মল্লেশ্বর শিব মন্দির এবং অন্যান্য মন্দির, মল্লারপুর, বীরভূম
শ্যামল কুমার ঘোষ
মল্লেশ্বর শিব মন্দির ও অন্যান্য মন্দির বীরভূম জেলার মল্লারপুরে অবস্থিত একটি দ্রষ্টব্য। মন্দির চত্বর চারিদিক পাঁচিল দিয়ে দিয়ে ঘেরা। মন্দির চত্বরের মধ্যে ২৪টি ভিন্ন রীতির মন্দির ও একটি নাটমন্দির দেখা যায়। এই মন্দিরগুলির বেশির মন্দির চারচালা শৈলীর। ঘেরা ক্ষেত্রের পশ্চিম দিকে প্রধান দ্বার। প্রধান দ্বারের উপরে নহবতখানা। বর্তমান প্রধান দ্বারটি সংস্কার করে দিয়েছেন ডঃ অসিত কুমার সাহা ও অমিতা সাহা। প্রধান দ্বারের চৌকাঠের গোবরাটটি পাথরের। এটি প্রাচীন মন্দিরের কোন অংশ। ইহার মধ্যস্থলে মঙ্গলঘটের প্রতিকৃতি উৎকীর্ণ আছে। প্রধান দ্বার দিয়ে ঢুকলে ডান দিকে একটি প্রাচীন প্রস্তর-নির্মিত মন্দির-স্থাপত্যের অংশবিশেষ দেখা যাবে। এটি এবং একটি পাথরের ভগ্ন মূর্তি সযত্নে রাখা আছে। আর একটু এগুলে পড়বে নাটমন্দির। নাটমন্দিরের দক্ষিণ দিকে মল্লেশ্বর শিব মন্দির ও সিদ্ধেশ্বরী কালীর মন্দির। মল্লেশ্বর শিব মন্দিরটি উত্তরমুখী চারচালা শৈলীর। মল্লেশ্বর শিব মন্দিরের সামনের ফুলপাথরের অলংকরণ আছে। তবে রঙের প্রলেপে সেই কাজ আজ অনেকটাই ম্লান। গর্ভগৃহে অনাদি মল্লেশ্বর শিব নিত্য পূজিত। পাশের সিদ্ধেশ্বরী কালীর মন্দিরটি এক বাংলা শৈলীর। মন্দিরের গর্ভগৃহটি একটি আটকোনা মন্দির। গর্ভগৃহে সিদ্ধেশ্বরী কালী মূর্তি নিত্য পূজিত। স্থানীয় লোকেদের বিশ্বাস, ইনি তারাপীঠের তারা মা'র বোন।
মন্দির চত্বরের উত্তর দিকে একই ভিত্তিভূমির উপর অবস্থিত, দক্ষিণমুখী বেশ কয়েকটি চারচালা ও একটি পঞ্চরত্ন মন্দির অবস্থিত। মন্দিরগুলির সামনের দেওয়ালে ফুলপাথরের অলংকরণ আছে। তবে রঙের প্রলেপে এখন আর টেরাকোটা না ফুলপাথারের কাজ তা বোঝা যায় না। মন্দিরগুলিতে কৃষ্ণলীলা, কীর্তনের দৃশ্যাবলী, দুর্গা, শিব ইত্যাদি দেবদেবীর প্রতিমূর্তি এবং ফুলকারি নকশার অলংকরণ দেখা যায়।
প্রধান দ্বারের দেওয়ালে একটি শ্বেতপাথরের প্রতিষ্ঠাফলক আছে। তাতে ১১৯২ খ্রীষ্টাব্দে নির্মিত বলে উল্লেখ আছে। কিন্তু মন্দিরগুলির স্থাপত্য-শৈলী দেখে মন্দিরগুলি যে এত প্রাচীন তা অনুমিত হয় না।
মল্লরাজার অলৌকিক কাহিনী সম্বন্ধে এই অঞ্চলে জনশ্রুতি প্রচিলিত আছে। পুরাকালে এই অঞ্চল গহন অরণ্যানী দ্বারা পরিব্যাপ্ত ছিল। এক মেষপালকের পদ্মিনী লক্ষণাযুক্তা কন্যার সঙ্গে এক সন্যাসীর মিলনের ফলে তাঁদের গর্ভজাত সন্তান 'মল্লনাথ' নামে অভিহিত হন। পরে তিনি রাজ উপাধি গ্রহণ করেন। তাঁর রাজত্বকালে এই মন্দিরে পূজিত শিবলিঙ্গ 'সিদ্ধনাথ' আত্মপ্রকাশ করেন। পরে এই শিব 'মল্লনাথ' বা 'মল্লেশ্বর' শিব নামে পরিচিত হন। মন্দির চত্বরে আছে কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশের ইচ্ছা সমাধি। তবে ইনি তন্ত্রসাধক কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ কি না জানা নেই। মন্দিরগুলি বর্তমানে পাণ্ডাদের রক্ষণাবেক্ষণে আছে।
|
তোরণ দ্বার বা প্রধান দ্বার |
|
প্রধান দ্বারের গায়ে লাগানো প্রতিষ্ঠাফলক |
|
মঙ্গল ঘট |
|
নাটমন্দির, মল্লেশ্বর শিব মন্দির ও সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির |
|
মল্লেশ্বর শিব মন্দির |
|
মল্লেশ্বর মন্দিরের সামনের কাজ - ১ |
|
মল্লেশ্বর মন্দিরের সামনের কাজ - ২ |
|
মল্লেশ্বর শিব |
|
সিদ্ধেশ্বরী কালী মায়ের মন্দির |
|
সিদ্ধেশ্বরী মা |
|
পুরানো মন্দিরের ভগ্ন অংশ ও ভগ্ন মূর্তি |
|
ভগ্ন পাথরের মূর্তি |
|
পূর্ব দিকের মন্দিরগুলি |
|
১ম মন্দিরের খিলানের উপরের কাজ |
|
২য় মন্দিরের খিলানের উপরের কাজ |
|
২য় মন্দিরের খিলানের উপরের কাজ |
|
৩য় মন্দিরের খিলানের উপরের কাজ |
|
৪র্থ মন্দিরের খিলানের উপরের কাজ |
|
পঞ্চরত্ন মন্দিরের খিলানের উপরের কাজ |
|
৬ষ্ঠ মন্দিরের খিলানের উপরের কাজ |
|
৭ম মন্দিরের খিলানের উপরের কাজ |
|
৮ম মন্দিরের খিলানের উপরের কাজ |
|
কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশের ইচ্ছা সমাধি |
কীভাবে যাবেন ?
হাওড়া বা শিয়ালদহ থেকে রামপুরহাটগামী ট্রেনে মল্লারপুর স্টেশনে নেমে টোটোতে মল্লেশ্বর শিব মন্দির যাওয়া যায়। সিউড়ি বা রামপুরহাট থেকে বাসে মল্লারপুর শিববাড়ি। সেখান থেকে হেঁটে মন্দির।
সহায়ক গ্রন্থ :
১) বীরভূম জেলার পুরাকীর্তি : দেবকুমার চক্রবর্তী
-----------------------------
আমার ইমেল : shyamalfpb@gmail.com প্রয়োজনে যোগাযোগ করতে পারেন।
আরো কিছু
উত্তরমুছুন