রবিবার, ৩০ জুন, ২০১৯

Radhashyam Temple, Bishnupur, Bankura, West Bengal



রাধাশ্যাম মন্দির, বিষ্ণুপুর, বাঁকুড়া, পশ্চিম  বঙ্গ 

শ্যামল  কুমার  ঘোষ 


            মৃন্ময়ী  মন্দিরের  পূর্ব  দিকে,  ল্যাটেরাইট  পাথরে  নির্মিত,  চারিদিকে  পাঁচিল  দিয়ে  ঘেরা  রাধাশ্যাম  মন্দিরটি  বিষ্ণুপুরের  প্রতিষ্ঠালিপিযুক্ত  দেবালয়গুলির  মধ্যে  সর্ব  কনিষ্ট।  মূল  মন্দিরটি   ল্যাটেরাইট  পাথরে  নির্মিত  হলেও  মন্দিরের  পাঁচিল,  প্রবেশতোরণ,  ভোগমণ্ডপ,  ভগ্ন  নাটমন্দির  ও  তুলসীমঞ্চ  সবই  ইঁটের  তৈরি।  উঁচু  ভিত্তিবেদির  উপর  প্রতিষ্ঠিত,  দক্ষিণমুখী  মন্দিরটি  একরত্ন  শৈলীর।  মন্দিরটি  ১৬৮০  শকাব্দে  ( ১৭৫৮  খ্রীষ্টাব্দে )  মল্লরাজ  চৈতন্য  সিংহ  কর্তৃক  নির্মিত।  উল্লেখ্য,  অন্য  মল্লরাজ  কর্তৃক  নির্মিত  মন্দিরগুলিতে  প্রতিষ্ঠাকালে  'মল্লাব্দ'  ব্যবহার  করা  হলেও  এ  দেবালয়ের  প্রতিষ্ঠালিপিতে  'শকাব্দ'  ব্যবহার  করা  হয়েছে।  

            চৈতন্য  সিংহ  যখন  সিংহাসন  লাভ  করেন  তখন  নানা  কারণে  মল্লরাজ্য  ও  রাজপরিবারের  অবস্থা  ছিল  খুবই  শোচনীয়।  কোম্পানিকে  সময়মত  রাজস্ব  না  দিতে  পারার  অপরাধে  কারাবাসও  করতে  হয়েছে  তাঁকে।  তাও  কৃষ্ণের  প্রতি  অসীম  অনুরাগে   তিনি  রাধাশ্যাম  মন্দিরের  মত  বিশাল  ও  ব্যয়বহুল  মন্দির  প্রতিষ্ঠায়  ব্রতী  হয়েছিলেন।  মন্দিরটি  দৈর্ঘ্য-প্রস্থে  ১২.৫  মিটার  ও  উচ্চতায়  প্রায়  ১০.৭  মিটার।  পঙ্খের  আবরণে  ঢাকা  পাথরের  অলংকরণের  জন্য  এ  দেবালয়টি  বিশেষভাবে  উল্লেখযোগ্য।  পাথরের  জ্যামিতিক  ও  ফুলকারি  নকশা  কাজের  প্রাচুর্যও  মন্দিরে  লক্ষ্য  করা  যায়।  কুলুঙ্গিতে  নিবদ্ধ  মূর্তি-ভাস্কর্য  দেওয়ালের  দুপাশে  ও  কার্নিসের  নিচে  দেখা  যায়।  মন্দিরের সামনের  ত্রিখিলান  দালানের  ভিতরের  দেওয়ালও  অলংকৃত।  এদের  মধ্যে  রাজসভায়  রামসীতা,  অনন্তশয্যায়  বিষ্ণু  ইত্যাদি  উল্লেখ্য।  যদিও  কালের  করাল  গ্রাসে  অনেক  ভাস্কর্য  ও  নকশা  আজ  ভগ্ন  বা  নিষ্প্রভ।  মন্দিরের  পূর্ব  ও  পশ্চিম  দিকেও  ত্রিখিলান  খোলা  দালান  ও  উত্তরে  এক  ঢাকা  বারান্দা  আছে।  মন্দিরের  সামনে  একটি  প্রবেশতোরণ  আছে।  এর  উপরেই  আছে  নহবত  মণ্ডপ।  মন্দিরের  পূর্ব  দিকে  আছে  একটি  সুদৃশ্য  তুলসীমঞ্চ।  সবচেয়ে  উল্লেখযোগ্য,  গর্ভগৃহের সামনের মেঝেতে  রাধাগোবিন্দের  নাম  লেখা  একটি  পাথরের  ফলক।   

            বিষ্ণুপুরের  সব  পরিত্যক্ত  মল্ল  মন্দিরের  বিগ্রহ  এখন  এ  মন্দিরের  গর্ভগৃহে  স্থান  পেয়ে  রাধাশ্যাম  সহ  পূজিত  হন।  ব্যয়  সংক্ষেপের  জন্যই  এই  ব্যবস্থা।  মন্দিরটি  'ভারতীয়  পুরাতত্ত্ব  সর্বেক্ষণ' - এর  রক্ষণাধীন। 

রাধাশ্যাম মন্দির, বিষ্ণুপুর  

মন্দিরের একরত্ন শিখর 
মন্দিরের প্রবেশতোরণ
মন্দিরের প্রবেশতোরণের খিলানের উপরের  কাজ

মন্দিরের সামনের ত্রিখিলান বিন্যাস 

প্রতিষ্ঠাফলক 

বাঁকানো কার্নিসের নিচের কাজ - ১

বাঁকানো কার্নিসের নিচের কাজ - ২

কুলুঙ্গির মধ্যের কাজ - ১

কুলুঙ্গির মধ্যের কাজ - ২

শ্রীরামচন্দ্র ও অন্য চিত্র  

শ্রীরামচন্দ্র

বরাহ অবতার 

ষড়ভুজ গৌরঙ্গ 

বস্ত্রহরণ দৃশ্য 

ভিত্তিবেদি সংলগ্ন কাজ 

ফুলকারি নকশা - ১

ফুলকারি নকশা - ২

অলিন্দের কাজ - ১

অলিন্দের কাজ - ২

অনন্তশয্যায়  বিষ্ণু

সিংহাসনে রামসীতা 

ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর 

অলিন্দে কুলুঙ্গির কাজ - ১

অলিন্দে কুলুঙ্গির কাজ - ২

গর্ভগৃহের সামনের মেঝের ফলক 

তুলসী-মঞ্চ 
             
  সহায়ক  গ্রন্থ :
     ১)  বাঁকুড়া  জেলার  পুরাকীর্তি : অমিয়কুমার  বন্দোপাধ্যায়     
     ২)  মল্লভূম  বিষ্ণুপুর : মনোরঞ্জন  চন্দ্র                                                           
                                                            ******

শুক্রবার, ২৮ জুন, ২০১৯

Jor Bangla Keshtoray Temple, Bishnupur, Bankura, West Bengal


জোড়বাংলা  কেষ্টরায়  মন্দির,  বিষ্ণুপুর,  বাঁকুড়া,  পশ্চিম  বঙ্গ 

শ্যামল  কুমার  ঘোষ 

            গঠন  বৈচিত্রে  ও  উৎকৃষ্ট  পোড়ামাটির  আলংকারিক  কারুকার্যে  বিষ্ণুপুরের  কেষ্টরায়  মন্দিরটি  বিখ্যাত।  উঁচু  ভিত্তিবেদির  উপর  স্থাপিত,  দক্ষিণ  মুখী  মন্দিরটি  'জোড়বাংলা'  শৈলীর।  দুটি  'দোচালা'  বা  'এক  বাংলা'  পাশাপাশি  জোড়া  থাকলে  বলা  হয়  জোড়বাংলা।  এতে  মন্দিরের  স্থায়িত্ব  বৃদ্ধি  পায়।  এই  স্থায়িত্বকে  আরও  দৃঢ়  করার  জন্য  আলোচ্য  জোড়বাংলা  মন্দিরের  উপরে  একটি  চারচালা  'রত্ন'  বসানো  হয়েছে।

            মন্দিরটি  দৈর্ঘ্যে  ১১.৮  মিটার,  প্রস্থে  ১১.৭  মিটার  ও  উচ্চতায়  প্রায়  ১০.৭  মিটার।  বীর  হাম্বীরের  পুত্র  রঘুনাথ  সিংহ  ৯৬১  মল্লাব্দে  ( ১৬৫৫  খ্রীষ্টাব্দে )  এটির  প্রতিষ্ঠা  করেন।  এখানে  উল্লেখ্য,  বঙ্গাব্দের  চেয়ে  মল্লাব্দ  ১০১  বছর  কম।  মন্দিরের  দক্ষিণ  দেওয়ালে  নিবদ্ধ  চার  লাইনের  উৎসর্গলিপিটি :  "শ্রীরাধিকাকৃষ্ণমুদে  সুধাংশু  / রসাঙ্কগে  সৌধগৃহং  শকাব্দি  /    শ্রীবীর  হম্বীর  নরেশ  সূনু  /  র্দদৌ  নৃপঃ  শ্রীরঘুনাথ  সিংহঃ /  ৯৬১ / "  
            পোড়ামাটির  অলংকরণ  বাইরের  চারিদিকের  দেওয়ালের  সর্বত্র  ও  দালানের  দেওয়াল  এবং  ছাদের  নিম্নতলেও  ব্যবহৃত  হয়েছে।  শুধু  প্রাচুর্যই  নয়,  কারিগরি  উৎকর্ষেও  এ  ভাস্কর্যগুলি  খুবই  উচ্চাঙ্গের।  কৃষ্ণলীলা,  রামায়ন-মহাভারতের  কাহিনী,  পৌরাণিক  উপাখ্যান,  হিন্দু  দেবলোকের  অজস্র  চিত্র  ছাড়াও  বন্য  প্রাণী,  শিকার  দৃশ্য  এবং  স্থল  ও  নৌযুদ্ধের  ভাস্কর্যও  এখানে  ব্যবহৃত  হয়েছে।  মন্দিরের  দক্ষিণ  দিকে  কৃষ্ণলীলা  ও  পশ্চিম  দেওয়ালে  আছে  রামকথা।  রামজন্ম  থেকে  আরাম্ভ  করে  তারাকাবধ  এবং  রামের  বিবাহ।  পশ্চিমের  দেওয়ালে  ভয়ঙ্কর  দেবীযুদ্ধের  নিচে  আছে  গনেশজননী।  অষ্টমাতৃকা  মূর্তিও  চিত্রিত  হয়েছে।  পর্তুগিজ  যুদ্ধও  যেমন  চিত্রিত  হয়েছে ,  তেমনিই  মোঘল-সামন্তদের  আভিজাত্য  ও  বিলাস ব্যসনও  চিত্রিত  হয়েছে।  মন্দিরে  কোন  বিগ্রহ  নেই।  মন্দিরটি  'ভারতীয়  পুরাতত্ত্ব  সর্বেক্ষণ' - এর  রক্ষণাধীন।

     
কেষ্টরায় মন্দির, বিষ্ণুপুর - ১


কেষ্টরায় মন্দির, বিষ্ণুপুর - ২

দক্ষিণ দিকের বাঁ দিকের খিলানের উপরের কাজ 

দক্ষিণ দিকের মাঝের খিলানের উপরের কাজ 

বড় করে 

দক্ষিণ দিকের ডান দিকের খিলানের উপরের কাজ 

প্রতিষ্ঠাফলক 

কৃষ্ণলীলা - ১

কৃষ্ণলীলা - ২

কৃষ্ণলীলা - ৩

কৃষ্ণলীলা - ৪

শ্রীকৃষ্ণের বস্ত্রহরণ লীলা 

নৌকাবিলাস 

নৃত্যরত গোপিনীরা

পূর্ব দিকের বিন্যাস 

চালার নিচে অলংকৃত কাঠের কাজের অনুকরণ 

সম-আয়তন বর্গাকার ফলক সজ্জা

উত্তর দিকের বিন্যাস 

উত্তর দিকের ত্রিখিলান বিন্যাস 

বড় করে

যুদ্ধের চিত্র 

যুদ্ধের চিত্র

জীবনযাত্রা - ১

জীবনযাত্রা - ২

জীবনযাত্রা - ৩

জীবনযাত্রা - ৪

জীবনযাত্রা - ৫

পৌরাণিক দৃশ্য 

যুদ্ধের চিত্র 
সম-আয়তন বর্গাকার ফলক সজ্জা

দেবী যুদ্ধ - ১

দেবী যুদ্ধ - ২

দেবী যুদ্ধ - ৩

রামায়ণ কাহিনী - ১

রামায়ণ কাহিনী - ২

রামায়ণ কাহিনী - ৩

অন্ধমুনির কাহিনী 

নিজ নিজ মায়ের কোলে রাম-লক্ষ্মণ-ভরত-শত্রুঘ্ন

পর্তুগীজ রণতরী 

পর্তুগীজ রণতরী 

শ্রীকৃষ্ণের গোষ্ঠলীলা 

বড় করে 
শ্রীনিবাস আচার্য 

ভীষ্মের শরশয্যা
সহায়ক  গ্রন্থ :
     ১)  বাঁকুড়া  জেলার  পুরাকীর্তি : অমিয়কুমার  বন্দোপাধ্যায় 
     ২)  বিষ্ণুপুর : এস. এস.  বিশ্বাস 
     ৩)  বিষ্ণুপুরের  মন্দির  টেরাকোটা ( প্রবন্ধ ) : চিত্তরঞ্জন  দাসগুপ্ত                                                          
                                                            ******