রবিবার, ৩০ জুলাই, ২০২৩

Siddheshwari Kali temple, Nandi Bari, Rampara, Jangipara, Hooghly

 সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির, নন্দী বাড়ি, রামপাড়া, জাঙ্গিপাড়া, হুগলি

                                 শ্যামল কুমার ঘোষ 

            হুগলি  জেলার  জাঙ্গিপাড়া  ব্লকের  অধীন  একটি  গ্রাম  রামপাড়া।  কলকাতা  থেকে  দূরত্ব  ৩৮  কিমি।  গ্রামে  দুটি  কালী  মন্দির  বিখ্যাত।  একটি  নন্দী  পরিবারের  এবং  অপরটি  দে  পরিবারের।  এখানে  নন্দী  পরিবারের  কালী  মন্দির  নিয়ে  আলোচনা  করবো।

            উঁচু  ভিত্তিবেদির  উপর  স্থাপিত,  ছয়  খিলানবিশিষ্ট ,  দক্ষিণমুখী  মন্দিরটি  দালান  শৈলীর।  মন্দিরটির  সামনের  দেওয়ালে  সুন্দর  পঙ্খের  আছে। মন্দিরটিতে  পাশাপাশি  কয়েকটি  ঘর।  একটি  ঘরে  মা  সিদ্ধেশ্বরী  বিরাজমান।  বিগ্রহটি  দারু  নির্মিত।  এটি  একটি  ব্যতিক্রমী  কালী  মূর্তি  এবং  খুবই  প্রাচীন।  ওই  একই  ঘরে  বাঘের  পিঠে  সওয়ার  লোকিক  দেবতা  পঞ্চানন।  মন্দিরের  বাকি  ঘরগুলি  ভোগঘর  হিসাবে  বা  অন্য  কাজে  ব্যবহার  করা  হয়।  মন্দিরটি  পাঁচিল  দিয়ে  ঘেরা।  মন্দির  প্রাঙ্গনে  একটি  জগন্নাথ  মন্দির  ও  একটি  বাগান  আছে।  মন্দিরে  একটি  রথও  আছে।  মন্দিরটি  প্রতিষ্ঠা  করেন  রামপাড়ার  নন্দী  পরিবারের  এক  পূর্ব  পুরুষ।         

রামপাড়া নন্দী বাড়ি কালী মন্দির 
 
দুই  পরি - ১ 

দুই পরি - ২
                 
গজ লক্ষ্মী 

দুই সখিসহ রাধা-কৃষ্ণ 

ষড়ভুজ গৌরাঙ্গ

অন্নপূর্ণা 

গরুড় মূর্তি 

লৌকিক দেবতা পঞ্চানন 

মা  সিদ্ধেশ্বরী - ১

মা  সিদ্ধেশ্বরী - ২

মা  সিদ্ধেশ্বরী - ৩

          কী  ভাবে  যাবেন ?

            হাওড়া  স্টেশন  থেকে  বর্ধমান  কর্ড  লাইনের  ট্রেন  ধরে  বারুইপাড়া  স্টেশনে  নামুন।  সেখান  থেকে  টোটো  ধরে  শিয়াখালার  অটো  স্ট্যাণ্ড।  সেখান  থেকে  টোটোতে  রামপাড়ার  নন্দী  বাড়ি।

              রামপাড়ার  দে  বাড়ির  কালী  মন্দির  সম্বন্ধে  জানতে  নিচের  লিঙ্কে  ক্লিক  করুন :

            সিদ্ধেশ্বরী  কালী  মন্দির,  দে  বাড়ি,  রামপাড়া,  হুগলি             

                       ------------------------------------

            আমার  ইমেল :  shyamalfpb@gmail.com   প্রয়োজনে  যোগাযোগ  করতে  পারেন।

        

শনিবার, ২৯ জুলাই, ২০২৩

Adi Anandamayi Kali / Basa Kali Temple, 160/2, Ramdulal Sarkar Street, Kolkata

 আদি  আনন্দময়ী  কালী  / বসা  কালী  মন্দির,  

১৬০/২,  রামদুলাল  সরকার  স্ট্রিট,  কলকাতা

শ্যামল  কুমার  ঘোষ  


            আদি  আনন্দময়ী  কালী  মন্দির  উত্তর  কলকাতার  চিত্তরঞ্জন  এভেনিউ  ও  রামদুলাল  সরকার  স্ট্রিট-এর  সংযোগস্থলের  কাছে  ১৬০/২,  রামদুলাল  সরকার  স্ট্রিটে  অবস্থিত।  স্থানীয়  লোকেদের  কাছে  এই  মন্দির  'বসা  কালীর  মন্দির'  নামে  পরিচিত।  ১১২৫ বঙ্গাব্দে  এই  মন্দিরটি  প্রতিষ্ঠা  করেন  মতিলাল  দেবশর্মা।  মন্দির  প্রবেশের  আগে  ডানদিকের  দেওয়ালে  একটি  প্রতিষ্ঠাফলক  আছে।

প্রতিষ্ঠাফলকের  পাঠ :

                       জয়  আদি  শ্রীশ্রী   ঁ  আনন্দময়ী  কালী

                                স্থাপিত :  সন  ১১২৫  সাল 

                        স্বত্ত্বাধিকারী -  শ্রী  মতিলাল  দেবশৰ্ম্মা।  

              সাদামাটা  লাল  রঙের  মন্দির।  আসলে  এটি  মন্দির  বললে  ভুল  হবে।  এখানে  একটি  বাড়ির  একটি  ঘরে  মা  বিরাজ  করছেন।  অন্যান্য  কালী  মূর্তির  থেকে  এখানে  মাতৃ  মূর্তির  বিশেষ  পার্থক্য  রয়েছে।  এখানে  মা  শায়িত  মহাদেবের  বুকের  উপর  পদ্মাসনে  উপবিষ্টা।  এ  রকম  মূর্তি  আর  কোথাও  দেখা  যায়  না।  মায়ের  মূর্তির  দক্ষিণ  দিকে  কাল  ভৈরবের  মূর্তি  স্থাপিত।  মন্দিরের  প্রবেশ  পথে  রয়েছে  হাড়িকাঠ।  

            এই  বন্দোপাধ্যায়  পরিবারে  কোনো  পুত্র  সন্তান  না  থাকার  কারণে  পরিবারের  দুই  বোন  মধুশ্রী  চ্যাটার্জী  ও  তনুশ্রী  চক্রবর্তী  মায়ের  সেবা-কার্য  ও  মন্দিরটি  দেখাশোনা  করেন।  এঁদের  ঠাকুরদার  বাবা  মতিলাল  বন্দোপাধ্যায়  (দেবশৰ্ম্মা )  স্বপ্নাদেশ  পেয়ে  সংলগ্ন  জঙ্গলের  মধ্যে  থেকে  মাকে উদ্ধার  করেন।  তিনশো  বছর  আগে  এই  স্থান  ছিল  জঙ্গলাকীর্ণ।  এই  জায়গা  ছিল  তখনকার  স্থানীয়  জমিদার  মিত্র  পরিবারের  জমিদারির  অন্তর্ভুক্ত।  তাঁরা  মতিলাল  বাবুকে  মায়ের  মূর্তি  প্রতিষ্ঠা  করতে  সাহায্য  করেন।

            মন্দিরে  মায়ের  নিত্য  পূজা  ছাড়াও  প্রতি  অমাবস্যায়  বিশেষ  পূজা  অনুষ্ঠিত  হয়।  এ  ছাড়াও  ফলহারিণী  কালীপূজা,  রটন্তী  কালীপূজা  ও  দীপান্বিতা  কালীপূজায়  বিশেষ  পূজা  অনুষ্ঠিত  হয়।  মানসিকের  পূজায়  জোড়া  নারকেল  ও  বাতাসা  দেওয়া  হয়।  প্রতি  অমাবস্যায়  নিশিপুজো  হয়।  অমাবস্যার  ভোগে  খিচুড়ি,  আলুর  দম,  মাছ  দেওয়া  হয়।  অম্বুবাচির  চার  দিনের  দিন  মাকে  প্রতীকী  স্নান  করানো  হয়।  মাকে  নতুন  গামছা,  আলতা-সিঁদুর  দেওয়া  হয়।  কালীপূজার  আগে  মায়ের  অঙ্গরাগ  হয়।  দীপান্বিতা  অমাবস্যায়  মায়ের  ধুমধাম  করে  পূজা  অনুষ্ঠিত  হয়।  এই  পূজার  ভোগে  অবশ্যই  ষোল  মাছ  দেওয়া  হয়।        

আদি আনন্দময়ী কালী মা -১

আদি আনন্দময়ী কালী মা -২

মন্দিরের প্রতিষ্ঠাফলক 

              ------------------------------------
            আমার  ইমেল :  shyamalfpb@gmail.com   প্রয়োজনে  যোগাযোগ  করতে  পারেন।

              ------------------------------------    

রবিবার, ২৩ জুলাই, ২০২৩

Uttarbahini Temple, Sheakhala, Chanditala, Hooghly

 

 উত্তরবাহিনী  মন্দির,  শিয়াখালা,  চণ্ডীতলা,  হুগলি

শ্যামল  কুমার  ঘোষ 


             উত্তরবাহিনী  হুগলি  জেলার  শিয়াখালা  পল্লির  বিখ্যাত  ও  বহু  শতাব্দীর  এক  প্রাচীন  লৌকিক  দেবী।  শিয়াখালার  পূর্বের  নাম  ছিল  শিবাক্ষেত্র।  দেবীর  মূর্তি  বেশ  সুশ্রী,  দীর্ঘাঙ্গী,  উচ্চতায়  ৬ / ৭ ফুট  এবং  বলিষ্ঠ  চেহারা।  বর্ণ  রক্তাভ  হলুদ,  মাথায়  এলোকেশের  উপর  মুকুট,   ত্রিনয়ন,  নাকে  নথ,  গলায়  মুণ্ডমালা  ও  নানা  প্রকার  হার,  ডান  হাতে  খড়্গ,  বাম  হাতে  রুধির  পাত্র।  পরিধানে  বক্ষবন্ধনী,  সোনালী  জরির  কাজ  করা  রক্ত  বর্ণের  শাড়ি  কটিদেশ  থেকে  পদতল  পর্যন্ত  বিস্তৃত।  হিন্দুস্থানী  মেয়েরা  যে  ধরনের  হার,  চুড়ি,  মল  ব্যবহার  করেন  দেবীর  গায়ে  সেই  রকম  অলংকারাদি।  দেবীর  বাম  পা  জোড়  হাতে  উপবিষ্ট  বটুক  ভৈরবের  মাথায়  এবং  ডান  পা  শায়িত  মহাকালরূপী  শিবের  বুকের  উপর  স্থাপিত।  শায়িত  শিবের  নাভিদেশের  উপর  একটি  অসুরের  মুণ্ড।

            পূর্বে  দেবীর  মূর্তি  ছিল  মাটির,  বর্তমানে  মূর্তিটি  পাথরের।  বাংলার  কোন  লৌকিক  দেবীর  এত  বড়  পাথরের  মূর্তি  ( ৬/৭ ফুট )  দেখা  যায়  না।  স্থানীয়  ভক্তদের  চেষ্টায়  কাশীর  ভাস্কর  দ্বারা  উত্তরবাহিনীর  এই  পাথরের  মূর্তি  তৈরি  করা  হয়।  এই  মূর্তি  নির্মাণে  স্থানীয়  চিকিৎসক  যামিনীকান্ত  রায়ের  ভূমিকা  ছিল  উল্লেখযোগ্য।  দেবীর  আদি  মূর্তিটি  ছিল  পাথরের,  আকারে  খুবই  ছোট।  তাই  বড়  মূর্তি  তৈরি  করার  প্রয়োজন  হয়।  এই  রকম  ছোট  মূর্তিকে  ভোগমূর্তি  বলে। 

            উত্তরবাহিনী  দেবীর  বহুকাল  পূর্বেও  খ্যাতি  ছিল  তা  জানা  যায়  মধ্যযুগে  রচিত  মঙ্গলকাব্য  থেকে।  রূপরামের  ধর্মমঙ্গলে  আছে - 

     "শ্মশানে  বন্দিলাম  শ্যামা  করালবদনী। 

      সেইখালায়  বন্দিলাম  উত্তর-বাহিনী।। "

            উত্তরবাহিনীর  প্রাচীনত্বের  বিষয়ে  জানা  যায়,  হুগলি  জেলার  এই  অংশ  খ্রি:  ষোড়শ  শতাব্দীতেও  গভীর  জঙ্গলে  ঢাকা  ছিল  এবং  অধিবাসীরা  ছিলেন  অনুন্নত  শ্রেণীর।  তাঁরা  ভীষণ  প্রকৃতির  ও  দুর্ধর্ষ  যোদ্ধা  ছিলেন।  তাঁরা  রাজশক্তির  বিরুদ্ধে  বিদ্রোহ  ঘোষণা  করেন।  সেই  সময়  বাংলার  শাসক  ছিলেন  সুলতান  হোসেন  শাহ।  তাঁর  উজির  ছিলেন  শ্রীকৃষ্ণমঙ্গল  রচয়িতা  গোপীনাথ  বসু  বা  পুরন্দর  খাঁ।  যুদ্ধ  বিষয়ে  তিনি  ছিলেন  দক্ষ।  তিনি  শিয়াখালা  অঞ্চলের  সেই  আদিবাসীদের  দমন  করেন।  সে কারণে  পুরন্দর  খাঁ  এই  অঞ্চল  সুলতানের  কাছ  থেকে  'জায়গীর'  হিসাবে  পান  এবং  শিয়াখালায়  নিজের  প্রাসাদ  ও  উত্তরবাহিনী  দেবীর  মন্দির  তৈরি  করেন।            

            দেবীর  উৎপত্তি  সম্পর্কে  জনশ্রুতি,  এই  শিয়াখালা  গ্রামে  এক  শাণ্ডিল্য  গোত্রীয়  এক  ব্রাহ্মণ  বাস  করতেন।  তাঁর  এক  বিদ্যাবিমুখ  পুত্র  সন্তান  ছিল।  লেখাপড়ায়  তাঁর  মন  ছিল  না।  একদিন  সেই  ব্রাহ্মণ  রেগে  গিয়ে  তাঁর  গৃহিণীকে  আদেশ  দিলেন  যে  ছেলেকে  ভাত  দেওয়ার  পরিবর্তে  থালায়  করে  যেন  ছাই  পরিবেশন  করা  হয়।  স্বামীর  কথা  শুনে  স্ত্রী  ছেলেকে  ভাতের  পরিবর্তে  সত্য  সত্যই  ছাই  পরিবেশন  করেন।  এই  দেখে  ওই  ব্রাহ্মণ   সন্তান  রাগে-দুঃখে  নিজের  জীবন  বিসর্জন  দিতে  পাশের  কৌশিকী  নদীতে  ঝাঁপ  দেন।  ঝাঁপ  দেওয়ার  পর  জলের  মধ্যে  তাঁর  হাতে  একটি  বস্তু  ঠেকে।  জলের  উপরে  তুলে  তিনি  দেখেন,  সেটি  একটি  পাথরের  ক্ষুদ্রকায়  এক  দেবী  মূর্তি।  এই  সময়  তিনি  একটি  দৈব্যবাণী  শোনেন,  "আমি  দেবী  বিশালাক্ষী,  উত্তরবাহিনী  নামে   আমাকে  এখানে  তুই  প্রতিষ্ঠা  কর  এবং  আমার  নিয়মিত  পূজা-অর্চনার  ব্যবস্থা  কর।"  দৈব্যবাণী  শুনে  ওই  ব্রাহ্মণ  সন্তান  পাশেই  একটি  চালা  ঘর  তৈরি  করে  দেবী  মূর্তিটি  প্রতিষ্ঠা  করে  পূজা-অর্চনা  শুরু  করেন।  পরবর্তী  সময়ে  সেই  ব্রাহ্মণ  সন্তান  এক  সর্বজ্ঞ  পণ্ডিত  হয়ে  ওঠেন।

            উত্তরবাহিনীর  বর্তমান  মন্দিরটি  উঁচু  ভিত্তিবেদির  উপর  স্থাপিত,  উত্তরমুখী,  পাঁচখিলানবিশিষ্ট  একটি  দালান।  মন্দিরের  সামনে  বড়  বড়  থামবিশিষ্ট  চাঁদনি  আকৃতির  নাটমন্দির  বর্তমান।  তবে  মন্দির  ও  নাটমন্দির  এখনো  সম্পূর্ণ  হয়  নি।  

            বর্তমানে  যে  পাথরের  মূর্তিটি  মন্দিরে  স্থাপিত  সেটি  ১৩৪০  বঙ্গাব্দের  ১৬ই  আষাঢ়  প্রতিষ্ঠা  করা  হয়।  তাই  ১৬ই  আষাঢ়  মন্দিরে  ব্যৎসরিক  উৎসব  পালন  করা  হয়।  দেবীর  নতুন  ঘট  প্রতিষ্ঠিত  হয়  শারদীয়া  শুক্লা  একাদশী  তিথিতে।  আষাঢ়  মাসের  ১৬  ও  ১৭  তারিখ  দুইদিন  ব্যৎসরিক  উৎসব  উপলক্ষ্যে  মন্দিরে  অসংখ্য  ভক্তের  সমাগম  হয়।  উত্তরবাহিনীর  ভোগ  গ্রহণের  জন্য  শিয়াখালা  ও  আশেপাশের  গ্রামের  মানুষ  ছাড়াও  দূরদূরান্ত  থেকেও  বহু  মানুষ  মন্দিরে  ভিড়  করেন।   এই উপলক্ষ্যে  মন্দির  চত্বরে  মেলা  বসে।  আলোকমালায়  সজ্জিত  হয়  মন্দির।                  

উত্তরবাহিনী - ১

মন্দির ও নাটমন্দির 

উত্তরবাহিনী - ২

উত্তরবাহিনী - ৩


          কী  ভাবে  যাবেন ?

            হাওড়া  স্টেশন  থেকে  বর্ধমান  কর্ড  লাইনের  ট্রেন  ধরে  বারুইপাড়া  স্টেশনে  নামুন।  সেখান  থেকে  টোটো  ধরে  শিয়াখালার  মন্দির। 

সহায়ক  গ্রন্থ :

          ১)  বাংলার  লৌকিক  দেবতা :  গোপেন্দ্রকৃষ্ণ  বসু  

           ------------------------------------

            আমার  ইমেল :  shyamalfpb@gmail.com   প্রয়োজনে  যোগাযোগ  করতে  পারেন।

           ------------------------------------