রবিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২১

JayChandi Temple, Madral, Bhatpara / Kankinara, North 24 Parganas

 জয়চণ্ডী  মন্দির,  মাদরাল,  ভাটপাড়া /  কাঁকিনাড়া,  উত্তর  ২৪  পরগনা

                         শ্যামল  কুমার  ঘোষ

            উত্তর  ২৪  পরগনা  জেলার  ভাটপাড়ার  পূর্ব  দিকে  অবস্থিত  মাদরাল  গ্রাম।  শিয়ালদহ-নৈহাটি  রেলপথে  কাঁকিনাড়া  স্টেশন  থেকে  টোটোতে  সহজেই  এই  গ্রামে  যাওয়া  যায়।  মাদরাল  গ্রামের  নামকরণ  সম্পর্কে  জানা  যায়  যে  পশ্চিম  দেশীয়  মাদার  আলী  নামে  জনৈক  মুসলমানের  নামানুসারে  গ্রামের  নাম  মাদরাইল  বা  মাদরাল  হয়েছে।  মাদরালে  জয়চণ্ডী  মন্দির  প্রসিদ্ধ।  কতকাল  আগে  এই  মন্দির  স্থাপিত  হয়েছিল  তা  জানা  যায়  না।  জনশ্রুতি,  এক  সময়  বিস্তীর্ণ  জঙ্গলের  মধ্যে  ছিল  এই  মন্দির।  সম্পূর্ণ  এলাকাটি  ছিল  ডাকাতদের  দখলে।  তখন  জয়চণ্ডী  ডাকাতদের  আরাধ্য  দেবী  ছিলেন।  তারা  মন্দিরে  নরবলিও  দিত।  লোকে  এই  জঙ্গলকে  বলত  'জয়চণ্ডীর  জঙ্গল'।  ভাটপাড়ার  মধু  ডাকাত,  তেঁতুলের  গৌরে  বেদে,  নৈহাটির  রঘু  ডাকাত  প্রভৃতি  কুখ্যাত  ডাকাত  দলের  আড্ডা  ছিল  এই  জয়চণ্ডীর  জঙ্গলে।  ডাকাত  সর্দার  গৌরে  বেদের  লাঠিয়ালরূপে  খ্যাতি  ছিল।  তা  ছাড়া  রণপায়ে  গ্রাম  থেকে  গ্রামান্তরে  অতি  দ্রুত  যেতে  পারত।  তখন  গঙ্গার  সঙ্গে  সংযোগকারী  ত্রিমোহিনী  খাল  ছিল  এই  মন্দির  সংলগ্ন  অঞ্চলে।  ডাকাতের  দল  এই  খাল  দিয়ে  ছিপ  নৌকার  সাহায্যে  ডাকাতি  করে  ফিরত  এই  জয়চণ্ডীর  জঙ্গলে।  ইংরেজ  শাসন  কালে  ডাকাতদের  বিরুদ্ধে  অভিযান  শুরু  হল।  পুলিশের  অভিযানে  কেউ  কেউ  মারা  গেল,  অনেকে  ধরা  পড়ল,  অনেকেই  আবার  ডাকাতি  ছেড়ে  দিল।  ডাকাতি  বন্ধ  হয়ে  যাওয়ায়  মন্দিরটি  পরিত্যক্ত  হল।  ডাকাতরা  মন্দির  ত্যাগ  করার  সময়  জয়চণ্ডী  দেবীর  বিগ্রহ  জয়চণ্ডী  দীঘিতে  ফেলে  দিয়ে  যায়।  বহুদিন দেবীর  মন্দির  পরিত্যক্ত  অবস্থায়  পড়ে  থাকে।  

            তারপর  মানুষের  প্রয়োজনে  জঙ্গল  পরিষ্কার  করে  লোক  বসতি  শুরু  হল।  নবিংশ  শতাব্দীর  মাঝামাঝি  কোন  এক  সময়  স্থানীয়  জগৎ  চক্রবর্তী  মহাশয়  স্বপ্নাদেশ  পেয়ে  দীঘির  জল  থেকে  বিগ্রহ  উদ্ধার  করে,  মন্দির  সংস্কার  করে,  দেবীকে  পুনরায়  প্রতিষ্ঠা  করে  নিত্য  পূজার  ব্যবস্থা  করলেন।  ১৩৪৩  বঙ্গাব্দে  ভাটপাড়ার  জ্যোতিষ,  সতীশ  ও  গিরীশ  চন্দ্র  ঘোষ  মন্দিরের  আমূল  সংস্কার  করেন।  মন্দিরে  সংস্কারকালীন  একটি  প্রতিষ্ঠাফলক  আছে। 

             উঁচু  ভিত্তিবেদির  উপর  স্থাপিত,  দক্ষিণমুখী  মন্দিরটি  আটচালা  শৈলীর।  মন্দির  সংলগ্ন  অলিন্দ  আছে।  মন্দিরের  সামনে  চাঁদনি  আকৃতির  একটি  নাটমন্দির  আছে।  মন্দিরে  এখন  কোন  বিগ্রহ  নেই।  প্রতি  বছর  ফাল্গুন  পূর্ণিমার  ছয়দিন  পর  প্রতিমা  এনে  জয়চণ্ডীর  পূজা  করা  হয়।  সপ্তম  দোল  উপলক্ষে  এখানে একটি  মেলা  বসে।

            মন্দিরটি  পরিদর্শনের  তারিখ : ১০.১১.২০২১         

জয়চণ্ডী মন্দির, মাদরাল 

মন্দিরের সামনের নাটমন্দির 

মন্দিরের শিখর 

সংস্কারফলক 

সহায়ক  গ্রন্থ :

          ১)  পশ্চিমবঙ্গের  পূজা-পার্বণ  ও  মেলা : অশোক  মিত্র  সম্পাদিত

*******************************************************

রামায়ণের ৭টি খণ্ডের ৬৪ টি উপাখ্যান ও ১৮৫ টি টেরাকোটা ফলকের আলোকচিত্র সংবলিত আমার লেখা এবং 'রা প্রকাশন' কর্তৃক প্রকাশিত বই 'বাংলার টেরাকোটা মন্দিরে রামায়ণ' প্রকাশিত হয়েছে।


 বইটি ডাক যোগে সংগ্রহ করতে হলে যোগাযোগ করুন :  9038130757 এই নম্বরে। 

কলকাতার কলেজস্ট্রিটের মোড়ে দুই মোহিনীমোহন কাঞ্জিলালের কাপড়ের দোকানের মাঝের রাস্তা ১৫, শ্যামাচরণ দে স্ট্রিটের উপর অবস্থিত বিদ্যাসাগর টাওয়ারের দু'তলায় 'রা প্রকাশনে'র দোকান। ওখান থেকে বইটি সংগ্রহ করতে পারেন। কোনও অসুবিধা হলে উপরোক্ত নম্বরে ফোন করতে পারেন।


বৃহস্পতিবার, ১১ নভেম্বর, ২০২১

Gopinath Temple, Sridhar Banshidhar Road, Nababganj, Ichapur, North 24 Parganas

 গোপীনাথ  মন্দির,  শ্রীধর  বংশীধর  রোড,  নবাবগঞ্জ,  ইছাপুর,  উত্তর  ২৪  পরগনা

শ্যামল  কুমার  ঘোষ  

            উত্তর  ২৪  পরগনা  জেলার  উত্তর  ব্যারাকপুর  পৌরসভার  অধীন  একটি  পৌর  শহর  নবাবগঞ্জ।  শিয়ালদহ-নৈহাটি  রেলপথে  ইছাপুর  স্টেশনে  নেমে  অটো  বা  টোটোতে  এখানে  যাওয়া  যায়। 

            নবাবগঞ্জের  শ্রীধর  বংশীধর  রোডে  গঙ্গার  কাছাকাছি  অবস্থিত  দুটি  রাধাকৃষ্ণের  মন্দির  আছে।  একটি  গোপীনাথ  মন্দির  ও  অপরটি  রাধাগোবিন্দ  মন্দির।  এখানে  আমরা  গোপীনাথ  মন্দির  নিয়ে  আলোচনা  করব।  এখানে  উল্লেখ্য,  শ্রীধর  বংশীধর  রোডটি  তৎকালীন  বারাসতের  ম্যাজিস্ট্রেটের  অনুরোধে  শ্রীধর  মণ্ডল  ও  বংশীধর  মণ্ডল  তৈরী  করে  দিয়েছিলেন। 

            গোপীনাথ  মন্দিরটি  সমতল  ছাদ  বিশিষ্ট,  পূর্বমুখী  একটি  দালান  শৈলীর  মন্দির।  মন্দিরের  সামনে  অলিন্দ।  অলিন্দের  সামনে  টিনের  ছাউনি।  মন্দিরের  সামনে  ফাঁকা  উঠোন  এবং  তাকে  ঘিরে  চকমিলানো  অনেকগুলি  ঘর।  গোপীনাথজিউর  মন্দিরটি  বাংলা  ১২৫৭  সালের  ২৭ শে  আষাঢ়  স্থানীয়  শ্রীধর  ও  বংশীধর  মণ্ডল  কর্তৃক  প্রতিষ্ঠিত।  গর্ভগৃহে  গোপীনাথ  ও  রাধিকার  যুগল  মূর্তি  নিত্য  পূজিত।  গোপীনাথ  বিগ্রহ  কষ্টিপাথরের  ও  রাধারানি  অষ্টধাতুর।  গর্ভগৃহের  মেঝে  শ্বেতপাথরের।  সামনের  অলিন্দের  মেঝে  নকশা  কাটা  পাথরের।  মন্দিরটির  আশু  সংস্কার  প্রয়োজন।

            নিত্য  পূজা  ছাড়াও  মন্দিরে  অন্যান্য  বৈষ্ণব  উৎসব  পালন  করা  হয়।  শ্রাবণ  মাসের  পূর্ণিমায়  ঝুলন  সমারোহের  সঙ্গে  পালন  করা  হয়।  উৎসবের  সময়  মন্দির  প্রাঙ্গণে  বিভিন্ন  মাটির  পুতুল  দিয়ে  প্রদর্শনী  করা  হয়।  যদিও  আগের  তুলনায়  এই  উৎসব  এখন  অনেকটাই  ফিকে  হয়ে  গেছে।  পূর্বে  ঝুলন  উৎসব  উপলক্ষে  গোপীনাথজিউকে  কেন্দ্র  করে  মহা  সমারোহ  হত।  আগে  মন্দিরের  সামনের  রাস্তার  দুপাশে  একমাস  ব্যাপী  মেলা  বসতো।  মন্দিরের  প্রবেশদ্বারের  ডান  দিকের  দেওয়ালে  স্থাপিত  একটি  শিলালিপি  থেকে  জানা  যায়  যে  ইং  ১৯০৬  সালের  ২৫ শে  ফেব্রুয়ারি  ভারতের  গভর্নর  জেনারেল  গিলবার্ট  জন  এলিয়ট  ও  তাঁহার  পত্নী  এই  মন্দির  পরিদর্শনে  আসেন।  এর  থেকেই  বোঝা  যায়  যে  এই  মন্দির  আগে  কত  প্রসিদ্ধ  ছিল। 

           কী  ভাবে  যাবেন ? 

           শিয়ালদহ- নৈহাটি  রেলপথে  ইছাপুর  স্টেশনে  নেমে  অটো  বা  টোটোতে  এই  মন্দিরে  যাওয়া  যায়।  পলতা  স্টেশনে  নেমেও  যেতে  পারেন।

             মন্দিরটি  পরিদর্শনের  তারিখ : ১০.১১.২০২১ 

গোপীনাথ মন্দিরের সামনে ঝুলনের মাটির মূর্তি  

গোপীনাথ মন্দির, নবাবগঞ্জ 

শ্রীশ্রী গোপীনাথ ও রাধিকা বিগ্রহ - ১

শ্রীশ্রী গোপীনাথ ও রাধিকা বিগ্রহ - ২

শ্রীশ্রী গোপীনাথ ও রাধিকা বিগ্রহ - ৩

   সহায়ক  গ্রন্থ :

           ১)  পশ্চিমবঙ্গের  পূজা-পার্বণ  ও  মেলা :  অশোক  মিত্র  সম্পাদিত 

*******************************************************

রামায়ণের ৭টি খণ্ডের ৬৪ টি উপাখ্যান ও ১৮৫ টি টেরাকোটা ফলকের আলোকচিত্র সংবলিত আমার লেখা এবং 'রা প্রকাশন' কর্তৃক প্রকাশিত বই 'বাংলার টেরাকোটা মন্দিরে রামায়ণ' প্রকাশিত হয়েছে।


 বইটি ডাক যোগে সংগ্রহ করতে হলে যোগাযোগ করুন :  9038130757 এই নম্বরে। 

কলকাতার কলেজস্ট্রিটের মোড়ে দুই মোহিনীমোহন কাঞ্জিলালের কাপড়ের দোকানের মাঝের রাস্তা ১৫, শ্যামাচরণ দে স্ট্রিটের উপর অবস্থিত বিদ্যাসাগর টাওয়ারের দু'তলায় 'রা প্রকাশনে'র দোকান। ওখান থেকে বইটি সংগ্রহ করতে পারেন। কোনও অসুবিধা হলে উপরোক্ত নম্বরে ফোন করতে পারেন।