আনন্দময়ী কালী মন্দির, সুখাড়িয়া, সোমরাবাজার, হুগলি
শ্যামল কুমার ঘোষ
ব্যাণ্ডেল-কাটোয়া রেলপথে সোমরাবাজার একটি রেলস্টেশন। হাওড়া থেকে দূরত্ব ৬৭ কিমি। শিয়ালদহ থেকে সকাল ৮ টা ০৬ মিনিটের কাটোয়া লোকালে বা হাওড়া থেকে যে কোন কাটোয়া লোকালে এখানে যাওয়া যায়। ব্যাণ্ডেল থেকেও সোমরাবাজার যেতে পারেন। স্টেশন থেকে টোটোতে সুখাড়িয়ার আনন্দময়ী কালী মন্দিরে যাওয়া যায়।
সুখাড়িয়ার মুস্তৌফী বংশ নদিয়া জেলার উলার মুস্তাফী বা মুস্তৌফী বংশের একটি শাখা। উলার রামেশ্বর মিত্রমুস্তাফী বা মিত্রমুস্তৗফী ছিলেন এই বংশের প্রতিষ্ঠাতা। রামেশ্বর নবাব মুর্শিদকুলি খাঁর শাসনকালে সুবে বাংলার রাজস্ব বিভাগের মুস্তৗফী (= নায়েব কানুনগো ) পদে উন্নীত হন। এই রামেশ্বরের পুত্র অনন্তরাম মুস্তৗফী মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের বিরাগভাজন হওয়ার ফলে উলা ছেড়ে সুখারিয়া গ্রামে চলে আসেন। তাঁর দাদা রঘুনন্দন শ্রীপুরে ( বলাগড় ) বসতি স্থাপন করেন।
সুখাড়িয়ার মন্দিরগুলির মধ্যে আনন্দময়ী কালীমন্দির উল্লেখযোগ্য। ১৮১৩ খ্রীষ্টাব্দে বীরেশ্বর মুস্তৗফী মন্দিরটি নির্মাণ করেন। উঁচু ভিত্তিবেদির উপর স্থাপিত, দক্ষিণমুখী মন্দিরটি পঁচিশরত্ন শৈলীর। ত্রিতল মন্দিরটিতে মোট পঁচিশটি চূড়া বা রত্ন আছে। প্রথম তলের প্রতিটি কোণে তিনটি হিসাবে বারোটি, দ্বিতীয় তলের প্রতিটি কোণে দুটি হিসাবে আটটি, তৃতীয় তলের প্রতিটি কোণে একটি হিসাবে চারটি এবং সর্বোপরি কেন্দ্রীয় শিখর বা রত্ন। এই ধরণের পঞ্চবিংশতিরত্ন মন্দির পশ্চিমবঙ্গে আরও চারটি আছে, বর্ধমান জেলার কালনায় তিনটি এবং বাঁকুড়া জেলার সোনামুখীতে একটি। ১৮৯৭ খ্রীষ্টাব্দে ভূমিকম্পে এই মন্দিরের সর্বোচ্চ পাঁচটি চূড়া ক্ষতিগ্রস্ত হলে সেগুলিকে আবার নূতন করে স্থাপন করা হয়। মন্দিরের গায়ে টেরাকোটার অলংকরণ আছে। কিন্তু কালের প্রবাহে বর্তমানে সেগুলি ক্ষতিগ্রস্ত। টেরাকোটা মূর্তিগুলির মধ্যে অন্নপূর্ণা, জগদ্ধাত্রী, কালী, পঞ্চমুখী গণেশ ও সিংহবাহিনী উল্লেখযোগ্য। মন্দিরের গর্ভগৃহে বেদির উপর শায়িত শিবের বক্ষোপরি উপবিষ্টা আনন্দময়ী কালীর বিগ্রহ নিত্য পূজিত। বিগ্রহ উচ্চতায় প্রায় ৩ ফুট ( ৯১.৪ সেমি )। মন্দিরের একটি ঘরে শ্রীধর জিউ নামক নারায়ণ শিলা ও অপর একটি নারায়ণ শিলাও নিত্য পূজিত।
মন্দির এলাকার মধ্যে দুই সারিতে ছয়টি করে বারোটি মন্দির আছে। এর মধ্যে দুটি পঞ্চরত্ন ও বাকিগুলো আটচালা শৈলীর। পশ্চিমমুখী ৬ টা মন্দিরের উত্তর দিকে একটি পঞ্চরত্ন ও বাকি ৫ টি আটচালা শৈলীর। ৫ টা আটচালা মন্দিরের মাঝের আটচালা মন্দিরের গর্ভগৃহে সাদা শিবলিঙ্গ ও বাকি ৪ টা আটচালা ও পঞ্চরত্ন মন্দিরের গর্ভগৃহে কালো শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠিত। পূর্বমুখী ৬ টা মন্দিরের উত্তর দিকে একটি পঞ্চরত্ন ও বাকি ৫ টি আটচালা শৈলীর। ৫ টা আটচালা মন্দিরের মাঝের আটচালা মন্দিরের গর্ভগৃহে সাদা শিবলিঙ্গ ও বাকি ৪ টা আটচালা মন্দিরের গর্ভগৃহে কালো শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠিত। পঞ্চরত্ন মন্দিরের গর্ভগৃহে গণেশ বিগ্রহ প্রতিষ্ঠিত। এই পঞ্চরত্ন মন্দিরের গায়ে টেরাকোটা ফলক বর্তমান। অষ্টাদশ শতকের গোড়ার দিকে এটি নির্মিত হয়। মন্দির চত্বরের পশ্চিম দিকে একটি বড় পুকুর আছে। এই পুকুরের অপর পাড় থেকে মন্দিরগুলি খুব সুন্দর দেখায়।
মন্দিরটি পরিদর্শনের তারিখ :
|
আনন্দময়ী কালী মন্দির চত্বর, সুখাড়িয়া, হুগলি |
|
আনন্দময়ী কালী মন্দির, সুখাড়িয়া, হুগলি |
|
মন্দিরের শিখর ( পূর্ব দিক থেকে ) |
|
মন্দিরের সামনের বিন্যাস
|
|
মাঝের খিলানের উপরের কাজ |
|
ডান দিকের খিলানের উপরের কাজ |
|
পূর্ব দিকের একটি সিংহ মূর্তি |
|
অন্নপূর্ণা মূর্তি |
|
জগদ্ধাত্রী |
|
কালী |
|
পঞ্চমুখী গণেশ |
|
সিংহবাহিনী |
|
গর্ভগৃহের সামনের অলিন্দের কাজ |
|
পূর্বমুখী ৬ টি মন্দির |
|
পশ্চিমমুখী ৬ টি মন্দির |
|
পূর্বমুখী পঞ্চমুখী গনেশ মন্দির |
|
গনেশ মন্দিরের সামনের দেওয়ালের কাজ -১ |
|
গনেশ মন্দিরের সামনের দেওয়ালের কাজ -২
|
|
গনেশ মন্দিরের সামনের দেওয়ালের কাজ -৩
|
|
গণেশ মূর্তি |
|
শ্রীধর জিউ ও অন্য একটি নারায়ণ শিলা |
|
আনন্দময়ী কালী মূর্তি - ১ |
|
আনন্দময়ী কালী মূর্তি - ২ |
|
পুকুরের অপর পাড় থেকে মন্দির - ১ |
|
পুকুরের অপর পাড় থেকে মন্দির - ২
|
সহায়ক গ্রন্থ : ১) হুগলি জেলার পুরাকীর্তি : নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য
-------------------------------------------
আমার ইমেল : shyamalfpb@gmail.com প্রয়োজনে যোগাযোগ করতে পারেন।
--------------------------------------------
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন