শনিবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২০

Kiriteshwari Temple, Kiritkona Village, Dahapara, Nabagram, Murshidabad


কিরীটেশ্বরী  মন্দির,  কিরীটকণা,  মুর্শিদাবাদ 

                    শ্যামল  কুমার  ঘোষ 

            মুর্শিদাবাদ  জেলার  নবগ্রাম  থানার  অন্তর্গত  একটি  গ্রাম  কিরীটকণা।  কিরীটেশ্বরী  বা  সংক্ষেপে  কিরীট  নামেও  এই  গ্রাম   পরিচিত।  পূর্ব  রেলের  কাটোয়া-আজিমগঞ্জ  রেলপথে  ডাহাপাড়া  ধাম  স্টেশনে  নেমে  টোটোতে  এই  গ্রামে  যাওয়া  যায়।  ভাগীরথীর  পশ্চিমতীরস্থ  এই  গ্রাম  খুবই  প্রাচীন।  গ্রামে   কিরীটেশ্বরী  মন্দিরটি  উল্লেখযোগ্য।  তন্ত্রচূড়ামণির  পীঠনির্ণয়ে  এখানে  সতীর  মাথার  কিরীট  পতনের  কথা  লেখা  আছে।  এই  গ্রন্থানুসারে  এই  দেবস্থান  সতীর  ৫১  পীঠের  অন্যতম।  কিরীটের  দেবতার  নাম  বিমলা  এবং  ভৈরবের  নাম  সম্বর্ত।  এখানে  সতীর  দেহের  কোন  অংশ  পড়ে  নি,  কিরীটের  একটি  কণা  পড়েছিল।  তাই  এটিকে  উপপীঠ  বলে  গণ্য  করা  হয়।  কিরীট  বা  মুকুট  পথিত  হওয়ার  জন্য  এই  দেবীকে  'মুকুটেশ্বরী'  নামেও  অভিহিত  করা  হয়। 
           
              কিরীটেশ্বরীর  বর্তমান  মন্দিরটি  খুব  প্রাচীন  নয়।  প্রতিষ্ঠাতা  ছিলেন  নবাব  মুর্শিদকুলি  খানের  প্রধান  কানুনগো  লালগোলার  রাজা  দর্পনারায়ণ  রায়।  মন্দিরে  লাগানো  একটি  সংস্কার  ফলক  থেকে  জানা  যায়  যে  পরবর্তীতে  লালগোলার  মহারাজা  যোগেন্দ্রনারায়ণ  রায়  মন্দিরটির  সংস্কার  করেন।  তাঁদের পূর্বপুরুষ  ভগবান  রায়  মোগল  বাদশাহের  কাছ  যে  সমস্ত  দেবোত্তর  লাখেরাজ  সম্পত্তি  পেয়েছিলেন  কিরীটেশ্বরী  তাদের  মধ্যে  অন্যতম।  মূল  মন্দিরের  কাছাকাছি  আরও  কয়েকটি  মন্দির  আছে।     

            মূল  মন্দিরে  কোন  বিগ্রহ  নেই।  একটি  লাল  রঙের  শিলাকে  দেবী  রূপে  পূজা  করা  হয়।  শিলাটি  একটি  আবরণ  দ্বারা  আচ্ছাদিত।  প্রতি  বছর  দুর্গাষ্টমী  তিথিতে  এই  আবরণটি  সকলের  অগোচরে  পাল্টানো  হয়।  নাটোরের  সাধক-রাজা  রামকৃষ্ণ  বড়নগর  থেকে  এখানে  এসে  সাধনা  করতেন। 

           এই  মন্দিরের  পাশে  আর  একটি  মন্দিরে  দেবী  মূর্তির  মুখমণ্ডলকে  মা  কিরীটেশ্বরী  রূপে  অর্চনা  করা  হয়।    

             গ্রামের  মধ্যে  'গুপ্তমঠে' ( এটি  একটি  দালান  মন্দির )  কিরীটেশ্বরীর  কিরীট  রক্ষিত  আছে  বলে  জানা  যায়।  এখানেও  কয়েকটি  মন্দির  আছে।  

          মন্দিরটি  পরিদর্শনের  তারিখ : ০৪.০৩.২০২০

কিরীটেশ্বরী ও অন্যান্য মন্দির 
কিরীটেশ্বরী মন্দির 
গর্ভগৃহ 
মন্দিরে  লাগানো  সংস্কার  ফলক
মা কিরীটেশ্বরী 
গুপ্তমঠের মন্দির 
গুপ্তমঠের মন্দিরের গর্ভগৃহ 

 সহায়ক গ্রন্থাবলি :
                  ১)  মুর্শিদাবাদ  কাহিনী :  নিখিলনাথ  রায় 
                  ২)  মুর্শিদাবাদের  ইতিহাস :  প্রতিভা  রঞ্জন  মৈত্র 
                  ৩)  বাংলার  মন্দির  স্থাপত্য  ও  ভাস্কর্য :  প্রণব  রায়  
         
           --------------- ------------------------------

রামায়ণের ৭টি খণ্ডের ৬৪ টি উপাখ্যান ও ১৮৫ টি টেরাকোটা ফলকের আলোকচিত্র সংবলিত আমার লেখা এবং 'রা প্রকাশন' কর্তৃক প্রকাশিত বই 'বাংলার টেরাকোটা মন্দিরে রামায়ণ' প্রকাশিত হয়েছে।


 বইটি ডাক যোগে সংগ্রহ করতে হলে যোগাযোগ করুন :  9038130757 এই নম্বরে। 

কলকাতার কলেজস্ট্রিটের মোড়ে দুই মোহিনীমোহন কাঞ্জিলালের কাপড়ের দোকানের মাঝের রাস্তা ১৫, শ্যামাচরণ দে স্ট্রিটের উপর অবস্থিত বিদ্যাসাগর টাওয়ারের দু'তলায় 'রা প্রকাশনে'র দোকান। ওখান থেকে বইটি সংগ্রহ করতে পারেন। কোনও অসুবিধা হলে উপরোক্ত নম্বরে ফোন করতে পারেন।

        প্রকাশনীতে বইটা বেস্টসেলার হয়েছে।

                                                         

সোমবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২০

Radhakanta and other Temples, Dhanyakuria, North 24 Parganas


শ্রীশ্রী রাধাকান্ত  ও  অন্যান্য  মন্দির,  ধান্যকুড়িয়া,  উত্তর  ২৪  পরগনা 

শ্যামল  কুমার  ঘোষ 

            উত্তর  চব্বিশ  পরগনা  জেলার  বসিরহাট  মহকুমার  অন্তর্গত  একটি  গ্রাম  ধান্যকুড়িয়া।  কলকাতা  থেকে  দূরত্ব  ৫২  কিমি।  অনেক  আগে  এটি  ছিল  সুন্দরবনের  অন্তর্গত।  জঙ্গলাকীর্ণ,  লবণাক্ত  ও  শ্বাপদসংকুল  এলাকা।  ১৭৪২  খ্রীষ্টাব্দে  বাংলায়  মারাঠা  আক্রমণের  সময়ে  নিরাপদ  আশ্রয়ের  সন্ধানে  নদিয়া  থেকে  ধান্যকুড়িয়া  এসে  বসতি  স্থাপন  করেন  জগন্নাথ  দাস।  স্থানটিকে  বাসযোগ্য  করে  তুলতে  জগন্নাথ  ও  তার  পুত্র  রত্নেশ্বর  প্রবল  প্রতিকূলতার  সঙ্গে  লড়াই  করেছিলেন।  ধীরে  ধীরে  গড়ে  ওঠে  গ্রাম।  ধান্যকুড়িয়ার  সমৃদ্ধি  ঘটলে  অনেক  পরিবার  এখানে  এসে  বসতি  স্থাপন  করেন।  ধান্যকুড়িয়ায়  পুরানো  জমিদার  বাড়িগুলি  যেমন  দ্রষ্টব্য  তেমনই  এখানে  কয়েকটি  মন্দিরও  দ্রষ্টব্য। 

            প্রথমে  চলুন  রাধাকান্ত  মন্দিরে।  উঁচু  ভিত্তিভূমির  উপর  অবস্থিত,  ত্রিখিলান  প্রবেশপথবিশিষ্ট,  দক্ষিণমুখী  মন্দিরটি  একটি  দালান।  মন্দিরটি  নির্মাণ  করেন  স্থানীয়  সাউ  পরিবার।  মন্দিরে  কিছু  পঙ্খের  কাজ  আছে।  গর্ভগৃহে  রাধাকান্ত  ও  রাধিকা  মূর্তি  নিত্য  পূজিত। 

রাধাকান্ত মন্দির, ধান্যকুড়িয়া 
মন্দিরের পঙ্খের কাজ - ১
মন্দিরের পঙ্খের কাজ - ২

মন্দিরের অলিন্দে টাঙানো একটি ছবি 

রাধাকান্ত ও রাধিকা বিগ্রহ - ১

রাধাকান্ত ও রাধিকা বিগ্রহ - ২


            এই  মন্দিরের  অদূরে  অবস্থিত  শ্রীশ্রী  মদনমোহন  মন্দির।   অল্প  উঁচু  ভিত্তিভূমির  উপর  অবস্থিত,  ত্রিখিলান  প্রবেশপথবিশিষ্ট,  দক্ষিণমুখী  মন্দিরটি  একটি  দালান।  মন্দিরটি  নির্মাণ  করেন  রামদেব  কাবাসি।  ১৪১২  বঙ্গাব্দে  ডাঃ  অসীমকুমার  বল্লব  ও  তাঁর  স্ত্রী  গায়ত্রী  বল্লভের  উদ্যোগে  বিগ্রহ  ও  মন্দির  নবসাজে  সজ্জিত  হয়।  গর্ভগৃহে  মদনমোহন  ও  রাধিকা  মূর্তি  নিত্য  পূজিত।
            
শ্রীশ্রী মদনমোহন মন্দির 

  •  শ্রীশ্রী মদনমোহন  ও  রাধিকা  বিগ্রহ 

                ধান্যকুড়িয়ার  মন্দিরগুলির  মধ্যে  অন্যতম  মহাপ্রভু  মন্দির।  এটি  একটি  দালান  মন্দির।  মন্দিরের  সামনে  একটি  নাটমন্দির  আছে।  মন্দিরে  গৌরাঙ্গ,  নিত্যানন্দ  ও  অন্যান্য  বিগ্রহ  বর্তমান।  কালী  পূজার  পরের  দিন  মন্দিরে  ধুমধাম  সহকারে  অন্নকূট  উৎসব  পালন  করা  হয়।  এছাড়া  অন্যান্য  বৈষ্ণব  উৎসব  যেমন  ঝুলন  ইত্যাদিও  পালিত  হয়।
মহাপ্রভু মন্দির, ধান্যকুড়িয়া 

মন্দিরে গৌরাঙ্গ, নিত্যানন্দ ও অন্যান্য বিগ্রহ - ১

মন্দিরে গৌরাঙ্গ, নিত্যানন্দ ও অন্যান্য বিগ্রহ - ২


                   এবার  চলুন  গাইন  বাড়ির  লাগোয়া  অবস্থিত   শ্যামসুন্দর  মন্দিরে।  অল্প  উঁচু  ভিত্তিভূমির  উপর  স্থাপিত,  ত্রিখিলান  প্রবেশপথবিশিষ্ট,  পূর্বমুখী  মন্দিরটি  একটি  দালান।  শ্যামসুন্দর  গাইন পরিবারের  গৃহ  দেবতা।  মন্দিরে  কিছু  পঙ্খের  কাজ  আছে।
মন্দিরের  গর্ভগৃহে  শ্যামসুন্দর ও  রাধারানি বিগ্রহ  নিত্য  পূজিত। 

শ্যামসুন্দর  মন্দির - ১
শ্যামসুন্দর  মন্দির - ২

মন্দিরের  পঙ্খের কাজ 

অন্যান্য বিগ্রহ - ১
অন্যান্য বিগ্রহ - ২
শ্যামসুন্দর ও  রাধারানি বিগ্রহ - ১

শ্যামসুন্দর ও  রাধারানি বিগ্রহ - ২

           
 শ্যামসুন্দর  মন্দির  থেকে  আর  একটু  উত্তরে  হাঁটলে  চোখে  পড়বে  রাসমঞ্চ।  উঁচু  ভিত্তিবেদির  উপর  স্থাপিত  রাসমঞ্চটি  নবরত্ন  শৈলীর।  রাসমঞ্চটি  সাউ, বল্লভ  ও  গাইন  পরিবারের  ব্যবসায়িক  প্রতিষ্ঠান  P. G. W. &  Sawoo  এর  জমিতে  প্রতিষ্ঠিত।  রাসের  সময়  এখানে  ধুমধাম  সহকারে  রাস  উৎসব  পালন  করা  হয়।  এত  বড়  নবরত্ন  শৈলীর  রাসমঞ্চ  বিরল।

রাসমঞ্চ

            ধান্যকুড়িয়ায়  যেতে  হলে  ধর্মতলা  বা  উল্টাডাঙ্গা  থেকে  বসিরহাট  গামী  বাসে  উঠুন।  নামুন  টাকি  রোডের  উপর  অবস্থিত  ধান্যকুড়িয়া  স্টপেজে।  সেখান  থেকে  মোটর  ভ্যানে  গ্রাম।  বসিরহাটের  বাস  না  পেলে  প্রথমে  বাসে  বারাসত।  সেখান  থেকে  আর  একটি  বাসে  বেড়াচাঁপা।  বেড়াচাঁপা  থেকে  ট্রেকারে  ধান্যকুড়িয়া।  ট্রেনে  যেতে  চাইলে  শিয়ালদহ  থেকে  হাসনাবাদ  গামী  ট্রেনে  কাঁকড়া  মির্জানগর  স্টেশনে  নামুন। 


 সহায়ক  গ্রন্থ :
         ১)  চব্বিশ  পরগণা :  কমল  চৌধুরী     
        
----------------------------------------------

রামায়ণের ৭টি খণ্ডের ৬৪ টি উপাখ্যান ও ১৮৫ টি টেরাকোটা ফলকের আলোকচিত্র সংবলিত আমার লেখা এবং 'রা প্রকাশন' কর্তৃক প্রকাশিত বই 'বাংলার টেরাকোটা মন্দিরে রামায়ণ' প্রকাশিত হয়েছে।


 বইটি ডাক যোগে সংগ্রহ করতে হলে যোগাযোগ করুন :  9038130757 এই নম্বরে। 

কলকাতার কলেজস্ট্রিটের মোড়ে দুই মোহিনীমোহন কাঞ্জিলালের কাপড়ের দোকানের মাঝের রাস্তা ১৫, শ্যামাচরণ দে স্ট্রিটের উপর অবস্থিত বিদ্যাসাগর টাওয়ারের দু'তলায় 'রা প্রকাশনে'র দোকান। ওখান থেকে বইটি সংগ্রহ করতে পারেন। কোনও অসুবিধা হলে উপরোক্ত নম্বরে ফোন করতে পারেন।

        প্রকাশনীতে বইটা বেস্টসেলার হয়েছে।