সোমবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১

Kripamoyi Kali Temple / Bamandas Mukhopadhyay Kali Bari, Cossipore Road, North Kolkata

 কৃপাময়ী  কালী  মন্দির / বামনদাস  মুখোপাধ্যায়  কালী  বাড়ি,  কাশীপুর  রোড,  উত্তর  কলকাতা 

শ্যামল  কুমার  ঘোষ

             কৃপাময়ী  কালী  মন্দির  উত্তর  কলকাতার  কাশীপুর  উদ্যান  বাটির  কাছে  ( ৮৭ বি  কাশীপুর  রোড )  অবস্থিত  একটি  প্রাচীন  কালী  মন্দির।  যদিও  মন্দিরটি  বামনদাস  মুখোপাধ্যায়  কালী  বাড়ি  নামেই  বেশি  পরিচিত।  ১৮২৫  শকাব্দের  ( ১৯০৪ খ্রীষ্টাব্দে )  মাঘী  পূর্ণিমার  দিন  মন্দিরটি  প্রতিষ্ঠিত  হয়।  প্রতিষ্ঠা  করেন  বামনদাস  মুখোপাধ্যায়।  

            বামনদাস  ছিলেন  কনৌজের  কবি  শ্রীহর্ষের  বংশধারার  ফুলিয়া  শাখার  পণ্ডিত  নীলকণ্ঠ  ঠাকুরের  পুত্র  শ্রীধরের  অধঃস্তন  সপ্তম  পুরুষ।  ১৮৪৭  খ্রীষ্টাব্দে  হুগলি  জেলার  গোস্বামী  মালিপাড়া  গ্রামে  তিনি  জন্ম  গ্রহণ  করেন।  কর্মজীবনে  সফল  ব্যবসায়ী  ও  কয়লা  খনির  মালিক  বামনদাস  ১৮৯৪  খ্রীষ্টাব্দে  কাশীপুরে  ব্রিটিশ  এটর্নি  জন  হার্ট  সাহেবের  ৩৫  বিঘা  বাগান  বাড়ি  ক্রয়  করে  ঠাকুর  বাড়ি,  বাগান,  পুকুর,  সিংহ  ফটক  ও  এই  নবরত্ন  মন্দির  নির্মাণ  করেন।  বিগ্রহের  পূজা  ও  মন্দির  ইত্যাদি  রক্ষণাবেক্ষণের  জন্য  কলকাতা,  বর্ধমান,  হুগলি  ও  যশোহর  জেলায়  সম্পত্তি  ক্রয়   করে  তিনি  দেবতার  নামে  উৎসর্গ  করেন।  ১৯০৯  খ্রীষ্টাব্দে  তিনি  মন্দিরের  জন্য  ট্রাস্টি  বোর্ড  গঠন  করেন।  ১৯২১  খ্রীষ্টাব্দে  এখানেই  তিনি  পরলোক  গমন  করেন। 

            উঁচু  ভিত্তিবেদির  স্থাপিত,  ত্রিখিলান  প্রবেশপথযুক্ত,  দক্ষিণমুখী  মন্দিরটি  নবরত্ন  শৈলীর।  মন্দিরের  কার্নিস  সোজা।  মন্দিরের  খিলানের  এক  একটি  স্তম্ভ  'কলাগেছ্যা'  রীতির  গোল  ও  সরু  স্তম্ভগুচ্ছের  সমষ্টি।  খিলানের  উপর  পঙ্খের  সুন্দর  কাজ  আছে।  মূল  ফটকের  উপরে  ও  গলি-প্রবেশপথের  উপরেও  পঙ্খের  কাজ  বর্তমান।  মন্দিরের  সামনে  ফাঁকা  উঠোন  এবং  তাকে  ঘিরে  চকমিলানো  অনেকগুলি  ঘর।  বারান্দায়  ইংল্যান্ডের  বার্মিংহাম  থেকে  আনা  ঢালাই  লোহার  স্তম্ভ  ব্যবহার  করা  হয়।  তখন  এদেশে  শ্বেতপাথর  পাওয়া  যেত  না।  তাই  ইতালি  থেকে  শ্বেতপাথর  ও  বার্মা  ( বর্তমান  মায়নামার )  থেকে  জানলা  দরজার  জন্য  সেগুন  কাঠ  আনা  হয়।  

            গর্ভগৃহে  শ্বেতপাথরের  সিংহাসনের  উপর  কষ্টিপাথরের  কৃপাময়ী  কালী  মূর্তি,  কষ্টিপাথরের  দুৰ্গেশ্বর  ও  ক্ষেত্রেশ্বর  নামক  দুটি  শিবলিঙ্গ  এবং  রঘুনাথ  নারায়ণ  শিলা  প্রতিষ্ঠিত  ও  নিত্য  পূজিত।  মন্দিরে  নিত্য  পূজা  ছাড়াও  সারা  বছর  বিশ্বকর্মা  ও  কার্তিক  পূজা  ছাড়া  সমস্ত  পূজা-পার্বণ  অনুষ্ঠিত  হয়।  দুর্গা  পূজাও অনুষ্ঠিত  হয়।  মন্দিরে  কোন  বলিদান  হয়  না।  অবশ্য  আগেও  ছিল  না।  আগে  কালী  পূজার  সময়  খুব  ধুমধাম  হত।  কয়েক  দিন  ধরে  যাত্রা  হত।  তুবড়ি  প্রতিযোগিতা  হত।  অনেক  লোকজন  খাওয়ানো  হত।  কাঙালি  ভোজন  করা  হত।  এখন  আর  সেই  জাঁকজমক  নেই।  মন্দিরে  বৈষ্ণব  মতে  পূজা  হয়।  মাকে  নিরামিষ  ভোগ  দেওয়া  হয়। 

            মন্দির  খোলা  থাকার  সময় :  সকাল  ৮ টা  থেকে  ১০ টা এবং  বিকাল  ৫ টা  থেকে  রাত   ৭ টা।    

            ১৯৩৯  সালে  সুভাষচন্দ্র  বসু  কংগ্রেসের  সভাপতি  নির্বাচিত  হওয়ার  পর  তাঁকে  এখানে  সংবর্ধনা  দেওয়া  হয়।  এই  ঠাকুর  বাড়ি  C.M.C.  কর্তৃক  'হেরিটেজ'  ঘোষণা  করা  হয়েছে।

            মন্দিরটি  পরিদর্শনের  তারিখ :  ২৫.০৯.২০২১ 

বামনদাস কালী বাড়ির ফটক 

গলি প্রবেশপথের উপরে পঙ্খের কাজ

কৃপাময়ী কালী মন্দির, কাশীপুর, কলকাতা  

মন্দিরের ত্রিখিলান বিন্যাস 

স্তম্ভ গুচ্ছ 

মাঝের খিলানের পঙ্খের কাজ 

পশ্চিম দিকের বারান্দা 

ঢালাই লোহার থামের নিচের অংশ 

ঢালাই লোহার থামের উপরের অংশ

ফলক - ১

ফলক - ২

কৃপাময়ী মা - ১

কৃপাময়ী মা - ২

রঘুনাথ  নারায়ণ  শিলা

ক্ষেত্রেশ্বর শিবলিঙ্গ 
       সহায়ক সূত্র :                                    
                     ১)  বামনদাস  মুখোপাধ্যায়ের  প্রপৌত্র  অসীম  মুখোপাধ্যায়ের  বক্তব্য 
                    ২)  মন্দিরে  লাগানো  ফলক
           
                                                                *******
            পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য কালী মন্দির সম্বন্ধে জানতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন / লিংকের উপর আঙুল দিয়ে টোকা দিন : 

  কলকাতার অন্যান্য মন্দির সম্বন্ধে জানতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন / লিংকের উপর আঙুল দিয়ে টোকা দিন : 

                        কলকাতার  মন্দির  

          -------------------------------------------

            আমার  ইমেল :  shyamalfpb@gmail.com   প্রয়োজনে  যোগাযোগ  করতে  পারেন।

           --------------------------------------------

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন