বুধবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২১

Muktakeshi Kali Temple and Dakshineshwar Buro Shib Temple, Ariadaha, North 24 Parganas

 মুক্তকেশী  কালী  মন্দির  ও  দক্ষিনেশ্বর  বুড়ো  শিব  মন্দির,  আড়িয়াদহ,  উত্তর  ২৪  পরগনা 

             শ্যামল  কুমার  ঘোষ 

            উত্তর  ২৪  পরগনা  জেলার  আড়িয়াদহের  গঙ্গার  ধারে  শ্মশানের  কাছে  অবস্থিত  মুক্তকেশী  কালী  মন্দির।  চৈতন্যপূর্বযুগের  তান্ত্রিক  সাধকদের  সাধন-ক্ষেত্র  ছিল  এই  আড়িয়াদহ  শ্মশান।  সমতল  ছাদ  বিশিষ্ট  একটি  দালান  মন্দির।  মন্দিরটি  পশ্চিমমুখী,  কিন্তু  মায়ের  গর্ভগৃহ  দক্ষিণমুখী।  এখানে  উল্লেখ্য,  মন্দিরের  পশ্চিম  দিকে  রাস্তা।

            মন্দিরটি  প্রতিষ্ঠিত  হয়  ১২৪৭  বঙ্গাব্দে।  মন্দিরের  প্রবেশ-দ্বারের  ডানদিকে  একটি  শ্বেতপাথরের  প্রতিষ্ঠাফলক  আছে।  মন্দিরটি  প্রথমে  ছিল  তালপাতার।  স্থানীয়  বন্দ্যোপাধ্যায়  পরিবার  মন্দিরটির  দেখাশোনা  করেন।  ঠাকুর  রামকৃষ্ণ  এই  মন্দিরে  আসতেন।  তিনি  এসে  পুরোহিতের  আসনে  বসে  মাকে  পুজোও  করেছেন।  এখানে  উল্লেখ্য,  ঠাকুরের  মায়ের  দাহকার্য  এই  আড়িয়াদহ  শ্মশানে  সম্পন্ন  হয়।  

            আগে  এখানে  পাঁঠা  বলি  হত।  এখন  চালকুমড়া,  আখ,  কলা  ইত্যাদি  বলি  দেওয়া  হয়।  নিত্য  পূজা  ছাড়াও  মন্দিরে  জ্যৈষ্ঠ  মাসে  ফলহারিণী  কালী  পূজা,  কার্তিক  মাসে  দীপান্বিতা  কালী  পূজা  ও  মাঘ  মাসে  কৃষ্ণা  চতুর্থীতে  রটন্তী  কালী  পূজা  মহা  সমারোহে  পালিত  হয়ে  থাকে।  মন্দিরে  শান্তিনাথ  শিবলিঙ্গও  নিত্য  পূজিত। 

            সকল  ৭ টা  থেকে  ১১ টা  ও  বিকাল  ৫ টা  থেকে  রাত  ৮ টা  পর্যন্ত  মায়ের  মন্দির  খোলা  থাকে।  তবে  কালীপূজা,  দুর্গাপূজা,  অক্ষয়  তৃতীয়া  ও  অন্নকূট  উৎসবে  মন্দির  সারাদিনই  খোলা  থাকে।              

মুক্তকেশী কালী, আড়িয়াদহ - ১

মুক্তকেশী কালী, আড়িয়াদহ - ২

প্রতিষ্ঠাফলক 

            মুক্তকেশী  কালী  মন্দিরের  বিপরীত  দিকে,  শ্মশানের  পাশে  অবস্থিত  দক্ষিণেশ্বর  বুড়ো  শিবের  মন্দির।  প্রবাদ :  বুড়ো  শিব  স্বয়ম্ভূ।  রাজা  হোসেন  শাহের  আমলে  কোন  এক  ব্রাহ্মণ  স্বপ্নে  দেখেন,  মহাদেব  তাঁকে  বলছেন,  বহুদিন  গঙ্গার  ধারে  জঙ্গলের  মধ্যে  পড়ে  আছি।  একটু  সেবার  ব্যবস্থা  কর।  পরদিন  ব্রাহ্মণ  গঙ্গার  ধারে  গিয়ে  দেখেন  সত্যিই  একটি  শিবলিঙ্গ  রয়েছে।  শোনা  যায়,  বড়লাট  লর্ড  ওয়ারেন  হেস্টিংস  ভারতের  বিভিন্ন  প্রাচীন  কীর্তির  বিবরণ  সংগ্রহ  করার  সময়  লোকমুখে  এই  কাহিনী  শুনে  কৌতূহলী  হয়ে  শিবলিঙ্গটিকে  পরীক্ষা  করার  জন্য  মাটি  খোঁড়েন।  কিন্তু  অনেক  চেষ্টা  করেও  তিনি  শিবলিঙ্গটির  তল  পাননি।  মন্দিরের  একটি  ফলক  থেকে  জানা  যায়  যে  বানরাজার  আমলে  মন্দিরটি  প্রতিষ্ঠিত  হয়।  ১৯৯০  খ্রীষ্টাব্দে  মন্দিরটির  সংস্কার  করা  হয়। 

দক্ষিণেশ্বর বুড়ো শিব মন্দিরের প্রবেশ-দ্বার 

দক্ষিণেশ্বর বুড়ো শিব, আড়িয়াদহ

সংস্কার-ফলক 

       কী ভাবে  যাবেন ?

            বাসে  বা  ট্রেনে  দক্ষিণেশ্বরে  এসে  নামুন।  সেখান  থেকে  অটো,  টোটো  বা  রিক্সায়  আড়িয়াদহ  ফেরি  ঘাটে  নামুন।  কাছেই  মন্দির।

    সহায়ক  গ্রন্থ            

               ১)  পশ্চিমবঙ্গ  ভ্রমণ  ও  দর্শন :  ভূপাতিরঞ্জন  দাস  

            পশ্চিম  বঙ্গের  অন্যান্য  কালী  মন্দির  সম্বন্ধে  জানতে  নিচের  লিংকে  ক্লিক  করুন :

                         পশ্চিম  বঙ্গের  কালী  মন্দির 

----------------------------------------------------------

রামায়ণের ৭টি খণ্ডের ৬৪ টি উপাখ্যান ও ১৮৫ টি টেরাকোটা ফলকের আলোকচিত্র সংবলিত আমার লেখা এবং 'রা প্রকাশন' কর্তৃক প্রকাশিত বই 'বাংলার টেরাকোটা মন্দিরে রামায়ণ' প্রকাশিত হয়েছে।


 বইটি ডাক যোগে সংগ্রহ করতে হলে যোগাযোগ করুন :  9038130757 এই নম্বরে। 

কলকাতার কলেজস্ট্রিটের মোড়ে দুই মোহিনীমোহন কাঞ্জিলালের কাপড়ের দোকানের মাঝের রাস্তা ১৫, শ্যামাচরণ দে স্ট্রিটের উপর অবস্থিত বিদ্যাসাগর টাওয়ারের দু'তলায় 'রা প্রকাশনে'র দোকান। ওখান থেকে বইটি সংগ্রহ করতে পারেন। কোনও অসুবিধা হলে উপরোক্ত নম্বরে ফোন করতে পারেন। 
--------------------------------------------------------

রবিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২১

JayChandi Temple, Madral, Bhatpara / Kankinara, North 24 Parganas

 জয়চণ্ডী  মন্দির,  মাদরাল,  ভাটপাড়া /  কাঁকিনাড়া,  উত্তর  ২৪  পরগনা

                         শ্যামল  কুমার  ঘোষ

            উত্তর  ২৪  পরগনা  জেলার  ভাটপাড়ার  পূর্ব  দিকে  অবস্থিত  মাদরাল  গ্রাম।  শিয়ালদহ-নৈহাটি  রেলপথে  কাঁকিনাড়া  স্টেশন  থেকে  টোটোতে  সহজেই  এই  গ্রামে  যাওয়া  যায়।  মাদরাল  গ্রামের  নামকরণ  সম্পর্কে  জানা  যায়  যে  পশ্চিম  দেশীয়  মাদার  আলী  নামে  জনৈক  মুসলমানের  নামানুসারে  গ্রামের  নাম  মাদরাইল  বা  মাদরাল  হয়েছে।  মাদরালে  জয়চণ্ডী  মন্দির  প্রসিদ্ধ।  কতকাল  আগে  এই  মন্দির  স্থাপিত  হয়েছিল  তা  জানা  যায়  না।  জনশ্রুতি,  এক  সময়  বিস্তীর্ণ  জঙ্গলের  মধ্যে  ছিল  এই  মন্দির।  সম্পূর্ণ  এলাকাটি  ছিল  ডাকাতদের  দখলে।  তখন  জয়চণ্ডী  ডাকাতদের  আরাধ্য  দেবী  ছিলেন।  তারা  মন্দিরে  নরবলিও  দিত।  লোকে  এই  জঙ্গলকে  বলত  'জয়চণ্ডীর  জঙ্গল'।  ভাটপাড়ার  মধু  ডাকাত,  তেঁতুলের  গৌরে  বেদে,  নৈহাটির  রঘু  ডাকাত  প্রভৃতি  কুখ্যাত  ডাকাত  দলের  আড্ডা  ছিল  এই  জয়চণ্ডীর  জঙ্গলে।  ডাকাত  সর্দার  গৌরে  বেদের  লাঠিয়ালরূপে  খ্যাতি  ছিল।  তা  ছাড়া  রণপায়ে  গ্রাম  থেকে  গ্রামান্তরে  অতি  দ্রুত  যেতে  পারত।  তখন  গঙ্গার  সঙ্গে  সংযোগকারী  ত্রিমোহিনী  খাল  ছিল  এই  মন্দির  সংলগ্ন  অঞ্চলে।  ডাকাতের  দল  এই  খাল  দিয়ে  ছিপ  নৌকার  সাহায্যে  ডাকাতি  করে  ফিরত  এই  জয়চণ্ডীর  জঙ্গলে।  ইংরেজ  শাসন  কালে  ডাকাতদের  বিরুদ্ধে  অভিযান  শুরু  হল।  পুলিশের  অভিযানে  কেউ  কেউ  মারা  গেল,  অনেকে  ধরা  পড়ল,  অনেকেই  আবার  ডাকাতি  ছেড়ে  দিল।  ডাকাতি  বন্ধ  হয়ে  যাওয়ায়  মন্দিরটি  পরিত্যক্ত  হল।  ডাকাতরা  মন্দির  ত্যাগ  করার  সময়  জয়চণ্ডী  দেবীর  বিগ্রহ  জয়চণ্ডী  দীঘিতে  ফেলে  দিয়ে  যায়।  বহুদিন দেবীর  মন্দির  পরিত্যক্ত  অবস্থায়  পড়ে  থাকে।  

            তারপর  মানুষের  প্রয়োজনে  জঙ্গল  পরিষ্কার  করে  লোক  বসতি  শুরু  হল।  নবিংশ  শতাব্দীর  মাঝামাঝি  কোন  এক  সময়  স্থানীয়  জগৎ  চক্রবর্তী  মহাশয়  স্বপ্নাদেশ  পেয়ে  দীঘির  জল  থেকে  বিগ্রহ  উদ্ধার  করে,  মন্দির  সংস্কার  করে,  দেবীকে  পুনরায়  প্রতিষ্ঠা  করে  নিত্য  পূজার  ব্যবস্থা  করলেন।  ১৩৪৩  বঙ্গাব্দে  ভাটপাড়ার  জ্যোতিষ,  সতীশ  ও  গিরীশ  চন্দ্র  ঘোষ  মন্দিরের  আমূল  সংস্কার  করেন।  মন্দিরে  সংস্কারকালীন  একটি  প্রতিষ্ঠাফলক  আছে। 

             উঁচু  ভিত্তিবেদির  উপর  স্থাপিত,  দক্ষিণমুখী  মন্দিরটি  আটচালা  শৈলীর।  মন্দির  সংলগ্ন  অলিন্দ  আছে।  মন্দিরের  সামনে  চাঁদনি  আকৃতির  একটি  নাটমন্দির  আছে।  মন্দিরে  এখন  কোন  বিগ্রহ  নেই।  প্রতি  বছর  ফাল্গুন  পূর্ণিমার  ছয়দিন  পর  প্রতিমা  এনে  জয়চণ্ডীর  পূজা  করা  হয়।  সপ্তম  দোল  উপলক্ষে  এখানে একটি  মেলা  বসে।

            মন্দিরটি  পরিদর্শনের  তারিখ : ১০.১১.২০২১         

জয়চণ্ডী মন্দির, মাদরাল 

মন্দিরের সামনের নাটমন্দির 

মন্দিরের শিখর 

সংস্কারফলক 

সহায়ক  গ্রন্থ :

          ১)  পশ্চিমবঙ্গের  পূজা-পার্বণ  ও  মেলা : অশোক  মিত্র  সম্পাদিত

*******************************************************

রামায়ণের ৭টি খণ্ডের ৬৪ টি উপাখ্যান ও ১৮৫ টি টেরাকোটা ফলকের আলোকচিত্র সংবলিত আমার লেখা এবং 'রা প্রকাশন' কর্তৃক প্রকাশিত বই 'বাংলার টেরাকোটা মন্দিরে রামায়ণ' প্রকাশিত হয়েছে।


 বইটি ডাক যোগে সংগ্রহ করতে হলে যোগাযোগ করুন :  9038130757 এই নম্বরে। 

কলকাতার কলেজস্ট্রিটের মোড়ে দুই মোহিনীমোহন কাঞ্জিলালের কাপড়ের দোকানের মাঝের রাস্তা ১৫, শ্যামাচরণ দে স্ট্রিটের উপর অবস্থিত বিদ্যাসাগর টাওয়ারের দু'তলায় 'রা প্রকাশনে'র দোকান। ওখান থেকে বইটি সংগ্রহ করতে পারেন। কোনও অসুবিধা হলে উপরোক্ত নম্বরে ফোন করতে পারেন।


বৃহস্পতিবার, ১১ নভেম্বর, ২০২১

Gopinath Temple, Sridhar Banshidhar Road, Nababganj, Ichapur, North 24 Parganas

 গোপীনাথ  মন্দির,  শ্রীধর  বংশীধর  রোড,  নবাবগঞ্জ,  ইছাপুর,  উত্তর  ২৪  পরগনা

শ্যামল  কুমার  ঘোষ  

            উত্তর  ২৪  পরগনা  জেলার  উত্তর  ব্যারাকপুর  পৌরসভার  অধীন  একটি  পৌর  শহর  নবাবগঞ্জ।  শিয়ালদহ-নৈহাটি  রেলপথে  ইছাপুর  স্টেশনে  নেমে  অটো  বা  টোটোতে  এখানে  যাওয়া  যায়। 

            নবাবগঞ্জের  শ্রীধর  বংশীধর  রোডে  গঙ্গার  কাছাকাছি  অবস্থিত  দুটি  রাধাকৃষ্ণের  মন্দির  আছে।  একটি  গোপীনাথ  মন্দির  ও  অপরটি  রাধাগোবিন্দ  মন্দির।  এখানে  আমরা  গোপীনাথ  মন্দির  নিয়ে  আলোচনা  করব।  এখানে  উল্লেখ্য,  শ্রীধর  বংশীধর  রোডটি  তৎকালীন  বারাসতের  ম্যাজিস্ট্রেটের  অনুরোধে  শ্রীধর  মণ্ডল  ও  বংশীধর  মণ্ডল  তৈরী  করে  দিয়েছিলেন। 

            গোপীনাথ  মন্দিরটি  সমতল  ছাদ  বিশিষ্ট,  পূর্বমুখী  একটি  দালান  শৈলীর  মন্দির।  মন্দিরের  সামনে  অলিন্দ।  অলিন্দের  সামনে  টিনের  ছাউনি।  মন্দিরের  সামনে  ফাঁকা  উঠোন  এবং  তাকে  ঘিরে  চকমিলানো  অনেকগুলি  ঘর।  গোপীনাথজিউর  মন্দিরটি  বাংলা  ১২৫৭  সালের  ২৭ শে  আষাঢ়  স্থানীয়  শ্রীধর  ও  বংশীধর  মণ্ডল  কর্তৃক  প্রতিষ্ঠিত।  গর্ভগৃহে  গোপীনাথ  ও  রাধিকার  যুগল  মূর্তি  নিত্য  পূজিত।  গোপীনাথ  বিগ্রহ  কষ্টিপাথরের  ও  রাধারানি  অষ্টধাতুর।  গর্ভগৃহের  মেঝে  শ্বেতপাথরের।  সামনের  অলিন্দের  মেঝে  নকশা  কাটা  পাথরের।  মন্দিরটির  আশু  সংস্কার  প্রয়োজন।

            নিত্য  পূজা  ছাড়াও  মন্দিরে  অন্যান্য  বৈষ্ণব  উৎসব  পালন  করা  হয়।  শ্রাবণ  মাসের  পূর্ণিমায়  ঝুলন  সমারোহের  সঙ্গে  পালন  করা  হয়।  উৎসবের  সময়  মন্দির  প্রাঙ্গণে  বিভিন্ন  মাটির  পুতুল  দিয়ে  প্রদর্শনী  করা  হয়।  যদিও  আগের  তুলনায়  এই  উৎসব  এখন  অনেকটাই  ফিকে  হয়ে  গেছে।  পূর্বে  ঝুলন  উৎসব  উপলক্ষে  গোপীনাথজিউকে  কেন্দ্র  করে  মহা  সমারোহ  হত।  আগে  মন্দিরের  সামনের  রাস্তার  দুপাশে  একমাস  ব্যাপী  মেলা  বসতো।  মন্দিরের  প্রবেশদ্বারের  ডান  দিকের  দেওয়ালে  স্থাপিত  একটি  শিলালিপি  থেকে  জানা  যায়  যে  ইং  ১৯০৬  সালের  ২৫ শে  ফেব্রুয়ারি  ভারতের  গভর্নর  জেনারেল  গিলবার্ট  জন  এলিয়ট  ও  তাঁহার  পত্নী  এই  মন্দির  পরিদর্শনে  আসেন।  এর  থেকেই  বোঝা  যায়  যে  এই  মন্দির  আগে  কত  প্রসিদ্ধ  ছিল। 

           কী  ভাবে  যাবেন ? 

           শিয়ালদহ- নৈহাটি  রেলপথে  ইছাপুর  স্টেশনে  নেমে  অটো  বা  টোটোতে  এই  মন্দিরে  যাওয়া  যায়।  পলতা  স্টেশনে  নেমেও  যেতে  পারেন।

             মন্দিরটি  পরিদর্শনের  তারিখ : ১০.১১.২০২১ 

গোপীনাথ মন্দিরের সামনে ঝুলনের মাটির মূর্তি  

গোপীনাথ মন্দির, নবাবগঞ্জ 

শ্রীশ্রী গোপীনাথ ও রাধিকা বিগ্রহ - ১

শ্রীশ্রী গোপীনাথ ও রাধিকা বিগ্রহ - ২

শ্রীশ্রী গোপীনাথ ও রাধিকা বিগ্রহ - ৩

   সহায়ক  গ্রন্থ :

           ১)  পশ্চিমবঙ্গের  পূজা-পার্বণ  ও  মেলা :  অশোক  মিত্র  সম্পাদিত 

*******************************************************

রামায়ণের ৭টি খণ্ডের ৬৪ টি উপাখ্যান ও ১৮৫ টি টেরাকোটা ফলকের আলোকচিত্র সংবলিত আমার লেখা এবং 'রা প্রকাশন' কর্তৃক প্রকাশিত বই 'বাংলার টেরাকোটা মন্দিরে রামায়ণ' প্রকাশিত হয়েছে।


 বইটি ডাক যোগে সংগ্রহ করতে হলে যোগাযোগ করুন :  9038130757 এই নম্বরে। 

কলকাতার কলেজস্ট্রিটের মোড়ে দুই মোহিনীমোহন কাঞ্জিলালের কাপড়ের দোকানের মাঝের রাস্তা ১৫, শ্যামাচরণ দে স্ট্রিটের উপর অবস্থিত বিদ্যাসাগর টাওয়ারের দু'তলায় 'রা প্রকাশনে'র দোকান। ওখান থেকে বইটি সংগ্রহ করতে পারেন। কোনও অসুবিধা হলে উপরোক্ত নম্বরে ফোন করতে পারেন।

বুধবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২১

Siddheswari Kali Bari, Kuthighat, Baranagar, North 24 Parganas

সিদ্ধেশ্বরী  কালী  বাড়ি,  কুঠিঘাট,  বরানগর,  উত্তর  ২৪  পরগনা 

               শ্যামল  কুমার  ঘোষ 

            বরানগর  কুঠিঘাটের  জয়  মিত্র  কালীবাড়ির  কিছুটা  দক্ষিণ-পূর্বে  কুঠিঘাট  অটো  স্ট্যান্ডের  পাশে,  বি. কে. মৈত্র  রোডে  সিদ্ধেশ্বরী  কালীর  দালান  মন্দিরটি  উল্লেখযোগ্য।  দালানটি  দক্ষিণমুখী  ও  প্রশস্ত।  বিগ্রহ  দারু  নির্মিত।  বরানগরে  এই  কালী  খুবিই  প্রসিদ্ধা।  

            শ্রীরামকৃষ্ণ  এই  মন্দিরে  কয়েকবার  এসেছিলেন।  একবার  কেশবচন্দ্র  খুব  অসুস্থ  হলে  শ্রীরামকৃষ্ণ  তাঁর  আরোগ্য  কামনায়  এই  মায়ের  কাছে  ডাব-চিনি  মানত  করেন।  এখনও  বেলুড়  মঠের  মহারাজরা  তাঁদের  মঠের  কেউ  অসুস্থ  হলে  ডাব-চিনি  মানত  করেন  এবং  সেরে  ওঠার  পর  ডাব-চিনি  সহযোগে  এই  মায়ের  কাছে  পুজো  দেন।

            মন্দিরের  বর্তমান  সেবায়েত-পুরোহিত  দেবকুমার  চট্টোপাধ্যায়।  প্রায়  দুই  শত  বছর  আগে  রটন্তী  কালী  পূজার  দিন  স্থানীয়  জমিদার  জয়নারায়ণ  বন্দোপাধ্যায়  এই  মন্দির  প্রতিষ্ঠা করেন।  দৈনিক  পূজা  ছাড়াও  মন্দিরে  মূল  তিনটি  উৎসব  পালন  করা  হয়।  রটন্তী  কালী  পূজার  দিন  ব্যৎসরিক  পূজা,  দীপাবলি  কালী  পূজা  ও  ফলহারিণী  কালী  পূজা  অনুষ্ঠিত  হয়।  এছাড়া  চৈত্র,  পৌষ  ও  ভাদ্র  মাসে  ধানের  লক্ষ্মী  পূজাও  এই  মন্দিরে  অনুষ্ঠিত  হয়  এবং  সেই  উপলক্ষ্যে  মায়ের  বিশেষ  পূজা,  ভোগ  ও আরতি  হয়ে  থাকে।  উৎসব  উপলক্ষ্যে  মন্দিরে  প্রচুর  ভক্ত  সমাগম  হয়।  মন্দিরে  ডানদিকের  একটি  ঘরে  বাবা  সিদ্ধেশ্বর  নামক  শুভ্র  বর্ণের  একটি  ছোট  শিবলিঙ্গ  প্রতিষ্ঠিত  এবং  নিত্যপূজিত।       

কী  ভাবে  যাবেন ?

            হাওড়া,  শিয়ালদহ  বা  শ্যামবাজার  থেকে  বি. টি. রোড  গামী  বাসে  উঠে  সিঁথির  মোড়ে  নামুন।  সেখান  থেকে  কুঠিঘাট  গামী  অটোতে  উঠে  কুঠিঘাট  অটো  স্ট্যান্ডে  নামুন। অটো  স্ট্যান্ডেই  মন্দির। 

            মন্দিরটি  পরিদর্শনের  তারিখ :  ১৮.০৮.২০২১ 


সিদ্ধেশ্বরী কালী বাড়ি, কুঠিঘাট, বরানগর 

সিদ্ধেশ্বরী কালী মাতা - ১

সিদ্ধেশ্বরী কালী মাতা - ২

সিদ্ধেশ্বরী কালী মাতা - ৩

সহায়ক  গ্রন্থ /  সূত্র : 
                 ১)  বাংলার  মন্দির  স্থাপত্য  ও  ভাস্কর্য :  প্রণব  রায়। 

                                              *********
            পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য কালী মন্দির সম্বন্ধে জানতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন / লিংকের উপর আঙুল দিয়ে টোকা দিন : 

----------------------------------------------------------

রামায়ণের ৭টি খণ্ডের ৬৪ টি উপাখ্যান ও ১৮৫ টি টেরাকোটা ফলকের আলোকচিত্র সংবলিত আমার লেখা এবং 'রা প্রকাশন' কর্তৃক প্রকাশিত বই 'বাংলার টেরাকোটা মন্দিরে রামায়ণ' প্রকাশিত হয়েছে।


 বইটি ডাক যোগে সংগ্রহ করতে হলে যোগাযোগ করুন :  9038130757 এই নম্বরে। 

কলকাতার কলেজস্ট্রিটের মোড়ে দুই মোহিনীমোহন কাঞ্জিলালের কাপড়ের দোকানের মাঝের রাস্তা ১৫, শ্যামাচরণ দে স্ট্রিটের উপর অবস্থিত বিদ্যাসাগর টাওয়ারের দু'তলায় 'রা প্রকাশনে'র দোকান। ওখান থেকে বইটি সংগ্রহ করতে পারেন। কোনও অসুবিধা হলে উপরোক্ত নম্বরে ফোন করতে পারেন।

--------------------------------------------------------

রবিবার, ২৯ আগস্ট, ২০২১

Panihati Rasbari and Radhagobinda Jiu Temple, Panihati, North 24 Parganas

পানিহাটি  রাসবাড়ি  এবং  রাধাগোবিন্দ  জিউ  মন্দির,  পানিহাটি,  উত্তর  ২৪ পরগনা

                          শ্যামল  কুমার  ঘোষ 

            পানিহাটির  দণ্ডমহোৎসবতলার  কিছুটা  আগে  বাজারের  ঘাট।  লর্ড  ক্লাইভের  আমলে  রানি  ভবানীর  দেওয়ান  গৌরীচরণ  রায়চৌধুরী  ( সাবর্ণ  গোত্র )  পানিহাটির  জমিদারি  পান।  গৌরীচরণের  ছেলে  জয়গোপাল  রায়চৌধুরী  এই  বাজার  ও  ঘাট  প্রতিষ্ঠা  করেন।  বাজারের  কাছেই  একটি  পুরান  দোতালা  দালান।  দোতালার  একটি  ঘরে  রায়চৌধুরীদের  রাধাগোবিন্দ  বিগ্রহ  রয়েছেন।  রাধাগোবিন্দের  প্রাচীন  মন্দির  ভেঙে  যাওয়ার  পর  থেকেই  ঠাকুর  এই  দোতালায়  আশ্রয়  নিয়েছেন।  গোবিন্দ  বিগ্রহ  কষ্টিপাথরের।  রাধা  মূর্তি   অষ্টধাতুর।  কাছেই  একটি  আটকোনা  ও  নয়  চূড়াযুক্ত রাসমঞ্চ  ও  চারটি  আটচালা  শিবমন্দির  আছে।

             মন্দিরে  নিত্য  পূজা  ছাড়াও  জন্মাষ্টমী,  দোলযাত্রা,  স্নানযাত্রা,  ঝুলন,  রাসযাত্রা  ইত্যাদি  উৎসব  অনুষ্ঠিত  হয়।  রাসের  সময়  বিগ্রহ  রাসমঞ্চে  বসিয়ে  রাসযাত্রা  উৎসব  পালন  করা  হয়। 

কী  ভাবে  যাবেন ?

            যদি  আপনি  পানিহাটির  গিরিবালা  ঠাকুরবাড়ি  দেখে  এখানে  আসতে  চান  তবে  হাওড়া,  শিয়ালদহ  বা  শ্যামবাজার  থেকে  বি. টি. রোড  গামী  বাসে  উঠে  পানিহাটির  মোল্লার  হাটে  নামুন।  সেখান  থেকে  টোটোতে  গিরিবালা  ঠাকুরবাড়ি।  হেঁটেও  আসতে  পারেন।  শিয়ালদহ  থেকে  ট্রেনে  এলে  আগরপাড়ায়  নামুন।  সেখান  থেকে  অটোতে  গিরিবালা  ঠাকুরবাড়ি।  গিরিবালা  ঠাকুরবাড়ি  দেখে  গঙ্গার  ধার  দিয়ে  হেঁটে  পানিহাটি  বাজারের  ঘাট।  কাছেই  রাসমঞ্চ। 

            যদি  আপনি  কেবল  রাসমঞ্চ,  শিবমন্দির  ও  রাধাগোবিন্দ  বিগ্রহ  দেখতে  চান  তবে  হাওড়া,  শিয়ালদহ  বা  শ্যামবাজার  থেকে  বি. টি. রোড  গামী  বাসে  উঠে  সোদপুরে  নামুন।  সেখান  থেকে  অটোতে  পানিহাটি  ফেরিঘাট।  শিয়ালদহ  থেকে  ট্রেনে  এলে  সোদপুরে  নামুন।  সেখান  থেকে  অটোতে  পানিহাটি  ফেরিঘাট।  কাছেই  রাসমঞ্চ।  কোন্নগর  ফেরিঘাট  থেকে  গঙ্গা  পেড়িয়ে  পানিহাটি  ফেরিঘাটে  আসতে  পারেন।      

            মন্দিরটি  পরিদর্শনের  তারিখ :  ২৫.০৮.২০২১  

রাসমঞ্চ 

দোতালা দালান ( এখানেই দোতালায় রাধাগোবিন্দ থাকেন ) 

দেওয়ালে লাগানো ফলক 

রাধাগোবিন্দ বিগ্রহ - ১

রাধাগোবিন্দ বিগ্রহ - ২

চারটি আটচালা শিবমন্দির 

  সহায়ক  গ্রন্থ /  সূত্র : 

                 ১)  পশ্চিমবঙ্গ  ভ্রমণ  ও  দর্শন :  ভূপতিরঞ্জন  দাস         

-----------------------------------------------------------------------------

রামায়ণের ৭টি খণ্ডের ৬৪ টি উপাখ্যান ও ১৮৫ টি টেরাকোটা ফলকের আলোকচিত্র সংবলিত আমার লেখা এবং 'রা প্রকাশন' কর্তৃক প্রকাশিত বই 'বাংলার টেরাকোটা মন্দিরে রামায়ণ' প্রকাশিত হয়েছে।


 বইটি ডাক যোগে সংগ্রহ করতে হলে যোগাযোগ করুন :  9038130757 এই নম্বরে। 

কলকাতার কলেজস্ট্রিটের মোড়ে দুই মোহিনীমোহন কাঞ্জিলালের কাপড়ের দোকানের মাঝের রাস্তা ১৫, শ্যামাচরণ দে স্ট্রিটের উপর অবস্থিত বিদ্যাসাগর টাওয়ারের দু'তলায় 'রা প্রকাশনে'র দোকান। ওখান থেকে বইটি সংগ্রহ করতে পারেন। কোনও অসুবিধা হলে উপরোক্ত নম্বরে ফোন করতে পারেন।

Giribala Thakurbari, Kamarhati, Panihati, North 24 Parganas

 গিরিবালা  ঠাকুরবাড়ি,  কামারহাটি,  পানিহাটি,  উত্তর  ২৪  পরগনা

                               শ্যামল  কুমার  ঘোষ

            ব্যারাকপুর  ট্রাঙ্ক  রোডে  অবস্থিত  আগরপাড়ার  মোল্লার  হাটের  মোড়  থেকে  হলধর  বোস  রোড  ধরে  গঙ্গার  দিকে  হাঁটলে  গঙ্গার  ধারে  পড়বে  গিরিবালা  ঠাকুরবাড়ি।  অনেকে  একে  ছোট  দক্ষিনেশ্বর  বলে  থাকেন।  এই  মন্দিরের  অবস্থান  দক্ষিণেশ্বরের  মত  গঙ্গাতীরে  এবং  শিবমন্দিরগুলির  গঠনশৈলী  মোটামুটি  একই  রকম।  দক্ষিণেশ্বরের  মূল  দেবতা  দক্ষিণাকালী,  কিন্তু  এখানকার  মূল  দেবতা  রাধাগোবিন্দ  জিউ।  মন্দিরের  পশ্চিম  দিকে  গিরিবালা  ঘাট।  আছে  নহবত  খানা,  নাটমন্দির।  মন্দিরটি  নির্মাণ  করতে  সেই  সময়ে  প্রায়  সাড়ে  তিন  লক্ষ  টাকা  খরচ  হয়েছিল।   

            মন্দিরটি  বাংলা  ১৩১৮  সালের  (  ১৯১১  খ্রিষ্টাব্দে )  ১৮ই  জ্যৈষ্ঠ  রানি  রাসমনির  নাতবৌ,  কলকাতার  জানবাজারের  গোপালকৃষ্ণ  দাসের  বিধবা  স্ত্রী  গিরিবালা  দাসী  প্রতিষ্ঠা  করেন।  পাঁচিল  দিয়ে  ঘেরা  মন্দির  প্রাঙ্গণের  ঠিক  মাঝখানে  রাধাগোবিন্দজির  মন্দির।  উঁচু  ভিত্তিবেদির  উপর  স্থাপিত,  ত্রিখিলান  প্রবেশপথযুক্ত,  দক্ষিণমুখী  মন্দিরটি  পঞ্চরত্ন  শৈলীর।  গর্ভগৃহের  সামনে  অলিন্দ।  মন্দিরে  ওঠার  সিঁড়ির  দুপাশে  দুটি  পাথরের  নারীমূর্তি,  হাতে  কাচের  বাতিদান।  মন্দিরের  চারিদিকে  বাঁকানো  কার্নিসের  নিচে  সুন্দর  পঙ্খের  কাজ  আছে।  

            মন্দিরের  সামনে  বড়  নাটমন্দির।  প্রাঙ্গণের  পশ্চিমদিকে   ছটি  আটচালা  শিবমন্দির।  শিবমন্দিরগুলির  নাম  ( দক্ষিণ  দিক  থেকে  উত্তরে ) :  রামেশ্বর,  রাজেশ্বর,  গোপেশ্বর,  তারকেশ্বর,  ভুবনেশ্বর  ও  গিরিশ্বর।  ১ নং  রামেশ্বর  শিবমন্দিরের  পূর্ব  দিকের  দরজার  খিলানের  উপর  রয়েছে  যুগলমিলন  মূর্তি  এবং  পশ্চিম  দিকের  দরজার  খিলানের  উপর  রয়েছে  কৃষ্ণ-বলরাম  মূর্তি।  ২ নং  রাজেশ্বর  শিবমন্দিরের  পূর্ব  দিকের  দরজার  খিলানের  উপর  মূর্তিটি  ভেঙে  গেছে।  এই  শিবমন্দিরের  পশ্চিম  দিকের  দরজার  খিলানের  উপর  রয়েছে  রামরাজার  মূর্তি।  ৩ নং  গোপেশ্বর  শিবমন্দিরের  পূর্ব  দিকের  দরজার  খিলানের  উপর  রয়েছে  রাইরাজার  মূর্তি।  এই  শিবমন্দিরের  পশ্চিম  দিকের  দরজার  খিলানের  উপর  রয়েছে নন্দীর  পিঠে  হরপার্বতী  মূর্তি,  এ  ছাড়াও  রয়েছেন  একজন  শিঙ্গাবাদক  ও  একজন  শঙ্খবাদক।  ৪ নং  তারকেশ্বর  শিবমন্দিরের  পূর্ব  দিকের  দরজার  খিলানের  উপর  রয়েছে  অনন্ত  শয়ানে  বিষ্ণু।  ৫ নং  ভুবনেশ্বর  শিব মন্দিরের  পূর্ব  দিকের  দরজার  খিলানের  উপর  রয়েছে  রাইমিলন  মূর্তি।  এই  মন্দিরের  পশ্চিম  দিকের  দরজার  খিলানের  উপর  রয়েছে  শিব  ও  অন্নপূর্ণার  মূর্তি।  ৬ নং  গিরিশ্বর  মন্দিরের  পূর্ব  দিকের  দরজার  খিলানের  উপর  রয়েছে  কৃষ্ণের  কালীয়  দমন  মূর্তি।  এই  মন্দিরের  পশ্চিম  দিকের  দরজার  খিলানের  উপর  রয়েছে  শিবের বাহন নন্দীর  পিঠে  শিব-গণেশজননী  ও  ইন্দ্রের বাহন  ঐরাবতের  পিঠে  ইন্দ্র-শচি।  এখানে বৃষ-গজের  একই মাথা।

            মন্দিরের  গর্ভগৃহে  কষ্টিপাথরের  কৃষ্ণ,  অষ্টধাতুর  রাধা,  গণেশ,  নারায়ণ  শিলা  ও  অন্যান্য  দেবদেবীর  মূর্তি  প্রতিষ্ঠিত  ও  নিত্যপূজিত।  মন্দির  প্রতিষ্ঠার  সময়  যে  রাধারানির  মূর্তিটি  ছিল  সে  মূর্তিটি  চুরি  হওয়ার  পরে  শ্বেতপাথরের  একটি  রাধারানি  মূর্তি  পূজা  করা  হত।  রাধারানিকে  স্নান  করানোর  সময়  পুরোহিতের  অসাবধানতায়  তা  ভেঙে  যায়।  সেই  ভাঙা  মূর্তিটি  জোড়া  দিয়ে  দীর্ঘদিন  পূজা  করা  হয়।  ১৯৮৫  সালের  ২০ শে  জানুয়ারি  গিরিবালা  দাসীর  বংশধররা  মন্দিরের  রক্ষণাবেক্ষণের  দায়িত্ব  ভোলাগিরি  আশ্রম  কর্তৃপক্ষের  হাতে  অর্পণ  করেন।  তারপর  স্বামী  শিবানন্দ  গিরি  মহারাজ  এই  মন্দিরে  ভারপ্রাপ্ত  হয়ে  আসেন।  তিনি  বৃন্দাবন  ধাম  থেকে  একটি  অষ্টধাতুর  রাধারানির  মূর্তি  এনে  অভিষেক  করিয়ে  পূজার  ব্যবস্থা  করেন।  এখনও  সেই  মূর্তিই  পূজিত  হচ্ছেন।

            মন্দিরে  নিত্য  পূজা  ছাড়াও  মন্দিরের  প্রতিষ্ঠা  দিবসের  উৎসব,  রাধাষ্টমী,  জন্মাষ্টমী,  দোলযাত্রা,  স্নানযাত্রা,  ঝুলন,  রাসযাত্রা  ইত্যাদি  উৎসব  অনুষ্ঠিত  হয়।  তবে  আগেকার  মত  এখন  আর  সেরকম  জাঁকজমক  হয়  না।  শিবরাত্রির  দিন  সারারাত  শিবমন্দিরগুলিতে  পূজা  অনুষ্ঠিত  হয়।

            মন্দিরের  পূর্ব  দিকে  সারি  সারি  ঘর।  এগুলি  নানা  কাজে  ব্যবহৃত  হয়।  মন্দিরের  পরিবেশ  খুবই  সুন্দর।  এক  দিনের  ভ্রমণের  জন্য  অবশ্যই  এটি  নির্বাচন  করা  যেতে  পারে। 

  কী  ভাবে  যাবেন ?

            হাওড়া,  শিয়ালদহ  বা  শ্যামবাজার  থেকে  বি. টি. রোড  গামী  বাসে  উঠে  পানিহাটির  মোল্লার  হাটে  নামুন।  সেখান  থেকে  টোটো  পাবেন।  হেঁটেও  যেতে  পারেন।  শিয়ালদহ  থেকে  ট্রেনে  এলে  আগরপাড়ায়  নামুন।  সেখান  থেকে  অটো। 

            মন্দিরটি  পরিদর্শনের  তারিখ :  ২৫.০৮.২০২১

গোপেশ্বর শিবমন্দিরের সামনের দরজার খিলানের উপরের কাজ
( রাইরাজা )

রাধাগোবিন্দ মন্দির 

মন্দিরের সামনের নিচের দিকের বিন্যাস 

সিঁড়ির এক পাশের নারীমূর্তি

সিঁড়ির অপর পাশের নারীমূর্তি

মন্দিরের সামনের বাঁকানো কার্নিসের নিচের কাজ 

সামনের বাঁকানো কার্নিসের নিচের কাজ ( বড় করে )

পশ্চিম দিকের দেওয়ালের কাজ 

পশ্চিম দিকের খিলানের উপরের কাজ 

উত্তর দিকের খিলানের উপরের কাজ 


পূর্ব দিকের দেওয়ালের কাজ

রামেশ্বর শিবমন্দির 

রামেশ্বর শিবমন্দিরের সামনের দরজার খিলানের উপরের কাজ
( যুগলমিলন ) 

রামেশ্বর শিবমন্দিরের পিছনের দরজার খিলানের উপরের কাজ
( কৃষ্ণ ও বলরাম )

রাজেশ্বর শিবমন্দিরের পিছনের দরজার খিলানের উপরের কাজ
( রামরাজা )

গোপেশ্বর শিবমন্দির 

গোপেশ্বর শিবমন্দিরের সামনের দরজার খিলানের উপরের কাজ
( রাইরাজা )

গোপেশ্বর শিবমন্দিরের পিছনের দরজার খিলানের উপরের কাজ
( নন্দী পৃষ্ঠে শিব-পার্বতী )

তারকেশ্বর শিবমন্দিরের সামনের দরজার খিলানের উপরের কাজ
( অনন্ত শয়ানে বিষ্ণু )

তারকেশ্বর শিবমন্দিরের পিছনের দরজার খিলানের উপরের কাজ


ভুবনেশ্বর শিবমন্দিরের সামনের দরজার খিলানের উপরের কাজ
( রাইমিলন )

গিরিশ্বর শিবমন্দিরের পিছনের দরজার খিলানের উপরের কাজ
                ( শিব ও অন্নপূর্ণা )               
গিরিশ্বর শিবমন্দিরের সামনের দরজার খিলানের উপরের কাজ
( কৃষ্ণের কালীয় দমন )

ভুবনেশ্বর শিবমন্দিরের পিছনের দরজার খিলানের উপরের কাজ
( হরিহর )

রাধাগোবিন্দ ও অন্যান্য বিগ্রহ 

রাধা ও গোবিন্দ বিগ্রহ - ১

রাধা ও গোবিন্দ বিগ্রহ - ২

 সহায়ক  গ্রন্থ /  সূত্র : 

                 ১)  পশ্চিমবঙ্গ  ভ্রমণ  ও  দর্শন :  ভূপতিরঞ্জন  দাস 
                 ২)  পানিহাটি  পৌরসভার  ওয়েবসাইট 
                 ৩)  শতবর্ষে  গিরিবালা  ঠাকুরবাড়ী :  কৃশানু  ভট্টাচার্য্য 

---------------------------------------------------------------------------------

রামায়ণের ৭টি খণ্ডের ৬৪ টি উপাখ্যান ও ১৮৫ টি টেরাকোটা ফলকের আলোকচিত্র সংবলিত আমার লেখা এবং 'রা প্রকাশন' কর্তৃক প্রকাশিত বই 'বাংলার টেরাকোটা মন্দিরে রামায়ণ' প্রকাশিত হয়েছে।


 বইটি ডাক যোগে সংগ্রহ করতে হলে যোগাযোগ করুন :  9038130757 এই নম্বরে। 

কলকাতার কলেজস্ট্রিটের মোড়ে দুই মোহিনীমোহন কাঞ্জিলালের কাপড়ের দোকানের মাঝের রাস্তা ১৫, শ্যামাচরণ দে স্ট্রিটের উপর অবস্থিত বিদ্যাসাগর টাওয়ারের দু'তলায় 'রা প্রকাশনে'র দোকান। ওখান থেকে বইটি সংগ্রহ করতে পারেন। কোনও অসুবিধা হলে উপরোক্ত নম্বরে ফোন করতে পারেন।