শুক্রবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

Boraichandi Temple, Boraichanditala,Chandannagar, Hooghly, West Bengal


বোড়াইচণ্ডী  মন্দির,  বোড়াইচণ্ডীতলা,  চন্দননগর,  হুগলি 

শ্যামল  কুমার  ঘোষ 

            হাওড়া-ব্যাণ্ডেল  রেলপথে  চন্দননগর  ত্রয়োদশতম  রেলস্টেশন।  রেলপথে  হাওড়া  থেকে  দূরত্ব  ৩২.৬  কিমি।  চন্দননগর  নামটি  সম্ভবত  'চন্দ্র  নগর'  নাম  থেকে  এসেছে।  কেউ  কেউ  বলেন  যে  গঙ্গানদী  এখানে  চন্দ্রাকার  বলে  প্রথমে   'চন্দ্রনগর'  এবং  তার  থেকে  'চন্দননগর'  হয়েছে।  আবার  অনেকের  মতে  একসময়  এখানে  চন্দনকাঠের  বড়  বাণিজ্যকেন্দ্র  ছিল।  তা  থেকে  'চন্দননগর'  নামটির  উদ্ভব।  এক  সময়  শহরটি  ফরাসীদের  অধিকারে  থাকার  জন্য  নাম  হয়  'ফরাসডাঙা'।  বিপ্রদাস  পিপলাই  রচিত  মনসামঙ্গল  কাব্যে  চন্দননগরের  উল্লেখ  নেই,  তবে  চন্দননগরের  অন্তর্গত  'বোড়ো'র  উল্লেখ  আছে।              

            চন্দননগরের  বোড়াইচণ্ডীতলায়  অবস্থিত  বোড়াইচণ্ডী  মন্দিরটি  ঊনবিংশ  শতাব্দীতে  নির্মিত।  আগে  জায়গাটার  নাম  ছিল  বোড়ো।  জনশ্রুতি,  প্রায়  পাঁচশ  বছর  আগে  সিংহলে  আটক  পিতাকে  মুক্ত  করার  জন্য  শ্ৰীমন্ত  সদাগর  বোড়াইচণ্ডীর  বিগ্রহ  প্রতিষ্ঠা  করেন।  দক্ষিণমুখী  মন্দিরটি  জোড়বাংলা  ধরনের।  দুটি  'দোচালা'  বা  'একবাংলা'  জোড়া  দিয়ে  এ  ধরণের  মন্দির  তৈরি  হয়  বলে  এই  স্থাপত্য  শৈলীর  নাম  'জোড়বাংলা'।  মন্দিরের  প্রথম  দোচালাটি  অলিন্দ  এবং  দ্বিতীয়  দোচালাটি  গর্ভগৃহ  হিসাবে  ব্যবহৃত  হয়।  মন্দিরের  পাশ  থেকে  না  দেখলে  মন্দিরটি  যে  'জোড়বাংলা'  তা  বোঝার  উপায়  নেই।  ত্রিখিলান  অলিন্দ।   মন্দিরের  সামনে  মন্দির  লাগোয়া  একটি  নাটমন্দির  আছে।  

              গর্ভগৃহে  চতুর্ভূজা  মা  বোড়াইচণ্ডী  প্রতিষ্ঠিতা।  বোড়াইচণ্ডীর  মূর্তিটি  নিমকাঠের  তৈরী।  তার  উপর  অষ্টধাতুর  পাত  দিয়ে  মোড়া।  পাথরের  বোড়াইচণ্ডী  মূর্তিটি  মন্দিরে  সংরক্ষিত  আছে।  আট  ঘর  সেবায়েতরা  পালা  করে  মায়ের  সেবাকার্য  পরিচালনা  করে  থাকেন।

            মন্দিরটি  পরিদর্শনের  তারিখ :  ১৪.০৯.২০১৭  


বোড়াইচণ্ডী  মন্দির 

বোড়াইচণ্ডী  মন্দির ( নাটমন্দির  থেকে  তোলা )

'জোড়বাংলা' মন্দির ( পাশ  থেকে  তোলা ) 

ভৈরব 

গর্ভগৃহের  কাজ 

মা  বোড়াইচণ্ডী - ১

মা  বোড়াইচণ্ডী - ২

মা  বোড়াইচণ্ডী - ৩

  সহায়ক  গ্রন্থাবলী :
         ১)  হুগলি  জেলার  পুরাকীর্তি :  নরেন্দ্রনাথ  ভট্টাচার্য  
         ২)  হুগলি  জেলার  ইতিহাস  ও  বঙ্গসমাজ ( ২ য়  খণ্ড ) :  সুধীরকুমার  মিত্র  

          -------------------------------------------

            আমার  ইমেল :  shyamalfpb@gmail.com   প্রয়োজনে  যোগাযোগ  করতে  পারেন।

           --------------------------------------------

Shib Temple, Sahaganj and Khamarpara, Hooghly,West Bengal


শিবমন্দির,  সাহাগঞ্জ  ও  খামারপাড়া,  হুগলি

শ্যামল  কুমার  ঘোষ  


               হাওড়া-বর্ধমান  মেন  লাইনে  ব্যাণ্ডেল  জং  একটি  রেলস্টেশন।  রেলপথে  হাওড়া  থেকে  দূরত্ব  ৩৯.৪  কিমি।  ব্যাণ্ডেল  স্টেশন  থেকে  অটোতে  সাহাগঞ্জে  আসা  যায়।  এই  গ্রামটি  মুঘল  বাদশাহ  আজিমওস্মান  শাহর  দৃষ্টি  আকর্ষণ  করে  এবং  তাঁর  ইচ্ছা  অনুসারে  গ্রামটি  তাঁর  নামযুক্ত  হয়ে  'সা-আজিমগঞ্জ'  নামে  পরিচিত  হয়।  পরে  সংক্ষিপ্ত  হয়ে  নাম  হয়  সাগঞ্জ  বা  সাহাগঞ্জ।  নবাব  আজিমওস্মান  আওরঙ্গজেবের  পৌত্র  ছিলেন  এবং  তাঁর  রাজত্বকালে  আজিমওস্মান  বাংলার  শাসনকর্তা  ছিলেন।  সাহাগঞ্জের  নন্দী  পরিবার  এক  সময়  খুবই  বিখ্যাত  ছিল।

              প্রধান  রাস্তার  উপর  অবস্থিত,  উপ-ডাকঘরের ( নতুন  ডাকঘর )  কাছে  নন্দী  পরিবার  কর্তৃক  প্রতিষ্ঠিত  আটটি  শিবমন্দির  ও  একটি  রাসমঞ্চ  আছে।  এগুলির  মধ্যে  দুটি  মন্দির  মধ্য-ঊনিশ  শতকে  নির্মিত, পশ্চিমমুখী  ও  আটচালা।  মন্দিরদুটিতে  পশ্চিম  ও  পূর্ব  দিকে  একটি  করে  দরজা  আছে।  অপর  ছয়টি  মন্দির  ও  রাসমঞ্চ  ১২৭১ বঙ্গাব্দের  ৪ ঠা  জ্যৈষ্ঠ (  ১৮৬৪  খ্রীষ্টাব্দে ) নির্মিত। মন্দিরগুলি  আকারে  ছোট,  আটকোণা,  দক্ষিণমুখী,  একদ্বার  বিশিষ্ট  ও  গম্বুজাকার  শিখরবিশিষ্ট।  মন্দিরগুলি  নামযুক্ত।  কিন্তু  কয়েকটির  নাম-ফলক  এখন  অপসারিত  বা  লেখা  পড়া  যায়  না।  রাসমঞ্চটির  গঠনও  একই  রকম।  রাসমঞ্চের  একদিকে  দুটি  ও  অপরদিকে  চারটি  মন্দির  অবস্থিত।  পশ্চিম  দিকের  দুটি  মন্দিরের  মাঝে  ও  পূর্ব  দিকের  চারটি  মন্দিরের  এক  মন্দির  থেকে  অপর  মন্দিরে  ভিতর  দিয়ে  যাওয়ার  পথ  আছে।  মন্দিরগুলিতে  কালো  কষ্টিপাথরের  শিবলিঙ্গ  নিত্যপূজিত।  


রাসমঞ্চ  ও  শিবমন্দির 

দুটি  আটচালা  ও  দুটি  আটকোণা  শিবমন্দির 

আটকোণা  রাসমঞ্চ  ও  শিবমন্দির 

আটকোণা  একটি  শিবমন্দিরের  প্রতিষ্ঠাফলক 

আটকোণা  একটি  শিবমন্দিরের  শিবলিঙ্গ 

             সাহাগঞ্জের  সোজা  উত্তরে  ডানলপ  কারখানা  ছাড়িয়ে  খামারপাড়ার  বকুলতলায়  অষ্টাদশ  শতকে  নির্মিত  দুটি  জীর্ণ  মন্দির  আছে।  একটি  নবরত্ন  ও  অপরটি  পঞ্চরত্ন।  আলোচ্য  নবরত্ন  মন্দিরটি  উঁচু  ভিত্তিবেদীর  উপর  স্থাপিত,  পূর্বমুখী  ও  একদ্বারবিশিষ্ট।  তিনটি  খিলানের  মাঝের  খিলানটির  নিচে  একমাত্র  দরজা।  পাশের  দুটি  খিলানের  নিচে  দুটি  ভরাট  করা  দরজা।  মন্দিরটিতে  এক  সারি  ছোট  ছোট  কুলুঙ্গির  মধ্যে  টেরাকোটা  মূর্তি  আছে।  শিখরগুলি  রেখ  দেউল  ধরণের।  আগে  মনে  হয়  তিনটি  দেওয়ালে  'টেরাকোটা'  অলংকার  ছিল।  ( কারণ  পাশের  দুটি  দেওয়ালে  কার্নিসের  কাছে  সামান্য  'টেরাকোটা'  অবশিষ্ট  আছে। )  এখন  কেবলমাত্র  সামনের  দেওয়ালে  'টেরাকোটা'  বর্তমান।  তাও  সেই  'টেরাকোটা'  অলংকারের  বেশির  ভাগই  নষ্ট  হয়ে  গেছে।  যেটুকু  অবশিষ্ট  আছে  তাতে  বোঝা  যায়,  এই  'টেরাকোটা'  উন্নতমানের। 

             মন্দিরে  রামরাবণের  যুদ্ধ,  মহিষমর্দিনী,  বৃষপৃষ্ঠে  শিব,  মকর,  প্রতীক  শিবমন্দির  ও  শিবলিঙ্গ,  ফুলকারি  নকশা,  বড়  ফুল,  পাখি,  নারী  মূর্তি,  কল্পলতা  বা  মৃত্যুলতা   ইত্যাদি  বর্তমান।  মন্দিরে  কালোপাথরের  শিবলিঙ্গ  নিত্যপূজিত।  পঞ্চরত্ন  মন্দিরটিতে  এখন  আর  কোন  'টেরাকোটা'  অলংকার  অবশিষ্ট  নেই।  মন্দিরটি  বর্তমানে  পরিত্যক্ত।  



নবরত্ন  মন্দির 

মন্দিরের  সামনের  বিন্যাস 

বাঁ  দিকের  খিলানের  উপরের  কাজ 

ডান  দিকের  খিলানের  উপরের  কাজ 

মাঝের  খিলানের  উপরের  কাজ 

মহিষাসুরমর্দিনী  মূর্তি 

কুলুঙ্গির  মধ্যের  কাজ - ১

কুলুঙ্গির  মধ্যের  কাজ - ২

ভরাট  করা  দরজার  উপরের  কাজ 

মকর  মূর্তি  ও  অন্যান্য  নকশা

কল্পলতা  বা  মৃত্যুলতা - ১

কল্পলতা  বা  মৃত্যুলতা - ২

কল্পলতা  বা  মৃত্যুলতা - ৩

কল্পলতা  বা  মৃত্যুলতা - ৪

মন্দিরের  কোনাচ 

মন্দিরের  উত্তরের  দিকের  দেওয়ালের  কাজ 

শিবলিঙ্গ 


 সহায়ক  গ্রন্থাবলী :
         ১)  হুগলি  জেলার  পুরাকীর্তি :  নরেন্দ্রনাথ  ভট্টাচার্য  
         ২)  হুগলি  জেলার  ইতিহাস  ও  বঙ্গসমাজ ( ২ য়  খণ্ড ) :  সুধীরকুমার  মিত্র  
  ---------------------------------------------------------
            আমার  ইমেল :  shyamalfpb@gmail.com   প্রয়োজনে  যোগাযোগ  করতে  পারেন।
----------------------------------------