পঞ্চরত্ন শীতলা মন্দির, সুরতপুর, দাসপুর,
পশ্চিম মেদিনীপুর
শ্যামল কুমার ঘোষ
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দাসপুর থানার অধীন একটি গ্রাম সুরতপুর। শিলাবতী নদী যখন বেশ নাব্য ছিল তখন এই নদীর তীরে অনেক বাণিজ্যকেন্দ্র গড়ে উঠেছিল। সুরতপুর ও তার পাশের গ্রাম গুঁডলি গ্রামে সেই সময় দু'তিনটি রেশম কুঠি গড়ে উঠেছিল। আঠারো শতকের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে এই সব গ্রামের সমৃদ্ধির সূচনা হয়। গ্রামের দেবালয় গুলি সেই সমৃদ্ধিরই ফসল।
সুরতপুর গ্রামে হাজরা পরিবারের প্রতিষ্ঠিত শীতলা মন্দিরটি একটি উল্লেখযোগ্য পুরাকীর্তি। উঁচু ভিত্তিবেদির উপর স্থাপিত, দক্ষিণমুখী মন্দিরটি পঞ্চরত্ন শৈলীর। গর্ভগৃহের সামনে ত্রিখিলান প্রবেশপথবিশিষ্ট অলিন্দ। গর্ভগৃহে প্রবেশের একটিই দরজা, সামনে। মন্দিরটির সামনের ত্রিখিলান প্রবেশপথের উপরে প্রচুর টেরাকোটা আছে। কার্নিসের নিচে ও দু'পাশের কুলুঙ্গির মধ্যেও টেরাকোটা আছে। কিন্তু তার বেশির ভাগ এখন ভগ্ন। টেরাকোটার বিষয় : রামরাজা, তারকা বধ, সুপার্শ্ব কর্তৃক রাবণের রথকে গেলার চেষ্টা, রামরাবণের যুদ্ধ, অনন্তশয়ানে বিষ্ণু, কৃষ্ণের মথুরাগমন দৃশ্য, কৃষ্ণের কালীয়দমন, গোষ্টে কৃষ্ণ-বলরাম, গোপীদের বস্ত্রহরণ, রাসমণ্ডল, কৃষ্ণের নৌকায় গোপীদের দধিভাণ্ড বহন, মহিষাসুরমর্দিনী মূর্তি, সিংহল যাত্রা কালে ধনপতি ও তার পুত্রের কমলেকামিনীর পরিবর্ত হিসাবে গণেশজননীর দর্শন ইত্যাদি। গর্ভগৃহের দরজার দুপাশে দুটি দ্বারপাল মূর্তি আছে।
মন্দিরে দুটি প্রাতিষ্ঠাফলক আছে। সামনে অর্থাৎ দক্ষিণ দিকের প্রতিষ্ঠাফলকের পাঠ : " শ্রীশ্রী ঁসিতলা মাতা / সকাব্দা ১৭৭১ সন ১২ স / ৫৬ সাল ১৮ বৈসখ অর্থাৎ প্রতিষ্ঠাকাল ১৮৪৯ খ্রীষ্টাব্দ। পূর্ব দিকে জানলার উপরে আর একটি প্রতিষ্ঠাফলক আছে। এর পাঠ : " শ্রীশ্রী ঁসিতলা মাতা / সকাব্দা ১৭৭১ সন ১২৫৬ / সাল তারিখ / ১৮ বৈসখ পরিচারক শ্রীজুৎ / সোএঘন হাজরা মিস্ত্রী শ্রীঠাকুরদাস সিল / সাকিম দাসপুর পরগনে চেত্তয়া ইতি "। অর্থাৎ এই মন্দির দাসপুরের প্রসিদ্ধ মন্দির স্থপতি ঠাকুরদাস শীলের তৈরি। মন্দিরের সামনে টিনের চাল দেওয়া একটি আটচালা নাটমন্দির আছে। গর্ভগৃহে দারু নির্মিত শীতলা মূর্তি নিত্য পূজিতা।
শীতলা মন্দির, সুরতপুর
|
মন্দিরের সামনের ত্রিখিলান বিন্যাস |
|
বাঁ দিকের খিলানের উপরের কাজ |
|
রামরাজা |
|
উপরে, তারকা বধ ও সুপার্শ্ব কর্তৃক রাবণের রথকে গেলার চেষ্টা নিচে, রামরাবনের যুদ্ধ |
|
মাঝের খিলানের উপরের কাজ |
|
অনন্তশয়ানে বিষ্ণু |
|
কৃষ্ণের মথুরাগমন দৃশ্য ও অন্য চিত্র |
|
উপরে, কৃষ্ণের কালীয়দমন দুদিকে গোষ্টে কৃষ্ণ-বলরাম নিচে, গোপীদের বস্ত্রহরণ, রাসমণ্ডল ও গোপীদের দধিভাণ্ড বহন |
|
ডান দিকের খিলানের উপরের কাজ |
|
মহিষাসুরমর্দিনী মূর্তি |
|
সিংহল যাত্রা কালে ধনপতি ও তার পুত্রের কমলেকামিনীর পরিবর্ত হিসাবে গণেশজননীর দর্শন |
|
তাল গাছে কৃষ্ণ ও অন্য চিত্র |
|
খেজুর গাছে কৃষ্ণ এবং অন্যত্র বলরাম |
|
দক্ষিণ দিকের প্রতিষ্ঠাফলক |
|
পূর্ব দিকের প্রতিষ্ঠাফলক - ১ |
|
পূর্ব দিকের প্রতিষ্ঠাফলক - ২ |
|
শীতলা ও অন্য বিগ্রহ |
কী ভাবে যাবেন ?
হাওড়া থেকে মেদিনীপুর গামী ট্রেনে উঠে পাঁশকুড়া স্টেশনে নামুন। স্টেশনের কাছেই পাঁশকুড়া বাস স্ট্যান্ড। সেখান থেকে ঘাঁটালগামী বাসেউঠে ( পাঁশকুড়া-ঘাটাল বাস রাস্তায় ) বকুলতলা স্টপেজে নামুন। সেখান থেকে বাসে বা অটোতে নাড়াজোল মুখী বাস রাস্তায় সুরানয়নপুর। সেখান থেকে টোটোতে সুরতপুরের শীতলা মন্দির। পথে রাস্তার ধারে দেখে নিতে পারেন খোর্দা বিষ্ণুপুরের রায় বংশের ঠাকুর বাড়ি।
সহায়ক গ্রন্থ :
১) পুরাকীর্তি সমীক্ষা - মেদিনীপুর : তারাপদ সাঁতরা
২) মেদিনীপুর জেলার প্রত্ন-সম্পদ : প্রণব রায়
এতদ অঞ্চলের বিখ্যাত স্থপতি ঠাকুর দাস শীল মহাশয়ের অপূর্ব পৌরাণিক টেরাকোটা সমৃদ্ধ পঞ্চরত্ন শীতলা মন্দির। মন্দিরের সংরক্ষণ খুবই সুন্দর।
উত্তরমুছুনধন্যবাদ।
মুছুনউপরোক্ত মন্তব্য আমার।
উত্তরমুছুনদুর্গা শঙ্কর দীর্ঘাঙ্গী, চন্দ্রকোণা।
ধন্যবাদ।
মুছুন