য  পূজা  ছাড়াও  মন্দিরের  প্রতিষ্ঠা  দিবসের  উৎসব,  রাধাষ্টমী,  জন্মাষ্টমী,  দোলযাত্রা,  স্নানযাত্রা,  ঝুলন,  রাসযাত্রা  ইত্যাদি  উৎসব  অনুষ্ঠিত  হয়।  তবে  আগেকার  মত  এখন  আর  সেরকম  জাঁকজমক  হয়  না।  শিবরাত্রির  দিন  সারারাত  শিবমন্দিরগুলিতে  পূজা  অনুষ্ঠিত  হয়।
            মন্দিরের  পূর্ব  দিকে  সারি  সারি  ঘর।  এগুলি  নানা  কাজে  ব্যবহৃত  হয়।  মন্দিরের  পরিবেশ  খুবই  সুন্দর।  এক  দিনের  ভ্রমণের  জন্য  অবশ্যই  এটি  নির্বাচন  করা  যেতে  পারে। 
  কী  ভাবে  যাবেন ?
            হাওড়া,  শিয়ালদহ  বা  শ্যামবাজার  থেকে  বি. টি. রোড  গামী  বাসে  উঠে  পানিহাটির  মোল্লার  হাটে  নামুন।  সেখান  থেকে  টোটো  পাবেন।  হেঁটেও  যেতে  পারেন।  শিয়ালদহ  থেকে  ট্রেনে  এলে  আগরপাড়ায়  নামুন।  সেখান  থেকে  অটো। 
            মন্দিরটি  পরিদর্শনের  তারিখ :  ২৫.০৮.২০২১
  | 
গোপেশ্বর শিবমন্দিরের সামনের দরজার খিলানের উপরের কাজ ( রাইরাজা ) | 
  | 
| রাধাগোবিন্দ মন্দির  | 
  | 
মন্দিরের সামনের নিচের দিকের বিন্যাস 
 
  | 
  | 
| সিঁড়ির এক পাশের নারীমূর্তি | 
  | 
সিঁড়ির অপর পাশের নারীমূর্তি
  | 
  | 
| মন্দিরের সামনের বাঁকানো কার্নিসের নিচের কাজ  | 
  | 
| সামনের বাঁকানো কার্নিসের নিচের কাজ ( বড় করে ) | 
  | 
| পশ্চিম দিকের দেওয়ালের কাজ  | 
  | 
| পশ্চিম দিকের খিলানের উপরের কাজ  | 
  | 
উত্তর দিকের খিলানের উপরের কাজ 
 
  | 
  | 
| পূর্ব দিকের দেওয়ালের কাজ | 
  | 
| রামেশ্বর শিবমন্দির  | 
  | 
রামেশ্বর শিবমন্দিরের সামনের দরজার খিলানের উপরের কাজ ( যুগলমিলন )  | 
  | 
রামেশ্বর শিবমন্দিরের পিছনের দরজার খিলানের উপরের কাজ ( কৃষ্ণ ও বলরাম ) | 
  | 
রাজেশ্বর শিবমন্দিরের পিছনের দরজার খিলানের উপরের কাজ ( রামরাজা ) | 
  | 
| গোপেশ্বর শিবমন্দির  | 
  | 
গোপেশ্বর শিবমন্দিরের সামনের দরজার খিলানের উপরের কাজ ( রাইরাজা ) | 
  | 
গোপেশ্বর শিবমন্দিরের পিছনের দরজার খিলানের উপরের কাজ ( নন্দী পৃষ্ঠে শিব-পার্বতী ) | 
  | 
তারকেশ্বর শিবমন্দিরের সামনের দরজার খিলানের উপরের কাজ ( অনন্ত শয়ানে বিষ্ণু ) | 
  | 
তারকেশ্বর শিবমন্দিরের পিছনের দরজার খিলানের উপরের কাজ
 
  | 
  | 
ভুবনেশ্বর শিবমন্দিরের সামনের দরজার খিলানের উপরের কাজ ( রাইমিলন ) | 
  | 
| গিরিশ্বর শিবমন্দিরের পিছনের দরজার খিলানের উপরের কাজ | 
                ( শিব ও অন্নপূর্ণা )               
  | 
গিরিশ্বর শিবমন্দিরের সামনের দরজার খিলানের উপরের কাজ ( কৃষ্ণের কালীয় দমন ) | 
  | 
ভুবনেশ্বর শিবমন্দিরের পিছনের দরজার খিলানের উপরের কাজ ( হরিহর ) | 
  | 
| রাধাগোবিন্দ ও অন্যান্য বিগ্রহ  | 
  | 
| রাধা ও গোবিন্দ বিগ্রহ - ১ | 
  | 
রাধা ও গোবিন্দ বিগ্রহ - ২
 
  | 
 সহায়ক  গ্রন্থ /  সূত্র : 
                 ১)  পশ্চিমবঙ্গ  ভ্রমণ  ও  দর্শন :  ভূপতিরঞ্জন  দাস 
                 ২)  পানিহাটি  পৌরসভার  ওয়েবসাইট 
                 ৩)  শতবর্ষে  গিরিবালা  ঠাকুরবাড়ী :  কৃশানু  ভট্টাচার্য্য 
                     ----------------------------------------------------
রামায়ণের ৭টি খণ্ডের ৬৪ টি উপাখ্যান ও ১৮৫ টি টেরাকোটা ফলকের আলোকচিত্র সংবলিত আমার লেখা এবং 'রা প্রকাশন' কর্তৃক প্রকাশিত বই 'বাংলার টেরাকোটা মন্দিরে রামায়ণ' প্রকাশিত হয়েছে। বইটির মুদ্রিত মূল্য - ৫৯৯ টাকা।
 বইটি ডাক যোগে সংগ্রহ করতে হলে যোগাযোগ করুন :  9038130757 এই নম্বরে। 
কলকাতার কলেজস্ট্রিটের মোড়ে দুই মোহিনীমোহন কাঞ্জিলালের কাপড়ের দোকানের মাঝের রাস্তা ১৫, শ্যামাচরণ দে স্ট্রিটের উপর অবস্থিত বিদ্যাসাগর টাওয়ারের দু'তলায় 'রা প্রকাশনে'র দোকান। ওখান থেকে বইটি সংগ্রহ করতে পারেন। কোনও অসুবিধা হলে উপরোক্ত নম্বরে ফোন করতে পারেন।
            প্রকাশনীতে বইটি সেরা বইয়ের সম্মান স্বর্ণকলম ২০২৫ পেয়েছে ।
 
তথ্যসমৃদ্ধ প্রাঞ্জল বর্ননা ।।
উত্তরমুছুনলেখক কে অনেক শুভেচ্ছা 🙏
ধন্যবাদ।
মুছুনশ্যামালবাবু
উত্তরমুছুনখুব সুন্দর তথ্যসমৃদ্ধ বর্ণনা ও অনবদ্য ফোটোগ্রাফি।
মন্দির সংলগ্ন ভাঙ্গা দালনবাড়ির ইতিহাস জানতে করে।
ধন্যবাদ।
মুছুন