১৪ টি চারচালা শিব মন্দিরের গুচ্ছ, কালীতলা, গণপুর, বীরভূম
শ্যামল কুমার ঘোষ
বীরভূম জেলার মহম্মদ বাজার ব্লকের অন্তর্গত গণপুর একটি প্রাচীন গ্রাম। মল্লারপুরের নিকটবর্তী এই গ্রাম আগে বর্ধিষ্ণু ও সমৃদ্ধশালী ছিল। গ্রামটি এককালে দেশীয় প্রক্রিয়ায় আকরিক লোহা থেকে লোহা নিষ্কাশনের কেন্দ্র ছিল এবং গ্রামের চৌধুরী বংশ এই লোহার কারবারে বিত্তশালী হন ও প্রসিদ্ধি লাভ করেন। গণপুর গ্রামের পূর্বের প্রাচুর্য সেখানে প্রতিষ্ঠিত অসংখ্য মন্দির স্থাপনের মধ্যে প্রতিফলিত। এখানে গ্রামের কালীতলায় অবস্থিত ১৪ টি চারচালা মন্দিরের গুচ্ছ সম্বন্ধে আলোচনা করবো।
একটি পাঁচিল দিয়ে ঘেরা আয়তকার ক্ষেত্রে তিন দিকে অবস্থিত ও সামান্য উঁচু ভিত্তিবেদির উপর স্থাপিত ১৪ টি শিব মন্দিরের গুচ্ছ চারচালা শৈলীর। মন্দিরগুলির ৪টি পূর্বমুখী, ৩টি দক্ষিণমুখী ও ৭টি পশ্চিমমুখী। উপরোক্ত মন্দিরগুলির মধ্যে ৪টি মন্দিরের গায়ে মন্দির প্রতিষ্ঠার 'সন-তারিখ' উৎকীর্ণ আছে। মন্দিরগুলি ১৭৭৬ থেকে ১৭৭৯ খ্রীষ্টাব্দের মধ্যে পূর্বোক্ত চৌধুরী পরিবার কর্তৃক নির্মিত হয়। কথিত আছে, এই সময় বীরভূমের দারুণ দুর্ভিক্ষ হয়। দরিদ্র গ্রামবাসীদের মন্দির নির্মাণে সহায়তার বিনিময়ে খাদ্যের ব্যবস্থা করেন চৌধুরীরা। এ যেন তখনকার দিনের কাজের বিনিময়ে খাদ্য-এর প্রয়াস। মন্দিরগুলির সামনের দেওয়ালে ফুলপাথরের উপর অলংকরণ আছে। ফুলপাথর খুব নরম প্রকৃতির পাথর। লালচে রং। এই পাথর রাত্রিতে জলে ভিজিয়ে রেখে সকালে ছেনি দিয়ে কুঁদে যে কোন অলংকরণ ফুটিয়ে তোলা যায়। এই পাথরের মধ্যে দানা না থাকার জন্য ফুলপাথরের উপর কাজ পোড়ামাটির কাজের মতোই হয়ে থাকে। দুটোর পার্থক্য করা শক্ত। প্রধান ঘটনাবলীর মধ্যে লঙ্কা যুদ্ধ, সপরিবারে দুর্গা, ভগীরথের গঙ্গা আনয়ন, দুই গোপী সহ কৃষ্ণ, বৃষ পৃষ্ঠে শিব, দশাবতার মূর্তি, গণেশ, গান্ধর্বী, yali ইত্যাদি চিত্র উৎকীর্ণ আছে। মন্দিরগুলিতে বেশ কিছু ফলক পরবর্তীতে পাল্টানো হয়েছে। এগুলি সম্ভবত টেরাকোটা ফলক।
|
লঙ্কা যুদ্ধ |
|
১৪টি মন্দিরের চত্বর, গণপুর - ১ |
|
১৪টি মন্দিরের চত্বর, গণপুর - ১ |
|
পূর্ব দিকের মন্দির সকল |
|
একটি মন্দিরের সামনের বিন্যাস |
|
খিলানের উপরের কাজ ( দুই গোপী সহ কৃষ্ণ ) |
|
ভগীরথের গঙ্গা আনয়ন |
|
রামায়ণের যুদ্ধ |
|
কুলুঙ্গির কাজ - ১ |
|
কুলুঙ্গির কাজ - ২ |
|
কুলুঙ্গির কাজ - ৩ |
|
কুলুঙ্গির কাজ - ৪ |
|
কুলুঙ্গির কাজ - ৫ |
|
কুলুঙ্গির কাজ - ৬ |
|
কুলুঙ্গির কাজ - ৭ |
|
কৌণিক ভাস্কর্য ও কুলুঙ্গির কাজ
|
|
গণেশ |
|
কৌণিক ভাস্কর্য -২ |
|
কৌণিক ভাস্কর্য -৩ |
|
কৌণিক ভাস্কর্য -৪ ( গান্ধর্বী ) |
|
কৌণিক ভাস্কর্য -৪ ( yali ) |
|
কৌণিক ভাস্কর্য -৫ ( yali ) |
|
কৌণিক ভাস্কর্য -৬ ( গান্ধর্বী ) |
|
একটি মন্দিরের প্রতিষ্ঠা লিপি ও কৌণিক ভাস্কর্য |
|
ওই মন্দিরের প্রতিষ্ঠা লিপি ( বড় করে ) |
|
আর একটি মন্দিরের সামনের বিন্যাস ( সপরিবারে দুর্গা ও অন্যান্য চিত্র ) |
|
সপরিবারে দুর্গা |
|
অপর একটি মন্দিরের প্রতিষ্ঠা লিপি |
|
ওই মন্দিরের প্রতিষ্ঠা লিপি ( বড় করে ) |
কীভাবে যাবেন ? হাওড়া বা শিয়ালদহ থেকে রামপুরহাটগামী ট্রেনে মল্লারপুর স্টেশনে নেমে বাসে বা টোটোতে গণপুর যাওয়া যায়। অথবা সিউড়ি বা রামপুরহাট থেকে বাসে গণপুর। সেখান থেকে টোটোতে গণপুর কালীতলার মন্দির।
সহায়ক গ্রন্থ :
১) বীরভূম জেলার পুরাকীর্তি : দেবকুমার চক্রবর্তী
গণপুরের অন্যান্য মন্দির / দোলমঞ্চ সম্বন্ধে জানতে নিচের লিংকগুলিতে ক্লিক করুন :
১) চারচালা দোলমঞ্চ, কালীতলা, গণপুর
২) ৫টি চারচালা মন্দিরের গুচ্ছ, কালীতলার কাছে, গণপুর
৩) পরিত্যক্ত আটচালা মন্দির, গণপুর
------------------------------
আমার ইমেল : shyamalfpb@gmail.com প্রয়োজনে যোগাযোগ করতে পারেন।
খুবই সুন্দর মন্দির গুচ্ছ,ধন্যবাদ শ্যামল বাবু,একবার যাবার ইচ্ছা রইলো।
উত্তরমুছুন