অদ্বৈতপ্রভু ও গোকুলচাঁদ মন্দির, মধ্যম গোস্বামী বাড়ি, হাটখোলা পাড়া, শান্তিপুর
শ্যামল কুমার ঘোষ
শান্তিপুরের মধ্যম গোস্বামী বাড়ির অদ্বৈতপ্রভু ও গোকুলচাঁদের মন্দির স্থাপত্য ও ভাস্কর্যের দিক থেকে খুবই উল্লেখযোগ্য। দুটি মন্দিরই বাংলা আটচালা রীতিতে নির্মিত। শ্রীঅদ্বৈতাচার্য়ের পৌত্র মথুরেশের দ্বিতীয় পুত্র ঘনশ্যাম থেকে মধ্যম গোস্বামী বাড়ি বা হাটখোলা গোস্বামী বাড়ির উৎপত্তি।
অদ্বৈতপ্রভুর মন্দিরটি উঁচু ভিত্তিবেদির উপর স্থাপিত ও পূর্বমুখী। গর্ভগৃহের সামনে তিনটি পত্রাকৃতি খিলানযুক্ত আবৃত অলিন্দ আছে। তিনটি খিলানের মধ্যে ধারের খিলান দুটির উপরের চারপাশে আটচালা প্রতীক শিবালয় ও তারমধ্যে শিবলিঙ্গ। মাঝের খিলানটির উপরের চারপাশে আটচালা প্রতীক মন্দির এবং লক্ষ্যণীয়, তারমধ্যে বিভিন্ন মূর্তি। থামগুলি বত্রিশ স্তর ইঁটের সমবায়ে গঠিত। অলিন্দের প্রবেশপথগুলি খুবই সংকীর্ণ। মন্দিরটি দৈর্ঘে ও প্রস্থে ১৫ ফুট ( ৪.৬ মি. ) ও উচ্চতায় প্রায় ২৫ ফুট ( ৭.৬ মি. ) ; গর্ভগৃহে, সিংহাসনে, অদ্বৈতপ্রভু ও তাঁর পত্নী সীতাদেবীর মূর্তি স্থাপিত। মন্দিরের সামনের দেওয়াল টেরাকোটা অলংকরণে অলংকৃত। মূর্তিগুলি পৌরাণিক ও সামাজিক। সামাজিক ভাস্কর্যগুলি পাদপীঠ সংলগ্ন সমান্তরাল সারিতে উৎকীর্ণ - যথা, পালকি বা সুখাসান বাহিত সভ্রান্ত ব্যক্তি, শিকারদৃশ্য, বাঘের আক্রমণ, শিকারী কুকুর, তীরন্দাজ ব্যাধ ও ত্রস্ত পলায়নরত হরিণপাল প্রভৃতি। পৌরাণিক চিত্রের মধ্যে আছে - দশাবতার, কৃষ্ণলীলার বিভিন্ন দৃশ্য, দশভুজা মহিষমর্দিনী ( দেবীর ডাইনে গণেশ ও লক্ষ্মী এবং বামে কার্তিক ও সরস্বতী ) প্রভৃতি। এছাড়া আছে অন্যান্য নকশা। মূর্তিগুলি নিখুঁত। কোন প্রতিষ্ঠালিপি না থাকায় বলা কঠিন, মন্দিরটি ঠিক কোন সময়ের। তবে এটি যে বেশ প্রাচীন তাতে কোন সন্দেহ নেই। মন্দিরটি পশ্চিম বঙ্গ সরকার কর্তৃক সংরক্ষিত।
এ মন্দিরের উত্তর দিকে, গোকুলচাঁদের দক্ষিণমুখী, বাংলা আটচালা রীতির মন্দিরটিও উঁচু ভিত্তিবেদির উপর প্রতিষ্ঠিত এবং গঠন ও আয়তনে অদ্বৈতপ্রভুর মন্দিরটির ঠিক অনুরূপ। গর্ভগৃহের সামনে ত্রিখিলানযুক্ত আবৃত অলিন্দ। কোন প্রতিষ্ঠাফলক না থাকলেও এটির প্রতিষ্ঠাকাল ১৬৬২ শকাব্দ ( ১৭৪০ খ্রীষ্টাব্দ ) বলে জানা যায়। ঘনশ্যাম গোস্বামীর পুত্র শ্রীরঘুনন্দন গোস্বামী ছিলেন এই বংশের প্রাণপুরুষ। তিনি সুপণ্ডিত ছিলেন। কথিত আছে, রঘুনন্দন গুপ্তিপাড়ার শ্রীশ্রী বিন্দাবনচন্দ্র জিউর সেবায়েত দণ্ডীর নিকট বেদান্ত শাস্ত্রাদি অধ্যয়ন করতে যান। পাঠ শেষ করে ফিরে আসবার সময় তিনি সেখানকার দুটি বিগ্রহের মধ্যে একটি প্রার্থনা করেন। দণ্ডী চোখ বন্ধ অবস্থায় তাঁকে একটিকে নিতে বলেন। যেটি তিনি ঐ অবস্থায় স্পর্শ করে নিয়ে আসেন সেটিই শ্রীশ্রী গোকুলচাঁদ বিগ্রহ এবং অপরটি গুপ্তিপাড়া মঠের কৃষ্ণচন্দ্র বিগ্রহ। বর্ধমান জেলার জামগ্রামের নন্দীদের সহায়তায় মন্দিরটি নাকি নির্মিত হয়েছিল। এ মন্দিরের গায়ে পোড়ামাটির কোন মূর্তি বা অলংকরণ নেই, তবে পঙ্খের ফুলকারি ও জ্যামিতিক কিছু নকশা দেখা যায়। গর্ভগৃহে অদ্বৈতপ্রভুর অভিষিক্ত এবং ঘনশ্যাম গোস্বামীর প্রতিষ্ঠিত কষ্টিপাথরের রাধাবিনোদ মূর্তি, কাঠের গোকুলচাঁদ, ধাতুময়ী কয়েকটি ছোট ছোট মূর্তি ও শালগ্রামশিলাদি আছে। মন্দিরে বিগ্রহের নিয়মিত সেবা-পূজা-ভোগ-আরতি হয়। এছাড়াও বিশেষ পূজা যেমন রাস, দোল, ঝুলন ও জন্মাষ্টমী উৎসব পালিত হয়।
শান্তিপুরের মধ্যম গোস্বামী বাড়ির অদ্বৈতপ্রভু ও গোকুলচাঁদের মন্দির স্থাপত্য ও ভাস্কর্যের দিক থেকে খুবই উল্লেখযোগ্য। দুটি মন্দিরই বাংলা আটচালা রীতিতে নির্মিত। শ্রীঅদ্বৈতাচার্য়ের পৌত্র মথুরেশের দ্বিতীয় পুত্র ঘনশ্যাম থেকে মধ্যম গোস্বামী বাড়ি বা হাটখোলা গোস্বামী বাড়ির উৎপত্তি।
অদ্বৈতপ্রভুর মন্দিরটি উঁচু ভিত্তিবেদির উপর স্থাপিত ও পূর্বমুখী। গর্ভগৃহের সামনে তিনটি পত্রাকৃতি খিলানযুক্ত আবৃত অলিন্দ আছে। তিনটি খিলানের মধ্যে ধারের খিলান দুটির উপরের চারপাশে আটচালা প্রতীক শিবালয় ও তারমধ্যে শিবলিঙ্গ। মাঝের খিলানটির উপরের চারপাশে আটচালা প্রতীক মন্দির এবং লক্ষ্যণীয়, তারমধ্যে বিভিন্ন মূর্তি। থামগুলি বত্রিশ স্তর ইঁটের সমবায়ে গঠিত। অলিন্দের প্রবেশপথগুলি খুবই সংকীর্ণ। মন্দিরটি দৈর্ঘে ও প্রস্থে ১৫ ফুট ( ৪.৬ মি. ) ও উচ্চতায় প্রায় ২৫ ফুট ( ৭.৬ মি. ) ; গর্ভগৃহে, সিংহাসনে, অদ্বৈতপ্রভু ও তাঁর পত্নী সীতাদেবীর মূর্তি স্থাপিত। মন্দিরের সামনের দেওয়াল টেরাকোটা অলংকরণে অলংকৃত। মূর্তিগুলি পৌরাণিক ও সামাজিক। সামাজিক ভাস্কর্যগুলি পাদপীঠ সংলগ্ন সমান্তরাল সারিতে উৎকীর্ণ - যথা, পালকি বা সুখাসান বাহিত সভ্রান্ত ব্যক্তি, শিকারদৃশ্য, বাঘের আক্রমণ, শিকারী কুকুর, তীরন্দাজ ব্যাধ ও ত্রস্ত পলায়নরত হরিণপাল প্রভৃতি। পৌরাণিক চিত্রের মধ্যে আছে - দশাবতার, কৃষ্ণলীলার বিভিন্ন দৃশ্য, দশভুজা মহিষমর্দিনী ( দেবীর ডাইনে গণেশ ও লক্ষ্মী এবং বামে কার্তিক ও সরস্বতী ) প্রভৃতি। এছাড়া আছে অন্যান্য নকশা। মূর্তিগুলি নিখুঁত। কোন প্রতিষ্ঠালিপি না থাকায় বলা কঠিন, মন্দিরটি ঠিক কোন সময়ের। তবে এটি যে বেশ প্রাচীন তাতে কোন সন্দেহ নেই। মন্দিরটি পশ্চিম বঙ্গ সরকার কর্তৃক সংরক্ষিত।
শ্রীঅদ্বৈত প্রভুর মন্দির, শান্তিপুর |
মন্দিরের শিখরদেশ |
মন্দিরের সামনের ত্রিখিলান বিন্যাস |
মন্দিরের মাঝের খিলানের কাজ |
বাঁ দিকের খিলানের ওপরের কাজ |
মন্দিরের টেরাকোটার কাজ -১ |
মন্দিরের টেরাকোটার কাজ -২ |
মন্দিরের টেরাকোটার কাজ -৩ |
মন্দিরের টেরাকোটার কাজ -৪ |
শ্রীঅদ্বৈত প্রভু ও তাঁর পত্নী সীতাদেবীর মূর্তি |
এ মন্দিরের উত্তর দিকে, গোকুলচাঁদের দক্ষিণমুখী, বাংলা আটচালা রীতির মন্দিরটিও উঁচু ভিত্তিবেদির উপর প্রতিষ্ঠিত এবং গঠন ও আয়তনে অদ্বৈতপ্রভুর মন্দিরটির ঠিক অনুরূপ। গর্ভগৃহের সামনে ত্রিখিলানযুক্ত আবৃত অলিন্দ। কোন প্রতিষ্ঠাফলক না থাকলেও এটির প্রতিষ্ঠাকাল ১৬৬২ শকাব্দ ( ১৭৪০ খ্রীষ্টাব্দ ) বলে জানা যায়। ঘনশ্যাম গোস্বামীর পুত্র শ্রীরঘুনন্দন গোস্বামী ছিলেন এই বংশের প্রাণপুরুষ। তিনি সুপণ্ডিত ছিলেন। কথিত আছে, রঘুনন্দন গুপ্তিপাড়ার শ্রীশ্রী বিন্দাবনচন্দ্র জিউর সেবায়েত দণ্ডীর নিকট বেদান্ত শাস্ত্রাদি অধ্যয়ন করতে যান। পাঠ শেষ করে ফিরে আসবার সময় তিনি সেখানকার দুটি বিগ্রহের মধ্যে একটি প্রার্থনা করেন। দণ্ডী চোখ বন্ধ অবস্থায় তাঁকে একটিকে নিতে বলেন। যেটি তিনি ঐ অবস্থায় স্পর্শ করে নিয়ে আসেন সেটিই শ্রীশ্রী গোকুলচাঁদ বিগ্রহ এবং অপরটি গুপ্তিপাড়া মঠের কৃষ্ণচন্দ্র বিগ্রহ। বর্ধমান জেলার জামগ্রামের নন্দীদের সহায়তায় মন্দিরটি নাকি নির্মিত হয়েছিল। এ মন্দিরের গায়ে পোড়ামাটির কোন মূর্তি বা অলংকরণ নেই, তবে পঙ্খের ফুলকারি ও জ্যামিতিক কিছু নকশা দেখা যায়। গর্ভগৃহে অদ্বৈতপ্রভুর অভিষিক্ত এবং ঘনশ্যাম গোস্বামীর প্রতিষ্ঠিত কষ্টিপাথরের রাধাবিনোদ মূর্তি, কাঠের গোকুলচাঁদ, ধাতুময়ী কয়েকটি ছোট ছোট মূর্তি ও শালগ্রামশিলাদি আছে। মন্দিরে বিগ্রহের নিয়মিত সেবা-পূজা-ভোগ-আরতি হয়। এছাড়াও বিশেষ পূজা যেমন রাস, দোল, ঝুলন ও জন্মাষ্টমী উৎসব পালিত হয়।
মন্দিরদুটি পরিদর্শনের তারিখ : ০৭.১২.২০১৫
গোকুলচাঁদ মন্দিরের বিপরীত দিকে একটি দালান মন্দিরে রামচন্দের মূর্তি, গৌর-নিতাই, জগন্নাথ ও অন্যান্য মূর্তি আছে। এই মন্দিরের পূর্ব দিকের দেওয়ালে পোড়ামাটির একটি কালী মূর্তি ও অন্য আর একটি মূর্তি উৎকীর্ণ আছে। তবে কলিচুনের প্রলেপে মূর্তি দুটি অনেকটাই ম্লান। অদ্বৈতপ্রভুর মন্দিরের বিপরীত দিকে আছে দুর্গাদালান। উল্লেখ্য, শান্তিপুরে অদ্বৈতাচার্য়ের বংশধরদের যে বিগ্রহবাড়িগুলি আছে তার মধ্যে বড়গোস্বামী ও মধ্যম গোস্বামী বাড়ি দুটিতেই একমাত্র দুর্গা পূজা হয়ে থাকে। চারটি মন্দিরের মধ্যস্থলের ফাঁকা জায়গাটি উঁচু করে বাঁধানো এবং রেলিং দিয়ে ঘেরা। মধ্যম গোস্বামীর এই ঠাকুর বাড়ি পাঁচিল দিয়ে ঘেরা। এই বাড়ির বাইরে একটি রাসমন্দিরও আছে।
শান্তিপুরে যেতে হলে শিয়ালদহ থেকে শান্তিপুর লোকাল ধরুন। রেলপথে কলকাতা থেকে শান্তিপুরের দূরত্ব ৯৩ কি মি। ট্রেনে সময় লাগে ঘন্টা আড়াই। ৩৪ নং জাতীয় সড়ক শান্তিপুরের ওপর দিয়ে গেছে। তাই বাসে বা গাড়িতেও যেতে পারেন।
সহায়ক গ্রন্থাবলি :
১. নদিয়া জেলার পুরাকীর্তি : মোহিত রায় ( তথ্য-সংকলন ও গ্রন্থনা )
২. বাংলার মন্দির স্থাপত্য ও ভাস্কর্য : প্রণব রায়
৩. রাসোৎসব - ২০১৫ উপলক্ষে শান্তিপুর বিগ্রহবাড়ি সমন্বয় সমিতি কর্তৃক প্রকাশিত পুস্তিকা
৪. শান্তিপুর - পরিচয় ( ২ য় ভাগ ) : কালীকৃষ্ণ ভট্টাচার্য
গোকুলচাঁদ মন্দির |
মন্দিরের শিখরদেশ |
মন্দিরের সামনের ত্রিখিলান বিন্যাস |
মন্দিরের সামনের থামগুলি |
শ্রীশ্রী গোকুলচাঁদ ও অন্যান্য বিগ্রহ |
শ্রীশ্রী গোকুলচাঁদ ও রাধিকা বিগ্রহ |
শ্রীশ্রী রাধাবিনোদ ও রাধিকা বিগ্রহ |
গোকুলচাঁদ মন্দিরের বিপরীত দিকে একটি দালান মন্দিরে রামচন্দের মূর্তি, গৌর-নিতাই, জগন্নাথ ও অন্যান্য মূর্তি আছে। এই মন্দিরের পূর্ব দিকের দেওয়ালে পোড়ামাটির একটি কালী মূর্তি ও অন্য আর একটি মূর্তি উৎকীর্ণ আছে। তবে কলিচুনের প্রলেপে মূর্তি দুটি অনেকটাই ম্লান। অদ্বৈতপ্রভুর মন্দিরের বিপরীত দিকে আছে দুর্গাদালান। উল্লেখ্য, শান্তিপুরে অদ্বৈতাচার্য়ের বংশধরদের যে বিগ্রহবাড়িগুলি আছে তার মধ্যে বড়গোস্বামী ও মধ্যম গোস্বামী বাড়ি দুটিতেই একমাত্র দুর্গা পূজা হয়ে থাকে। চারটি মন্দিরের মধ্যস্থলের ফাঁকা জায়গাটি উঁচু করে বাঁধানো এবং রেলিং দিয়ে ঘেরা। মধ্যম গোস্বামীর এই ঠাকুর বাড়ি পাঁচিল দিয়ে ঘেরা। এই বাড়ির বাইরে একটি রাসমন্দিরও আছে।
শ্রীশ্রী রামচন্দ্র |
গৌর-নিতাই মূর্তি |
দুর্গা দালান |
দুটি মন্দির ও তার সামনের উঁচু বাঁধান চত্বর |
রাসমান্দির |
সহায়ক গ্রন্থাবলি :
১. নদিয়া জেলার পুরাকীর্তি : মোহিত রায় ( তথ্য-সংকলন ও গ্রন্থনা )
২. বাংলার মন্দির স্থাপত্য ও ভাস্কর্য : প্রণব রায়
৩. রাসোৎসব - ২০১৫ উপলক্ষে শান্তিপুর বিগ্রহবাড়ি সমন্বয় সমিতি কর্তৃক প্রকাশিত পুস্তিকা
৪. শান্তিপুর - পরিচয় ( ২ য় ভাগ ) : কালীকৃষ্ণ ভট্টাচার্য