শ্রীশ্রী নিস্তারিণী কালী মন্দির, শেওড়াফুলি, হুগলি
শ্যামল কুমার ঘোষ
হাওড়া-ব্যাণ্ডেল বা হাওড়া-তারকেশ্বর রেলপথের নবম স্টেশন শেওড়াফুলি। রেলপথে হাওড়া থেকে দূরত্ব ২২ কিমি। শেওড়াফুলি রেলস্টেশনের পূর্ব দিকে, স্টেশনের পাশে, গঙ্গার ধারে, শ্রীশ্রী নিস্তারিণী কালী মন্দির অবস্থিত। পাশেই শেওড়াফুলির হাট। শেওড়াফুলি রাজবংশের রাজা হরিশ্চন্দ্র রায় তাঁর প্রথমা স্ত্রী সর্বমঙ্গলা দেবীর অপমৃত্যু হওয়ায় পণ্ডিতদের বিধানানুসারে অপঘাত মৃত্যুর হাত থেকে আত্মার শান্তির জন্য ১৭৪৯ শকাব্দে ( ১৮২৭ খ্রীষ্টাব্দে ) নিস্তারিণী কালী মন্দির নির্মাণ করেন এবং মন্দিরে দেবী কালিকার মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন। মন্দিরের সামনের দেওয়ালে একটি কাল পাথরের প্রতিষ্ঠা-ফলক আছে। পরে শ্বেতপাথরের আরও একটি ফলক লাগানো হয়েছে।
মন্দিরটি অনুচ্চ ভিত্তিবেদির উপর প্রতিষ্ঠিত, একটি সমতল ছাদ যুক্ত, দক্ষিণমুখী দালান। বিশালাকার এই মন্দিরের সামনের দিকে সাতটি খিলান এবং পাশে ( পূর্ব-পশ্চিমে ) পাঁচটি খিলান। খিলানগুলি থামের উপর স্থাপিত। এক একটি থাম 'কলাগেছ্যা' রীতির চারটি সরু সরু গোল গোল থামের সমাহারে তৈরী। মন্দিরের চার দিকে ঢাকা বারান্দা। মন্দিরের সামনে একটি নাটমন্দির আছে। কিন্তু সেই নাটমন্দির এখন পণ্যবিক্রেতাদের দ্বারা দখলিত। মন্দিরে কয়েকটি ঘর। সামনের দিকের মাঝের ঘরটিতে দেবী নিস্তারিণী ও দু পাশের দুটি ঘরে দুটি শ্বেত পাথরের শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠিত। নিস্তারিণী মায়ের ঘরের দুটি প্রবেশ-দ্বার। গর্ভগৃহের সামনে অলিন্দ। শেওড়াফুলি রাজবংশের আদি নিবাস ছিল বর্ধমান জেলার অন্তর্গত পাটুলি-নারায়ণপুর। সেখানে রাজবংশের প্রাচীন কয়েকটি বিগ্রহ এই মন্দিরে এনে রাখা হয়। মন্দিরের একটি ঘরে কৃষ্ণরায় ও বাল গোপাল মূর্তি প্রতিষ্ঠিত। সবগুলো বিগ্রহই নিত্য পূজিত। মন্দির চত্বরে ঠাকুরের ভোগ রান্নার ঘরও আছে। মন্দির এলাকা খাবার, শাঁখা, নিত্য ব্যবহার্য টুকিটাকি জিনিস ও পুজোর সামগ্রীর দোকানে জমজমাট। খাবার দোকানে তেলেভাজা, জিলিপি ও শিঙাড়া প্রভৃতির প্রাধান্য।
নিস্তারিণী কালী দক্ষিণ কালিকার পাষাণময়ী মূর্তি। শিবের উপর দেবী দণ্ডায়মানা। দেবী চতুর্ভূজা। দেবীর বাম দিকের উপরের হাতে খড়্গ ও নিচের হাতে নরমুণ্ড এবং দক্ষিণের দু হাত দিয়ে বর ও অভয় দান করছেন। একটি বড় পদ্মের উপর দেবীকে স্থাপন করা হয়েছে।
তখনও দক্ষিণেশ্বরের মন্দির প্রতিষ্ঠা হয় নি। রানি রাসমণি একবার বজরা করে এসে পাশের গঙ্গার ঘাটে নেমে মন্দিরে মাকে দর্শন করে পুজো দিয়ে যান।
সকাল সাড়ে পাঁচটা থেকে দুপুর দেড়টা-দুটো পর্যন্ত মন্দির খোলা থাকে। তারপর মন্দির বন্ধ হয়। আবার বিকালে মন্দির খুলে রাত ন'টায় মন্দির বন্ধ হয়। প্রতি অমাবস্যায় মায়ের বিশেষ পূজা হয়। কালী পুজোর অমাবস্যায় মন্দিরে মহাপুজো অনুষ্ঠিত হয় এবং বলা বাহুল্য ওই দিন মন্দিরে খুবই ভিড় হয়।
শেওড়াফুলির এই দেবী খুবই জাগ্রতা। মানুষের বিশ্বাস, দেবী নিস্তারিণীকে আরাধনা করলে দুঃখের হাত থেকে নিস্তার পেয়ে সুখ, সমৃদ্ধি ও শান্তি লাভ করা যায়। তাই শুধু স্থানীয় বাসিন্দারাই নয়, দূরদূরান্তের বহু পুণ্য লোভাতুর আর্ত নরনারীর সমাগম প্রতিদিন মন্দির প্রাঙ্গণে হয়ে থাকে। কাছাকাছি থেকে যাঁরা আসেন তাঁদের অনেকেই পাশের গঙ্গায় স্নান করে মায়ের পুজো দেন। আর যাঁরা অনেক দূর থেকে আসেন তাঁরা অনেকেই পাশের গঙ্গায় স্নান করে, মায়ের পুজো দিয়ে, উপবাস ভঙ্গ করে বাড়ি ফেরেন।
মন্দিরটি পরিদর্শনের তারিখ : ১৪.১০.২০১৬
|
গঙ্গার ঘাটের তোরণ-দ্বার |
|
শ্রীশ্রী নিস্তারিণী মন্দির |
|
গর্ভগৃহের সামনের ঢাকা বারান্দা |
|
দুটি শিব লিঙ্গের একটি |
|
প্রতিষ্ঠাফলক |
|
আর একটি ফলক |
|
কৃষ্ণরায় ও বালগোপাল বিগ্রহ ( পাটুলি থেকে আনা ) |
|
শ্রীশ্রী নিস্তারিণী মাতা - ১ |
|
শ্রীশ্রী নিস্তারিণী মাতা - ২ |
|
শ্রীশ্রী নিস্তারিণী মাতা - ৩ |
সহায়ক গ্রন্থ :
১) হুগলি জেলার দেব দেউল : সুধীর কুমার মিত্র
******
পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য কালী মন্দির সম্বন্ধে জানতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন / লিংকের উপর আঙুল দিয়ে টোকা দিন :
-------------------------------------------
আমার ইমেল : shyamalfpb@gmail.com প্রয়োজনে যোগাযোগ করতে পারেন।
--------------------------------------------
Very useful sir! Thank you!
উত্তরমুছুনThank you.
মুছুনআমি এই মনদিরে যাই।খুব শান্তি পাই।ইতিহাস জেনে ভাল লাগলো।জয় মা নিসতারিনী।
উত্তরমুছুনধন্যবাদ।
মুছুনজয় মা নিস্তারিণী, সবার মঙ্গল করো মা ।।
উত্তরমুছুনধন্যবাদ।
মুছুনআমি মায়ের মন্দিরের নিত্য দর্শনার্থী,আমার বাড়ি মন্দিরের খুবই কাছাকাছি,মন্দিরের ইতিহাস সকলের কাছে তুলেধরার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ,জয় মা নিস্তারিণী মায়ের জয়����
উত্তরমুছুনধন্যবাদ।
মুছুনতথ্যবহুল লেখা। সমৃদ্ধ হলাম।
উত্তরমুছুনধন্যবাদ।
মুছুনঅনুপম মাইতি , পড়ে খুব ভালো লাগলো। যাবার ইচ্ছা থাকলো।
উত্তরমুছুনধন্যবাদ।
মুছুন